বাংলাদেশের চিত্রকলা ও সাংস্কৃতিক কর্মপ্রবাহকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে শিল্প ও শিল্পী নামে চিত্রকলা-বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হলো। এই পত্রিকায় বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার বিভিন্ন অভিব্যক্তি – নাটক, সংগীত, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য ও আলোকচিত্র – সম্পর্কে প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনের সাম্প্রতিক প্রবণতা ও গতিধারা সম্পর্কেও আলোকপাত করা হবে।
অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন, এই দুর্মূল্যের বাজারে চিত্রকলা-বিষয়ক একটি পত্রিকার আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে কি না। আমরা কেবল বলতে চাই, পাঠক, লেখকদের আনুকূল্য পেলে আমরা যে-কোনো ভাবেই হোক এ-পত্রিকাটি টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকবো।
শিল্প ও শিল্পী মনে করে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মপ্রবাহে চিত্রকলা সর্বাপেক্ষা সজীব ও প্রাণবন্ত। পঞ্চাশের দশক থেকেই এ-দেশের চিত্রকলা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে একটি নিজস্ব পথ ও গতিধারা নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছে। জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, কামরুল হাসান ও এস এম সুলতানের মতো শিল্পীর প্রযতেœ যে-চিত্রচর্চার প্রবাহ শুরু হয়েছে, তা এ-দেশের অগণিত চিত্রকরের সৃজনাবেগকে জিজ্ঞাসা-উন্মুখ ও আধুনিক করে তুলেছে। পঞ্চাশের দশকেই এ-দেশের প্রথম প্রজন্মের কয়েকজন শিল্পী পাড়ি দেন ইউরোপে। পরবর্তীকালে অনেকে আমেরিকায় যান। পাশ্চাত্যে শিল্পশিক্ষা তাঁদের মানসযাত্রা ও সৃজনকে করে তোলে নানাদিক থেকে ঐতিহ্য-আশ্রয়ী, গভীর ও গহন এবং আন্তর্জাতিক। আমরা এই চেতনাকেই তুলে ধরতে চাই শিল্প ও শিল্পী ত্রৈমাসিক পত্রিকায়।
একটি পত্রিকার চরিত্র নির্মিত হবে তার পথযাত্রায়, ধারাবাহিক বিকাশের মধ্য দিয়ে। আশা করি, শিল্প ও শিল্পী এমন একটি পত্রিকা হবে যা বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার দর্পণ হবে এবং শিল্পী ও সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষজনকে ভাবনার খোরাক জোগাবে। বিশেষ করে আমরা চাইব, এ-পত্রিকা যেন তরুণ শিল্পী ও শিল্পানুরাগীর বোধ ও কণ্ঠকে ধারণ করতে পারে।
শিল্প ও শিল্পীর মুদ্রণ যখন শেষ পর্যায়ে তখনই সংবাদ এলো সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও টিভি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মিশুক মুনীর আর আমাদের মাঝে নেই। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁরা নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল মামুন ও শিল্পী দিলারা বেগম জলি। এই পাঁচজন শিল্প ও শিল্পী পরিবারেরও আপনজন। এই মর্মান্তিক সংবাদে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। শোক প্রকাশের ভাষা আমাদের জানা নেই।
আবুল খায়ের
প্রকাশক
শিল্প ও শিল্পী