মা হ মু দু ল হো সে ন
এ লেখার শিরোনামটি নিয়ে খানিকটা লেখাপড়া করতে গিয়ে সবচেয়ে লাগসই যে কথাটির মুখোমুখি হওয়া গেল সেটি জর্জ লুকাসের। কথাটি আগে উদ্ধৃত করি। ‘cinema is escaping being controlled by the financier, and that’s a wonderful thing. You don’t have to go hat-in-hand to some film distributor and say, ‘Please will you let me make a movie?’ যাঁরা চলচ্চিত্র-চর্চার সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত তাঁরা খুব ভালোভাবে জানেন যে, একটি শিল্প হিসেবে চলচ্চিত্রের এর চেয়ে বড় মুক্তি আর হয় না। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যে এবং প্রদর্শনের জন্যে চলচ্চিত্রনির্মাতাকে মাথা নুইয়ে কারো কাছে দাঁড়াতে হবে না – এর চেয়ে বিপ্লবী ব্যাপার আর কী হতে পারে! লুকাস যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সেটি দাঁড়িয়ে আছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের সম্ভাবনার ওপর। গত দুই দশকের ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির যে প্যারাডাইম পরিবর্তন তা-ই এই সম্ভাবনাকে বাস্তব করে তুলছে। উল্লেখ করি, যদিও অনেকেরই হয়তো জানা যে, জর্জ লুকাস হচ্ছেন আমেরিকান চলচ্চিত্রের গত পাঁচ দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামগুলোর মধ্যে একটি। আবির্ভূত হয়েছিলেন স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেবে। তাঁর দ্বিতীয় ছবি আমেরিকান গ্রাফিটি হলিউডের স্টুডিও প্রথার বাইরে নির্মিত হয়েও দারুণ সাফল্য অর্জন করেছিল। পরে অসাধারণ ব্যবসাসফল স্টার ওয়ারস এবং ইন্ডিয়ানা জোনস সিরিজ নির্মাণ করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্র-চর্চার একটা বড় সময় ব্যয় হয়েছে বাণিজ্য-পুঁজির কবল থেকে চলচ্চিত্রনির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টায়, আর নতুন প্রযুক্তিকে তিনি ধারণ করেছেন সব ধরনের রক্ষণশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে। মজার কথা যখন ডিজিটাল সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শন প্রযুক্তি, কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে চোখ ধাঁধানো এবং অবিশ্বাস্য ব্যয়বহুল ছবি নির্মাণ ও প্রদর্শন করেছেন লুকাস, তখনই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতাদের অল্প বাজেটের ছবি নির্মাণ এবং স্বাধীন প্রদর্শন-ব্যবস্থার কথা বলেছেন তিনি। আজ অল্পবিস্তর একথা আমাদের জানা যে, এটি এমন এক প্যারাডক্স, যা চলচ্চিত্রশিল্পের সম্ভাবনাকে অসীম স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলচ্চিত্র কি মুনাফালোভী অর্থলগ্নিকারকদের হাতে আরো প্রবলভাবে বন্দি হয়ে পড়বে, নাকি এই শিল্পের ওপর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে – আজ তার অনেকটাই নির্ভর করছে নতুন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের কৌশল নির্ধারণের ওপর; অথবা, লেখা যাক, যারা চলচ্চিত্রের মুক্তির পক্ষে তাদের দিক থেকে নতুন প্রযুক্তির ক্ষমতাকে বোঝা এবং তাকে ব্যবহার করতে পারার ওপর। কিন্তু এ-প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত লেখার আগে চলচ্চিত্র ও প্রযুক্তি, চলচ্চিত্রের মুক্তি এবং স্বাধীন চলচ্চিত্রকার প্রসঙ্গে কিছু কথা।
