ত প ন ভ ট্টা চা র্য
১
সাধারণভাবে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পগুলিকে মনে হয়, তারা যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ ছবি, গান, নাটক, সাহিত্য – এদের ঘিরে পারস্পরিকভাবে দেয়াল উঠে গেছে। কিন্তু গভীরে গেলে এবং খেয়াল করলেই দেখা যায়, তাদের পরস্পরের ভেতর দেয়াল নয়, বরং রয়েছে খোলা জানালা। যখন সেই জানালা বন্ধ- করার প্রয়াস করেন শিল্পী, তখনই সংকট আসতে পারে তাঁর। তিনি যেন তখন সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে না দেখে কেবলই বদ্ধ অভ্যেসের ভেতর আবর্তিত হচ্ছেন। কেননা শিল্পসৃষ্টির ভেতর ক্রমাগত যা ঘটে চলে তা হলো জীবন ও কল্পিত কোনোকিছুর উদ্ভাবনের দ্বন্দ্বসমাস এবং জীবন ও কল্পনার এমন সদা পরিবর্তনশীল চলাচলে শিল্পগুলির পরস্পরের ভেতর জানালা বন্ধ হবার নয়। বরং কবিতা লিখতে লিখতেই তার ভেতর কাটাকুটির এমন প্রয়োজন অনুভব করেন একজন কবি, যিনি হঠাৎই আবিষ্কার করতে পারেন তাঁর ভেতর এক সংবেদনশীল চিত্রকর রয়ে গিয়েছেন, যেমন হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ও আন্তনিন্ আর্তোর ক্ষেত্রে। অথবা ইংরেজ শিল্প ঐতিহাসিক জন রাসকিনের শিল্প ইতিহাসের বইগুলির চর্চার ভেতর দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের একজন হয়ে উঠলেন ফরাসি লেখক মার্শেল প্রম্নস্ত। তাঁর ভাষা, প্রাসঙ্গিকতা বরাবরের মতো একজন শিল্প ঐতিহাসিকের ভাষা থেকে নির্মিত হলো।
রবীন্দ্রনাথ খুবই গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন, জেনেছিলেন এই শিল্পগুলির পারস্পরিকতার কথা, তাই তিনি এত রকম শিল্প সৃষ্টিতে দক্ষ ছিলেন। শিল্পের নিয়মকে কেমনভাবে বাঁকা করা যায় ও শিল্পের অর্থের ভেতর কতরকম চিহ্ন, ইশারা, ভঙ্গি যোগ করা যায় তা নিয়ে পরিণত রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সচেতন।
আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ থেকে ১৯২৭ – শুধুমাত্র কবিতা কাটাকুটি করতে গিয়ে সেই কাটাকুটির ভেতর থেকেই রূপ বা ইমেজ তৈরি করতে থাকেন। এক্ষেত্রে যেমন তিনি কবিতাই লিখছেন এবং তাই কাটাকুটি করে কবিতাটিকে আরো অর্থপূর্ণ করে ফেলতে চাইছেন, নিটোল করে ফেলছেন, তেমন ছবিও করে ফেলছেন। কাটাকুটিতে যেমন কিছু লাইন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে, যা আর পড়া যাবে না কোনোদিন, তেমন প্রকাশিত হচ্ছে ছবি। এমন যে প্রকাশ, অপ্রকাশ তা যেমন থাকছে, তেমন রবীন্দ্রনাথ আরেকটি চেষ্টা করছেন অর্থ ও অর্থহীনতা নিয়ে। যে-কোনো বাক্যের অর্থ রয়েছে, তা যার কাছে যেমনই হোক না কেন, এই একটা সীমার অনুভব। কিন্তু রেখা সে অর্থে চিন্তা বা বাক্যের ভেতর থাকে না, তা রূপ দিয়ে গড়া হয়ে যায়, তা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘আকারের নৃত্য’ এবং ‘অন্তহীন ইঙ্গিত’ তার। অপরদিকে পাবলো পিকাসো যখন কবিতা লিখেছেন, তাঁর মনে হয়েছে, ‘Poems, when I began to write them I wanted to prepare myself a palette of words, as if I were dealing with colors … Poetry – but everything you find in these poems one can also find in my paintings.’ অর্থাৎ কবিতা ও ছবি একাকার হয়ে যায়, কখনো বা কবিতাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারলেই ছবি পেতে পারে তার আকাঙ্ক্ষিত মান, এমন ভেবেছেন পিকাসো।
উত্তর-আধুনিকতার পরিপ্রেক্ষিতে কখনো দর্শন, ইতিহাসকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে শুধুই সাহিত্য হিসেবে। এমন ভাবা হয়েছে যে দর্শন বা ফিলোসফির মূল লক্ষ্য হচ্ছে কবিতা হয়ে ওঠা। এক্ষেত্রেও মনে হয় রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষের দিকের বহু কবিতায় এমন চেষ্টা করেছেন, যাতে দর্শন কবিতা হয়ে ফুটে উঠতে পারে, যদিও রবীন্দ্রনাথের ফিলোসফিক্যাল পোয়েমস্ নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আজকের যে দৃশ্যকলা শিল্প তাতে স্টাইল, ইতিহাস, লিঙ্গ, মনঃসমীক্ষা, ন্যারেশন বিনির্মাণ, অবিনির্মাণ, ইতিহাসের ঘটনাবলির প্রেক্ষিত ইত্যাদি নানান কিছুই আলোচিত হবে, অর্থাৎ বলা যায় দৃশ্যশিল্প ঘিরে একটা ভাবনাবিশ্ব নির্মাণ করা হবে এবং এমন তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণ না করা গেলে আধুনিকোত্তর শিল্পের প্রাসঙ্গিকতা তৈরি হয়ে ওঠে না। Avant-garde আর্ট অর্থাৎ আমূল পরিবর্তনপন্থী পুরোধা শিল্পের আলোচনার ক্ষেত্রে দার্শনিক ও রাজনৈতিক শক্তিগুলি নিয়ে আলোচনা হবেই। ইতিহাসকে আবার নতুন করে কার্যকর করা, ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে, যাতে ইতিহাসের পরিত্রাণ বা পুনরুদ্ধার অন্তত শিল্পের সাপেক্ষে নির্মাণ করা যায়। এবং এক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব, সংঘাত থাকবেই। ঔপন্যাসিক ও তাত্ত্বিক ওরহান পামুকের এই পর্যবেক্ষণটি খুবই উল্লেখযোগ্য। ‘I tend to think I am a picture, when really all I am is words. Because when I am letters, I think I am a picture, and when I am a picture I think I am letters. But this is not out of ambivalence – this is my life.’ (Meaning প্রবন্ধটি ওরহান পামুকের Other Colours বইটির অমর্ত্মগত)। মজার কথা, যাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তাঁরা পামুকের এমন মন্তব্যের সঙ্গে আশ্চর্য মিল বা সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন হাইজেনবার্গের বিখ্যাত uncertainty principle-এর। অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞানের কোয়ান্টাম সূত্রও কোথাও মিলে যেতে পারে একজন লেখকের অস্তিত্ববাদী ভাবনার সঙ্গে। সেক্ষেত্রে কত আপাত-বিরোধী বিষয়ের পরস্পরের ভেতর জানালাগুলি সত্যিই খুলে যেতে পারে। এভাবেই বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যাবার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠতে পারে নানান মাধ্যমে সৃষ্টিপ্রক্রিয়া।
