মে হ বু ব আ হ মে দ
বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে নভেরা আহমেদ স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ‘আধুনিক’ শব্দটি শিল্পকলার ইতিহাসে বহু শত বছর থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যুগধর্মী চিন্তা ও অনুভূতির যোগ্যতর ধারক হতে পারে এমন ফর্ম সৃষ্টির প্রয়াস যে স্টাইল বা রীতিতে থাকে তাকেই আধুনিক বলা হয়েছে। বিশ শতকের সূচনা থেকেই ইউরোপের শিল্পভাষা বিভিন্ন চিন্তা ও প্রকাশভঙ্গিতে সমৃদ্ধ হচ্ছিল। এই রকম সময়ে, ১৯৫০ সালে, নভেরা লন্ডনে যান এবং লন্ডন, ইতালি ও প্যারিস থেকে ভাস্কর্যে পাঠ, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি আধুনিক ভাস্কর্যরীতির সঙ্গে লোকজ ফর্মের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কাজ করেছিলেন। বিষয়লগ্ন ও বিষয়বিচ্ছিন্ন উভয় প্রকারের কাজই করেছেন – এক একটি বিশেষ চিন্তার রূপক হিসেবে ভাস্কর্যগুলো মূর্ত হয়েছে – এদের প্রকাশভঙ্গি নভেরার জন্যে স্বাভাবিকই ছিল, কিন্তু এখানে তা অভিনব মনে হয়েছে এবং তাঁর শিল্পীজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের এইসব কাজে প্রতিভার পরিচয় আছে। তাঁর স্মরণীয় হবার দাবি কেবল কালের বিচারে নয়, প্রতিভাবান শিল্পীর মর্যাদায়ও।
নভেরার জন্ম আনুমানিক ১৯৩০ সালে। চাকরিসূত্রে পিতা সাইদ আহমেদ কলকাতায় ছিলেন। কলকাতার লরেটো থেকে নভেরা ম্যাট্রিকুলেশন করেছেন। সেইসঙ্গে নাচ শিখেছেন, গান গাইতে পারতেন এবং মাটি দিয়ে মডেলিং করতেন। তাঁর মায়ের অভ্যাস ছিল মাটির পাখি, পুতুল, নানারকমের ফুল ও ঘরবাড়ি তৈরি করার। নভেরার মাটি দিয়ে গড়ার কাজটাকে তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি কেউ। শিল্পের কয়েকটি শাখায়ই নভেরার ঝোঁক ছিল, কিন্তু শেষে মডেলিংটাই তিনি বেছে নিলেন। তাঁর পিতা দেশবিভাগের পর কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন এবং নভেরা তখন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। পিতার অবসরগ্রহণের পর তাঁরা সবাই আদি নিবাস চট্টগ্রামে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ইতোমধ্যে নভেরার বিয়ে হয়েছিল এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই সে-বিয়ে ভেঙে যায়। চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন নভেরা, বাড়িতে এক অধ্যাপক তাঁকে পড়াতে আসতেন। এই সময় নজরুলের এক জন্মোৎসবে নভেরা চট্টগ্রামের জুবিলী হলে এক ঘণ্টা নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন। কবির অসুস্থতার প্রতিকায়নে তাঁর পতন দেখিয়েছেন, উত্থানও দেখিয়েছেন। জয়জয়ন্তী রাগে মিউজিক বাজানো হয়েছিল, পরিচালনায় ছিলেন তরুণ লেখক সুচরিত চৌধুরী। তাঁর বাবা-মা কিন্তু অস্থির হয়ে উঠছিলেন আবার বিয়ের জন্যে – তিনি বিয়েতে রাজি ছিলেন না, সিদ্ধান্ত নিলেন লন্ডনে যাবেন। তবে তিনি যে শিল্পীই হবেন এমন কোনো নিশ্চিত পরিকল্পনা তাঁর ছিল না – শিল্প-বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠও তিনি নেননি। যাবার সময় বাবা বলে দিয়েছিলেন, ‘তুমি ব্যারিস্টার হবে, এদেশের প্রথম মহিলা ব্যারিস্টার।’ নভেরা সংস্কৃতিমনা পরিবারের সন্তান, কিন্তু পেশা হিসেবে শিল্পকলাকে বেছে নেবার ব্যাপারটাকে কোনো অভিভাবকই সহজে মেনে নিতে চাইতেন না। মাত্র বছর ত্রিশেক আগেই বারবারা হেপওয়ার্থকেও অত্যন্ত দৃঢ় হতে হয়েছিল তাঁর ভাস্কর হবার সিদ্ধান্তে।
নভেরা লন্ডনে যান ১৯৫০ সালে। লন্ডনে তখন তাঁর মেজ বোন শরীফা আলম বিবিসির একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন এবং বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন নাজির আহমেদ। নাজির আহমেদের ছোট ভাই হামিদুর রাহমান তখন ঢাকা আর্ট কলেজে পড়ছেন – কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের একজন তিনি, তাঁর সহপাঠী ছিলেন আমিনুল ইসলাম। হামিদ যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন নাজির আহমেদ তাঁকে নিয়ে গিয়ে প্যারিসের বোজ আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু হামিদ প্যারিসে থাকতে পারেননি, তিনি লন্ডনে ফিরে ভাইয়ের ফ্ল্যাটেই উঠলেন। আর তখনই নভেরার সঙ্গে পরিচয় হামিদের। এই পরিচয় উভয়ের জন্যেই একটু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। লন্ডনে হামিদ সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টে ভর্তি হলেন – এখানে ভর্তি হবার জন্যে আর্টের ওপর প্রাথমিক কিছু জ্ঞানের প্রয়োজন হতো।
নভেরা ১৯৫১ সালে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসের ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে ভর্তি হলেন – এখানে ভর্তি হতে শিল্পকলা বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল না। ১৯৫১-৫২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইন প্রথম প্রবর্তিত হলো। এ সম্পর্কে প্রসপেক্টাসে বলা ছিল, ‘শিল্পকলার শিক্ষকদের জন্য এটি একটি স্বীকৃত যোগ্যতা হবে।’কোর্সটি চার বছরের – প্রথম দুবছর পর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা, পরবর্তী দুবছর পর ডিপ্লোমার জন্য ফাইনাল পরীক্ষা। নভেরা ১৯৫৫ সালে কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা পেলেন।
ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস সাউথ লন্ডনের পেখাম রোডের পাশেই অবস্থিত। এলাকাবাসীর টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯৮ সালে স্কুলের উদ্বোধন হয়। প্রথমে কারিগরি শিক্ষা প্রাধান্য পেয়েছে, পরে জোর দেওয়া হয়েছে ফাইন আর্টস ও ডিজাইনের ওপর। মাত্র ১৯৮৯ সালে স্কুলটির নাম হয়েছে ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্টস।
ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন ডক্টর ক্যারেল ফোগেল (Dr. Karel Vogel)। তিনি চেকোস্লোভাকিয়ার অধিবাসী। শিল্পের বিপ্লবাত্মক আন্দোলনগুলো তাঁকে আলোড়িত করেনি। ১৯৬১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর গ্রেট ব্রিটেন আর্টস কাউন্সিলের উদ্যোগে প্রদর্শনীর আয়োজন হয় – ব্রোশারে গম্ব্রিচ লিখেছেন, ‘এই শিল্পীর প্রস্তুতিপর্বের সময়টাতে মধ্য ইউরোপে এক্সপ্রেশনিজমের জোয়ার এসেছিল, কিন্তু প্রকৃতির রূপমুগ্ধ শিল্পী তাঁর কাজে নিজস্ব চিন্তাকে স্থান দেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে যদি চিরন্তন কিছু থাকে তবে তা মানবদেহের সৌন্দর্য এবং এর রূপ প্রকাশের মধ্য দিয়েই শিল্পের নবজন্ম সম্ভব। তিনি প্রকৃতি থেকে বিষয় আহরণ করে গ্রিক ভাস্কর্যের প্রতি তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।’ গম্ব্রিচ আরো বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি উদ্দীপনার সঞ্চার করেছেন, মডেলের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বৈচিত্র্যের প্রতি অনুভব জাগিয়ে তুলেছেন।’ ১৯৫৫ সালে নভেরার প্রত্যয়নপত্রে অধ্যক্ষ লিখেছেন, ‘Her studies from life shwo a strong sense of observation, and certainly there is originality and depth of thought in her compositions. Her portrait heads are full of life. Though in general working in the European way Miss. Ahmed’s sculptures shows hwo indelible is the unconscious influence of Eastern monumentality and traditions…. The personality developed here will, I am convinced, become a fine artist and inspiring teacher, given the necessary help and opportunity. নভেরা একজন রক্ষণশীল শিক্ষকের ছাত্রী ঠিকই, কিন্তু পাশ্চাত্যের চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্যের অত্যন্ত ঘটনাবহুল একটি সময়ে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ছাড়াও তিনি ইতালি ও প্যারিসে গিয়ে প্রাচীন ও আধুনিক ভাস্কর্যের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রকৃতি তথা দৃশ্যমান জগৎ চিত্রায়ণের কাজটা যখন ফটোগ্রাফি নিঁখুতভাবে করতে পারল তখনই শিল্পীরা বুঝে নিলেন যে, বাস্তবকে অনুকরণ করার কাজ আর তাঁদের নয় – তাঁদেরকে নতুন নতুন সৃষ্টিতে নিবেদিত হতে হবে এবং বিশ্বস্ত প্রতিকৃতি আঁকার চেষ্টা করলেন না কেউ। সেজান, গগা ও ভ্যান গঘের কাজের মধ্য দিয়েই আধুনিক শিল্পের আবাহন হয়ে গেল। শিল্পীর জোরালো উপস্থিতি প্রকাশ পেতে লাগল প্রতিটি চিন্তাধারায়। চোদ্দ বছরের ছেলে পিকাসোর নিখুঁত পোর্ট্রেট আঁকা দেখে তাঁর শিল্পশিক্ষক পিতা প্রতিজ্ঞা করে ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু পিকাসো ওখানে থেমে থকেননি। তাঁর ১৯০৭ সালের দামোয়াজেল দাঁভিনিত চমকে দিল বিশ্বকে এবং তারপরও তাঁর নতুন নতুন উদ্ভাবন চলতেই থাকে। ১৯১০ সালে কান্দিনস্কির সম্পূর্ণ বিমূর্ত ছবি বিস্ফোরণ ঘটাল, এভাবেই আসতে লাগল একটির পর একটি ধারা এবং সেইসঙ্গে রীতির ভিন্নতা। পেইন্টিংয়ের সঙ্গে ভাস্কর্য তাল মিলিয়ে চলতে লাগল। ইংল্যান্ডে এপস্টাইন, গদিয়ের ব্রেসকা, ম্যাক গিল – এঁদের হাতেই বিশ শতকের শুরু থেকে আধুনিক ভাস্কর্যের বিকাশ ঘটেছে। তারপর হেনরি মোর, বারবারা হেপওয়ার্থের সঙ্গে আরো অনেকে এলেন। যুদ্ধপরবর্তী ভাস্কররা যেন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন যে, তাঁরা কোনো বিশেষ শিল্প-ভাবনায় স্থিত থাকবেন না এবং তাঁদের কাজে স্টাইলের সীমাবদ্ধতা থাকবে না। নতুন শিল্পীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাও বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার করতে আরম্ভ করলেন। ১৯৪৮-এর দিকে ভিক্টর পাসমোরের হাতে কনস্ট্রাকটিভিজমের কাজ শুরু হলো – প্লাইউড বোর্ড, বিভিন্ন ধাতু ও প্লাস্টার দিয়ে তিনি আরো কিছু শিল্পীকে নিয়ে কাজটা করতে লাগলেন।
