রা জী ব ভৌ মি ক
তাঁর সবই ছিল – রাফায়েলের মতো চোখ, লিওনার্দোর মতো বুদ্ধি এবং দাড়িবিহীন কার্ট কোবেইনের মতো চেহারা। মাত্র তেরো বছর বয়সেই আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে ফেলেছিলেন তিনি। ইউরোপীয় শিল্পের ইতিহাসে একেবারে প্রথম কয়েকটি আত্মপ্রতিকৃতির একটি সেটি। পরে বড় হয়ে ইতালীয় ধ্র“পদী চিত্রকলার মনোমুগ্ধকর উষ্ণতাকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন শীতল গথিক উত্তরে, অর্থাৎ জার্মানিতে।
এখন আমরা যাকে বলি উত্তর ইউরোপীয় রেনেসাঁস, মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই সেই আন্দোলনের অন্যতম বড় তারকায় পরিণত হন আলব্রেখট ডিউখে। প্রাপ্তবয়স্ক ডিউখের আত্মপ্রতিকৃতি দেখে যদি যিশুখ্রিষ্টের কথা মনে পড়ে, তাহলে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না।
ক্যানভাসের চেয়ে কাগজেই যে ডিউখে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন তার প্রমাণ মিলবে ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্টের ‘আলব্রেখট ডিউখে : মাস্টার ড্রয়িংস, ওয়াটার কালারস অ্যান্ড প্রিন্টস ফ্রম দি অ্যালবার্টিনা’ শিরোনামের প্রদর্শনীটিতে এলে। ১৭ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ৯ জুন পর্যন্ত।
১৪৭১ সালে জার্মানির ন্যুরেমবার্গে জন্ম নেওয়া এবং সেখানেই ১৫২৮ সালে মারা যাওয়া ডিউখের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সব কটি সৃষ্টির দেখাই এখানে মিলবে। প্রদর্শনীতে তোলা হয়েছে একশোরও বেশি চিত্রকর্ম, যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ‘প্রেয়িং হ্যান্ডস’ এবং ‘দ্য গ্রেট পিস অফ টার্ফ’। এর প্রায় সবই আনা হয়েছে ভিয়েনার অ্যালবার্টিনা মিউজিয়াম থেকে।
ডিউখের বাবা ছিলেন কামার। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সবাই চেয়েছিল তিনি তাঁর বাবার পেশাকেই বেছে নিক। কিন্তু অচিরেই ডিউখে প্রমাণ দিতে থাকেন যে, তাঁর জন্ম হয়েছে আরো অনেক বড় কিছুর জন্য। শুরুটা তবে কোথায় – বাল্যকালের সেই আত্মপ্রতিকৃতিতেই কি? হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রদর্শনীতে ঢুকতেই চোখে পড়বে সেটি। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় যে সেটা তেরো বছরের এক বালকের আঁকা, তাহলে আপনাকে দোষ দেওয়া যাবে না।
ডিউখে যে আসলে কতখানি প্রতিভাবান তা এই একটি ছবি থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায়। বড় হয়ে যে তিনি একজন গোঁয়ার গোবিন্দ বাস্তববাদী হয়ে উঠবেন তার প্রমাণ মেলে সেই শিশুসুলভ আত্মপ্রতিকৃতিতেই। আঁচ পাওয়া যায় নাটকীয় কম্পোজিশনেরও। আঁকার জন্য সেই যে ছেলেবেলায় বেছে নিয়েছিলেন কাগজ, ডিউখে তা ছাড়েননি শেষবেলায়ও। আর এটা তো সবারই জানা যে, কাগজে আঁকা মানে ওয়ান-ওয়ে রাস্তা – হয় শেষ করো নয়তো নতুন করে আবার শুরু করো।
জীবনের শুরুর অনেকটা পর্যন্ত আর দশজন বুর্জোয়া শিল্পীর মতোই ছিল ডিউখের জীবন। ছবি আঁকা শেখার পাশাপাশি, অর্থসংস্থানের জন্য শিখেছেন প্রিন্টমেকিংও। শুধু নিজ দেশে নয়, মানুষ কেমন করে ছবি আঁকে তা জানতে ইতালি গেছেন কয়েকবার। দুবছর পর, অর্থাৎ ১৪৯৬-এ যখন দেশে ফেরেন, সঙ্গে করে জার্মানিতে নিয়ে আসেন ইতালীয় চিত্রকলাকে। আগেই অবশ্য ইতালীয় চিত্রকলা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন ডিউখে। জার্মানিতে জনপ্রিয় গথিক ধরন-ধারণের সঙ্গে ইতালীয় কলার ক্লাসিক্যাল মোটিফকে মেশাতে শুরু করেন তিনি। এতে ব্যাপারটা যা দাঁড়ায় তা অনেকটা হালের পোস্টমডার্ন হাইব্রিডের মতো – অগোছালো, ধ্বংসাত্মক ও ক্ষুরধার একটা স্টাইলের জন্ম দেন ডিউখে।
যেমন ধরা যাক ‘দ্য সি মনস্টারে’র কথা। ট্রাইটনের পিঠে চেপে বসেছে নগ্ন এক নারী। ছবিটা দেখে গল্পটা পরিষ্কার হবে না। মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, একটি ন্যুড ছবিই আসলে আঁকতে চেয়েছিলেন ডিউখে। ট্রাইটনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন কেবল ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করতেই। সে যা-ই হোক। ছবির পটভূমিতে যে দৃশ্য দেখা যায়, তার প্রতিও যে ডিউখের বিশেষ যতœ ছিল বোঝা যায় তাও – সবুজ পর্বত আর ছোট্ট দুর্গ-শহর। গাছের প্রতিটা পাতা আর পাহাড়ের গায়ে প্রতিটা পাথরের ছবি ডিউখে এঁকেছেন একেবারে বাস্তবের মতো করে। সেই বাস্তবতার দিকে একবার চোখ গেলে, ট্রাইটনের পিঠে নগ্ন নারীর কথা আপনি ভুলে যেতেই পারেন।