২
আধুনিকোত্তর শিল্পে যেমন অনির্দেশিকার কাব্য বিস্তারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমন নানান ভাষা, ভঙ্গি, অ্যাপারেটাসেরও উদ্ভব হয়েছে। শিল্পী যেমন তাঁর দৃশ্যকলা শিল্পে ক্রমাগত প্রয়াস করছেন ভাষাকে এনে ফেলতে, তেমন নানা উপাদানও এনে ফেলছেন, যাতে চিন্তা বা কনসেপ্টের যা যা কাব্যিক সম্ভাবনা মনে আসছে তা তিনি প্রকাশ করতে পারেন। অর্থাৎ হাতিয়ার হিসেবে কাগজ, রং, ক্যানভাসের মতো পারস্পরিক উপকরণ ছাড়াও হতে পারে যে-কোনো গ্যাজেট, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, নিয়ন আলো। তিনি নাটকের সেট, ফ্যাশন আইটেম ইত্যাদি যেমন যেমন তাঁর দক্ষতায় প্রয়োগ করা সম্ভব, করতে পারেন। এমন শিল্পী আজ হওয়া সম্ভব এবং হচ্ছেন, যিনি তাঁর পুরো শিল্পীজীবনে কোনোদিন রং, তুলি ছুঁয়েও দেখেননি। অপরদিকে রং, তুলি ও অন্যান্য পারস্পরিক শিল্প মাধ্যমগুলিও গুরুত্ব হারায়নি। বরং একথা প্রমাণিত যে, এইসব সীমাবদ্ধতার ভেতরও শিল্পী গড়ে তুলতে পারেন আভান্ত-গার্ড আর্ট। মেধা, মনোযোগ ও সাম্প্রতিক থাকার তীব্র ইচ্ছার ভেতর দিয়েই এমন ঘটতে পারে।
এই যে নানান বিরুদ্ধ ভাবনা ও ভিন্নতা উত্তর-আধুনিক দৃশ্যশিল্পে ঘটেছে তার সূচনা হয়েছিল ১৮৬০ থেকে ১৮৮০-র ভেতর ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পকলা থেকেই, যখন শিল্পীরা নাগরিকজীবনের ফ্যাশন নিয়ে সচেতন হলেন না কেবল, তা তাঁদের আঁকা ছবিতেও নানানভাবে আসতে থাকল। ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘Impressionism, Fashion and Modernity’ নামক একটি প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে পিয়ের অগস্ত রেনোয়ার, এডগার ডেগা, এডওয়ার্ড মানে এবং বের্থে মরিসটের কাজগুলি উপস্থিত করে তাঁদের কাজ, তখনকার ফ্যাশন ও ফ্যাশন ম্যাগাজিনের সম্পর্কগুলি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সেই সময়ের কবি শার্ল বোদলেয়ার যেমনভাবে আধুনিকতাকে ব্যাখ্যা করছেন ‘The ephemeral, The fugitive, The contingent’ হিসেবে তা নিয়ে শিল্পীরাও যে সচেতন ছিলেন এবং ফ্যাশনের ভেতর খুঁজে পাচ্ছেন কবির এই আধুনিকতা ভাবনার প্রকাশ, তা তাঁদের কাজ দেখেই বোঝা যায়। ফ্যাশন চিত্রকলাকে একধরনের কৃত্রিমতা ও নাটকীয়তা দিতে পেরেছিলেন। কবি বোদলেয়ারও চেয়েছিলেন, চিত্রকলা এমনি হোক, তা প্রাকৃতিক না হয়ে বরং কৃত্রিম ও বৌদ্ধিক হবে। অর্থাৎ একজন অনুভূতিসম্পন্ন কবি আর্ট নিয়ে যা যা ভাবলেন এবং যেমনভাবে