পরবর্তী জীবনে মার্ক শাগাল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে নাটকীয় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির (দুই বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্পব) স্রোতে ভাসতে ভাসতে পার্থিব খ্যাতি ও সাফল্যের প্রায় সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যান। তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের বেশ কয়েকটা বছর তিনি কোথাও থিতু হয়ে বসতে পারেননি, বারবার তাঁকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, আশ্রয়ের খোঁজে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিতে হয়েছে এবং নির্বাসিতের জীবনযাপন করতেও তিনি বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এই সমস্ত বিপর্যয়ের মধ্যেও ভাগ্যদেবী তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি – এবং যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বরাবরই সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় উপস্থিত থাকতে পারার সুযোগ তাঁর সামনে এসে গেছে।
মার্ক শাগাল প্যারিসে আসেন ১৯১১ সালে প্রায় চবিবশ বছর বয়সে, ঠিক যখন ওই নগরী ‘কিউবিজম’ (Cubism), অর্থাৎ পাবলো পিকাসো, জর্জ ব্রাক প্রমুখ শিল্পীর দ্বারা প্রবর্তিত জ্যামিতিক অঙ্কনশৈলীর সঙ্গে সবেমাত্র পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আবার কিছুদিন পর তিনি যখন রাশিয়াতে ফিরে গেলেন তখন সেখানে শুরু হয়েছে কাজিমির মেলভিচের নেতৃত্বে ‘সুপ্রিম্যাটিজম’ (Suprematism) নামে আরেক ধরনের জ্যামিতিক বিমূর্ত শিল্পধারার উত্থান। ফলে জীবনের এই সংবেদনশীল সময়টাতে স্বাভাবিকভাবেই শাগালের ওপরে এই দুই সমান্তরাল শিল্পধারার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। প্যারিসের ‘সারিয়্যালিস্ট’ (Surrealist) বা অধিবাস্তববাদী শিল্পীমহল তাঁকে বেশ পছন্দই করত কিন্তু তিনি নিজেকে কখনোই সারিয়্যালিস্ট মনে করেননি এবং চল্লিশের দশকে নিউইয়র্কে প্রায় নির্বাসিত জীবনযাপনকারী ইয়োরোপীয় শিল্পীদের পাশাপাশি নিজের শিল্পকলার প্রদর্শনও তিনি করেছেন, যদিও অভিবাসী জনসম্প্রদায়ের সঙ্গে তিনি মেলামেশা করতেন না। পরবর্তী কয়েক বছরে শাগাল স্টেজ সেট বা নাট্যমঞ্চ সজ্জা এবং নাটকের পোশাক-পরিচ্ছদ ডিজাইনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন, সেইসঙ্গে স্টেইনড গ্লস বা রঞ্জিত কাচের কাজ, ম্যুরাল ছবি ও ঘরের সিলিংয়ের কারুকাজে তাঁর পারদর্শিতার জন্য যথেষ্ট প্রশংসিত হন। কিন্তু এসবের অর্থ এই নয় যে শাগাল আদতেই একজন প্রথম শ্রেণির শিল্পী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। দক্ষিণ ফ্রান্সে তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন পাবলো পিকাসো ও অঁরি মাতিস, এই দুজনের কেউই শাগালের কাজকে গুরুত্ব দিতেন না, বরং কিছুটা অবজ্ঞাই করতেন। শাগাল নিজেও বিশ্বাস করতেন যে তাঁর সবচেয়ে ভালো শিল্পকর্মগুলির সৃষ্টি হয়েছে ১৯২২ সালে তিনি শেষবারের মতো রাশিয়া ছেড়ে আসার আগেই, যদিও এর পরেও আরো তেষট্টি বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। ব্রিটেনের টেট লিভারপুল (Tate Liverpool) প্রদর্শশালায় চলতি বছরের ৮ জুন থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত শাগালের শিল্পকর্মের যে প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল সেখানে স্থান পেয়েছিল প্রধানত তাঁর এই সময়ের, অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে রাশিয়া ত্যাগের আগেকার কাজগুলিই।