১৫০৩ সালে জলরঙে আঁকা ‘ভার্জিন অ্যান্ড দ্য চাইল্ড উইথ এ মাল্টিচুড অফ অ্যানিম্যালস অ্যান্ড প্লান্টসে’ ডিউখে যা এঁকেছেন তাতে দুনিয়াটাকে মনে হবে একটি বিশাল বড় চিড়িয়াখানা। একই বছর আঁকা ‘গ্রেট পিস অফ টার্ফে’ ডিউখে একটি পতঙ্গের চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন একটি ঘাসের ডগাকে।
১৫০৫ থেকে ১৫০৭ – এ দুবছর দ্বিতীয়বারের মতো ভেনিসে ছিলেন ডিউখে। সেখানে একে একে জোড়া লাগে ডিউখের চিত্রকলার অসংযুক্ত প্রান্তগুলো। যেমন ধরা যাক ‘হেড অফ অ্যান অ্যাপস্টেল লুকিং-আপ’। ভেনিসে যাওয়ার আগে হয়তো ডিউখে ছবি আঁকার বিষয় হিসেবে এটিকে উদ্ভট বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু ভেনিস থেকে ফেরার পর সে-বিষয়ে ছবি তো আঁকলেনই, উদ্ভট হয়ে গেল নিপুণ ভাস্করের হাতে তৈরি চকচকে মসৃণ প্রতিমার মতো।
১৫১২ সাল – ডিউখের ক্যারিয়ারের সূর্য তখন মধ্যগগনে – নাম, যশ, অর্থ, খ্যাতি সবই তাঁর পায়ের কাছে। সে-সময় আঁকেন সম্রাট প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ানের প্রতিকৃতি। শিল্পীজীবনের সেরা সময়ের এই চক ড্রয়িংটি ডিউখের অন্যতম সেরা কাজগুলোর একটি। পুরস্কার হিসেবে সারাজীবনের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করে দেন সম্রাট। ১৫১৯ সালে সম্রাট ম্যাক্সিমিলিয়ান মারা গেলে তাঁর পেনশন বাতিল করে দেয় সরকার। ততদিনে মানসিক ও আধ্যাত্মিক এক সংকটে পড়ে গেছেন ডিউখে। সে-সময়ের ছবিগুলো দেখলে তার প্রমাণ মিলবে।
প্রদর্শনীতে ডিউখের যেসব ছবি বা সৃষ্টি তোলা হয়েছে তা দেখে যে-কোনো শিল্পরসিকের মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, গ্রেট এক্সপেকটেশনস বা পোর্ট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্টের মতো কোনো বিলডাংসরোমাঁ পড়ছেন তিনি। আয়োজকরা নিশ্চিত – বিলডাংসরোমাঁ হিসেবে আলব্রেখট ডিউখের জীবন পিপ কিংবা ডিলেলাসের চেয়ে কিছু কম বৈচিত্র্যময় নয়!
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে
- ঠিকানা
- সপ্তম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আশ্বিন ১৪২৫ । October 2018
- পুরানো সংখ্যা
- সপ্তম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । পৌষ ১৪২৪ । December 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২৩ । November 2016
- পঞ্চম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2016
- পঞ্চম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪২২ । November 2015
- চতুর্থ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আষাঢ় ১৪২২ । June 2015
- তৃতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । কার্তিক১৪২১ । November 2014
- তৃতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । আষাড় ১৪২১ । July 2014
- তৃতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪২০ । February 2014
- তৃতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২০ । Novembeer 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । শ্রাবণ ১৪২০ । July 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২০ । April 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । পৌষ ১৪১৯ । January 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । আশ্বিন ১৪১৯ । September 2012
- প্রথম বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ । May 2012
- প্রথম বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪১৮ । February 2012
- প্রথম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪১৮ । November 2011
- প্রথম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা। ভাদ্র ১৪১৮ । August 2011