আর্টকে ব্যাখ্যা করলেন, তাকেই গুরুত্ব দিলেন উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা, এবং এমনভাবে তাঁদের কাজগুলিও হলো। ফ্যাশন, কৃত্রিমতা, নাটকীয়তা সামগ্রিকভাবে আজকের শিল্পকলারও বিষয়। কিন্তু এই কৃত্রিমতা কতকগুলি নিচুমানের অশস্নীল কৃত্রিমতা নয়, বরং তা হতে পারে শিল্পীর সূচনাপর্বের সিদ্ধান্তও। এবং ephemeral বা ক্ষণিকতা, fugitive বা চকিত, চঞ্চলতা, বিলীয়মান ও contingent অর্থাৎ অনিয়ত, অনিশ্চিত এই এমন তিনটি শর্ত উদ্দেশ্যের গভীরতা নিয়ে নির্মাণ করা যায় এবং তা হয়ে ওঠে একজন শিল্পীর সারাজীবনের সাধনার ক্ষেত্র। নশ্বরতা ও আপেক্ষিকতার বলয়ের ভেতর নানান রকম স্থানচ্যুতির ভেতর দিয়ে আধুনিক ও আধুনিকোত্তর শিল্প গড়ে উঠেছে।
প্রথার বাধ্যবাধকতা থেকে দূরে সরে গিয়েও প্রথাকে নিয়ে নতুন ইঙ্গিতে, ইশারায় কাজ করা আজকের শিল্পকর্মের এখতিয়ারে পড়ে। শিল্পী কাব্যিক ফর্ম ও ভাষার কূটাভাসকে কাজে লাগান। এক্ষেত্রে শিল্পের যে বিষয় বা সাবজেক্ট তা সরে যেতে পারে টেক্সটের দিকে। কিন্তু টেক্সট এসেছে টেক্সটাইল বা বয়ন থেকে। আবার টেক্সট থেকে টেক্সচার শব্দটি ভাবা যায়, যা চিত্রকলারও পরিসর। এবং এই বয়ন আধুনিক শিল্পের এক লক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন শিল্পী নিজের ছবিতেও কথাকে বুনন করে দিতে পারেন। নানান ‘অপর’ ও ভিন্ন ভিন্ন শিল্প মাধ্যমের উপস্থিতি ও গুণাবলি একজন শিল্পীর কাজে ক্রমাগত ঢুকে যেতে পারে। এবং শিল্পী তাঁর জটিল সত্তাকে উপস্থিত করতে পারেন যেখানে সংবেদনশীল বিশৃঙ্খলাও একটা দিক। নানান মিলিত প্রবাহে প্রচলিত রীতিনীতির বাইরে যাওয়ার দুরূহ কাজ করেন শিল্পী এই সময়ে। আর্ট হয়ে ওঠে রীতিবর্জিত, অপ্রথাসিদ্ধ নির্মাণ বা সংস্থান, যার নানান স্তর বা থাক রয়েছে। ‘দেখা’ হয়ে উঠতে পারে বহুমাত্রিক, লীলাচঞ্চল পরিসর। ধর্মের মতো কোনো আশ্রয় হিসেবে আধুনিক শিল্প গড়ে ওঠে না, বরং নানান স্ববিরোধে মননের সজীবতা নির্মাণই হয়ে ওঠে তার প্রবণতা ও লক্ষ্য। এমন বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের আমত্মঃসম্পর্ক নিয়ে আসে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য যেমন, তেমন ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সহাবস্থানও। সে কারণে বিশেষ বিশেষ দেশের সাপেক্ষে নারীবাদ, উত্তর-ঔপনিবেশিক সমালোচনা, বিনির্মাণ ইত্যাদি গুরুত্ব পাবেই। উনিশশো সাতাশ-আটাশে রবীন্দ্রনাথের ছবি ও লেখার পাতা থেকে দুটি উদ্ধৃতি দিই, দুটোই তিনি লিখেছিলেন ইংরেজিতে, একটা হলো ‘The world is an eternal question ever unfolding its answer from within it self’ এবং অপরটি হলো ‘Creation stops if the final answer is given’. এই যে প্রশ্ন নির্মাণ বা প্রশ্নের বিকাশ তা কেবল বহুমাত্রিক ও লীলাচঞ্চল পরিসরেই ঘটতে পারে। এভাবেই আপাত নানান ভিন্ন স্বর ও প্রান্তবাসী গোষ্ঠীর বিকল্প স্বর গুরুত্ব পেয়ে যায়। মানুষের এবং শিল্পীর মনের গহনের রসায়ন ও বহুমাত্রিকতা শুধু যুক্তি ও নীতিবাচন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় না। এবং এ কারণেই স্যুররিয়ালিজম তার নিত্যনতুন প্রয়োগে আজো এত প্রাসঙ্গিক।
