আ বু ল বার্ ক আ ল্ ভী
এদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পচর্চা শুরুর আন্দোলনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের হাতে হাত মিলিয়ে যে কজন শিল্পী অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট’, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। দেশবিভাগের পরে ১৯৪৮-এ কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের শিক্ষকতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ ২০ মে ২০১২ দীর্ঘ রোগভোগের পর ৯০ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। আমরা তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য খুবই বেদনাবোধ করছি। দীর্ঘ সত্তর বছরের শিল্প সাধনা ও চর্চার দ্বারা তিনি এদেশের চিত্রকলা আন্দোলনকে উচ্চতায় স্থাপন করেছেন। চল্লিশের দশকেই তিনি এচিং আর
উড-এনগ্রেভিংয়ের জন্যে শিল্পবোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ওই সময়ে করা তাঁর এই কাজগুলোর জন্য তিনি খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। ছাপচিত্রের পাশাপাশি তেলরঙেও অসাধারণ কিছু কাজের জন্যে সমাদৃত হয়েছিলেন। বিহার শিল্পকলা পরিষদ আয়োজিত প্রদর্শনীতে তখনকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তিনি অর্জন করেন। তেল রঙের ছবি, এই কাজটি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। দ্বারভাঙা মহারাজ এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছিলেন। ‘কবুতর’ ছবির জন্যে পেয়েছিলেন অ্যাকাডেমি প্রেসিডেন্টের স্বর্ণপদক। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস থেকে এচিং-অ্যাকুয়াটিন্টের জন্যে পান আরো একটি পুরস্কার। দুই বছরের মধ্যে এতগুলো বড় পুরস্কার তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিল। এই দুর্লভ সম্মানের জন্যে ১৯৪৬-৪৭ সালে তাঁকে অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট সোসাইটির কাউন্সিল সদস্য করা হয়েছিল। সোসাইটি ছিল দিল্লিকেন্দ্রিক। ১৯৪৬ সালে প্যারিসের ‘মডার্ন’ আর্ট মিউজিয়ামে ইউনেস্কো আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর ছবিও নির্বাচিত হয়েছিল। এবং চুয়াল্লিশটি দেশের নেতৃস্থানীয় শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। পিকাসো, ব্রাক, মাতিসের মতো শিল্পীদের কাজের সঙ্গে তাঁর তিনটি কাজ প্রদর্শিত হয়েছিল। শিল্পী সফিউদ্দীন সমগ্র ভারতবর্ষের চিত্রবোদ্ধাদের কাছে উজ্জ্বল ও পরিচিত নাম। তাঁর যে-কোনো মাধ্যমের ছবি ভারতবর্ষের
যে-কোনো প্রদর্শনীতে সমাদৃত।
১৯৪৮-এ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ, শিল্পী আনোয়ারুল হক, পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী হবিবুর রহমান (উড-এনগ্রেভিং/উডকাট করতেন) – এই সব আলোকিত শিল্পীকে নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এদেশের শিল্প-আন্দোলনের।
শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ এদেশের শিল্প-আন্দোলনের সূতিকাগার ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টে’র শুধু একজন প্রতিষ্ঠাতা নন, এদেশের ছাপচিত্রের জনকও ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই এদেশের ছাপচিত্র চর্চার যাত্রা শুরু। ছাপচিত্রের উডকাট, উড-এনগ্রেভিং, মেটাল এনগ্রেভিং, ড্রাই পয়েন্ট, এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট এবং লিথোগ্রাফি – এই সব মাধ্যমেই যেহেতু শিল্পী সিদ্ধহস্ত ছিলেন, যার জন্যে বিভাগীয় কার্যক্রমকে সুচারুভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ১৯৬২-তে শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া জাপান থেকে লিথোগ্রাফি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করলে শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়।
সফিউদ্দীন আহমেদ শুরুতে শুধু ছাপচিত্রের ক্লাসই নিতেন না, ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগেরও ক্লাস নিয়েছেন। তাঁর ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা সচেতন থাকত, ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকত না কোনোভাবেই। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ দেখাতেন, বোঝাতেন আর আদায় করে নিতেন। তিনি ছিলেন সফল চিত্রকর, প্রিন্টমেকার এবং একজন একাগ্র সংবেদনশীল শিক্ষক।
মানুষ, প্রকৃতি, সমাজ ও পরিপার্শ্ব – সবকিছুই তাঁর চিন্তা-ভাবনাকে সবসময় আলোড়িত করেছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর চিত্রকলায়। চল্লিশের দশকে কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র থাকাকালে প্রত্যক্ষ করেছেন অগ্রজদের কাজ আর বেঙ্গল স্কুলের প্রভাবসঞ্চারী স্বতন্ত্র চিত্রভাষা। তিনি সবকিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন খুব কাছে থেকে। সেই সময়ে পাশ্চাত্যে এবং ভারতবর্ষে শিল্প-সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে স্বকীয় ভাষা ও মেজাজ নির্মাণের ও ভাঙাগড়ার যে আয়োজন চলছিল তাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ সবকিছুই দেখেছেন এবং নিজেকে নিজের মতো করে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ছুটিতে চলে গেছেন বিহারের সাঁওতাল এলাকায়। মধুপুর, গিরিডি বা দুমকায়। পাহাড়, বৃক্ষশোভিত উঁচু-নিচু দিগন্ত-ছোঁয়া প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। অসংখ্য স্কেচ, ড্রইং আর জলরং করেছেন। ১৯৩৭ থেকে ’৪৫-৪৬ পর্যন্ত এই
আসা-যাওয়া অব্যাহত ছিল। সাঁওতালদের সহজ-সরল স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন তাঁকে আলোড়িত করেছিল। জীবনযাপনের মধ্যে এক প্রাকৃতিক সারল্য খুঁজে পেয়েছিলেন।
এই সময়ে করা জলরং, উড-এনগ্রেভিং, এচিং, ড্রাইপয়েন্ট বা তেলরঙে করা কাজ তাঁর চিন্তাভাবনায়, সৃষ্টিশীলতায় এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল। এর সঙ্গে কলকাতা আর্ট স্কুলের কয়েকজন খ্যাতিমান শিক্ষক, যাঁদের কথা তাঁর স্মৃতিচারণে সবসময় উঠে আসত সেই মুকুল দে, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বসন্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, সতীশ চন্দ্র সিংহ, প্রহ্লাদ কর্মকার আর আবদুল মঈন – এঁদের সাহচর্য, উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় উপদেশ তাঁর চলার পথকে সুগম করেছে। উড-এনগ্রেভিংয়ের শিক্ষক আবদুল মঈনের উৎসাহ আর রমেন চক্রবর্তীর কাছে হাতে-কলমে ছাপচিত্রের করণ-কৌশল শিক্ষা, সেই সঙ্গে নিজের মেধা, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের সংযোজন তাঁর কাজে (ছাপচিত্রে) নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীনের সময়কালের কলকাতায় (ভারতবর্ষে) চিত্রচর্চায় প্রতিনিধিত্বশীল প্রাকৃতিক দৃশ্যে স্বাভাবিক জীবনদৃশ্য অঙ্কনের রেওয়াজ খুব একটা বেশি ছিল না। তারপরেও সফিউদ্দীনের কাজে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বাস্তববাদী রূপায়ণ দেখতে পাই।
