হা য় দা র আ লী খা ন
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সাল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্সিল রুমের প্রবেশপথের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট কলিন পাওয়েল এবং জাতিসংঘে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জন নেগ্রোপন্টে। বিষয়বস্ত্ত ইরাকের বিতর্কিত পারমাণবিক প্রোগ্রাম। বুশ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কলিন পাওয়েলের সেদিনকার বিবৃতি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সিকিউরিটির কড়াকড়ি সত্ত্বেও সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সাংবাদিকদের অসম্ভবরকম ভিড়। এত ভিড়ের ভেতরেও প্রথমেই সকলের দৃষ্টি অসাধারণ ক্ষমতাশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিনিধির প্রতি নয়, সবারই দৃষ্টি তাঁদের ঠিক পেছনের একটি নীল পর্দার প্রতি।
কারণটা কী?
আর কিছু নয় – ১৯৮৫ সাল থেকে নেলসন রকফেলার এস্টেট থেকে পিকাসোর ভুবন বিখ্যাত গের্নিকার (Guernica) যে ট্যাপেস্ট্রিটি ঠিক ওই জায়গাটিতেই এতদিন শোভা পাচ্ছিল, তাকেই একটি নীল পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের যুগ। দিয়েন বিয়েন ফুতে ফ্রান্সের পরাজয়ের পর থেকেই ক্রমশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে ফ্রান্সের বিকল্প সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে জড়িয়ে পড়ছিল। কেনেডি-জনসনের আমলে আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে হো চি মিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভিয়েতনামের জনসাধারণ যে-গণযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয়ী হয়েছে তা বিশ্বের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক পরম গৌরবময় ও উজ্জ্বল অধ্যায়। ষাটের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী নেতৃত্বে এই জনযুদ্ধ বিশ্ব জনমতকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সপক্ষে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। বিশ্ব পুঁজিবাদের অঢেল টাকা ও বিত্তের অপচয় করে এবং প্রচন্ড বিক্রমশালী সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ রণক্ষেত্রে এবং রাজনীতির অঙ্গনে ক্রমশই পিছু হটতে বাধ্য হয়, এমনকি স্বয়ং মার্কিন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাতে ধরে ফাটল। আর খোদ মার্কিন মুল্লুকে দানা বেঁধে ওঠে ছাত্র-জনতা-বুদ্ধিজীবীদের বিশাল বিক্ষোভ।
এই বিক্ষোভের সময়েও MoMA-র (Museum of Modern Art, New York) যে-কক্ষটিতে গের্নিকা শোভা পাচ্ছিল সেখানে প্রায়ই ছাত্র-বুদ্ধিজীবী-জনতার ভিড় দেখা যেত। অল্প বয়সে সে-দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য বর্তমান লেখকেরও হয়েছে। সে-সময়ে কেউ কেউ যুদ্ধবিরোধীদের পক্ষ থেকে গের্নিকাকে MoMA থেকে সরিয়ে ফেলতেও অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাঁদের মত, এটি হতে পারত শান্তির সপক্ষে এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ প্রতীকী প্রতিবাদ। আমেরিকার জনগণের ইতিহাস লেখক, প্রখ্যাত রাজনৈতিক আন্দোলনকারী ও ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হাওয়ার্ড জিন বর্তমান লেখকের সঙ্গে আশির দশকে এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেছিলেন।
আরো অনেক প্রাসঙ্গিক ঘটনার উল্লেখ করা যেত বিশ্ববিখ্যাত এই চিত্রের শৈল্পিক আলোচনায় প্রবেশ করার আগে।১ কিন্তু এ দুটি ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়, ১৯৩৭ সালে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ-ছবিটি এখনো প্রাসঙ্গিক। এখনো তা শুধু চিত্রামোদী শিল্পরসিক বোদ্ধাদের আনন্দ-বেদনায় ভাসায় না, বিশ্ব রাজনীতির আগ্রাসী শক্তির বিপক্ষে শান্তিকামী মানুষের প্রতিরোধের প্রতীকী পতাকা হিসেবে নিজেকে সমুন্নত রাখার অসামান্য ক্ষমতা রাখে। এক্ষেত্রে বর্তমান যুগের শিল্প ও শিল্পী সম্পর্কে পিকাসোর দুটি বিখ্যাত বাণী এখনো স্মরণযোগ্য :
১৯৩৭ সালে আমেরিকান শিল্পীদের কংগ্রেসে পাঠানো বাণীর একাংশ :
‘… যেসব শিল্পী আত্মিক মূল্যবোধ নিয়ে বসবাস ও কাজ করে থাকেন তাঁদের এ সংঘর্ষ (অর্থাৎ ফ্যাসিজম ও ফ্যাসিস্ট-বিরোধী সংঘর্ষ) যেখানে সর্বোচ্চ মানবিক ও সভ্যতার মূল্যবোধ বিপন্ন, সেখানে কিছুতেই উদাসীন মনোভাব দেখালে চলবে না।২
১৯৪৫ সালে সিমোন তেরির কাছে পিকাসোর উক্তি :
‘… Non, la peinture n’est pas faite pour de©corer les apartments. C’est un instrument de guerre offensive et de©fensive contre L’enncie.’
অর্থাৎ
‘… না, অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর জন্য চিত্র তৈরি করা হয় না। এটা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা দুটোরই দরকারি হাতিয়ার।’৩
এবার গের্নিকার সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে ফিরে তাকানো যাক। একমাত্র এ-বিষয়ে কিছুটা আলোচনার পরই গের্নিকার শৈল্পিক গুণাবলি – যা মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয় – সম্পর্কে আলোচনায় অগ্রসর হওয়া যাবে।
মোটের ওপর ঘটনাটি ঘটেছিল এভাবে।৪
সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ১৯৩৭। স্পেনের গৃহযুদ্ধ তখন একটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফ্যাসিস্ট জেনারেল মোলার সৈন্যদল বাস্ক সেনাদের প্রায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। অনন্যোপায় হয়ে বাস্ক সেনারা তাই তাদের রাজধানী বিলবাওয়ের দিকে হটে যাচ্ছে। বিলবাওয়ের সঙ্গে তুলনা করলে গের্নিকার সামরিক গুরুত্ব তেমন কিছুই না। অথচ ফন্ রিকটোফেনের জার্মান বিমানবাহিনী (কনডোর লেজিয়ন) এই ঐতিহাসিক শহরটি বেছে নিয়েছিল।
১৯৩৭ সালের ২৬ এপ্রিলে নিরীহ-নিরস্ত্র বেসামরিক নর-নারী-শিশু সবাই ফ্যাসিস্ট বর্বর শক্তির টার্গেটে পরিণত হয়। তাদের ওপর নেমে আসে আকাশ থেকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এক প্রচন্ড পাশবিক আঘাত।
পিকাসো তখন প্যারিসে। ২৭ এপ্রিলেই ফরাসি কাগজ Ce Soir সংক্ষিপ্ত টেলিগ্রাম ছাপে। তাতে Ce Soir-এর সংবাদদাতা বিলবাও থেকে যে-তারবার্তা পাঠান তাতে লেখা ছিল, এই নৃশংস কান্ড স্পেনের গৃহযুদ্ধের ‘সবচাইতে বিধ্বংসী ও ভয়াবহ বোমাবর্ষণ’। ২৮ এপ্রিলে কমিউনিস্ট সংবাদপত্র L’ Humanite বড় বড় অক্ষরে ছাপাল : ‘হিটলার ও মুসোলিনির অ্যারোপ্লেন থেকে এক হাজার বিস্ফোরক বোমা গের্নিকা শহরকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।’
এদিন এবং তার পরদিনও প্রতিবেদনের সঙ্গে ছিল নিহত নারী ও শিশুদের ক্লোজআপ ফটোগ্রাফ।
তারপর ২৯ এপ্রিল স্প্যানীয় রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে অনেকটা পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্যারিসে পৌঁছল। শুক্রবার ও শনিবারের – যথাক্রমে ৩০ এপ্রিল ও পয়লা মে – কাগজে আরো বিস্তৃত বিবরণ ছাপা হলো। বাস্ক প্রেসিডেন্টের বিবৃতিও ছাপা হলো : ‘স্প্যানিশ ফ্যাসিস্টদের মদদকারী জার্মান পাইলটরা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ গের্নিকা গ্রামকে বোমা মেরে ভস্মীভূত করেছে। এই বর্বরদের আমাদের জাতীয়তাবোধে আঘাত করতে একটুও দ্বিধা হয় না। ওরা আমাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
পিকাসো এসবই পড়ছেন এবং ভাবছেন। কয়েক মাস আগেই, সেপ্টেম্বর মাসে (১৯৩৬) স্প্যানিশ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মানুয়েল আজানিয়া মুঞ্জেও দেল প্রাদোর অনারারি ডিরেক্টর হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পিকাসোকে। পিকাসো সানন্দে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
সে-বছরই নভেম্বর মাসে ফ্যাসিস্ট কনডোর এয়ার ফোর্স প্রাদো মিউজিয়ামেই বোমা ফেলে। এরই মধ্যে প্যারিসের উদারনৈতিক এবং বামপন্থীদের স্পেনের প্রজাতন্ত্রের সপক্ষে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ক্রমশই জোরদার হয়ে ওঠে। পিকাসোর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত – বিশেষ করে পল এলুয়া ও লুই আরাগঁ। এলুয়া ও তাঁর স্ত্রী ন্যুশ, পিকাসো ও তাঁর নতুন প্রেয়সী ডোরা মার অনেকটা সময়ই কাটাতেন একসঙ্গে। এমনকি ভূমধ্যসাগরের তীরে একত্রে ছুটি কাটাতেও গেছেন কয়েকবার। এখানে দেখা যাচ্ছে বন্ধুত্ব, প্রেম এবং ফ্যাসিবিরোধী রাজনীতির সহসমাবেশ যখন ফ্রাঙ্কোর সৈন্যরা মাদ্রিদ অবরোধ করে তখন L’Humanite-তে প্রকাশিত হয় এলুয়ার বিখ্যাত ফ্যাসিবিরোধী কবিতা। এর এক মাসের কিছু কম সময়ের ভেতরেই জানুয়ারি ৮ ও ৯, ১৯৩৭-এ পিকাসোর গদ্য কবিতা সুয়েনিও ই মেনতিরা দে ফ্রাঙ্কো (ফ্রাঙ্কোর স্বপ্ন ও মিথ্যে)। পিকাসোর শিরোনাম কালদেরন দে লা বর্কোর দুটো নাটক থেকে নেওয়া। এবং কবিতার সঙ্গে ১৮টি এচিংয়ে ফ্রাঙ্কোর ক্যারিকেচার।
সুতরাং সাইমন শামার মতো পাশ্চাত্যের অনেক ঐতিহাসিকের বিপক্ষে এ মত পোষণ করা সম্ভব যে, পিকাসোর অবচেতনায় যে জীবনমুখী পিকাসো কয়েক দশক ধরে কাজ করছিল ১৯৩৬-৩৭-এ তা অনেকটা পরিণত রাজনৈতিক ও শৈল্পিক অভিব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছিল। তাই গের্নিকায় বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে পিকাসোর ১৯৩৭-এর মে-জুনের পরিশ্রম এবং তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এক অবিস্মরণীয় আধুনিক চিত্রকলা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়, এ-সিদ্ধান্ত ইতিহাসসম্মত যুক্তিগ্রাহ্য। এখন তাহলে আমরা গের্নিকার শিল্পকর্মের দিকেই চোখ ফেরাই।
এ-কথা না বললেও বোধ করি চলে যে, গের্নিকার মতো বহুল আলোচিত শিল্পকর্ম সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। এটাই স্বাভাবিক। এর এক প্রান্তে আছেন ট্যাংকার্ড ও আর্নথাইমের মতো মনস্তত্ত্ববাদের অনুসারীরা। ফ্রয়েডীয়-ইয়ুঙ্গীয়-সেস্টাল্ট ইত্যাদি সাইকোলজির স্কুলে বিভক্ত হয়েও তাঁরা সকলেই শিল্পীর মানসকেই বড় করে দেখান। অন্যপক্ষে কিছু মার্কসীয় শিল্পবেত্তা এবং অন্যান্য সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাঁরা শিল্প-সমালোচনা করতে ভালোবাসেন তাঁরা পিকাসোর সময়-সমাজ-রাজনীতি এগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এমনকি মেয়ার শ্যাপিরোর মতো বিদগ্ধ সমালোচকের পক্ষেও একথা বেশ কিছুটা খাটে। আমার বিবেচনায় সময়-সমাজ-রাজনীতিকে স্বীকার করে পিকাসোর ব্যক্তিমানসের জটিলতার মুখোমুখি হলে গের্নিকার মূল সমস্যার শৈল্পিক সমাধান সম্ভব। কিন্তু সমস্যাটাকে নন্দনতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরো সূক্ষ্ম ও সুচারুভাবে উত্থাপন করা প্রয়োজন। ফ্রাঙ্ক রাসেলের চারশো পঞ্চাশটি অঙ্কনসমৃদ্ধ অনেক দিক দিয়েই মূল্যবান Picasso’s Guernica বইটিও শেষ আলোচনা ও বিশ্লেষণে পিকাসোর শিল্পকর্মে ব্যক্তি ও সমষ্টি, ব্যক্তির মানস এবং সমাজ ও ইতিহাসের গতির প্রশ্নকে শৈল্পিক আঙ্গিক ও বিষয়বস্ত্তর একমুখিনতার দিকে ধাবিত করেছে। আমার মনে হয়, সাহিত্য সম্পর্কে সমালোচক Terry Eagleton ফর্ম ও কনটেন্টের বিষমতার যে-প্রশ্নটি উল্লেখ করেছেন, গের্নিকা সম্পর্কে ঠিক সেভাবেই একাধারে কয়েকটি ঐতিহাসিক ও নন্দনতাত্ত্বিক প্রশ্ন তোলা চলে।
প্রথমত, পিকাসোর চিত্রশিল্পের বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিত কোন ধরনের আঙ্গিক গের্নিকার জন্য তিনি খুঁজেছিলেন?