মোভশা শাগাল, ওরফে মার্ক শাগাল, ‘হ্যাসিডিক’ (Hassidic) জনগোষ্ঠীর ঈডিশ-ভাষাভাষী এক পরিবারের নয়
সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাঁর শিল্পকর্মের সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার-আচরণ ও প্রচলিত লোককাহিনি থেকে সংকলিত, বিশেষ করে একসময়ে যেসব উৎসবে ও পালাপার্বণে নৃত্যগীতের মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে অতীন্দ্রিয় মিলনের কথা প্রকাশ করার চেষ্টা করা হতো তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত নানা বিচিত্র কাল্পনিক ছবি, মূর্তি ও নকশা। ভাইটেবক্স (Vitebsk) নামে যে ছোট্ট শহরটিতে শাগাল জন্মেছিলেন (বর্তমানে এটি বেলারুশ অঞ্চলের অন্তর্গত), সেটাতে ছিল কয়েক সারি কাঠের তৈরি নড়বড়ে বাড়ি, কাঁচা রাস্তাঘাট, এখানে-ওখানে দু-চারটে সাধারণ স্নানাগার, গোলাকার তবে ওপর দিকটা ছুঁচোলো (অনেকটা যেন পেঁয়াজের আকৃতিবিশিষ্ট) গম্বুজওয়ালা কয়েকটা গির্জা আর ষাটটিরও বেশি ‘সিন্যাগগ’ বা ইহুদি উপাসনালয়। গরিব, অসচ্ছল শ্রেণির লোকজনের বাস ছিল শহরের যে অংশে, সেখানে প্রত্যেকটা গৃহস্থ বাড়ির উঠোনেই পালিত হতো ছাগল, মুরগি আর গরু।
কোনোরকম দৃষ্টিগোচর শিল্পের নিদর্শন দেখার সুযোগ শাগাল তাঁর শৈশবে পাননি। একটা আত্মজৈবনিক রচনায় তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের এই শহরে একটাও ছবি-ছাপাই ছবি কিংবা ছবির প্রতিলিপি কখনো দেখা যায়নি, এমনকি আমাদের পরিবারের কোনো ফটোগ্রাফও ছিল না … ভাইটেবস্কে, অাঁকা ছবি বলতে যা বোঝায় তা দেখার কোনো সুযোগ আমার ছিল না।’ শহরে রোজই যাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত তারা ছিল বেশ কিছু বুনো খরগোশ, ইহুদিদের ধর্মীয় অনুশাসন-সমন্বিত গ্রন্থ তালমুদ (Talmud) থেকে টীকাটিপ্পনী আওড়ানো পুরোহিতরা, বিয়ের পাত্রপাত্রীর তালিকার খাতা বগলে ঘটকরা, ভবঘুরে গাইয়ে-বাজিয়ের দল আর বোঁচকা কাঁধে এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালারা। পরবর্তীকালে শাগালকে যখন অবশ্যই পেশাদার শিল্পী বলা চলে তখন তাঁর শৈশবে দেখা এই সমস্ত বিচিত্র দৃশ্য, লোকজন তাঁর অাঁকা ফ্যান্টাসি চিত্রমালায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন – রাতের আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে গরু, জরাজীর্ণ কাঠের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে বেহালাবাদক, আরো নানা রকম উদ্ভট দৃশ্য। তবে এসব করতে পারার আগে তাঁকে ভাইটেবস্ক ত্যাগ করতে হয়েছিল।
