logo

হিন্দু সংস্কৃতিতে ন্যুড হলো বিশুদ্ধতার সমার্থক

 

নিজের চিত্রকর্ম, সমালোচনা, হিন্দু পুরাণ আর ভারতীয় সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে তেহেলকা ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মকবুল ফিদা হুসেন। সেই সাক্ষাৎকারের ভাষান্তরিত রূপ এখানে তুলে ধরা হলো। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জুলফিকার হায়দার

তেহেলকা : হুসেন সাহেব, আপনার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের আক্রমণাত্মক মনোভাবকে কীভাবে দেখেন?
মকবুল ফিদা হুসেন : এসব আমাকে খুব একটা বিপর্যস্ত করেনি। ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। আমি শুধু কামনা করি, মানুষের মত প্রকাশটা যেন যুক্তির মাধ্যমে হয়, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। মিডিয়া আমার কাছে আসছে, আশা করছে যেন আমি কড়া কিছু বলি। কিন্তু আমি ভারতকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। সময়ের স্রোতে এটা সামান্য একটা মুহূর্ত মাত্র। পাঁচ হাজার বছর ধরে আমাদের শিল্পের স্রোত প্রবহমান। সেখানে এটা সামান্য একটা হেঁচকি মাত্র। আমি নিশ্চিত, তরুণ প্রজন্ম এইসব মৌলবাদ, রক্ষণশীলদের ব্যাপারে অনাস্থা জানাবে। পরিবর্তনের জন্য তারা এগিয়ে আসবে। আমি নিজের ঘর ছাড়তে চাই না। একই সঙ্গে আমি এটাও চাই না – এই রক্ষণশীলরা সমাজ থেকে মুছে যাক। আমরা সবাই একটা বড় পরিবারের অংশ। একটা শিশু যখন কিছু একটা ভেঙে ফেলে, তাকে কেউ ঘর থেকে বের করে দেয় না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। এটা অনেকটা পারিবারিক ব্যাপার। যারা বিরোধিতা করছে, তারা আমার কাজগুলো বোঝেইনি। অনেকে হয়তো দেখেওনি।
তেহেলকা : কেন ভারতে এসে আপনি এদের মোকাবিলা করছেন না?
মকবুল ফিদা হুসেন : পরিস্থিতি যা মনে হচ্ছে, আমি এখন ফিরতে পারব না। আমাকে কেউ নির্বাসনে পাঠায়নি। আমি নিজেই চলে এসেছি, কারণ আমার বয়স হয়েছে। যে-কোনো সময় শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মামলার কারণে চলে এসেছি, তাও কিন্তু নয়। যদি আমি ফিরে যাই, এখন যা পরিস্থিতি, দেখা যাবে কেউ একজন রাস্তায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো অথবা মারাত্মক আহত করে বসলো। তখন তো আমি নিজের কথাগুলোও বলতে পারবো না। আমি ভারতে ফিরতে পারবো যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে। কিংবা মায়াবতী। এ-সরকারের মেরুদণ্ড নেই। তাদের হাত বাঁধা। তারা ভাবছে, কথা বললে বা কোনো পদক্ষেপ নিলে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠবে। মজার ব্যাপার হলো, ক্ষমতার বাইরে থেকে বিজেপি কিন্তু এ ধরনের ইস্যুকে কাজে লাগিয়েই ভোট হাতিয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতায় থাকলে তারা হয়তো তাদের চরমপন্থী গ্রুপগুলোকে শান্ত রাখতো, যাতে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিটা ধরে রাখা যায়। এই বিপরীতমুখী ব্যাপারটা কেবল ভারতেই সম্ভব। আসলে ব্যাপারটা এখন আদালতের হাতে। আমার চিত্রকর্ম অশ্লীল বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে – এই বক্তব্য কোনোভাবেই আদালতে ধোপে টিকবে না। কেউ যদি জনস্বার্থের বিবেচনায় পালটা একটা মামলা করতো… কিন্তু কাজটা আমার নিজের করাটা মানায় না।
তেহেলকা : নিজের চিত্রকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন কেন? হিন্দু প্রতিকৃতি আর শাস্ত্র নিয়ে আপনি তো ওদের চেয়ে ভালো জানেন যারা আপনার নিন্দা করছে?
মকবুল ফিদা হুসেন : না। চিত্রকর্মের জন্য কখনই ক্ষমা চাইনি আমি। সবসময়ই আমি আমার চিত্রকর্মের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। যেটা বলেছি সেটা হলো – আমি নিজের মতো করে ক্যানভাসে ছবি এঁকেছি।
দেব-দেবীর ছবি এঁকেছি। এগুলো এঁকেছি গভীর ভালোবাসা, বিশ্বাস আর উদ্যাপনের অনুভূতি থেকে। যদি এটা করতে গিয়ে কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ব্যস। শিল্পকর্মকে আমি যতটা না ভালোবাসি, মনুষ্যত্বকে ভালোবাসি তার চেয়েও বেশি। ভারত অনন্য একটা দেশ। সহিষ্ণু। বহুমাত্রিক। এর মতো আর কিছুই পৃথিবীতে নেই। দেশে এখন যেটা ঘটছে, এটা একটা ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অংশ মাত্র। আমার কাছে, ভারত মানেই জীবনের উৎসব। এই গুণটা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আপনি খুঁজে পাবেন না।
তেহেলকা : আপনি কি বলবেন হিন্দু প্রতিকৃতি আর সংস্কৃতি নিয়ে আপনার ভালোবাসা কীভাবে শুরু হলো?
মকবুল ফিদা হুসেন : ছোটবেলায় পান্ধারপুর, তার কিছু পরে ইন্দোরে রামলীলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমি আর আমার বন্ধু মানকেশ্বর সবসময় এগুলো অভিনয় করতাম। রামায়ণ খুবই সমৃদ্ধ, শক্তিশালী একটা গল্প। ড. রাজাগোপালাচার্য যেমনটা বলেছেন – এটা পুরাণ অথচ প্রায় জীবন্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যিকারের আধ্যাত্মিক লেখাগুলো পড়তে শুরু করি যখন আমার বয়স উনিশ। কারণ সে-সময় অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছি আমি। মাকে হারিয়েছি। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার বয়স যখন চৌদ্দ-পনেরো, তখন ভয়াবহ সব দুঃস্বপ্ন দেখতাম। উনিশ বছর বয়সে এসে এই সবকিছুই থেমে গেল। আমার একজন গুরু ছিলেন মোহাম্মদ ইসহাক। তাঁর কাছে দুই বছর পবিত্র কোরআন পড়েছি। একই সময় আমি মানকেশ্বরের সঙ্গে গীতা, উপনিষদ আর পুরাণ নিয়ে আলোচনা করতাম। মানকেশ্বর ততদিনে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেছে। হিমালয়ের উদ্দেশে একদিন রওনা হয়ে গেল মানকেশ্বর। তারপরও বেশ অনেক বছর আমি এসব নিয়ে পড়াশোনা করেছি। এই সবকিছু আমাকে যথেষ্ট প্রশান্ত করেছে। আমি আর কখনো দুঃস্বপ্ন দেখিনি। পরে হায়দ্রাবাদে ড. রাম মনোহর লোহিয়া আমাকে বললেন রামায়ণের ছবি আঁকতে। সেটা ১৯৬৮ সালের কথা। খুবই দরিদ্র ছিলাম তখন। কিন্তু আট বছরের মধ্যে দেড়শো ছবি এঁকেছি আমি। আমি বাল্মীকি আর তুলসী দাসের রামায়ণ পড়লাম। এরপর বেনারস থেকে পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ জানালাম, যাতে এর অস্পষ্ট দিকগুলো আমাকে বুঝিয়ে দেন। আমি যখন এটা করছিলাম, তখন কিছু রক্ষণশীল মুসলমান বললো, ইসলামিক বিষয় নিয়ে কেন আমি কিছু আঁকছি না। আমি বললাম, ইসলামে কি সেই ধরনের সহনশীলতা আছে? আপনি যদি এমনকি ক্যালিগ্রাফিতেও ভুল করেন, তারা ক্যানভাস টেনে ছিঁড়ে ফেলবে। আমার জীবদ্দশায় শত শত গণেশের ছবি এঁকেছি আমি – খুবই মজা পেয়েছি ওগুলো এঁকে। বড় যে-কোনো কাজ শুরুর আগে আমি গণেশের