দ্বিতীয়ত, ডোরা মারের বিভিন্ন পর্যায়ের ফটোগ্রাফ এবং পিকাসোর বন্ধু জের্ভোসের প্রবন্ধে উল্লিখিত এবং বর্তমানে ম্যুজে পিকাসো এবং অন্যত্র সংগৃহীত ১ মে থেকে শুরু করে গের্নিকার শেষ রূপের পূর্ববর্তী সব স্কেচের মারফত ফর্ম ও কনটেন্টের ভেতর একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক-সংঘর্ষ লক্ষ করা যায় কি?
তৃতীয়ত, এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক-সংঘর্ষের ফলশ্রুতি হিসেবেই কি গের্নিকার শৈল্পিক এবং রাজনৈতিক আবেদন এখনো অটুট এবং ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে?
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমি শেষ দুটো প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব; কিন্তু তার আগে ইতিহাসসম্মত পদ্ধতিতে প্রথম প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজে বের করা জরুরি।
আপাতদৃষ্টে পিকাসো আঙ্গিকের দিক দিয়ে অহরহ পরিবর্তনশীল। ১৯০১ সালের প্রদর্শনীর সেই তৎকালীন ফরাসি প্রভাবপুষ্ট বামন নর্তক (Dwarf Dancer) থেকেই বিভিন্ন শিল্প-সমালোচক পিকাসোর বিবর্তনের ধারা বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। ১৯০১-১৯০৫-এর নীল যুগ (Blue Period) এবং তৎপরবর্তী গোলাপি আমল (Pink or Rose Period) থেকে কিউবিজমের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে পিকাসো এক গভীর অভিব্যক্তিময় (পরা) বাস্তবতায় উপনীত হন ১৯৩০-এর একটু আগেই। এমনকি কিছু বিশ শতকের শিল্পের ইতিহাসবিদদের সাক্ষ্য যে, ১৯১৫ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত এমন সময়ও গেছে, যখন পিকাসো সকালে কিউবিস্ট ছবি এবং বিকেলে নবধ্রুপদী (neoclassical) ছবি পর্যন্ত এঁকেছেন। রেখা, রং ও প্রতিকৃতির ওপর পিকাসোর মুন্শিয়ানা অনেক আগে থেকেই সর্বজনস্বীকৃত। তাহলে কোন উদ্দেশ্যে তিনি এত বিবর্তনশীল? কার অভিমুখে তাঁর এই বৈচিত্র্যময় শৈল্পিক অভিযাত্রা? এটা কি শুধুই পরীক্ষা, না জীবনের দিকে যাত্রা?
তাঁর গিটারবাদক, অন্ধের আহার (১৯০৩) থেকে ক্রুশবিদ্ধকরণ (১৯৩০) পর্যন্ত সবদিক দিয়ে দেখলে পিকাসোর কাজের ভেতর অসাধারণ প্রতিভাবান এক শিল্পীর অহরহ নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রবৃত্তি সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু আরো গভীরে গেলে দেখা যাবে, শিল্পীর অবচেতন জীবন-সমীক্ষা যেন নিজের আত্যন্তিক প্রবাহে জমিন ফুঁড়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আরো গভীরে গেলে দেখা যাবে, জীবনের আনন্দ-বেদনা দুদিকই শিল্পীর চেতনা ও কাজকে ঘিরে আছে এবং ক্রমশ নতুন নতুন আঙ্গিকের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। তিরিশের দশকে পিকাসোর এই জটিল জীবনবোধের ব্যাপ্তি ও গভীরতা দুটোই অনেক তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। এর প্রধান কারণ দ্বিবিধ।
এক শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন রমণীর আনাগোনা। মিলন ও বিচ্ছেদ। মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন জটিলতার সঙ্গে শিল্পীর সাক্ষাৎ সম্পর্ক। কিন্তু শুধু ওলগা বা মারি-তেরেস কিংবা ডোরা মারের সঙ্গে পিকাসোর ব্যক্তিগত প্রেমের জটিলতা দিয়ে পিকাসোর তিরিশ থেকে পঞ্চাশের দশকের অনেক ছবিকেই খুব গভীরভাবে বোঝা বা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় – বিশেষত এই দুই দশকে পিকাসোর শিল্পকর্মের সামাজিক ব্যাপ্তির বিষয়টি।
এ-বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে হলে তিরিশ ও চল্লিশের দশকের দুনিয়ার সংকট ও সংগ্রামের দিকে না তাকিয়ে আমাদের উপায় নেই। কারণ এই দুই দশকেই ফ্যাসিজমের বিস্তৃতি, সারা ইউরোপ তথা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদের তীব্র সংকট, স্পেনে গৃহযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মরণপণ লড়াই।
স্পেনের গৃহযুদ্ধ পিকাসোকে ব্যক্তিগতভাবেও তক্ষুনি আলোড়িত করেছিল। তাঁর মা এবং পরিবারবর্গ স্পেনেই ছিলেন। বন্ধুদের অনেকেই তখনো স্পেনে। মাদ্রিদের প্রাদো মিউজিয়ামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আগেই উল্লেখ করেছি। ১৯৩৪-৩৫ সালের কয়েকটি কাজের সঙ্গে পরিচিত হলে পিকাসোর ওপরে তৎকালীন স্পেনের পরিস্থিতির প্রভাব বোঝা সহজ হবে।
১৯৩৪-এর ২৪ জুলাই তারিখে কলম এবং ইন্ডিয়া কালিতে করা আলোকবর্তিকা হাতে নারী, ষাঁড় ও ঘোড়ার সংঘর্ষ গের্নিকার তিনটি প্রতীকী ইমেজকে ধারণ করেছে। তারও আগে ৭ জুলাই, ১৯৩৪ তারিখে মারাতের হত্যাকে (ফরাসি বিপ্লবের সময়ে) কেন্দ্র করে (হত্যা) নামের স্কেচটিও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিকাসো অত্যাধুনিক ফর্মে জাঁক লুই দাভিদের ফরাসি বিপ্লবের সময়কার নিওক্লাসিক্যাল পদ্ধতিকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টায় রত।