সৌভাগ্যক্রমে, শাগালের মায়ের চোখে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের সুপ্ত প্রতিভার আভাস ধরা পড়েছিল। তিনি ছিলেন একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্না মহিলা, পরিবারের কারো কথায় কান না দিয়ে তিনি ছেলেকে লেখাপড়ার গতানুগতিক স্কুলের বদলে ওই এলাকার একমাত্র আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক পাঠ রপ্ত করার পর (যেমন প্লাস্টারের ছাঁচ থেকে তৈরি মূর্তি দেখে আঁকা) শাগালের উনিশ বছর বয়সে তাঁকে পাঠানো হলো সেইন্ট পিটার্সবার্গের এক স্কুলে জীবন্ত মডেল নিয়ে কাজ শেখার জন্য। ওই স্কুলে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়েই শাগাল তাঁর জীবনের প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক কাজ করেন। ১৯১০ সালে আঁকা এই ছবিটির নাম ‘বার্থ’ (Birth) – একই নামের আরো কয়েকটি ছবির সর্বপ্রথম সংস্করণ। ছবির পটভূমিতে দেখা যাচ্ছে একটা কাঠের তৈরি বাড়ি, ঘোলাটে লাল, স্তিমিত হলুদ আর বাদামি রঙে অাঁকা। রক্তের ছোপ লাগা চাদরের ওপরে শুয়ে বিবসনা মা, গম্ভীর মুখের ধাত্রীর দুই হাতে ধরা সদ্যোজাত শিশু আর খাটের নিচে গুড়ি মেরে বসে থাকা শিশুর পিতা, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন প্রতিবেশী ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এবং একজন রাববাই (rabbi) – ইহুদি শাস্ত্র ব্যাখ্যাতা দরজা ঠেলে খোলার চেষ্টা করছেন। গ্রামীণ ও লোকশিল্প অনুপ্রাণিত অঙ্কনশৈলী ব্যবহার করে আঁকা এবং যেন কিছুটা ইচ্ছাকৃত বিকৃতভাবে উপস্থাপিত অবয়বগুলি দেখলে দর্শকের যে প্রতিক্রিয়া প্রথমেই হবে তা হলো, ‘মডার্ন’ বা ‘আধুনিক’ অভিধাটি এই ছবিটির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য। ছবির ইহুদি বিষয়বস্ত্ত এবং উদ্ভট খেয়ালিপনা একান্তভাবেই শাগালের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য।
১৯০৯-১০ সালে মাস ছয়েকের জন্য শাগালের শিক্ষকদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রসিদ্ধ নাট্যমঞ্চ ও পোশাক-পরিচ্ছদ পরিকল্পক লিয়ঁ বাকস্ট (Leon Bakst), যাঁকে শাগাল নিজেই বর্ণনা করেছেন নিছক একজন ‘designer’ নয়, একজন ‘creator’ হিসেবে। বাকস্ট তখন প্রায় অগ্নিশিখার মতো উজ্জ্বল কমলা রং, চড়া গোলাপি রং আর আল্ট্রামেরিন বা বিশুদ্ধ নীল রং ব্যবহার করে সে যুগের একটা বিখ্যাত নাট্য প্রতিষ্ঠানের (Ballets Russes) জন্য ব্যালে বা ধ্রুপদী নৃত্যনাট্যের জাঁকজমকপূর্ণ মঞ্চসজ্জা ও পোশাক পরিকল্পনার কাজ করছিলেন, যে নৃত্যনাট্যের জন্য আবহসংগীত রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্য সংগীতজগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার ইগর স্ট্রাভিনস্কি (lgor Stravinsky)। গুরু বাকস্টের স্টাইল বা কাজের ধরনকে অনুসরণ করে যুবক শাগাল শিল্পসৃষ্টির কাজে সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ পরিহার করে নিয়মভাঙা তুলির টানে সহজ-সরল আকার-আকৃতির রূপায়ণে পারদর্শী হয়ে উঠতে লাগলেন, পরস্পরবিরোধী চড়া রঙের ব্যবহারের মাধ্যমে বর্ণালি ঐকতান সৃষ্টির দক্ষতাও তিনি অর্জন করলেন তাঁর এই শিক্ষকেরই অনুপ্রেরণায়। এক কথায়, বাকস্টের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য, অভিভাবকত্ব শাগালের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল, এবং ১৯১১ সালের বসন্তকালে বাকস্ট যখন নাট্যমঞ্চ সজ্জার কাজ করার জন্য প্যারিসে চলে এলেন শাগালও তাঁকে অনুসরণ করলেন। তখন তিনি তেইশ পেরিয়ে চবিবশে পা দিয়েছেন।