এভাবে ভাবা যেতে পারে যে, মানুষ নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। তারপর উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে। যেমন লিখিত ভাষা একটি প্রযুক্তি। লিখিত ভাষা মানুষের প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, সাহিত্য রচনা, সংবাদ পরিবেশন, ইতিহাস সংরক্ষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি। তাহলে প্রকাশের দুটি ধাপ। একটি হচ্ছে প্রযুক্তি আর অপরটি হচ্ছে মাধ্যম। এই বিবেচনায়, তাহলে, চলচ্চিত্র হচ্ছে মানুষের নিজেকে প্রকাশ করার একটা মাধ্যম – আসলে এখন পর্যন্ত মানুষ নিজেকে প্রকাশ করার যত মাধ্যম আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। কারণ মানুষ নিজেকে প্রকাশের জন্যে যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে আর যেসব মাধ্যম ব্যবহার করেছে সিনেমা তার প্রায় সব কটিকেই নিজের করে নিয়েছে। আমরা লক্ষ করি সিনেমা শব্দ, লিখিত ভাষা, স্থির ছবি, চলমান ছবি, বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, ইন্টারনেট – এমনি সব প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে; অন্যদিকে আবার গল্প, নাটক, গান, তথ্য বর্ণনা, ছবি অাঁকা, নাচ এসব প্রকাশের সকল মাধ্যমকেও নিজের করে নিয়েছে। এভাবেই সিনেমা আসলে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, সিনেমা ভীষণরকম প্রযুক্তিপরায়ণ। সিনেমার যে প্রকাশ তাতে প্রযুক্তি খুব বড় একটা ব্যাপার। আর সিনেমা গত একশ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে ক্রমাগত প্রযুক্তির হাত ধরে নিজেকে বদলে চলেছে। এই বদল অন্য কোনো প্রকাশের মাধ্যমকে প্রযুক্তি যতখানি প্রভাবিত করতে পেরেছে তার চেয়ে অনেক বেশি। প্রযুক্তির হাত ধরে সিনেমার ভাষা বদলে গেছে। যেমন নির্বাক সিনেমা যখন সবাক হলো তখন তার প্রকাশে নতুনত্ব এসেছে। রঙিন সিনেমা প্রকাশকে নতুন এক ধাপে নিয়ে গেছে। আর যখন ডিজিটাল সিনেমা এলো তখন এমন সব পরিবর্তন আর সম্ভাবনার কথা ভাবা গেল যে, সিনেমা প্রায় নতুন এক মাধ্যম হয়ে উঠল।
একটি প্রকাশ-মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের নানা রকম সম্ভাবনা রয়েছে। তার মধ্যে দৃশ্যমান-গল্প বলা, প্রামাণ্যকরণ যেমন আছে, তেমনি খবর পরিবেশন আছে, আছে পণ্যের বিজ্ঞাপন, কোনো মতের প্রচার ইত্যাদি। কিন্তু আমরা মোটের ওপর চলচ্চিত্রকে মানুষের সৃজনশীল প্রকাশের একটা মাধ্যম বলে ধরে নিতে চাই। অর্থাৎ যিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি একজন শিল্পী। আর লেখাই বাহুল্য যে, শিল্পীর স্বাধীনতা মানুষের সমাজের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। এটা চিন্তার স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত। চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যিনি সেই চলচ্চিত্রকারের স্বাধীনতাও তাহলে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। এভাবেই আমরা স্বাধীন চলচ্চিত্রকার পদটিতে পৌঁছে যাই। কিন্তু তার আগে চলচ্চিত্রের মুক্তির প্রসঙ্গ।