তারপর ১৯৩৫ সালের এপ্রিলে দেখি তাঁর বিখ্যাত ‘মিনোটাওর মাকি’। এখানে প্রাচীন মিথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক বালিকার হাতের আলোকবর্তিকা। ষাঁড় এবং ঘোড়ার উপস্থিতিও যথেষ্ট ইঙ্গিতময়। আর Crucifixion-এর কথা তো আগেই উল্লেখ করেছি।
সুতরাং গের্নিকার ওপর কাজ শুরু করার আগেই শিল্পীর মনের জমিনে অনেক ওলট-পালট হয়েছে, অনেক আলোড়নের ফলে নতুন ফর্ম, নতুন প্রতীক এবং নতুন টেকনিকেরও সমাহার ও সমৃদ্ধি ঘটেছে এবং সর্বোপরি গণবিপ্লবের স্রোতের ধারা শিল্পীর মানসভুবনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে। তাই এ-কথা বলা বোধ করি অসংগত হবে না যে, গের্নিকা অাঁকার মানসিক প্রস্ত্ততি শিল্পীর কিছুটা অজানিতভাবে আসলেই মনের গভীরে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এখানেও বহির্জগতের ঘটনাবলির প্রভাব কম নয়।
১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারিসে নির্বাসিত স্প্যানিশ সরকার পিকাসোকে আমন্ত্রণ জানান প্যারিসের আগামী ‘বিশ্বমেলা’তে স্প্যানিশ প্যাভিলিয়নের জন্য একটি দেয়ালচিত্র বা Mural অাঁকার জন্য। পিকাসোর বন্ধু ইওসেপ লুইস সের্ত ছিলেন আমন্ত্রণকারী প্রতিনিধিদের নেতা। এবং তিনিই ছিলেন স্প্যানিশ প্যাভিলিয়নের প্রধান স্থপতি। এপ্রিলের আগ পর্যন্ত কিন্তু পিকাসোর কাজে কোনো অগ্রসরমানতা দেখা যায় না। তাঁর পরিচিত বন্ধুদের অনেকেই পরবর্তীকালে লিখেছেন যে, হয়তোবা স্প্যানিশ রিপাবলিকানদের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং কোনো মতাদর্শের সঙ্গে সরাসরি তাঁর শিল্পকে যুক্ত করার ব্যাপারে অনীহা। এসব কারণেই পিকাসো এ পর্যায়ে খুব একটা উৎসাহ বা প্রেরণা পাচ্ছিলেন না। তদুপরি এর আগে একটি বিরাট পর্দার কাজ ছাড়া এত বড় দেয়ালচিত্রের কাজও তিনি করেননি। কিন্তু গের্নিকায় বোমাবর্ষণের চারদিন পরই সব ওজর-আপত্তি সবলে ঝেড়ে ফেলে পিকাসো কাজে মন দেন।
গের্নিকা শিল্পকর্মের একটা চলমান রূপ আমরা পেয়েছি ডোরা মারের ফটোগ্রাফগুলোর মাধ্যমে। একই সঙ্গে পিকাসোর ১ মে থেকে শুরু করে শেষ অবধি ছবির স্কেচগুলোও বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষিত। সুতরাং গের্নিকার সৃজন-প্রক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশকে এখন নথিভুক্তই বলা চলে। কিন্তু আমার প্রশ্ন অনুযায়ী এর অন্তর্মুখিন আবেগ এবং বহির্মুখিন পরিবেশ – এই দুই প্রক্রিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার ওপরই এই মহৎ শিল্পকর্মের যথার্থ মূল্যায়ন নির্ভরশীল। এখানে আমরা প্রথমে সমাপ্ত শিল্পকর্মটিকে একবার দেখে নেব। তারপর আমরা এর প্রক্রিয়ার দিকে চোখ ফেরাব। অতঃপর এই শিল্পকর্মটির প্রতিক্রিয়ার উৎসসন্ধানে আবার ফিরে যাব।
ফ্রাঙ্ক রাসেল (১৯৮০) এবং তাঁর আগে ও পরে অনেকেই এই বিশাল ছবির গাঠনিক ফর্মকে Triptych বা ত্রিভঙ্গচিত্রের (তিন ভাগে বিভক্ত ছবি) ভেতর ক্লাসিক্যাল স্থাপত্যের কিছু জিনিসের যেমন পেডিমেন্ট, ফ্রিজ ইত্যাদির সংস্থাপন বলে মনে করেছেন। রাসেল আবার পুরো ছবিটাকেই একটি মঞ্চায়িত আঙ্গিক বলে দাবি করেছেন। এসবই কিছুটা বিতর্কিত – কিন্তু এই বিতর্কের ভেতরে না গিয়ে ছবিটাকে এবং যদি এটা মঞ্চায়িত নাটকই হয়ে থাকে – তার কুশীলবদের – আসুন এক নজর দেখে নিই।
১৯৩৭ সালে গের্নিকা গ্রাম-শহর ছিল প্রায় দশ হাজার লোকের বাসভূমি। এত লোককে তো আর একটা ছবিতে ঢোকানো সম্ভব নয় কিছুতেই – হোক না সে ছবি প্রায় ছাবিবশ ফুট দীর্ঘ এবং বারো ফুট প্রশস্ত। রুবেনসের ‘যুদ্ধের আতঙ্ক’, দেলাক্রোয়ার ‘স্বাধীনতা’ মানুষকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিংবা জেরিকোর ‘মেডুসার’, ‘ভেলা’ – এইসব অতিবৃহৎ চিত্র – যেগুলোর সঙ্গে গের্নিকার অনেক দিক দিয়েই সাদৃশ্য আছে – গের্নিকার তুলনায় ছোট। গয়ার বিখ্যাত ‘তেসরা মে, ১৮০৮, মাদ্রিদ : প্রিন্সিপ পিও পর্বতের হত্যাকান্ড’ যা নাকি পিকাসোর নির্মাণকর্মকে অনেকভাবে প্রবুদ্ধ করেছিল, সেটাও গের্নিকার মতো বিরাটাকার ছবি নয়।
কিন্তু এটা লক্ষণীয় বিষয় যে, ‘গের্নিকা’ ছবিটিতে জনতা বলে কিছুই নেই। এমনকি পুড়ে যাওয়া বিধ্বস্ত শহরেরও কোনো চিহ্নই আবিষ্কার করা যাবে না। নেই কোনো বিধ্বস্ত পার্লামেন্ট, গির্জা কিংবা অন্য কোনো বাস্ক অট্টালিকা। যা আছে তা হলো নির্যাতিত, নিপীড়িত, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কাছে থেকে এক ভয়াবহ দৃশ্যের অবলোকন। এ কোনো পরাবাস্তবী তেলেসমাতি কান্ড নয়। এ নয় কোনো কেতাবি হিসেবের শিল্পচর্চা। কিন্তু নিষ্ঠাবান পরিশ্রমী শিল্পীর পরিকল্পনা এর সর্বাঙ্গে পরিস্ফুট। এখানে নেই দুদলের সংঘর্ষের কোনো সরাসরি উপস্থাপন। আছে শুধু প্রতীকী রূপের আড়ালে মানুষের যন্ত্রণার নির্যাস। আর একই সঙ্গে আছে অত্যাচারী মানুষের সৃষ্ট এই যন্ত্রণার বিরুদ্ধে সর্বমানবিক শক্তি প্রয়োগ করে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