ফ্রান্সের রাজধানী, তথা পাশ্চাত্য চারুশিল্পজগতের প্রধান কেন্দ্র প্যারিসে যখন শাগাল পদার্পণ করলেন তখন তিনি এক বর্ণও ফরাসি বলতে পারেন না এবং রুশ ভাষাও বলেন ভাঙা ভাঙা, এতদিন পর্যন্ত ঈডিশ ভাষাতেই তিনি কথা বলে এসেছেন। প্যারিসের ‘স্যালঁ’ (Salon des Independents), অর্থাৎ সমসাময়িক শিল্পীদের অাঁকা ছবির বার্ষিক প্রদর্শনীতে তখন প্রদর্শিত হচ্ছে কিউবিস্ট শিল্পীদের কাজ, যাঁদের কথা শহরের শিল্পরসিক মহলে মুখে মুখে ফিরছে। কিন্তু সে বছর স্যালঁর ৪১ নম্বর ঘরে পিকাসো অথবা ব্রাকের বদলে স্থান পেয়েছেন ‘স্যালঁ কিউবিস্টস’ নামে পরিচিত শিল্পীরা – অঁরি লা ফ্যকোনিয়ের, জাঁ মেটজিংগার, অ্যালবার্ট গেপ্লইজেস এবং রবার্ট ডিল্যনে। শিল্প সম্পর্কে তাঁর সহজাত বোধের সাহায্যে শাগালের বুঝতে সময় লাগল না যে একজন আধুনিক শিল্পী হয়ে উঠতে গেলে তাঁকে গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে কিউবিজমের নানা ভাঙাচোরা জ্যামিতিক আকৃতি-প্রকৃতিকে তাঁর কাজের অঙ্গীভূত করতে হবে। তবে ঠিক ওই পর্যায়ে তাঁর পক্ষে জানা বা বোঝা সম্ভব ছিল না যে স্যালঁতে প্রদর্শিত যেসব কাজ তিনি দেখছেন সেগুলি প্রকৃত কিউবিজমের দৃষ্টান্ত নয়, দুর্বল অনুকরণমাত্র। যাই হোক, তিনি গ্লেইজসকেই নিজের আদর্শ নির্বাচন করলেন এবং যে আর্ট স্কুলে লা ফ্যকোনিয়ের আর মেটজিংগার শিক্ষকতা করতেন সেখানে ভর্তি হয়ে গেলেন।
এই সময় শাগাল ‘বার্থ’ নামে আরেকটি ছবি আঁকলেন, যেটিকে তাঁর ওই নামের প্রথম ছবিটির দ্বিতীয় সংস্করণ বলা যেতে পারে। ১৯১১ সালে আঁকা এই ছবিতে বাড়ির ছাদ নেই এবং সেটার চেহারা যেন অনেকটা একটা মেলাপ্রাঙ্গণ কিংবা সার্কাসের এরিনার মতো, যেখানে মানুষ, গরু-ছাগল, মুরগি আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে। ছবির পটভূমিতে শাগাল পলকাটা খোপের মতো আকার ব্যবহার করে কিউবিজমের স্টাইল আনার চেষ্টা করেছেন, উড়ন্ত বেহালাবাদক ও জীবজন্তু, মাথা নিচের দিকে করে ঝুলে থাকা মূর্তি দিয়ে দৃশ্যপটে আধুনিকতার প্রলেপ দিয়েছেন। চড়া রঙের সাহসী ব্যবহার, রূপকথাসুলভ কাল্পনিক চিত্রণ অবশ্যই শাগালের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এইসব ছবিকে, লা ফ্যকোনিয়েরের অাঁকা ছবির মতোই, কিউবিজমের অনুকৃতি-অনুকরণের অনুকরণ-ছাড়া আর বেশি কিছু বোধ হয় বলা যায় না। তাছাড়া এটাও মনে রাখতে হবে যে, কিউবিজম আদতেই বর্ণনামূলক বা সাধারণ দৈনন্দিন জীবন থেকে সংকলিত দৃশ্যাবলি ফুটিয়ে তোলার উপভোগী মাধ্যম নয়, কিন্তু শাগাল তখনো সেটা জানতেন না বা বুঝতেন না।
তবে বরাবরের মতোই, সময় ছিল তাঁর অনুকূলে। লিয়ঁ বাকস্টের সহকারী হিসেবে শাগাল যেসব নৃত্যনাট্যের মঞ্চসজ্জা ও পোশাক-পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেগুলি তখন প্যারিসের প্রায় সমস্ত শ্রেণির দর্শকের মধ্যেই তুমুল সাড়া জাগিয়েছে।