সেই ’৪০-এ করা (প্রথম উড-এনগ্রেভিং) ‘দুমকা’ বা ’৪২-এর ‘কৃষকের মুখে’ আলোছায়া আর নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করার প্রয়াস দেখা যায়। যার চূড়ান্ত প্রতিফলন পরবর্তী সময়ের কাজে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন – ‘বাঁকুড়ার ল্যান্ডস্কেপ’ (’৪২), ‘বাড়ীর পথে’ (’৪৩), ‘বাড়ীফেরা’ (’৪৪), ‘সাঁওতাল রমণী’ (’৪৬), ‘মেলার পথে’ (’৪৭) করা এনগ্রেভিংগুলোতে। সব কাজেই আলোছায়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে (’৪৬-৪৮) তেলরঙে করা চিত্রেও দেখা যাচ্ছে স্ট্রোকের ব্যবহার আর আলোছায়া নিয়ে খেলা। ‘শালবন দুমকা’, ‘দুমকা-১’, ‘দুমকা-২’, ‘সূর্যালোকে কুটির’, ‘দিলীপ দাশগুপ্তের প্রতিকৃতি’, ‘জড়জীবন’ – এই ছবিগুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে। এছাড়া এই সময়ে করা ড্রাইপয়েন্ট ’৪৪, ’৪৫ ও ’৪৬-এ করা ও এচিং (’৪৫), এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট ‘কবুতর’, ‘ময়ূরাক্ষী’ – এই কাজগুলোতেও তাঁর স্বতন্ত্র একটা স্টাইল লক্ষ করা যায়।
১৯৪৭-এর পরবর্তী সময়ে দেশবিভাগের পরে ’৪৮-এ জয়নুল, সফিউদ্দীন, আনোয়ারুল হক, কামরুলরা যখন এদেশে চলে এলেন তখন প্রত্যেকের কাজেই ছিল একটা নিজস্বতা। ওই বাংলার কাজের থেকে একটু স্বতন্ত্র। তারপরেও দেশভাগের পর শিল্পীরা এদেশে এসে সচেষ্ট হলেন শিল্পকলার একটা নিজস্ব ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠায়, এদেশের চিত্রশিল্পের চরিত্র নির্মাণ ও স্বতন্ত্র পথ উদ্ভাবনের। জয়নুল আবেদিন যামিনী রায়ের মতো লোকশিল্প থেকে ধরন-প্রভাবিত হয়ে নিজস্ব ঢং সৃষ্টি করেন। কামরুল হাসান সরাসরি লোকশিল্প থেকে প্রভাবিত হয়ে নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করেন। সফিউদ্দীন আহমেদ বিষয়টিকে চর্চায় আনেন অন্যভাবে। লোকশিল্পের মোটিফকে ছবির গ্রামবাংলার ফর্মের আকারে আধুনিক রীতিতে ভেঙে চিত্ররচনার চেষ্টা নেন। আধুনিক চিত্রশিল্পীদের মতো তাঁর ছিল অনেক প্রশ্ন এবং চিত্রকলার ঐতিহ্য বিষয়ে ভাবনা। এই বোধেই পুষ্ট হয়েছে তাঁর চিত্রকলা।
দেশবিভাগের পরে ১৯৪৮-এ শিল্পী সফিউদ্দীন এদেশে চলে এলেন। ছবি আঁকার সরঞ্জামের অভাব এবং চারুকলার প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই হয়তো ১৯৪৯ থেকে ’৫১ পর্যন্ত তাঁর কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু ’৫২ থেকে আবার তাঁর নিয়মিত করা উল্লেখযোগ্য কাজ আমাদের চোখে পড়ে। তেলরঙে করা তাঁর বিখ্যাত ‘ধানঝাড়া’ (’৫২) ও ‘ধানের বাজার’ (’৫২) উল্লেখযোগ্য। মোটা রঙে স্ট্রোকে করা কাজ। ১৯৫৪-তে করা তেলরং চিত্র ‘মাছধরা’ ও ‘কাঠমিস্ত্রী’ – এই ছবি দুটিতে কিছুটা লোকজ প্রভাব লক্ষ করা যায়। কিন্তু ‘শূন্য ঝুড়ি’ (’৫৪), ‘শরবতের দোকান-১’ (’৫৪), ‘সূর্যমুখী’ (’৫৬) ও ‘মাছধরা’ (’৫৮) – এই ছবিগুলোতে আবার পরিবর্তন এসেছে। উড-এনগ্রেভিংয়ে করা বন্য (’৫৬) ও ‘ইমেজ ফ্রম লাইফ’ (’৫৫) – এই দুটি কাজ ও আগের এনগ্রেভিংগুলো থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