সিনেমা অনেক মানুষ দেখে। এত মানুষ দেখে যে এটা খুব ভালো একটা ব্যবসা। সিনেমার ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করলে অনেক টাকা আয় করা যায়। এর ফলে অনেক মানুষ সিনেমাকে ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছেন না, আর তাঁরা ব্যবসা করতে গিয়ে, মানে অনেক টাকা বানাতে গিয়ে খারাপ সিনেমা বানানোর জন্যে টাকা বিনিয়োগ করছেন। খারাপ সিনেমা মানুষ দেখছে কেন? দেখছে, কারণ ক্রমাগত খারাপ জিনিস দেখতে দেখতে মানুষের রুচি খারাপ হয়ে যেতে পারে, অথবা ভালো সিনেমা দেখার অভ্যাসটাই না গড়ে উঠতে পারে। ব্যবসায়ীদের টাকায় এরকম খারাপ সিনেমা যাঁরা বানাচ্ছেন তাঁরা কিন্তু শিল্পী নন, অন্তত তাঁদের প্রকাশ সৃজনশীল নয়। এভাবে সিনেমা নষ্ট হয়ে যাওয়া এক চক্রের মধ্যে আটকে আছে। এ অবস্থা থেকে সিনেমার মুক্তি চাই, সিনেমাকে শৈল্পিক অভিব্যক্তি হিসেবে দেখতে চাই – এই চাওয়া শিল্পী-চলচ্চিত্রকারের স্বাধীনতার সমার্থক প্রায়।
কিন্তু চলচ্চিত্র-প্রযুক্তির যে প্যারাডক্সের কথা বলেছি সেই সূত্র ধরেই বলা যায়, খারাপ সিনেমা বানানোতে এবং তার সাফল্যে প্রযুক্তির বড় ভূমিকা আছে! প্রযুক্তির যে খারাপ আর ভালো দুটি ব্যবহারই হতে পারে, এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে চলচ্চিত্র। ভীষণরকম প্রযুক্তিনির্ভর বলেই প্রযুক্তির হাত ধরেই সিনেমা খুব খারাপ আর খুব ভালো হয়ে উঠতে পারে। উঠছেও কিন্তু। এ মুহূর্তে যদি সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এমন দশটি চলচ্চিত্রের খোঁজ করা হয় তাহলে দেখা যাবে তার ভেতর বেশিরভাগই ভালো সিনেমা নয়। একেবারে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব সিনেমায় ভায়োলেন্সের, যৌনতার এমন সব দৃশ্য তৈরি করা হয়েছে, যা আমরা দেখতে চাই না। অথবা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যাকে সত্য বলে চালানো হচ্ছে, এক বিভ্রান্তিকর অর্ধসত্যের জগৎ নির্মাণ করা হচ্ছে, কৃত্রিম অভাববোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে, ভোগের অসীম বাসনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব সিনেমা যাঁরা বানাচ্ছেন তাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এসব ছবির পক্ষে এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন যে মানুষজন বিভ্রান্ত হয়ে এসব ছবি দেখছে। চলচ্চিত্রে প্রযুক্তির এরকম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া যাবে কি না, সে তর্ক প্রাকল্পিক হয়ে পড়তে বাধ্য; কিন্তু প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এই দুষ্ট চলচ্চিত্রের বিকল্প চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করা যেতে পারে নিশ্চিতভাবেই। এভাবে আমরা চলচ্চিত্রের ভিন্নতর মুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারি।
সোজা করে বললে আমরা খারাপ সিনেমা দেখতে চাই না, প্রযুক্তির ব্যবহারে ভালো সিনেমার মাধ্যমে ভালো চিন্তার এবং সংবেদনের প্রকাশ ঘটবে – এটা আমরা চাই। আমরা চাই, যে ব্যবসা করবে সেও ভালো ছবি বানিয়ে ব্যবসা করুক। আর সেটা হতে হলে ভালো সিনেমার জন্যে মানুষের রুচি গড়ে তুলতে হবে। ভালো ছবি তৈরি হতে হবে আর ভালো ছবির পক্ষে এবং খারাপ ছবির বিপক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে খারাপ ছবি তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা দেখতে পারি কীভাবে ভালো ছবির পক্ষে এই কাজগুলো করার জন্যেও আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।