যে-কোনো ধরনের নির্ভিক শিল্পসৃষ্টির বিষয়ে-নাট্য বা চারুশিল্প যাই হোক ফরাসিদের উৎসাহ তখন তুঙ্গে। তাই শাগালের আঁকা ছবি যখন এখানে-ওখানে প্রদর্শিত হতে লাগল, প্যারিসের চিত্রসমালোচকদের চোখে তাদের আনাড়ি অঙ্কনশৈলী, স্থূল খেয়ালিপনা কিংবা মৌলিকতার অভাব যেন ধরাই পড়ল না, বরং ওইসব ছবির উদ্ভট, অদৃষ্টপূর্ব বিষয়বস্ত্ত, গাঢ় রঙের ব্যবহার এবং অসংস্কৃত আবেগ তাঁদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করতে লাগল। ১৯১৪ সালের মে মাসে শাগাল মাস তিনেকের সফরে রাশিয়ায় ফিরে গেলেন, কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছানোর মাসখানেক পরেই শুরু হয়ে গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, তাঁর ফ্রান্সে ফিরে আসা আটকে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং এর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর শিল্পীজীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। গত বছর দুয়েক ধরে প্যারিসের কিউবিস্ট শিল্পীদের যে প্রভাব তাঁর কাজের ওপরে গভীরভাবে পড়েছিল তা দ্রুত দূর হয়ে যেতে লাগল এবং কিউবিজমের প্রভাবমুক্ত নতুন একটা স্টাইল তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। বিপ�বের আবেগ-উচ্ছ্বাস তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাজিমির মেলভিচের প্রথম দিকের সুপ্রিম্যাটিস্ট চিত্রকলার প্রভাবে শিল্পকলার মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট’ বা বিমূর্ত প্রবণতা সঞ্চারিত হতে লাগল। ঠিক যেমন শাগাল প্যারিসে উপস্থিত হয়েছিলেন কিউবিজমের প্রথম তরঙ্গের মাথায় চড়ে, তেমনই তিনি রাশিয়ায় ফিরে এলেন যখন সুপ্রিম্যাটিজমের প্লাবন ধারার শিল্পকলাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তফাৎটা হলো এই যে এবারকার নতুন শিল্পকলা আন্দোলন শাগালের রূপকথাশ্রিত চিত্রকল্পকে – বস্ত্তত যে-কোনো ধরনের চিত্রকল্পকেই – অতি দ্রুত বাতিলের পর্যায়ে ঠেলে দিতে লাগল। এবং যেমন শাগাল কিউবিজমকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছিলেন হয়তো এই শিল্পধারার তাৎপর্য সম্যকভাবে উপলব্ধি না করেই, ঠিক তেমনই তিনি এখন সুপ্রিম্যাটিজমকে সাগ্রহে আলিঙ্গন করায় সচেষ্ট হলেন, সম্ভবত এটা হৃদয়ঙ্গম না করেই যে কাজিমির মেলভিচের কাছে ‘অ্যাবস্ট্রাকশন’ বা বিমূর্তন আসলে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উচ্চতর স্তরে উপনীত হওয়ার জন্য ‘অহং’কে পরিহার করে চলার একটা উপায় মাত্র। আসল কথা হলো, মার্ক শাগাল আবিষ্কারক বা অন্বেষক ছিলেন না, যেমন ছিলেন না বুদ্ধিবাদীও। কিউবিজমের ক্ষেত্রে তিনি যেমন করেছিলেন, তেমনই মেলভিচের জ্যামিতিক অঙ্কনশৈলীকেও নিজস্ব স্টাইলে অলংকৃত করে তিনি এমন ধরনের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে লাগলেন, যা সুশোভন বা দৃষ্টিনন্দন বটেই, কিন্তু প্রকৃত সুপ্রিম্যাটিজমের আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিয়, কিংবা হয়তো রাজনৈতিক, দর্শনের অনুসারী নয়।