অন্ততপক্ষে সর্বমোট নয়টি চেহারাকে আমরা চিনতে পারি। এর ভেতরে আছে চারটি নারী, একটি শিশু, এক যোদ্ধার মূর্তি, একটি বৃষ, একটি অশ্ব এবং একটি পাখি। লক্ষণীয় যে, এই ট্র্যাজেডির প্লটের মূলে পিকাসো নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। একমাত্র পুরুষটিও পূর্ণ মানব নয় – অর্ধেক ভাস্কর্য এবং অর্ধেক মানুষ। মনে হয় যেন এই খন্ডিত মানবসন্তান এই বিরাট ট্র্যাজেডির রূপায়ণে অসহায়-অচেতন হয়ে নিচে পড়ে আছে।
একই রকমভাবে নিশ্চল হয়ে আছে ছবির বাম দিকের ওপরের জায়গার বৃষবর। যেন সে কোনো অভিনয়েই আগ্রহী নয়। এ ব্যাপারে পরে আরো আলোচনা করব।
আসুন, এবার আমরা তাহলে তাকাই এই নারীদের দিকে। তারা কী করে – কী বলাতে চান পিকাসো তাদের দিয়ে? এই নারীরা সকলে সভয়ে, আক্রোশে, ঘৃণায় চিৎকার করছে। এরা ঠেলছে, দৌড়াচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে। এই নারীরা মানবতার অসহায় নিরপরাধ অংশের চলমান প্রতীকই বটে।
আরো দেখতে হবে যে, ছবিটি আগাগোড়া সাদা-কালো। বিভিন্ন রঙের প্রলেপের বাহাদুরি এতে নেই। যদিও Ce Soir ভুল করে প্রথমে এটাকে সন্ধ্যাকালীন আক্রমণ বলে রিপোর্ট করেছিল এবং পিকাসো সেভাবেই রাতের ছবি এঁকেছেন বটে, তবু সাদা-কালোর ভেতর মানবতার যে-আর্তনাদ তীব্রভাবে আমাদের দিকে ছুটে আসে, কোনো রঙিন ছবি তা পারত বলে পিকাসো ভাবেননি। আমরাও ভাবতে পারি না।
এই রাতের ছবির আরেকটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। তা হচ্ছে এই। বিভিন্ন ফিগার, আগুন, আলো এই কালোর ভেতর থেকে ফুটে উঠে এক সাংকেতিক পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। এখানে দুধরনের আলোর সমাবেশ ও সংঘর্ষও সুপরিকল্পিত। সিলিংয়ের বড় বৈদ্যুতিক বাতির উজ্জ্বলতাকে তেলের প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোতে আরো বর্বর মনে হয়। আর এই চোখ-ধাঁধানো কৃত্রিম আলো যেন ঠান্ডা মাথায় খুন করার প্রতীক। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, পিকাসো এই কৃত্রিম আলোটিকে আলোক-শঙ্কুর (Cone of illceminetion) বাইরে ফেলে দিয়েছেন। তার ফলে এ আলো মূলত অর্থহীন আলো – কিছুই আলোকিত করে না এ আলো, শুধু যন্ত্রণা দেয়। পক্ষান্তরে প্রদীপটি এক নারীর হাত দিয়ে চিত্রের মূল ত্রিভুজটির একেবারে শীর্ষবিন্দুতে প্রবেশ করেছে। এখানেই আমার মনে হয় নারী ও স্নিগ্ধ আলো কিছুটা আশার উদ্রেক করে। আমরা চাই, বিবেক জাগাতে পারে এমন আলো। অবিবেকী জগৎ সচেতনতা শক্তির বোধ ও বোধন কৃত্রিম আলোর মতোই অকেজো অথবা বীভৎস, ধ্বংসের ধ্বজাবাহী নির্মম মস্তিষ্কনির্ভর মানুষের প্রতীক।
এই চিত্রে কোনো প্রত্যক্ষ শত্রুকে দেখানো হয়নি যেমন আমরা দেখতে পাই গয়ার ‘তেসরা মে, ১৮০৮’-এ। কিন্তু পিকাসোর প্রতীকী আলোছায়ায় শত্রুর আরো প্রকট রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি, এ শত্রু মনে হয় শুধু বাইরের নয়, ভেতরেরও বটে। মনে হয় যেন প্রত্যেক মানুষের ভেতরে চলে বর্বরতার ও মানবতার পাশবিক শক্তির এবং মানবিক সুচারু বৃত্তির ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্ট-বিরোধী বোধের নিরন্তর পারস্পরিক সংগ্রাম। এ সংগ্রামে জিততে হলে মানবতার পক্ষাবলম্বন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
এখানে অশ্ব ও বৃষের প্রসঙ্গও অবধারিতভাবেই চলে আসে। এক অর্থে ঘোড়া স্বাধীন সৃষ্টিক্ষমতার প্রতীক। প্রথম দিকের স্কেচে (৬ নং স্কেচ, ১ মে ১৯৩৭) – আসলে কাঠের ওপরে ড্রইং – ক্লাসিক্যাল সাজে সাজা মৃত/আহত সৈনিকের ওপরে একটি মৃতপ্রায় ঘোড়া। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ না করে পারা যায় না যে, মৃতপ্রায় অশ্বটির ক্ষতস্থল থেকে আরেকটি অশ্বশাবক বেরোচ্ছে। এই অশ্বশাবকের আবার দুটো পাখা। যাঁরাই গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁদেরকে বলে দিতে হবে না পক্ষীরাজ ঘোড়া পেগাসাসের কাহিনি। ক্লাসিক গ্রিক মিথ অনুসারে এই পেগাসাসই হচ্ছে শিল্পের প্রতীক। জয়েসের স্টিফেন ডেডালাসের মতো পিকাসোর ঘোড়া বিশ শতকের শিল্প ও শিল্পীর মানবতার সপক্ষে সৃজনশীল প্রতিভার অবস্থান। পেগাসাসের সাহায্যেই বেলারফোন এক অসুরকে বধ করে। এ দানবের নাম ছিল কিমেরা (Chimera)। এটাও স্মর্তব্য যে, ১৯১৭ সালে পিকাসোর প্রথম এবং গের্নিকার আগেকার সময়ে একমাত্র বিরাটাকার সৃষ্টি ‘প্যারেড’ নামক ব্যালের ব্যাকড্রপেও ছিল বিশাল একটি ঘোড়া। সে-ঘোড়াটিও ছিল পেগাসাসেরই শিল্পরূপ। যদিও শেষমেশ পিকাসো একটি ঘোড়াকেই রেখেছেন, তাঁর সৃজনকর্মের এই ইতিহাস আমাদের সমকালেও শিল্প ও শিল্পীর নৈতিকতা ও ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