ফিরে যাওয়া যাক স্বাধীন চলচ্চিত্রকারের কথায়। হলিউডে এই পদটি ব্যবহৃত হয় সেসব নির্মাতার ক্ষেত্রে, যাঁরা সেখানকার বাঘা বাঘা স্টুডিওর (কলম্বিয়া পিকচার্স, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিও ও ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, ইউনিভার্সাল পিকচার্স, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স এবং প্যারামাউন্ড পিকচার্স) বাইরে থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং এসব স্টুডিওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত প্রদর্শন নেটওয়ার্কের বাইরে নিজের ছবি প্রদর্শন করেন। এরকম একটি সংজ্ঞা কঠোরভাবে না মানলে কাউকে স্বাধীন চলচ্চিত্রকারের সম্মানটি দেওয়া যাবে না, আসলে ব্যাপারটি তেমন নয়। মোটামুটিভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন-প্রক্রিয়ার ওপর নিজের স্বাধীনতাকে একটি পর্যায় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন যিনি তিনিই স্বাধীন চলচ্চিত্রকার – আমরা এভাবেই স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতাকে শনাক্ত করতে পারি। কিন্তু সিনেমা বানাবার যে প্রথাগত বা সনাতন জগৎ সেখানে একজন মানুষ চাইলেই স্বাধীনভাবে একটা ছবি বানাতে এবং দেখাতে পারেন না। তাঁকে প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শক এরকম সব মানুষের কাছে যেতে হবে, যাঁরা কিন্তু মূলত ব্যবসার জায়গা থেকে চলচ্চিত্র বিষয়টিকে দেখবেন। বলছি না তাঁরা সবাই খারাপ সিনেমার পক্ষের লোক, কিন্তু কথাটি হচ্ছে এতগুলো মানুষ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে একত্র করা না গেলে চলচ্চিত্রকার ছবিটা করে বা দেখিয়ে উঠতে পারেন না। আবার চলচ্চিত্রের সনাতন প্রযুক্তিও এমন যে অনেক মানুষ এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত না করে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। এমন সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্রমাগত মোকাবিলা করে নিজের স্বাধীন অভিব্যক্তিটি বাঞ্ছিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন খুব কম চলচ্চিত্রনির্মাতাই। বরং সনাতন চলচ্চিত্র-কর্মকান্ডে একটি নির্মাণ এবং প্রদর্শনব্যবস্থার ভেতরই কাজ করতে হয় বেশিরভাগ চলচ্চিত্রকারকে। বিষয়টিকে আবার এভাবেও দেখা যেতে পারে যে, প্রচলিত ব্যবস্থা সিনেমা বানাবার ক্ষেত্রে একটা বাধা এবং কেবল গুটিকয়েক মানুষই সিনেমা বানাতে সমর্থ হন। প্রথমেই যে জিনিসটা প্রয়োজন সেটা হলো সিনেমা বানাবার ব্যাপারটা যেন কয়েকজন মাত্র মানুষের হাতে থেকে না যায়। যদি একজন মানুষের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে, মানে তিনি যদি চলচ্চিত্রিক অভিব্যক্তি নির্মাণ করার ক্ষমতা রাখেন তাহলে তিনি যেন সে কাজটি করতে পারেন, অর্থাৎ, চলচ্চিত্রটি বানিয়ে ফেলতে পারেন। লিখেছি যে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা এতকাল ভীষণ কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব ছিল। কাজটি এখনই একদম সোজা হয়ে গেছে, এমন নয়। কিন্তু প্রযুক্তি আমাদের এমন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে যে, একজন মানুষ অল্প টাকায়, ব্যবসায়ীদের কাছে ছোটাছুটি না করে, প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্যে অনেককে যুক্ত না করে একটা ছবি তৈরি করতে পারবেন। ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরায় আমরা ইলেকট্রনিক মেমোরিতে ছবি রেকর্ড করি। এই ইলেকট্রনিক মেমোরি, যেমন ধরা যাক একটা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, অথবা একটি মেমোরি কার্ড যে-কোনো ধরনের ফিল্মের চেয়ে অনেক অনেক সস্তা। আর বিভিন্ন মানের এতরকম ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা এখন পাওয়া যাচ্ছে যে, প্রায় সবাই কোনো না কোনো একটা ক্যামেরা জোগাড় করে ফেলতে পারবেনই। এটা একটা মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরাও হতে পারে। সে তুলনায় একটা ৩৫ মিলিমিটার বা ১৬ মিলিমিটার ফিল্ম ক্যামেরা জোগাড় করা তো রীতিমতো পাহাড় ডিঙানোর মতো কঠিন কাজ। এই ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তুলে সেই ছবি নিজের পিসিতে বসে সম্পাদনা করে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা যায়। এই বিষয়গুলো এখন এতটাই বৈপ্লবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, আমাদের জরুরি মনোযোগ দাবি করে। সত্যিকার অর্থে, হাল আমলের বেশিরভাগ ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরায় ৩০ ফ্রেম/সেকেন্ড মোডে চলমান ছবি শুট করা যায় এবং এই ছবির ভিজুয়াল মান হয় ১০৮০ পি (নন ইন্টারলেস্ড ভিডিও)-র সমান – যা হাইডেফিনেশন ভিডিও মানের। এভাবে তোলা ছবি নিজস্ব পিসি বা ল্যাপটপে বসে অ্যাভিড মিডিয়া কম্পোজার বা অ্যাডোব প্রিমিয়ার প্রো বা ফাইনাল কাট প্রো-র মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে সম্পাদনা করে একজন সৃজনশীল মানুষ একাই নির্মাণ করে ফেলতে পারেন একটি চলচ্চিত্র। ২০১১ সালে একটি নকিয়া এন-৮ মোবাইল ফোনে শুট করা চলচ্চিত্র অলিভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছিল। আর প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হওয়ার কারণে এই ছবি কিন্তু অ্যাকাডেমি পুরস্কার লাভের জন্যে বিবেচিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিল! প্রযুক্তিবিষয়ক এই ছোট্ট তথ্যগুলো সম্ভবত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে চলচ্চিত্র নির্মাণবিষয়ক যে ন্যারেটিভের সঙ্গে আমরা পরিচিত তা বদলে যাচ্ছে। অন্তত এই তর্কটা আমরা করতে পারি যে, সিনেমা ক্রমশ যে প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে তাতে ‘ব্যক্তিগত সিনেমা’, মানে একজন মানুষের একার সৃষ্টি – এমন একটি সিনেমা এখন আর অসম্ভব নয়। এটা সিনেমার একটা মুক্তি – কয়েকজনের হাত থেকে সবার হাতে চলে আসার ভেতর দিয়ে আরেকজন সৃজনশীল মানুষের একার পক্ষেই একটা ছবি তৈরি করতে পারার সুযোগ করে দেওয়ার ভেতর দিয়ে।
যে-কোনো প্রযুক্তিকে নিয়ে নানা ধরনের রহস্য থাকে। এইসব রহস্যকে ব্যবহার করে অনেক রকম ফায়দা লোটার ব্যাপার থাকে। চলচ্চিত্র নিয়েও এই রহস্যের বিষয়টা চলে এসেছে এর গোড়া থেকেই। নতুন প্রযুক্তি নিয়েও একই রকম রহস্যময়তা সৃষ্টি এবং এভাবে প্রযুক্তিকে কুক্ষিগত করে আখের গোছানোর কাজটি অনেকে করে চলেছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আমরা চলচ্চিত্রকে ঘিরে যত রহস্যময়তা তা ঘুচিয়ে দিতে পারি। এই প্রযুক্তি হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা চলচ্চিত্রের কারিগরি দিকের হেন কিছু নেই যা সম্পর্কে জানতে পারি না। ইন্টারনেটে যেসব ভার্চুয়াল পাঠাগারগুলো আছে সেগুলোতে আছে চলচ্চিত্র বিষয়ে হাজার হাজার ঘণ্টা পড়া যাবে এমন সব তথ্য আর বিশ্লেষণ। চলচ্চিত্রবিষয়ক ব্লগে নানারকম মতামত দেওয়া-নেওয়া চলেছে। একটি নতুন ক্যামেরা, একটি নতুন সম্পাদনা বা কালার গ্রেডিং সফটওয়্যার বাজারে এলে তার সম্পর্কে নানারকম রিভিউ, ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এসব নেটে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্যোগী হয়ে নিজেরাও বিভিন্ন ব্লগে, ইউজার গ্রুপে মতামত বিনিময় করলে চলচ্চিত্র-প্রযুক্তির রহস্যময়তা কেটে যেতে পারে। এমনকি প্রযুক্তি নিয়ে রহস্যময়তাকে কেউ যেন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা যায়।
