আ লী মা হ মু দ
রোকেয়া সুলতানা এদেশের একজন খ্যাতনামা শিল্পী। বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে নিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁর সৃজনে মূর্ত হয়ে ওঠে মানবজীবনের নানা অনুষঙ্গ। ইতোপূর্বে একটি প্রদর্শনীতে তিনি মানবিক সম্পর্কের এমন কিছু দিকের উন্মোচন করেছিলেন, যা হয়ে উঠেছিল নবীন ভাবনার আলোকে দ্যুতিময়।
সম্প্রতি তিনি একক প্রদর্শনী করেছেন বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে। শিল্পীর প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘ফাতা মরগানা’। এই প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্প-সমালোচক মোস্তফা জামানের উক্তিটি খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘এই লাতিন এক্সপ্রেশন মরু, মেরু, এমনকি সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের মরীচিকার দিকে নির্দেশ করে, যা মানুষের দৃষ্টিক্ষমতা ও বাস্তব জগতের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় এক বাস্তবতার অবতারণা করে। অর্থাৎ বাস্তব বিষয়বস্ত্ততে চোখ রেখে তা পাঠ করার ধারণাটা অত সরল নয়; দৃষ্টি ও বাস্তব এই দুইয়ের মাঝে তৃতীয় এক পর্দা উপস্থিত, যা মোটেও ব্যক্তিগত ভ্রম নয়, বরং বাস্তব জগতেরই তৈরি ভিন্ন এক রূপ।’ এই উক্তিটি যথার্থ এক উপলব্ধি সৃষ্টি করে এই প্রদর্শনীর ছবির অনুষঙ্গ বুঝতে।
তাঁর সৃজনে সাম্প্রতিক শিল্পজিজ্ঞাসা ও নিরীক্ষার ছাপ ছিল স্পষ্ট। তিনি করণকৌশলে যে কত সিদ্ধহস্ত এবং বিষয় নির্বাচনেও ভিন্নতর এক বোধ সৃষ্টিতে উৎসাহী এ-প্রদর্শনীর সৃষ্টিগুচ্ছে তা বিশেষভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। নবতর ব্যঞ্জনা এবং শিল্পিত নব্য বোধ সঞ্চার দ্বারা তিনি এক নতুন পথ নির্মাণে যে ক্রিয়াশীল তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। করণকৌশলের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিকও স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল তাঁর সৃষ্টিতে।
তিনি ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম শেষ করে দেশে ফিরে এসেছেন। বিদেশে তাঁর শিল্পবোধ ও সৃজন নানাদিক থেকে নবমাত্রা সঞ্চারে যে তৎপর ছিল সাম্প্রতিক প্রদর্শনীর সৃষ্টিগুচ্ছে তার ছাপ স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বিদেশে শিল্পশিক্ষা গ্রহণকালে ক্যারন কুনের সৃজন উদ্ভাবনের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান শিল্পীকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তারই ছাপ ছিল এই প্রদর্শনীতে। ফর্মের মধ্যে রহস্যময়তা সৃষ্টির জন্য তাঁর সাম্প্রতিক সৃজন হয়ে উঠেছিল মার্জিত ও নবীন নান্দনিক প্রকাশে উজ্জ্বল।