অতঃপর আসছে বলিবর্দের কথা। ১৯৪৪ সালে প্রথমে আপত্তি করা সত্ত্বেও পরে পিকাসো স্বীকার করেন, ষাঁড়টি ফ্রাঙ্কো ও অন্ধকার পাশবিকতারই প্রতীক ছিল। কিন্তু ষন্ডটির মর্মোদ্ধার করা এত সহজ নয় বলেই আমার ধারণা। এর কারণটা খুলে বলা দরকার। ১৯৩৭ সালে গের্নিকার ওপরে Les Cahiers d’Art পত্রিকার সম্পাদক এবং পিকাসোর বন্ধু জের্ভোস৬ লিখেছেন : ‘এইসব গভীর বিষাদের ওপরে অবস্থান করে সেই পাখিটি যে নাকি জীবনের গান গেয়ে বিচরণ করে এবং সেই ষাঁড়টি যে নাকি প্রাচীন উপকথার সেই ডানাওয়ালা জিনের মতো মানুষের ধ্বংসলীলাকে নিরপেক্ষভাবে অবলোকন করে। … (ষাঁড়টির) দৃষ্টিপাতের ভেতর দিয়ে অবিনশ্বরতা ও চিরকালব্যাপী সৃজনশক্তি বেরিয়ে আসে। তার শান্ত অবলোকনের ফলেই আমরা নিশ্চিত হই যে, শাশ্বত কিছুই হারায়নি। ধ্বংসের মাঝখানেই আবার আমরা ধ্রুব সত্যকে খুঁজে পাব।’
জের্ভোস ১৯৩৭ সালে পিকাসোর ব্যক্তিগত ও শৈল্পিক বন্ধু ছিলেন। গের্নিকার ওপরে পিকাসোর স্কেচসহ প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ জের্ভোসের সম্পাদিত পত্রিকাতেই প্রথম বের হয়। পিকাসো কিন্তু তখন এই মন্তব্যের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেননি।
সুতরাং বৃষবরকে নিয়ে এখনো কিছু বিতর্ক অবশ্যই করা চলে। তাতে ক্ষতির কিছু আমি দেখি না। সমালোচনা অতিসরল এবং একপেশে না হওয়াটাই আমি ভালো মনে করি। আর চিত্রশিল্প কেন, কোনো সৃজনশীল শিল্পের হিসাবই পাটিগণিতের কড়াক্রান্তি মেলানোর মতো হিসাব নয়।
আসলে এই ছবির ভেতরে আছে তৎকালীন এবং দুঃখজনকভাবে, আমাদের সময়েরও একটা জগতের ছবি বা Weltbild। এই ‘ভেল্টবিল্ট’ কোনো সরলরৈখিক ছবি নয়, এটা অনেক জটিলতাকেও বহন করে। তবু সবার ওপরে অত্যাচারিত-নির্যাতিত মানুষের যন্ত্রণাকে পরিস্ফুট করার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার উপায় নেই। এখানে সৈন্যটি এবং নারীকুল ছাড়া আর একবার ঘোড়াটির দিকে ফিরে তাকানো যাক। প্রচন্ড যন্ত্রণায় বিদারিত ঘোড়ার মুখের দিকে তাকালেই আমার যন্ত্রণাবিষয়ক মন্তব্যটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। হয়তোবা এখানেই পিকাসোর দাবি যে, তিনি সর্বদা এবং সর্বত্রই অনুভূতির প্রকাশকে প্রাধান্য দিয়েছেন, সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটেছে। এখানে শরীরের ভেতর থেকে যে যন্ত্রণা বেরিয়ে আসছে তারই সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে। এটা শুধু মাথা, মুখ ও গলার ভঙ্গিমাতেই নয়, গলার ভেতর থেকে, জিহবা থেকে, দন্তপাটির বিস্তারে, রোঁয়া-ওঠা মুখের ভেতরের চর্মস্তর থেকে যে প্রাণনাশী যন্ত্রণার বিস্তার তাই আমরা সরাসরি যেন দেখতে পাই। এজন্য পিকাসোকে প্রচুর মাথা খাটাতে ও পরিশ্রম করতে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ অনুভূতির শরীরকে অাঁকার জন্য এক নতুন শারীরিক অনুপাত আবিষ্কার করতে হয়েছে তাঁকে। যেমন ধরুন, চোখগুলোকে অনেক ছোট ও নিষ্প্রভ করে দিয়ে মুখের বাকি অংশগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া, ঘাড় ও গর্দানকে তুলনামূলক বৈষম্য দেখানোর জন্য দুভাগে বিভক্ত করা। একভাগ সাদা এবং তীক্ষ্ণ ত্রিভুজাকার। অন্যভাগ অত তীক্ষ্ণ নয়, অতটা ত্রিভুজাকৃতিরও নয়। চোয়ালে ও চিবুকে কালো ত্রিভুজ যেন জিহবার জাঢ্যের এবং তীক্ষ্ণ অগ্রভাগের প্রতিধ্বনি। আশ্চর্যের বিষয় যে, ১৯০৭-এর অাঁকা ‘উত্তোলিত হাতের নগ্ন নারী’তে এই টেকনিকের বেশ কিছুটা পূর্বাভাস পাওয়া যায়। ১৯২৫ সালের Studio with Plaster Head-এ যে টানা পেশি এবং টেকনিক দেখা যায়, সে-টেকনিককেও পিকাসো মানুষ ও ঘোড়ার যন্ত্রণা দেখানোর কাজে সফলভাবে ব্যবহার করেছেন।
আরো বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করলে অতীতের আরো অনেক শিল্পকর্মের সৃজনশীল উত্তরাধিকার পিকাসোতে দেখা যাবে। এক গের্নিকাতেই সুদূর অতীতের উত্তরের বারোক (Northern Baroque) এবং তারও আগের ছাপ থেকে শুরু করে রুবেনস, দেলাক্রোয়া, দাভিদ, জেরিকো, গয়া এবং পিকাসোর নিজের অনেক আগের স্তরের চিন্তাচেতনা ও কলা-কুশলতার সার্থক প্রয়োগ দেখা যায়। তাই একদিকে যেমন মাথিয়াস গ্রুনভাল্ডের আইজেনহাইম অল্টারপিসের এবং পিয়েরো দেল্লা ফ্রাঞ্চেস্কার মাদোনা দেল্লা মিজারিকর্দিয়ার প্রতিধ্বনি, অন্যদিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে পিকাসোর সমকালীন যন্ত্রযুগের নির্মমতার সার্থক রূপায়ণ পিকাসোর নিজস্ব রেখা, রং ও রূপের সামগ্রিক রূপায়ণের ভেতর দিয়েই।
এখানেই এবং এভাবেই তাহলে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে এ প্রবন্ধের তিনটি মূল নানন্দিক এবং ঐতিহাসিক প্রশ্নের। আঙ্গিক ও বিষয়বস্ত্তর দ্বান্দ্বিক সংঘর্ষের ব্যাপারে আরো বলতে হয়, এ দুটোর আপাতবিরোধিতা সম্পর্কে গের্নিকাতে পিকাসো এক অদ্ভুত আত্মসচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। আত্মসমালোচনারও বটে। সেজন্যই ১ মে থেকে শুরু করে এত বিভিন্ন স্কেচের ভেতর দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছিল। সেজন্যই ক্যানভাসে অাঁকার পরেও অন্ততপক্ষে নয়টি স্তর দিয়ে তাঁর এই কীর্তির ক্রমবিকাশের ধারা লক্ষ করা যায়। ডোরা মারের নেওয়া ফটোগ্রাফগুলো থেকেই সমালোচকরা এই নয়টি৭ স্তরের বা ধাপের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর বাইরেও কি আরো কিছু ধাপ ছিল? অতি সূক্ষ্ম বিচারে যেতে হলে আমাদের এ-প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হবে। তবে এখানে আমি সে আলোচনার ভেতরে যাচ্ছি না। উপসংহারের আগে শুধু ১৯৩৭-এর অব্যবহিত পরের দর্শক-সমালোচক প্রতিক্রিয়ার উল্লেখমাত্র করব।