সিনেমা বানানো যত কঠিন, দেখানো কিন্তু তারও চেয়ে কঠিন। লিখেছি যে সিনেমা দেখানোর জগৎটাও ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এ কারণে অল্প কিছু লোক এ বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে। চাইলেই একটা ভালো ছবি বানিয়ে অনেক সিনেমা হলে দেখানো যায় না। এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে যে একটা ভালো ছবি অনেক মানুষকে দেখানোই যায়নি। নতুন প্রযুক্তি সিনেমা দেখানোর ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যেমন, আগে ফিল্মে ছবি করলে যত সিনেমা হলে একযোগে আমরা ছবিটি দেখাতে চাই ততগুলো প্রিন্ট তৈরি করতে হতো। এটা ছিল ভীষণ ব্যয়বহুল। সে তুলনায় ডিজিটাল প্রিন্ট (ডিভিডি) তৈরি করা অনেক সস্তা। আবার এখন কিন্তু একটা শক্তিশালী কম্পিউটার সার্ভারে সিনেমাটা রেখে হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে বিভিন্ন সিনেমা হলে স্থাপিত ডিজিটাল প্রজেকশন সিস্টেমে এই ছবি দেখানো সম্ভব। এটা কোনো কল্পনা নয়, এভাবে বিদেশে এখন ছবি দেখানো হচ্ছে। আমরা তো এরকম আশা করতেই পারি যে, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের গতি এবং মূল্য এমন একটা পর্যায়ে এসে যাবে যে, আমরা যারা ভালো সিনেমার পক্ষে তারা এই পদ্ধতিতে আমাদের সিনেমা সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারব। স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতাদের একটা নেটওয়ার্ক যদি থাকে তাহলে সেটাকে ব্যবহার করেই আমরা এটা করতে পারি। একটা নেট সার্ভারে ছবিটা থাকবে আর দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সংগঠনের নিজম্ব যে নেটওয়ার্ক থাকবে সেসব জায়গায় আমরা দর্শকদের জন্যে এই ছবি দেখাব। অন্যদিকে ইন্টারনেটে ইউ টিউব বা ভিমিওর মতো সাইটে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতা তাঁর ছবিটা আপলোড করে দিতে পারেন। এটা সবার জন্যে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, নাকি তিনি কিছু টাকার বিনিময়ে এই ছবি দেখতে দেবেন সেটা তিনিই ঠিক করতে পারেন। ইউ টিউবের মতো সাইটের ব্যবহার কিন্তু চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আরো বহুদূর অগ্রসর হয়ে গেছে। কোনো কোনো চলচ্চিত্র-উৎসব এরকম সাইটের মাধ্যমে একটি বিকল্প প্রদর্শন-ব্যবস্থার আয়োজন করছে। atom.com বা current.com-এর মতো সাইটগুলো নানা ধরনের চলচ্চিত্র নিয়ে বিশেষায়ণ করছে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনের উত্তেজনাকর দিকগুলো খুলে দিচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় দুই দশক ধরে ওয়েভ টিভি নামের এক মাধ্যম ইউরোপ এবং আমেরিকায় প্রচলিত আছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচারিত হয় ওয়েভ টিভির অনুষ্ঠানগুলো। কখনো ইউ টিউবের মতো সাইটগুলো এসব অনুষ্ঠান বিতরণ করে, কখনো নির্মাতারা স্বাধীনভাবে