ফলে আধুনিক শিল্পকলায় সমালোচক ক্লেমে গ্রিনবার্গের ধারণায় যে প্রগতি বা ‘Progress’-এর ধারণা বা বামপন্থী শিল্পে যে advance-এর ধারণা ছিল এবং শিল্পকর্মকে যেমন সংকুচিত, হ্রাসযোগ্য (reductive) ভাবা হয়েছিল তিরিশ, চল্লিশের দশকে তার তুলনায় উত্তর-আধুনিক শিল্পে প্যারাডাইম শিফট ঘটেছে এবং শিল্পকলাকে করে তোলা হয়েছে অনেক বেশি রকম ইন্টার ডিসিপিস্ননারি, পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল মাধ্যম। এ কারণে এত happenings, performance, নানান media ইনস্টলেশন, আর্টওয়ার্কস ও শিল্পী/দর্শক যোগাযোগগুলি ঘটছে। এবং এক্ষেত্রে শিল্পী নানান দেশের ভিন্ন ভিন্ন কালচার বা সংস্কৃতিরও যোগাযোগ ঘটিয়ে তুলছেন। শিল্পীর যে স্বর তাতে নানান মাত্রা যোগ হচ্ছে না কেবল তাতে বহুবচনের মিলিত স্বরের সঙ্গে স্বতন্ত্র ঐতিহ্যেরও মেলবন্ধন ঘটছে। স্বরের শরীরী মাত্রার সঙ্গে ক্রমাগত যোগ হয়ে চলেছে কালচারের মাত্রাও। অসহায়তা ও আশাহীনতা, তা সামাজিক, রাজনৈতিক, এমনকি ব্যক্তিগত হোক না কেন, তার শৈল্পিক বিরোধিতা হিসেবেও শিল্পচর্চা হয়ে চলেছে। আত্মধ্বংসকারী অসহায়তা ছাড়িয়েও অস্তিত্বের যন্ত্রণার সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠছে শিল্পচর্চা। এখন শিল্পকে জীবন থেকে দূরে, কোনো মনগড়া আইভরি টাওয়ার ছাড়িয়ে চলমান সংস্কৃতির পরিসরে আনা হয়েছে এবং শিল্পকর্মকে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে, যার যোগাযোগ রয়েছে সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে। উপলব্ধি ও চেতনা সামাজিক পরিস্থিতিকে একটা সীমা পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। এই সময় কিছু কিছু শিল্পী এমনভাবেও কাজ করেন যখন তাঁর নিজেরই জানা নেই, শেষ পর্যন্ত শিল্পকর্মটির ফলাফল বা পরিণাম কী ঘটবে, যেন শিল্পীর ভেতর দিয়ে, তাঁর ব্যাকুল অস্তিত্বের ভেতর দিয়ে একটা সাংস্কৃতিক ঘটনা ঘটে চলেছে কেবল এবং তিনি কোনোভাবেই তার কর্তা নন। এভাবে কাজ করার জন্য যে উদার মনের দরকার হয় তা তাঁকে নানান সাধনায় আয়ত্ত করতে হয়েছে। কোনো ফর্মের পূর্বনির্ধারিত ধারণা ছাড়াই এক সামগ্রিক ইমেজ বা বিম্ব গড়ে ওঠে। মানুষের চিত্তে ও মনে যে অস্পষ্টতা, দুরূহতা রয়েছে তাও এক কাব্যিক উন্মেষে প্রকাশিত হয় এমন ইন্টার ডিসিপিস্ননারি কাজে। অবচেতনা হয়ে ওঠে শিল্পকর্মের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংগঠক। n