logo

ব ই প রি চি তি

অনন্য একটি গ্রন্থ

গণেশ হালুই : নৈঃশব্দ্যের চিত্রকর
প্রকাশ দাস সম্পাদিত
প্রচছদ রূপায়ণ : সুব্রত চৌধুরী
ছাতিম বুক্স্, ৭ডি, ৯৯-এ, পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা
মূল : ২৮০০ রম্নপি
সমকালীন ভারতীয় চিত্রকলার জগতে বিশিষ্ট শিল্পী গণেশ হালুই। তাঁর সৃজনের প্রধান বিষয় নিসর্গের নানা অনুষঙ্গ। তীব্র, তীক্ষ্ণ, কখনো প্রতীক-আশ্রিত তাঁর চিত্র। প্রকৃতি তাঁর কাছে ধরা দেয় অমত্মর্নিহিত সৌন্দর্যের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে। এই প্রকৃতি অঙ্কনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সিদ্ধহসত্ম ও বিশিষ্ট।
তাঁর জনম ১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহের জামালপুরে। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে নদী ও নিসর্গের মধ্যে। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতা চলে যান। ১৯৫৬ সালে কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে চিত্রকলায় গ্র্যাজুয়েট হন। নানা পরীক্ষা করেন তিনি তাঁর চিত্রপটে। বাল্য ও কৈশোরের স্মৃতি ও নিসর্গ তাঁর অঙ্কনের মৌলিক বিষয় হয়ে ওঠে। তাঁর চেতন ও অবচেতনে ছেড়ে আসা বাংলাদেশের শ্যামল নিসর্গ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পঞ্চাশের দশকের মধ্য পর্যায়ে তিনি পুরাতত্তব বিভাগে যোগ দেন। এই সময়ে অজমত্মার চিত্রমালা কপি করেন। এই কপি করতে গিয়ে ভারতীয় চিত্রকলার মৌল বিষয় ও প্রত্যয় তাঁর কাছে নতুন বোধ এবং বুদ্ধিতে উন্মোচিত হয়। পরবর্তীকালে অজমত্মা ও ভারতীয় চিত্রকলার ঐতিহ্য নিয়ে তিনি লেখালেখি করেন। সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি ঐতিহ্য ও সমকালীন চিত্রকলা নিয়ে বিশেস্নষণ করেছেন এইসব রচনায়। তাঁর শিল্পবোধ কত উজ্জ্বল এইসব রচনায় তা বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে উন্মোচিত হয়েছে।
পরবর্তীকালে তিনি যে-চিত্র সৃজন করেন তাতে এই জিজ্ঞাসা ও বহু বর্ণের ছাপ আছে। তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে কাব্যিক, সংবেদনসমৃদ্ধ ও ছন্দোময়। অন্যদিকে প্রকাশে কিছুটা বির্মূত রীতির আশ্রয়ে ও জ্যামিতিক বিন্যাসে তিনি আশ্চর্য মুন্শিয়ানার পরিচয় দেন। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই গণেশ হালুইকে চিহ্নিত করেছে।
সম্প্রতি আমাদের হাতে এলো কলকাতার ছাতিম বুক্স্ থেকে প্রকাশিত একটি সুমুদ্রিত গ্রন্থ গণেশ হালুই : নৈঃশব্দ্যের চিত্রকর। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন প্রকাশ দাস। সম্পাদনার গুণে ও বিষয়ের বিন্যাসে গ্রন্থটি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। এই বইটি মুদ্রণ পারিপাট্যে শুধু উজ্জ্বল নয়। চিত্রকলা বিষয়ক বই কেমন হলে অনন্য হয়ে ওঠে এ হয়ে উঠেছে তার এক বিরল দৃষ্টামত্ম।
গ্রন্থটিতে আছে গণেশ হালুইয়ের নির্বাচিত রচনা, বিভিন্ন সময়ে গ্রহণ করা তাঁর আটটি সাক্ষাৎকার, তাঁকে নিয়ে তাঁর বন্ধু ও আত্মজনের চোদ্দটি রচনা, তাঁর সৃজন নিয়ে বিশিষ্ট শিল্পসমালোচকদের মূল্যায়ন, গণেশ হালুইকে লেখা চিঠি ও জীবনপঞ্জি।
বিষয়সূচি অনুযায়ী : তাঁর নির্বাচিত রচনা অংশ – আমার কথা, অজমত্মা চিত্রকলা : নির্মাণ ও করণকৌশল, ছবি ও জিজ্ঞাসা, ছবিতে পরিপূর্ণতা, ছবি ও নকশা, বর্ণ, টেম্পারা, নন্দন-নান্দনিক-নন্দনবোধ, শিল্প আর সত্য, বাংলার শিল্পচর্চা : স্বাধীনতার পরে, শিল্পবিদ্যা শিক্ষার গতিপ্রকৃতি, যামিনী রায়, শিল্পী জয়নুল আবেদিন, চিত্তপ্রসাদ, শ্যামল দত্তরায় : তাঁর ছবি ও সময়।
বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন : জেসল ঠক্কর, মধুময় পাল, বিশ্বরূপ চৌধুরী, মিত্রা সরকার।
স্মৃতিচারণ করেছেন : শামসুর রহমান, তপন ঘোষ, বিপিন গোস্বামী, সনৎ কর, ঈশা মহাম্মদ, যোগেন চৌধুরী, নিরঞ্জন প্রধান, পার্বতী মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মিত্র, প্রশামত্ম কোরে, তাপস ঘোষাল, আশিস ঘোষ, প্রভাকর কোলতে।
মূল্যায়ন করেছেন : অলোক ভট্টাচার্য, শিবপ্রসাদ করচৌধুরী, হিরণ মিত্র, সমীর ঘোষ, সাধন চক্রবর্তী, অনিরম্নদ্ধ চারি, শিবনারায়ণ রায়, অরম্নণ ঘোষ, মৃণাল ঘোষ।
চিত্রকলা বিষয়ক এই অনন্য গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখার মতো।

Leave a Reply