বছর পাঁচেকের মধ্যে, ১৯১৯ সালের বসন্তকাল নাগাদ, শাগাল অবশ্য উপলব্ধি করতে শুরু করলেন যে তাঁর শিল্পকর্মের ব্যক্তিতা বা স্বাতন্ত্র্য এবং অস্মিতা বলশেভিস্ট বা মার্কসীয় গণসাম্যবাদী ধ্যান-ধারণার কাছে অস্পৃশ্য। যোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির বিরাগভাজন শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের যে পরিণতি হতে পারে তার আগাম অভিজ্ঞতাও তাঁর হলো। ওই সময়ে তিনি একটা আর্ট স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। আকস্মিকভাবে তাঁর কাছে পার্টির হুকুমনামা এসে পৌঁছাল যে তিনি ও তাঁর পরিবার স্কুলের যে বাড়িতে বাস করছিলেন সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করে দিতে হবে। পরের বছরই, ১৯২০ সালের জুন মাসে, শাগাল তাঁর পত্নী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ভাইটেবস্ক ছেড়ে মস্কোতে চলে এলেন। তখন তিনি কপর্দকহীন।
এবারো কিন্তু, হয়তোবা কাকতালীয়ভাবেই, শাগালের মস্কো আগমন ছিল সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ। ঠিক তখনই বিখ্যাত প্রযোজক অ্যালেকজান্ডার গ্র্যানভস্কির আধুনিকতাবাদী নাট্য প্রতিষ্ঠান ঈডিশ ভাষার কয়েকটা নাটক শহরে মঞ্চস্থ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে। শাগালের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্র্যানভস্কি তাঁকে ঈডিশ নাট্যকার শোলেম অ্যালেইচেমের রচিত তিনটি নাটকের মঞ্চসজ্জার ও পোশাক পরিকল্পনার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। ওই দায়িত্ব লাভ করার পর শাগাল ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই তিন মাস নিজেকে নাট্যশালায় প্রায় অন্তরীণ রেখে নাটকের নানা দৃশ্য এবং ম্যুরাল ছবি অাঁকলেন, যেগুলি এখন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এই ছবিগুলিতে দেখা যায় নানা ধরনের মৌলিক ইহুদি চরিত্রদের – মোজেসের বাণী প্রচারক ‘টোরা’ (Torah) পন্ডিত, বেহালাবাদক, বিয়ের ঘটক, বিয়ের মন্ডপে গাইয়ে-নাচিয়েদের আর ভাঁড়ের দল। ইহুদি সমাজজীবনে সংগীত, সাহিত্য, নৃত্য ও নাট্যের তাৎপর্য ও ভূমিকা বোঝানোর জন্য এইসব ছবি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নাটক অভিনয়ের প্রথম সন্ধ্যায় ছবির বিভিন্ন চরিত্রের সাজে অভিনেতারা যখন মঞ্চ প্রদক্ষিণ করছিলেন তখন সত্যিই মনে হচ্ছিল যে শাগালের সৃষ্ট চরিত্রগুলিই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। টেট লিভারপুল গ্যালারিতে সম্প্রতি প্রদর্শিত শাগালের কাজের মধ্যে এইসব ছবির বেশ কয়েকটা স্থান পেয়েছিল।
এই সিরিজের ছবিগুলি শাগালের আগেকার যে-কোনো কাজের থেকে অনেকটাই অন্যরকম, তাদের বিশালত্ব এবং পাত্রপাত্রীদের সরলীকৃত আকার-আকৃতির যোগসাজশে। শাগাল ঠিকই বুঝেছিলেন যে, দর্শকরা ছবিগুলি দেখবে বেশ খানিকটা দূর থেকে এবং মঞ্চের সাজসজ্জার সঙ্গে তাদের কোনোরকম প্রতিযোগিতা থাকা চলবে না, আর সেজন্যই তিনি তাঁর উপস্থাপনাকে যথেষ্ট সরল রাখার এবং বাহ্যিক অলংকরণের বাহুল্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এবং এখানেই ‘ভিস্যুয়াল আর্টস’ বা দৃষ্টিগোচর শিল্পকলার সেই ক্ষেত্রটি আমাদের সামনে প্রতীয়মান, যেখানে শাগালকে একজন প্রতিভাবান শিল্পী না বললেও তাঁর সহজাত সৃজনী ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিতেই হয়। নাটকের সংগীত ও নৃত্যের স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ পরিপূরক হিসেবে তাঁর উজ্জ্বল বর্ণ এবং অতীব দৃষ্টিনন্দন পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার অবশ্যই প্রমাণ করে যে, তিনি তাঁর গুরু লিয়ঁ বাকস্টের সুযোগ্য অনুগামী।
