logo

শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোহাম্মদ কিবরিয়া

শুভ জ্যোতি
বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে সম্প্রতি হয়ে গেল সদ্যপ্রয়াত শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া স্মরণে এক বিশেষ চিত্রকর্ম-প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ১১১টি শিল্পকর্ম ছিল, যেগুলো দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়েরের সংগ্রহ থেকে নেওয়া। ‘শ্রদ্ধার্ঘ : মোহাম্মদ কিবরিয়া’ শিরোনামে প্রদর্শনীতে শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার নিরবচ্ছিন্ন সাধনার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে দর্শকের সামনে। ছাপচিত্র মাধ্যম, পেইন্টিং, ড্রইংয়ের কাজগুলো ২০০৯ পর্যন্ত করা। বাংলাদেশের শিল্প-আন্দোলনে ষাটের দশকের আবহে তৈরি হওয়া বিমূর্তধারার চিত্রকলাচর্চায় সফলতম নিভৃতচারী শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। প্রথম জীবনে কিবরিয়া বাস্তবধারায় সৃষ্টি দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর জাপানে ছাপচিত্র নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। তিনি দীর্ঘ সময়, ’৯৭ সাল পর্যন্ত, ঢাকা চারুকলায় ছাপচিত্র বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার ছাপচিত্র মাধ্যমে করা প্রচণ্ড  মিনিমাইজড রেখা, ফর্ম, রঙের মার্জিত ব্যবহার নতুন স্বকীয় ভাষা তৈরি করেছে বাংলাদেশের শিল্পজগতে। সেই ভাষায় নবীন ও আরো কয়েকজন শিল্পী কাজ করছেন, যা ‘কিবরিয়া স্কুল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এচিং মাধ্যমে করা ‘মেমোরি’ সিরিজের ছবিগুলোতে টেক্সচার ও পরিশীলিত গূঢ় অর্থ-রেখা বিন্যাসে যে অনুভূতি প্রতিফলিত করে তা হয়তো ’৪৭-এর দেশভাগের বেদনাবিধুর স্মৃতিবিজড়িত। বিমূর্তায়নে কিবরিয়া সব আবেগ-অনুভূতির নির্যাসটুকুন ধরেছেন সফলতম উপায়ে। জগৎকে দেখেছেন নিজস্ব অনুভূতিতে। শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার বেশ কিছু কোলাজ ও পেইন্টিং দেখার সুযোগ মিলেছে প্রদর্শনীতে। টেক্সচার, লিপির ব্যবহার করেছেন কখনো। রঙের ব্যাকরণ মেনেছেন কোথাও, আবার পরমুহূর্তে অগ্রাহ্য করেছেন সব নিয়মকানুন। চিত্রপটের সঙ্গে ছবির বিষয়ের বস্তুগত বিভাজন করেছেন সুপরিকল্পিত স্থান বিভাজনের মাধ্যমে। দেখবার সুযোগ মিলেছে বাস্তববাদী ঢংয়ে করা কিছু কাজ।
এ প্রদর্শনীর সঙ্গে মোড়ক উন্মোচন হয়েছে কালি ও কলম পত্রিকার কিবরিয়া স্মরণসংখ্যার। ফলে নবীন প্রজন্মের কাছে শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়াকে পরিচিত করার চমৎকার সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় øাতক পর্যায়ে শিক্ষা সমাপন এবং ১৯৫৬-৬২ সালে জাপানের টোকিও থেকে চিত্রকলায় উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাপানের সংস্কৃতিমন্ত্রীর পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে প্রফেসর এমেরিটাস হিসেবে মনোনীত হন। গত ৭ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Reply