একটা ছবি আঁকি। শিবের প্রতিকৃতি আঁকতেও বেশ লাগে আমার। নটরাজ পৃথিবীর জটিলতম কাঠামোগুলোর একটা – এটার বিবর্তন হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে… অনেকটা আইনস্টাইনের সূত্রের মতো, মহাবিশ্ব আর বাস্তব জগতের প্রকৃতি নিয়ে গভীর দার্শনিক আর গাণিতিক হিসাব-নিকাশের ফলাফল এটা। আমার মেয়ে রাইসা যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো, কোনো অনুষ্ঠান করতে চায়নি সে। তখন আমি ওর বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে একটা কার্ড এঁকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠালাম। কার্ডের ছবিতে পার্বতী শিবের ঊরুর ওপর বসে আছে, আর শিবের একটা হাত তার স্তনের ওপর – মহাবিশ্বের প্রথম বিয়ে ছিল সেটা। হিন্দু সংস্কৃতিতে ন্যুড বিষয়টা পবিত্রতার সমার্থক। যে-বিষয়টাকে আমি খুব অন্তর থেকে অনুভব করছি, সেটাকে কি আমি অবজ্ঞা করতে পারি? শিয়াদের একটা ধারা সুলেইমানি সম্প্রদায়ে আমার জন্ম। হিন্দুদের সঙ্গে অনেক জায়গায় আমাদের মিল আছে। এর মধ্যে পুনর্জন্ম একটি। সংস্কৃতির দিক থেকে ইহুদি আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে দূরত্বটা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যারা আমার বিরোধিতা করছে, তাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা অসম্ভব। খাজুরাহো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তারা বলবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে এর ভাস্কর্য গড়া হয়েছিল… এখন এর আর গ্রহণযোগ্যতা নেই। গ্রামের মানুষ বরং হিন্দু দেবতাদের সংবেদনশীল, জীবন্ত আর বিবর্তনশীল ব্যাপারগুলো আরো ভালো বোঝে। পাথরের ওপর শুধু কমলা রং মেখে সেটাকে তারা হনুমানের প্রতিকৃতি হিসেবে দাঁড় করিয়ে ফেলে।
তেহেলকা : আপনার চিত্রকর্ম নিয়ে কী ধরনের আলোচনা আপনি পছন্দ করবেন বা আপনি কী চান – আপনার সৃজন প্রয়াস মানুষ স্মরণে রাখুক?
মকবুল ফিদা হুসেন : আমি কখনই চিত্রকর্মে চালাকি করতে চাইনি, রাখঢাক রাখিনি বা দুর্বোধ্য কিছু করিনি। আমি সহজ একটা কিছু বলতে চেয়েছি। ক্যানভাসে একটা গল্প বলতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি, আমার চিত্রকর্মগুলো মানুষের সঙ্গে কথা বলুক। ১৯৪৮ সালে বোম্বে আর্ট সোসাইটিতে প্রথমবারের মতো আমার চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়। কিন্তু তারও বহু বছর আগ থেকেই ছবি আঁকা শুরু করেছি আমি। ওই ছবিগুলোতে আমি গুপ্ত ব্রোঞ্জের ত্রিভঙ্গ কাঠামোটাকে ব্যবহার করেছি। পাহাড়ি চিত্রকর্মের সংবেদনশীল ও খোলামেলা রংগুলো ব্যবহার করেছি – যেমন গাঢ় মেরুন, কালো, হলুদ রংগুলো তুলে এনেছি। আমার স্টাইলটাকে ধ্রুপদী করে তোলার চেষ্টা করেছি কিন্তু গণমানুষের সরলতাটা ছেড়ে দিয়ে নয়। সোজা এসে উত্তেজিতভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, এই ফর্ম আমি কোথায় পেয়েছি। আমি তাকে কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, খুঁজে দেখো। আমার চিত্রকর্মের পেছনে এই সবই রয়েছে।