স্প্যানিশ প্যাভিলিয়নে ঢোকার পথেই ছিল ক্যাল্ডারের ঝরনায় পারদের সুচারু বিচরণ। তারপরেই বাঁদিকে ছিল কবি গার্সিয়া লোরকার বিশাল ছবি। আর ডান দিকে ছিল গের্নিকা। আর একটু অগ্রসর হলেই প্রজেকশন বুথ। সেখানে ইয়োরিস এভনস এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ের Spanish Earth, বুনুয়েলের মাদ্রিদ ২৩৬ এবং আমেরিকান ফটোগ্রাফার পল স্ট্রান্ডের The Heart of Spain – এই তিন ধারাবাহিক প্রদর্শনী। আরো ছিল মিরোর দেয়ালচিত্র এবং পিকাসোর তিনটি ভাস্কর্য।
স্পেনে গৃহযুদ্ধের ট্র্যাজেডি তখনো ঘটমান বর্তমান। ফ্যাসিস্ট বর্বরতার বিরুদ্ধে অনেক সংবেদনশীল লোককেই নাড়া দিয়েছিল স্পেনের এবং স্পেনের প্রতি সহানুভূতিশীল শিল্পীদের এই প্রচেষ্টা। তবু সত্যের খাতিরে বলা দরকার, গের্নিকা তত ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনি – ষাটের দশক কিংবা এখনকার মতো। ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায় জের্ভোসের পত্রিকার ডাবল ইস্যু, যার অনেকটাই ছিল গের্নিকার আলোচনা। জের্ভোসের নিজের প্রবন্ধের উল্লেখ আমি আগেই করেছি। অসাধারণ সংবেদনশীল ও বুদ্ধিমত্তায় ভরপুর এই গভীর প্রবন্ধটি এক হিসেবে পথিকৃতের দায়িত্ব পালন করেছিল। জঁ কাস্যু গের্নিকাতে গয়ার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আর স্প্যানিশ কবি হোজে বেরগামিন গের্নিকাতে ‘Spanish Fury’-র প্রতিচ্ছবি লক্ষ করেছিলেন।
এরপর থেকেই শুরু হয় গের্নিকার বিদেশযাত্রা। প্রথমে বিলেতে। তারপর নিউইয়র্কে। দুই জায়গাতেই অনেক প্রশংসা ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু অতিনিন্দুকেরা যারা নাকি সাধারণত মডার্নিজম বিরোধিতার দৃষ্টিকোণ থেকে গের্নিকাকে দেখেছিলেন, এমনকি তাঁরাও গের্নিকার মানুষের মনের গভীরে নাড়া দেওয়ার শক্তিকে ক্রমশ স্বীকার করেন। এভাবেই অগ্রসর হতে থাকে পিকাসোর মানব সমাজ ও সভ্যতার প্রতি শ্রেষ্ঠ দান। অবশেষে পিকাসোর মৃত্যুর পর স্পেনে স্বৈরতন্ত্রের অবসানে স্রষ্টার ইচ্ছানুযায়ী ঘরে ফেরে গের্নিকা।
পিকাসোর গের্নিকার শৈল্পিক আবেদন তার রাজনৈতিক আবেদনের সঙ্গে এক জটিল মিথস্ক্রিয়ায় সম্পৃক্ত। এই প্রবন্ধে আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি যে, পিকাসোর শিল্পকলা বারে বারে নতুন টেকনিক, আঙ্গিক – এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমকেও আয়ত্ত করলেও বৈচিত্র্যের ভেতরই শিল্পীর সৃজনশীল অসামান্য একত্বকে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। তারই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাশ্চাত্যের চিত্রশিল্পের প্রায় সামগ্রিক ইতিহাস। অসাধারণ কুশলী প্রতিভার বলে পরিশ্রমী পিকাসো তুলে ধরতে পেরেছেন তাঁর সমসাময়িককালের অন্যায় ও অত্যাচারের বিপক্ষে এক কালজয়ী প্রতীকাকীর্ণ ট্রিপটিক্ (triptych) বা ত্রিভঙ্গচিত্র। প্রতীকের জটিলতা সত্ত্বেও শিল্পীর মানবতার সপক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান চিনে নিতে কোনো দর্শকেরই ভুল হওয়ার জো নেই। অথচ একই সঙ্গে গের্নিকার কাঠামো এবং চিত্রাংশগুলোর ঘন সন্নিবেশ যুগ-যুগান্তরের বলিষ্ঠ চিত্রকর্মের ধ্বনিগুলোর অনুরণনও আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। অবশ্য এ উপলব্ধি ও অনুভূতির সম্যক উপার্জনের জন্য দর্শকের কাছ থেকে শিল্পীর দাবি তন্নিষ্ঠ মনোযোগের এবং পাশ্চাত্য চারুশিল্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের।
এখানেই দেখা যাচ্ছে যে, ফর্ম ও কনটেন্টের ঈগলটনীয়৮ সংঘাতের ভেতর দিয়েই বেরিয়ে এসেছে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় বিংশ শতাব্দীর অভিশপ্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে শাশ্বত মানবিকতার শৈল্পিক চিত্রায়ণ। এখানেই পিকাসোর মানবিক এবং শৈল্পিক দুদিক দিয়েই জিত। কোনো সাধারণ শিল্পীর পক্ষে এ-ছবি অাঁকা অসম্ভব। কোনো অসাধারণ অরাজনৈতিক কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দিকে ঝুঁকে-পড়া – যেমন তিরিশের শেষের দিকে সালভাদর দালি – শিল্পীর পক্ষেও অসম্ভব এ-ধরনের সৃষ্টি। যেহেতু আমাদের মানবিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকট আবারও ঘনীভূত হচ্ছে, গের্নিকার আবেদন তাই এখনো অম্লান। আমাদের কালের প্রতিভাবান মহৎ শিল্পীরাও তাই নতুন প্রেরণা খুঁজে পান গের্নিকার দিকে তাকিয়ে। আর সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভুরা সংগত কারণেই মিনোটরের মতোই এই শিল্পের অসহ্য উত্তাপ ও আলোকে শিউরে উঠে আলো থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। আমরা যারা জীবনকে, স্বাধীনতাকে, মহৎ শিল্পকে ভালোবাসি – আমরা কিন্তু এই আলোতেই নিজেদের সাময়িক ভ্রান্তি আবিষ্কার করে আবার শান্তি ও মানবতার পথে শিল্পের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারি।