কিন্তু মস্কোর স্টেট ডিউইশ চেম্বার থিয়েটারে বেশ কিছু ভালো কাজ করার পরেও নাট্যমঞ্চে অথবা অন্যত্রও শাগালের চাহিদা তেমন বাড়ছিল না। কিছুদিন ভাবনাচিন্তা করার পর ১৯২৩ সালের গ্রীষ্মে তিনি পত্নী ও কন্যাকে নিয়ে প্যারিসে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। রুশ ইহুদি ধর্মের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্নই হয়ে গেল বলা চলে, এবং পরের কয়েক বছরে তিনি নতুন ধাঁচের কোনো শিল্পধারাকে অনুসরণ না করেও অথবা নতুন কোনো অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা না করেও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হলেন। পরিতাপের বিষয় হলো যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যখন ইয়োরোপে একমাত্র গ্রেট ব্রিটেন বাদে প্রায় অন্য সমস্ত দেশের ওপরে নাৎসি জার্মানির আধিপত্য বিস্তৃত হচ্ছে তখন ফ্রান্সের তথাকথিত ‘ভিচি ফ্রান্স’ (Vichy France) রাষ্ট্রশক্তির রোষদৃষ্টিতে পড়লেন আরো কিছু শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে শাগালও। অবস্থা শেষ পর্যন্ত এমন হয়ে দাঁড়াল যে ফ্রান্স থেকে না পালিয়ে শাগালের আর কোনো উপায় রইল না। ব্রিটিশ সাংবাদিক ও কলাসমালোচক জ্যাকি ওয়ালশ্লগারের লেখা শিল্পীর চমৎকার জীবনীগ্রন্থে শাগাল কীভাবে ভ্যারিয়ান ফ্রাই নামে একজন আমেরিকান কূটনীতিবিদের সাহায্যে ১৯৪১ সালের এপ্রিল মাসে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন তার নাটকীয় বর্ণনা দেওয়া আছে। ১৯৪২ সালে নির্মিত ক্যাসাব্লাংকা (Casablanca) নামের হলিউডি চলচ্চিত্রটিতে ভিচি প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত মরোক্কান শহর ক্যাসাব্লংকা থেকে এক নাৎসিবিরোধী বিদ্রোহী নেতার পলায়নের কাহিনির সঙ্গে শাগালের প্যারিস থেকে পালানোর ঘটনার অনেক মিল আছে।
চল্লিশের দশকের প্রায় পুরোটাই শাগাল নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলেন এবং বেশ কয়েকটা ব্যালের দৃশ্যপট ও পোশাক পরিকল্পনা করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। এইসব নৃত্যনাট্যের মধ্যে ছিল পুশকিন রচিত ও চাইকোভস্কির সংগীত পরিচালনাসমৃদ্ধ দ্য জিপসিজ (The Gypsies), স্ট্রাভিনস্কির দ্য ফায়ারবার্ড (The Firebird) ইত্যাদি অতি মঞ্চসফল প্রযোজনা। মঞ্চের কাজের পাশাপাশি শাগাল ম্যুরাল ছবি অাঁকার এবং বহুবর্ণরঞ্জিত কাচের জানালার নকশা রচনার কাজও করছিলেন নিয়মিতভাবে এবং সাধারণ লোকজন ও পেশাদার বিশেষজ্ঞ উভয় শ্রেণির লোকের কাছেই তাঁর কাজ সমাদৃত হচ্ছিল। ১৯৪৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় পত্নী বেলার মৃত্যু হয়, এর পরে শাগালের অাঁকা একাধিক ছবিতে – যেমন ‘অ্যারাউন্ড হার’ (Around Her), ‘দ্য ওয়েডিং ক্যান্ডলস’ (The Wedding Candles), ‘নকটার্ন’ (Nocturne)-প্রয়াতা পত্নীর স্মৃতিবিজড়িত প্রভাব পড়েছে। ১৯৪৮ সালে শাগাল আমেরিকা ছেড়ে আবার ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু সেদেশেই বাস করেন। জীবনের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত তিনি অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন, জনপ্রিয়তা ও অর্থ দুই-ই অর্জন করেছেন, যেমন সহ্য করেছেন কঠোর সমালোচনাও। ১৯৬৭ সালে নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন অপেরার প্রযোজনা দ্য ম্যাজিক ফ্ল্যুটের (The Magic Flute) জন্য মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনা করেছিলেন শাগাল। অনেকের মতে, এই প্রযোজনাটি তার আগের এবং পরেরও অন্যান্য প্রযোজনার চেয়ে অনেক বেশি দর্শকপ্রিয় হতে পেরেছে প্রধানত শাগালের কাজের জন্যই।