নিজেরাই এসব অনুষ্ঠান প্রচার করেন। কেবল অপারেটরদের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ওয়েভ টিভিতে নিজেদের নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করেন অনেক নির্মাতা। এখন নানারকম স্মার্টফোন এবং আইপডের জন্যে ধারাবাহিক নির্মিত হচ্ছে, যেগুলোকে এপিসোড না বলে বলা হচ্ছে অ্যাপিসোড (appisode)। অর্থাৎ, একটি অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে (প্রযুক্তির ভাষায় অ্যাপস) হিসেবে প্রতিদিন ফোনে ডাউনলোড করে ব্যবহারকারী ধারাবাহিকটি দেখতে পারেন! এসব সম্ভাবনা প্রচলিত চলচ্চিত্র বিতরণ-ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সব সুবিধা এখনই হয়তো আমাদের নাগালের মধ্যে নয়, কিন্তু এসব কিছুকে অলীক কল্পনা বলে ভাবার কিছু নেই। বাংলাদেশের গ্রামে বসে সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন তরুণরা। তৈরি করছেন অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যে অ্যাপস এবং আরো কত কী! কোনো কারণ নেই যে, কেন বাংলাদেশেরই এক তরুণ চলচ্চিত্রনির্মাতা এমত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের ছবি নির্মাণ করতে পারবেন না এবং বিতরণ করতে পারবেন না।
আমরা তো ইন্টারনেটের জ্ঞানভান্ডার ব্যবহার করে চলচ্চিত্রের রহস্য মোচনের কথা লিখেছি। চলচ্চিত্রশিক্ষার বিষয়টিকে আমরা যদি আরো গুছিয়ে নিতে চাই, তাহলেও প্রযুক্তি আমাদের সাহায্য করতে পারে। এখন যাঁরা চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট গড়ছেন তাঁরা প্রযুক্তি কাজে লাগানোর বিষয়টা ভেবে দেখতে পারেন নানা দিক থেকে। সিনেমা শিক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা ইন্টার-অ্যাকটিভ ডিভিডি বের করতে পারেন। এই ডিভিডি বাড়িতে বসে দেখে দেখে আমরা যে কেউ চলচ্চিত্রের ইতিহাস, শিল্প আর প্রযুক্তির দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। চলচ্চিত্রশিক্ষা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া ইন্টারনেটে অনলাইন ফিল্ম স্কুল হতে পারে। বিদেশে এটাও এখন বাস্তবতা।
একই সঙ্গে ভালো ছবির পক্ষে প্রচারণার জন্যে ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আর সিনেমা ব্লগগুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে। চলচ্চিত্র সংসদগুলো তৈরি করে নিতে পারে নিজেদের ব্লগ, যেখানে ভালো ছবির পক্ষে নিবন্ধ, আলোচনা, নির্মাতার সাক্ষাৎকার পরিবেশিত হতে পারে।
লিখেছি একটু আগেই যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সিনেমার অনেক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এর ভেতর বেশ মৌলিক কিছু ব্যাপার আছে, যা সিনেমার গল্প বলার ধরনটাই বদলে দিতে পারে। সংক্ষেপে সেদিকটায় একটু নজর দেওয়া যাক। ফিল্ম ক্যামেরায় একটানা দশ মিনিটের বেশি ছবি তোলা যেত না। অর্থাৎ একটা শট দশ মিনিটের চেয়ে বড় হতে পারত না। এই ব্যাপারটা মেনে নিয়েই কিন্তু এতকাল সিনেমা বানিয়ে এসেছেন চলচ্চিত্রকাররা। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরায় এখন একটা শট কত লম্বা হবে তার কোনো সীমা নেই। আস্ত একটি ছবি বানিয়ে ফেলা যেতে পারে একটি মাত্র শটে। এটি সিনেমার জন্যে বেশ উত্তেজনাকর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে অনেক আগেই বড় বড় চলচ্চিত্রনির্মাতা স্বপ্ন দেখতেন শটের দৈর্ঘ্যের এই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার। এখন এটা বাস্তব এক সম্ভাবনা।