টীকা (Notes)
১. আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আরো একটি ছোট প্রাসঙ্গিক উদাহরণ আমেরিকার বিখ্যাত রাজনৈতিক তত্ত্ববিদ এবং এককালীন ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা অধ্যাপক অ্যালান গিলবার্ট তাঁর বিশ্লেষণধর্মী বই Must Global Politics Constrain Democracy?-র প্রচ্ছদের জন্য গের্নিকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
২. Nash (1998) P. 13
৩. Nash (1998) P. 229
৪. বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন : Blunt (1969); Chipp (1988 a,b), Fisch (1988); Grannell (1981); Huffington (1981); Martin (2002); O’Brian (1976); Oppler (1988); Penrose (1985); Rubin (1980); Schapiro (2000); Stich (1983); Tankard (1984); Ullman (1983) এবং Zimmer (1978)। এগুলোর ভেতরে Chipp (1988a) এবং Martin (2002)-এর বিবরণ অত্যন্ত বিশদ। Arnheim (1973)-তে সংক্ষিপ্ত হলেও প্রাসঙ্গিক এবং সঠিক ঐতিহাসিক বর্ণনা আছে। London Times থেকে নেওয়া একটি উদ্ধৃতিও রয়েছে এতে।
৫. Russell (1980) চারশো পঞ্চাশটি ছবিতে সমৃদ্ধ আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ। কিন্তু লেখকের ধর্মীয় প্রভাবের প্রতি পক্ষপাত খুবই স্পষ্ট। বিশ শতকের বিশ্ব অর্থনীতির এবং রাজনীতির সংকট ও ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের উল্লেখ একেবারে নেই বললেই চলে।
৬. Zervos (1937).
৭. কারো কারো মতে দশটি।
৮. এ সম্পর্কে বিশদ তাত্ত্বিক আলোচনা এবং ইংরেজি ও আমেরিকান কবিতা থেকে নেওয়া উদাহরণ পাওয়া যাবে Eegleton-এর How to Road a Poem (1987) গ্রন্থে।
References :
Rudolf Arnheim, The Genesis of a Painting : Picasso’s Guernica (Berkeley : University of California Press, 1973).
Anthony blunt, Picasso’s ‘Guernica’ : The Whidden Lectures for 1966 (Oxford University Press, 1969).
Herschel B. Chipp, Picasso’s Guernica : History, Transformations, Meanings (Berkeley : University of California Press, 1988a).
Herschel B. Chipp, ‘The First Step Towards Guernica’, Arts Magazine, October 1988b, vol, 64, pp. 62-7.
Terry Eagleton, How to Read a Poem, Blackwell, 2007.
Eberhard Fisch, Guernica by Picasso : A Study of the Picture and its Context, trans. James Hotchkiss (London and Toronto : Associated University Presses, 2nd enlarged edition, 1988).
Alan Gilbert, Must Global Politics Constrain Democracy?
(Princeton : Princeton University Press, 1999)
E.F. Granell, Picasso’s Guernica : The End of a Spanish Era (Ann Arbor, Michigan : UMI Research Press, 1981).
A. Stassinopoulos Huffington, Picasso : Creator and Destroyer (London : Weidenfel and Nicolson, 1988).
Russel Martin, Picasso’s War (New York : Dutton, 2002).
Steven A. Nash, ed. Picasso and the War Years, San Francisco : Thames and Hudson, 1998.
Patrick O’Brian, Pablo Ruiz Picasso : A Biography (London : William Collins, 1976).
Ellen C. Oppler ed. Picasso’s Guernica (New York: W.W. Norton, Norton Critical Studies in Art History, 1988).
Roland Penrose, Picasso : His Life and Work (London : Granada, 1985). Chapter 10 ‘Guernica’, pp. 295-324.
W. Rubin ed., Pablo Picasso : A Retrospective, (New York : Museum of Modern Art, 1980).
Frank D. Russell, Picasso’s Guernica : The Labyrinth of Narrative and Vision (London : Thames and Hudson, 1980).
Meyer Schapiro, The Unity of Picasso’s Art (New York : George Braziller, 2000).
Gert Schiff, ed. Picasso in Perspective (New Jersey : Specturm, 1976).
Sidra Stich, Picasso’s Art and Politics in 1936, Arts Magazine, October 1983, vol. 58, pp. 113-18.
Alice Tankard, Picasso’s Guernica and Rubens’s Horrors of War, Toronto : Associated University Presses, 1984.
Ludwig Ullman, Das Bild des Krieges in der Kunst Picassos (Osnabrück : Universität Osnabrück, 1983).
Christian Zervos, ed. Les Cahiers d’Art, 12 Nos. 4-5, 1937.
D. Zimmer, ‘Letter from Guernica : The Bridge across the Mundace,’ Encounter, January 1978, pp. 58-60.
Please teach the rest of these internet hooligans how to write and reescarh!