শাগালের জনপ্রিয়তা নিয়ে অবশ্যই কোনো সন্দেহ নেই। বিংশ শতাব্দীর প্রায় যে-কোনো শিল্পীর তুলনায় তাঁর কাজ সম্ভবত অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছে, এখনো দিচ্ছে। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়নে একটা প্রশ্নের অবকাশ হয়তো থেকে যায় – বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলার ইতিহাসে শাগালের অবদান প্রকৃতপক্ষে কতটা উল্লেখযোগ্য? এমন প্রশ্ন অনেক শিল্পীকে নিয়েই ঘুরেফিরে উঠতে পারে, তবে শিল্পী হিসেবে শাগালের দক্ষতা বা মুন্শিয়ানা সম্পর্কে তাঁরই সমসাময়িক বিখ্যাত শিল্পীদের কারো কোনো দ্বিমত ছিল না। শাগালের কাজ পিকাসো বিশেষ পছন্দ করতেন না এবং তাঁর এই বিরাগ তিনি কখনোই গোপন করেননি, কিন্তু শাগাল সম্পর্কে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘মাতিস যখন মারা যাবেন, তখন শাগালই হবেন একমাত্র জীবিত শিল্পী, যিনি রং কাকে বলে তা সত্যিই বোঝেন।’
- ঠিকানা
- সপ্তম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আশ্বিন ১৪২৫ । October 2018
- পুরানো সংখ্যা
- সপ্তম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । পৌষ ১৪২৪ । December 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২৩ । November 2016
- পঞ্চম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2016
- পঞ্চম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪২২ । November 2015
- চতুর্থ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আষাঢ় ১৪২২ । June 2015
- তৃতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । কার্তিক১৪২১ । November 2014
- তৃতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । আষাড় ১৪২১ । July 2014
- তৃতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪২০ । February 2014
- তৃতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২০ । Novembeer 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । শ্রাবণ ১৪২০ । July 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২০ । April 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । পৌষ ১৪১৯ । January 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । আশ্বিন ১৪১৯ । September 2012
- প্রথম বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ । May 2012
- প্রথম বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪১৮ । February 2012
- প্রথম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪১৮ । November 2011
- প্রথম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা। ভাদ্র ১৪১৮ । August 2011