অতীত থেকে এই বিষয়গুলো তুলে এনেছি আমি। ভারতে অনেক সমৃদ্ধ সময় গেছে – তাঞ্জোর, চোলা, গুপ্ত… এরও পেছনে পরে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই চক্রটাকে হুবহু পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব না। যেটুকু আপনি তুলে আনেন, সেখানে লুকিয়ে থাকে আপনার স্বাতন্ত্র্য, আপনার সৃজনশীল সত্তা। আরেকটি বিষয় হলো নিজের একটা ছন্দ আর ব্যাকরণ আবিষ্কার করা : একটা শূন্য ক্যানভাসের কোথায় আপনি রেখাটি আঁকবেন? ফোঁটাটা কোথায় দেবেন? কতটুকু হলুদ, কতটুকু লাল আপনার ব্যবহার করা উচিত। যদি এক মিলিমিটার পুরু করে লাল রংটা ব্যবহার করি, তাহলে নীল রংটা কি আধা মিলিমিটার হওয়া উচিত, নাকি আরো বেশি? এই হিসাব-নিকাশ, এই ব্যাকরণের মধ্যেই একজন শিল্পীর পরিচয় লুকিয়ে থাকে। নিজের একটা স্টাইল, একটা শিল্পভাষার জন্য অন্তত ষাট-সত্তর বছর নিরলস কাজ করা প্রয়োজন।
তেহেলকা : পিকাসোর যেমন গুয়ের্নিকা, তেমনি আপনার চিত্রকর্মের মধ্যে কোনগুলো আপনার চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
মকবুল ফিদা হুসেন : বিটুইন দ্য স্পাইডার অ্যান্ড দ্য ল্যাম্প (১৯৫৬) ছবির স্ট্রাকচার নিয়ে আমি খুশি। পাঁচজন মহিলা যেটা নিয়ে কথা বলছে, সেটার মধ্যে একটা রহস্য আছে। মনে হয়, গল্পগুলো তাদের নিজেদের কাছেও অজানা। চমৎকার একটা সুতার মধ্যে মাকড়সাটাকে যেভাবে মহিলা ধরে রেখেছেন, সেটা ঠিক সহজ, স্বাভাবিক না। একটা ভয় আছে সেখানে। আমি খুব কমই চোখ আঁকি। কারণ চোখ আঁকলে একটা চরিত্র খুব স্পষ্ট আর জীবন্ত হয়ে ওঠে। চেহারার চেয়ে শরীরটাকেই আমি আকর্ষণীয় করতে চেয়েছি। হাতের অভিব্যক্তি বোঝার জন্য আমি রোডিনের ‘মেন অব কালাইস’ ভাস্কর্যটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। সেটার সঙ্গে যুক্ত করেছি ধ্রুপদী মুদ্রা। ভারতে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য নিয়ে এতকিছু হলো, তবু স্বাধীনতার ষাট বছর পর চিত্রশিল্পের ছাত্রছাত্রীরা গ্রিক শিল্পকলা থেকে ফিগার পর্যবেক্ষণ করছে। ড. কুমারাস্বামীর কথা এমনকি বলা পর্যন্ত হচ্ছে না। কলেজে শেক্সপিয়ার আর কিটস নিয়ে পড়ানো হয়, কালিদাসের নামই নেওয়া হয় না। এ জন্য ভারতে নিজস্ব কিছু গড়ে উঠছে না। যেটা একেবারে বিশুদ্ধ ভারতীয়, সেটার কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। সবকিছুতেই এখানে প্রহসন। বেশ কয়েক বছর আগে, সুব্বুলক্ষ্মী, জেআরডি টাটা, মাদার তেরেসা আর আমাকে সম্মাননা দিয়েছিল বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি। আমাদের দেওয়া হয়েছে একটা লাল টুপি আর একটা গাউন (হাসি)। এটা হলো হিন্দু শিক্ষার বহিঃপ্রকাশ! এরাই ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক! পৃথিবীজুড়ে অশ্লীল বলে কিছু কি আপনি চিত্রকলায় খুঁজে পাবেন? খুবই দুঃখজনক। কী আর বলবো।

এই সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয় ভারতের তেহেলকা ম্যাগাজিনে, ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।

Leave a Reply