শিল্প ও শিল্পী ত্রৈমাসিকটির চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা বেরোল।
বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যচর্চার পথিকৃৎ নভেরা আহমেদ ৬ মে, ২০১৫ পারী শহরে পরলোকগমন করেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি স্বেচছানির্বাসনের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। কিছুটা নিঃসঙ্গ এবং অভিমানাহতচিত্তে একাকী জীবনই তাঁর সঙ্গী হয়েছিল। অথচ এই শিল্পীমানুষটি গত শতাব্দীর পঞ্চাশের ও ষাটের দশকে বাংলাদেশের শিল্প-আন্দোলনকে ভাস্কর্যচর্চার মধ্য দিয়ে সজীব ও প্রাণবন্ত রেখেছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যচর্চার দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের কাছে প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে যে, তিনি সময়ের চেয়ে অগ্রসর ছিলেন। পাশ্চাত্যে ভাস্কর্যবিদ্যা শিক্ষা তাঁর সৃজনকে করে তুলেছিল সূক্ষ্মবোধে ও শিল্পিত প্রকাশে উজ্জ্বল। ১৯৬০ সালে তিনি যে প্রদর্শনী করেন ঢাকায় তা ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যময়। বিষয় ও প্রকরণে এই প্রদর্শনী নভেরাকে দেশের শীর্ষ ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে শিল্পানুরাগীরা নানা শোকসভায় এবং মূল্যায়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়নে শিল্পী হামিদুর রাহমানের সঙ্গে তাঁর অবদানকেও অতীব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন। আশা করি কোনো তরুণ গবেষক নির্মোহ দৃষ্টিতে এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে আলোকপাত করবেন।
শিল্প ও শিল্পীর এ-সংখ্যায় তিনটি প্রবন্ধে নভেরার সৃজন ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা এই তিনটি প্রবন্ধ পত্রস্থ করে এই মহান ভাস্করের অর্জন ও সৃজনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি।
‘উনিশ শতকের ইয়োরোপীয় শিল্পকলায় প্রাচ্যজাগতিক প্রভাব’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে সাগর চৌধুরী একটি সময় ও সৃজন উদ্যোগের পরিশীলিত বোধকে ধরতে চেয়েছেন।
চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ আত্মপ্রতিকৃতি অঙ্কনে যে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং ভিন্ন আত্মপ্রতিকৃতিতে সময়চেতনা ও ব্যক্তিত্বকে যে অনুষঙ্গে স্পর্শ করে গেছেন শিল্প-সমালোচক মৃণাল ঘোষ সে সম্পর্কে লিখেছেন।
সম্প্রতি বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে কাজী গিয়াসের একক প্রদর্শনী হয়ে গেল। কাজী গিয়াসের কাজে যে সূক্ষ্ম অনুভূতিময় এক জগৎ সর্বদা দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ প্রদর্শনীর সৃষ্টিগুচ্ছে তার উপস্থিতি ও প্রসারণ ছিল। এ নিয়ে লিখেছেন শিল্প-সমালোচক মোবাশ্বির আলম মজুমদার।
শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত ২১তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তরুণদের নিরীক্ষাধর্মী সৃজনকে খুবই তাৎপর্যময় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বোধের উজ্জবল প্রকাশের চিহ্নবহ নানা ধরনের নিরীক্ষামূলক চিত্র ছিল এতে। এসব চিত্রের অভিব্যক্তি থেকে বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি উপলব্ধি করা গেছে। স্থাপত্য বিভাগে বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যচর্চার পথিকৃৎ মাজহারুল ইসলামকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে একটি প্রবন্ধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হলো।
এ ছাড়া রইল নিয়মিত বিভাগ।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। কাগজের দুর্মূল্য ও বাজারের বিরূপ পরিস্থিতির কারণে আগামী সংখ্যা থেকে শিল্প ও শিল্পী ষাণ্মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হবে। বছরে দুটি সংখ্যায় আমরা চেষ্টা করব শিল্প ও শিল্পীর চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে।