logo

সম্পাদকীয়

শিল্প ও শিল্পী চিত্রকলা ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিকটি বাংলা ভাষাভাষী পাঠকমহলে যেভাবে আদৃত হয়েছে তাতে আমরা আনন্দিত হয়েছি। পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব – এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। লেখক ও পাঠকরা এ-পত্রিকার জন্য যেভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, চলার পথে তা আমাদের অবলম্বন হয়ে উঠছে।
ভারতবর্ষের চিত্রকলাকে যে-কজন শিল্পী আধুনিকতার পথনির্মাণে নানামাত্রিক করে তুলেছিলেন অমৃতা শেরগিল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জন্ম হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি ১৯১৩ সালে, বুদাপেস্টে। পিতা ছিলেন ভারতীয় ও মা হাঙ্গেরিয়ান। মাত্র আঠাশ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন। রেখে যান উত্তরকালের জন্য এক ঐশ্বর্যময় শিল্পভুবন, যা ছিল ভারতবর্ষের শিল্পধারায় গতানুগতিকতামুক্ত ও আধুনিকতার অন্যতম আলোকবর্তিকা। অমৃতা শেরগিলের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনটি প্রবন্ধে তাঁর শিল্পবোধ ও জীবনবোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী গণেশ পাইন সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি চিত্রচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। পুরাণকল্পের প্রতিধ্বনিত সময়, মৃত্যু, আলো-আঁধার, জীবন ও মনের গূঢ় অন্ধকারের বিচিত্র এক মোহনীয় জগৎ সৃষ্টি করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই সময়ের সর্বাধিক আলোচিত ও প্রধান এক শিল্পী। ব্যক্তিত্ব, শিল্পমনীষা ও বোধের গভীরতা দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক চিত্রকর হিসেবে আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনেও বিবেচিত হয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে এ-সংখ্যায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপক তিনটি প্রবন্ধ পত্রস্থ হলো।
বাঙালি শিল্পানুরাগী ও বিদ্যার্থীদের মধ্যে পাবলো পিকাসোর সৃজন নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তাঁর বহুধাবিস্তৃত জীবন, ব্যক্তিত্ব ও চিত্রশিল্পের সকল মাধ্যমে তাঁর বিচরণ এবং অফুরন্ত সৃষ্টি তাঁকে বিংশ শতাব্দীর এক কিংবদন্তিতুল্য শিল্পীপুরুষ করে তুলেছিল। সাম্প্রতিককালে টরন্টোতে পাবলো পিকাসোর একটি প্রদর্শনী দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন আবুল মোমেন।
এছাড়া ঢাকায় অনুষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য তিনটি প্রদর্শনীর সমীক্ষা রইল এ-সংখ্যায়। প্রদর্শনীর শিল্পীরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল।
সম্প্রতি যোগেন চৌধুরীর সামগ্রিক কাজের প্রদর্শনী হয়েছিল শান্তিনিকেতনে। এ-উপলক্ষে তাঁর কয়েক দশকের প্রতিনিধিত্বমূলক সৃজন ও চিত্রকর্মের ঐশ্বর্যময় ভুবন, তাঁর উত্তরণ ও সিদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছেন সৌমিক নন্দী মজুমদার।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট স্থপতি কাজী খালেদ আশরাফ-লিখিত ডিজাইনিং ঢাকা শীর্ষক একটি গ্রন্থের আলোচনা-প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক এই ঢাকা নগরী সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে কীভাবে নৈরাজ্যময় এক শহর হয়ে উঠেছে তা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতদ্সত্ত্বেও এ-শহরের আধুনিক নগর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যে শেষ হয়ে যায়নি এ-প্রসঙ্গে স্থপতি আমিমুল এহসান এই গ্রন্থটির আলোচনা-প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটির লেখক ও আলোচক স্থপতি হওয়ায় পরিকল্পিত, দৃষ্টিনন্দন ও মনোগ্রাহী শহর সম্পর্কে নানা কথা উঠে এসেছে। কিছু সুপারিশ আছে এ-আলোচনায়। নগর পরিকল্পনাবিদরা যদি এই সুপারিশগুলো বিবেচনা করেন, তাহলে এই শহরটি নানা দিক থেকে গুরুত্ববহ হয়ে উঠবে – এ-কথা বলেছেন আলোচক।
এছাড়া রইল নিয়মিত বিভাগ, বাংলা সংগীতজগতের অবিস্মরণীয় সংগীতশিল্পী ইন্দুবালাকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ, চলচ্চিত্র, উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী ও নিলামের খবর।

Leave a Reply