১৯৫৬-তে বিলেত গেলেন ছাপচিত্রে উচ্চশিক্ষার জন্যে। শিক্ষা গ্রহণকালে ইউরোপীয় সমকালীন শিল্পীদের মৌলিক কাজ দেখার সুযোগ হলো। এর ফলে তাঁর ভেতর গ্রহণ-বর্জনের এক বোধ কাজ করেছিল। এখানে শিক্ষক হিসেবে পেলেন বিশ্ববিখ্যাত প্রিন্টমেকার হেটারের ছাত্র মালিন ইভান্সকে। সেন্ট্রাল স্কুল থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয়ে হাতে-কলমে উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলেন। কাজ নিয়ে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। বিভিন্ন গ্যালারি এবং বিখ্যাত শিল্পীদের কাজ তাঁর চিন্তা-ভাবনাকে আরো স্বকীয় করতে সাহায্য করে। এই সময়ে করা এনগ্রেভিং ও সফট গ্রাউন্ডে করা ‘হলুদ জাল’ (’৫৭) ও এনগ্রেভিং-অ্যাকুয়াটিন্টে করা ‘কম্পোজিশন’ (’৫৮), ড্রাইপয়েন্টে করা ‘দুমকা’ (’৫৭), ‘মেটাল এনগ্রেভিং গুণটানা’ (’৫৮) ও ‘জেলের স্বপ্ন’ (’৫৭) এবং এচিং-অ্যাকুয়াটিন্টে করা ‘জড়জীবন’ (’৫৭), ‘নেমে যাওয়া বন্যা’ (’৫৮), ‘ফিশিং টাইম’ (’৫৮), ‘সেতু পারাপার’ (’৫৯), ‘ঝড়ের আগে’ (’৫৮), ‘বন্য’ (৫৯) – এগুলো উল্লেখযোগ্য।
এরপর ঢাকায় ফিরে করেছেন মেটাল এনগ্রেভিংয়ে কয়েকটি কাজ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘একুশে স্মরণে’ (’৮৭), ‘একাত্তরের স্মৃতি’ (’৮৮), ‘একাত্তরের স্মরণে’ (২০০০) ও এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে করা ‘বিক্ষুব্ধ মাছ’ (’৫৪), ‘নীল জল’ (’৬৪), ‘জলের নিনাদ’ (’৮৫), ‘ফিশিং নেট’ (’৬৬), ‘ফিশিং নেট’ (’৬৭), আর পেইন্টিং তেলরং মাধ্যমে ‘প্যারিসে বইয়ের দোকান’ (’৬০), ‘বন্য’ (’৮৯), ‘রিদম অব লাইন-১’ (’৯৮), ‘মাছধরার জাল’ (’৭৫), ‘সূর্য, গাছ ও মেয়ে’ (’৮৯), ‘আপেল ও গাড়ি’ (’৭৫), ‘শরবতের দোকান-২ (’৮৮), ‘মাছ ও জাল’ (’৯১), ‘নারী’ (’৯৪), ‘লাল ও সবুজ’ (’৯৪), ‘মাছ ও জাল’ (’৯৬), ‘নীল জল’ (’৯৬), ‘একাত্তরের স্মরণে’ (’৯৮), ‘স্টিল লাইফ-৩’ (’৮৪), ‘কালো মাছ’ (’৮৪), ‘নীলের নিনাদ-১’ (২০০০), ‘প্রকৃতির সংগীত-২’ (২০০০), ‘নীলের নিনাদ-২’ (২০০০), ‘জীবন’ (’৯৬), ‘অন্ধ মেয়ে ও মৃত পাখি’ (২০০০), ‘প্রকৃতির সংগীত’ (২০০০), ‘রিদম অব লাইন’ (২০০১), ‘রিদম অব লাইন-৩’ (২০০৫) উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া চারকোলে (১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে) ক্রেয়ন, পেনসিল ও কালি-কলমে চব্বিশটি কাজ করেছেন।
শিল্পী সফিউদ্দীন নিয়মিত ছবি এঁকে গেছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। অসুস্থ হওয়ায় আর কাজ করা সম্ভব হয়নি। কাজ নিয়ে সহজে তৃপ্ত হতে পারতেন না। সবসময় অতৃপ্তিতে ভুগতেন বলে ছবির পরিবর্তন ঘটতে থাকত নিয়মিত। কোনো কাজই সহজে শেষ হতো না। একেকটা কাজ শেষ করতে এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত লেগে যেত। কোনো কোনো কাজে ছয় মাসও লাগিয়েছেন। যার জন্যে তাঁর ছবির সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। হয়তো ছয়-সাতশো হবে। ’৪৬-এ যে স্টাইলে কাজ করেছেন, ’৫৪-তে এসে দেখা গেল সেই স্টাইলের পরিবর্তন ঘটেছে। ’৫৬-৫৮-তে ‘মাছধরা’ ও ‘কাঠমিস্ত্রী’ ছবি দুটি আবার অন্য আঙ্গিকে করা। ’৬০-এ করা ‘প্যারিসে বইয়ের দোকান’, এরপর ’৭৫-এ করা ‘মাছধরার জাল’, ’৮৮-তে করা ‘শরবতের দোকান’, ’৮৪-তে করা ‘কালো মাছ’ ছবিতে কাজের আঙ্গিকগত পরিবর্তন সবসময়ে ঘটেছে। ’৯৮ থেকে ২০০১-এ চারকোলে সাদা-কালোয় আঁকা ছবিগুলোতে ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। সদা অতৃপ্তি তাঁর কাজের এই আঙ্গিকগত পরিবর্তনের মূল কারণ।