ফিল্মে আমরা বাস্তবের কিছু নমুনা সংগ্রহ করতাম। যেমন যুদ্ধ, মহামারি এরকম সময়ের কিছু ছবি তুলে রাখা যেত। কিন্তু সেসব ঘটনার পুরোপুরি ধারণ করা সম্ভব হতো না। কারণ ফিল্মের দাম। এখন সস্তা ডিজিটাল মেমোরি ব্যবহার করে বাস্তবের হুবহু ধারণ সম্ভব। আমাদের দেশে সম্প্রতি চলচ্চিত্রনির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল ১৯৭১ নামে চার ঘণ্টার একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে সস্তা ডিজিটাল মেমোরির কল্যাণে।
ফিল্মের সম্পাদনায় একপর্যায়ে ছবিটার বর্ণনাটাকে একটা চূড়ান্ত রূপ দিতে হয়। এই অবস্থা থেকে আর ফেরা যায় না। নেগেটিভ কাটিংয়ের পর আর কোনো শটের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন বা ছবির গল্পের বর্ণনায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ডিজিটাল সম্পাদনায় চূড়ান্ত পর্যায় বলে কিছু নেই। যে-কোনো সময়ে ছবিটির নতুন একটি সংস্করণ তৈরি করা সম্ভব। কেননা ডিজিটাল সম্পাদনায় আসলে ছবি, শব্দ, কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ এসবই হচ্ছে কতগুলো ফাইল, যা কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে এবং যে-কোনো সময়ে এই ফাইলগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে নতুন করে গল্পটা বলা যায়। ডিজিটাল সিনেমার এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিনেমা তার ভাষার সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে। এভাবে অর্জিত হতে পারে সিনেমার ভাষার মুক্তি।
তাহলে প্রযুক্তির ভালো ব্যবহারে আমরা স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণ আর প্রদর্শন নিশ্চিত করতে পারি, চলচ্চিত্রশিক্ষাকে গণমুখী বা সবার জন্যে উন্মুক্ত করে তুলতে পারি, ভালো চলচ্চিত্রের পক্ষে এবং খারাপ চলচ্চিত্রের বিপক্ষে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারি আর চলচ্চিত্রের ভাষায় নতুনত্বের খোঁজ পেতে পারি। এভাবেই ঘটতে পারে চলচ্চিত্রের সত্যিকারের মুক্তি।
সবশেষে একটি কথা, প্রযুক্তি প্রকাশের বাহন মাত্র। প্রকাশটি কিন্তু নির্ভর করে যিনি সিনেমাটি বানাচ্ছেন তাঁর মনন আর মেধার ওপর। গত বছর আমেরিকায় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার বিতরণের আয়োজনে সেরা কমেডি এবং মিউজিক্যাল ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছিল দ্য আর্টিস্ট ছবিটি। এটি ছিল সাদাকালো এবং সংলাপহীন একটি চলচ্চিত্র। লেখা যেতেই পারে, তাহলে যে, প্রযুক্তি সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করে মাত্র; অভিব্যক্তি মূলত সংবেদনের বিষয়। আর ডিজিটাল প্রযুক্তির একপ্রান্তে কিন্তু আছে ভীষণ ব্যয়বহুল, চোখ ধাঁধানো সব ছবি – যেগুলোর নির্মাতা জর্জ লুকাস বা স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো নির্মাতারা। তাঁদের বানানো ছবির খরচ হয়তো ছাড়িয়ে যায় প্রথাগত ছবি নির্মাণের খরচকেও। কিন্তু এর অপর প্রান্তেই আছে স্বাধীন চলচ্চিত্রকারের মুক্ত প্রকাশের সম্ভাবনা; যেটি স্বল্প ব্যয়ে, স্বাধীন উদ্যোগে সৃষ্টি হতে পারে।
[লেখাটি ২০১২ সালে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সেমিনারে উপস্থাপিত একটি অডিও-ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন অবলম্বনে রচিত]