১৯৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রাহমান একসঙ্গে ফ্লোরেন্সে যান। প্রথমে তাঁরা শিল্পী আমিনুল ইসলামের আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং পরে তিনজন একত্রে একটি স্টুডিওতে উঠে যান। হামিদ ঠধমহরঃঃর-র কাজ করার জন্য ভর্তি হলেন। নভেরা মাস দুয়েক শুধু ঘুরে দেখলেন। ডক্টর ফোগেল ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির নামে এক ইতালীয় শিল্পীর কাছে নভেরার নাম উল্লেখ করে একটি চিঠি দিয়ে দিয়েছিলেন। এই শিল্পীর সাহচর্যে নভেরা দোনাতেলোসহ প্রাচীন কয়েকজন শিল্পীর কাজের সঙ্গে পরিচিত হন এবং দুমাস তাঁর কাছে কাজ শেখেন। ফ্লোরেন্স থেকে ভেনিসে গেলেন নভেরা ও হামিদ এবং সেখান থেকে লন্ডন। ’৬৪ সালেই ক্রিসমাসের ছুটিতে নভেরা ও হামিদ প্যারিসে রঁদার মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন। ভাস্কর্যের ছাত্রী স্বভাবতই অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলেন রঁদার কাজ দেখে।
১৯৫৬ সালের জুন মাসে নভেরা ও হামিদ একসঙ্গে দেশে ফিরে এলেন। ঢাকায় তখন স্থপতি মাজহারুল ইসলামের পরিকল্পনায় আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়েছে। তাঁরই উদ্যোগে নবনির্মিত পাবলিক লাইব্রেরি, পরবর্তীকালে যেটা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেখানে এঁরা দুজনেই কাজ করার কমিশন পেলেন। ওপরের একটি দেয়ালজুড়ে বিশাল এক ফ্রেসকো করলেন হামিদ; নভেরা প্রবেশপথের দেয়ালের ওপরের অর্ধেকটাজুড়ে একটি লো রিলিফ করলেন। তারপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁরা আরো কিছু কাজ করলেন এবং ’৫৭ সালে ওই লাইব্রেরিতেই তাঁদের যৌথ প্রদর্শনী হলো। একেবারে নতুন ধরনের কাজের সঙ্গে পরিচিত হলো এদেশের মানুষ।
’৫৭ সালেই এই শিল্পীদ্বয় শহীদ মিনারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু সরকারি খাতায় নভেরার নাম না থাকায় শহীদ মিনারের নকশা পরিকল্পনায় তাঁর অবদানের প্রসঙ্গটি বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
স্থায়িত্বের কারণে ভাস্কর্য আদর্শ স্মারক মাধ্যম। পৃথিবীর অনেক ভাস্কর্যই স্মৃতিসৌধ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারির রাতেই মাতৃভাষার জন্য রক্তদানের ঘটনাকে অমর করে রাখবার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা। অপেশাদার হাতের সেই ইটের গাঁথুনি দুদিন পরই সরকার ভেঙে দেয়। একটি স্থায়ী মিনার নির্মাণের আকাক্সক্ষা বারবার জাতির মনে হানা দিয়েছে। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান শহীদ মিনারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার অনুরোধ করেন প্রধান প্রকৌশলী জব্বার এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। জব্বার সাহেবের অন্যতম সহকর্মী ছিলেন প্রকৌশলী শফিকুল হক, নভেরার বড় বোন কুমুম হকের স্বামী। শহীদ মিনারের নকশার জন্য কাগজে কোনো বিজ্ঞাপন হয়নি। জয়নুল আবেদিন সরাসরি হামিদকে বলেছিলেন স্কেচসহ মডেল পেশ করতে। স্থাপত্য ভাস্কর্যের মূল নকশার পরিকল্পনা যে নভেরা ও হামিদের যুগ্ম চিন্তার ফসল এটি একটি সহজ সত্য ছিল – ভাস্কর্যের নকশা পরিকল্পনায় ভাস্করের সহযোগিতা থাকবে না, এটি বাস্তবসম্মত কথা নয়। রবিউল হুসাইন ‘ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ’প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে স্থ্াপত্য ভাস্কর্যের সর্বপ্রথম উদাহরণ হচ্ছে শিল্পী হামিদুর রাহমান, ভাস্কর নভেরা আহমেদ এবং স্থপতি জাঁ দেলোরা কর্তৃক নকশাকৃত ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।’ জাঁ দেলোরা তখন সরকারের স্থাপত্যবিষয়ক উপদেষ্টা। হামিদুর রাহমান শহীদ মিনারের যে মডেল ও স্কেচ উপস্থাপন করেছিলেন দেলোরা তার স্তম্ভগুলোর মাপ পরিবর্তন করে দেন। কাজ শুরু হতে দেরি হয়নি – সবার ইচ্ছে ১৯৫৮ সালের ২১ ফেব্র“য়ারির মধ্যে কাজটি শেষ হোক। কাজটিকে ত্বরান্বিত করার জন্যে নির্মাণাধীন মিনারের পাশে দুটি টিনের চালাঘর উঠল – ওখানেই থাকতে শুরু করলেন হামিদ ও নভেরা। কিন্তু তিন-চার মাসে কাজ শেষ হলো না। শহীদ মিনার পরিকল্পনায় নভেরার অবদানের বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা তো আছেন। ১৯৫৮ সালের ২১ ফেব্র“য়ারির The Pakistan Observer-এর প্রথম পাতায় শহীদ মিনার সম্পর্কিত খবর দিয়ে যে-প্রতিবেদনটি যুক্ত হলো তার একটি বাক্য ছিল : … The memorial has been designed by Mr. Hamidur Rahman in collaboration with miss. Novera Ahmed…. ’৫২-র ২১ ফেব্র“য়ারির রাতে যাঁরা শহীদ মিনার গেঁথে তোলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র কবি রফিক আহমেদ – নির্মাণাধীন শহীদ মিনারে তাঁর নিত্য যাতায়াত ছিল – তিনি জানেন শিল্পীদ্বয়ের যৌথ অবদানের কথা। এই শিল্পীদ্বয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আমিনুল ইসলাম – তিনি বলেছেন একটি সত্য যে কালের হাতে কত সহজে বিস্মৃতি ও বিভ্রান্তিতে পরিণত হতে পারে এখানেই তার প্রমাণ। সৈয়দ মহম্মদ আলী বলেছিলেন, ÔNovera had a major contribution in designing the shaheed minar.’ সৈয়দ শামসুল হক তাঁর হৃৎকলমের টানে সংকলনটিতে এ-প্রসঙ্গে কয়েকবার লিখেছেন। এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘… হামিদুর রহমান চিত্রকর, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পরিকল্পনাকারী শিল্পী দু’জনের একজন, অপরজন ভাস্কর নভেরা আহমেদ।’ সৈয়দ হক আবার লিখছেন, ‘… মনে পড়ে গেল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন যে দু’জন তাদের একজনের কথা আমরা একেবারেই ভুলে গিয়েছি। প্রথমত আমরা একেবারেই জানি না এই মিনারের নকশা কারা করেছিলেন, যদিও বা কেউ জানি তো জানি শুধু শিল্পী হামিদুর রহমানের নাম, খুব কম লোকে চট করে মনে করতে পারে যে হামিদের সঙ্গে আরো একজন ছিলেন – হামিদের সঙ্গে ছিলেন বলাটা ভুল, বলা উচিত দু’জনে একসঙ্গে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রূপটি রচনা করেছিলেন। অপর সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন নভেরা আহমেদ।’ সৈয়দ হক আবার লিখছেন, ‘… কিছুদিন আগে শিল্পী হামিদুর রহমান… ঢাকায় এসে টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকার দেন… এ সাক্ষাৎকারে হামিদ নভেরার নাম করেননি। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা দফতরের একটি প্রামাণ্যচিত্রেও হামিদের বক্তব্য আমরা শুনেছি শহীদ মিনার সম্পর্কে, কিন্তু তাকে শুনিনি নভেরার কথা উল্লেখ করতে।…’
শহীদ মিনারের মূল যে-স্তম্ভটি, যাকে মাতৃমূর্তির রূপক মনে করা হয় তার আনতভঙ্গি প্রথমে যেটি হামিদুর রাহমান ও নভেরা আহমেদের উপস্থিতিতে নির্মিত হয় সেটি বর্তমানের মাতৃমূর্তিটির মতো কৌণিক ছিল না। নভেরার Seated Woman নামে তিনটি কাজ আছে – কোমল ভঙ্গিতে মা দৃষ্টিনত করে রেখেছে কোলের সন্তানের প্রতি। নভেরার এই মাতৃমূর্তিগুলো সুইজারল্যান্ডের জারম্যাটে ম্যাটার হর্ন (মাদার হর্ন) নামে যে-পর্বত শৃঙ্গটি আছে তার সঙ্গে তুলনা করা যায় – নভেরা সেখানে গিয়ে না দেখলেও
অন্তত ছবিতে দেখেছেন – সেই সুউচ্চ পর্বত আর তার আনত শৃঙ্গের সঙ্গে নভেরার ঈষৎ আনত মাতৃমূর্তির সাদৃশ্য আছে, বিশেষভাবে সাদৃশ্য আছে শহীদ মিনারের মাতৃমূর্তির সঙ্গে, সেই পর্বতের সঙ্গে দেশমাতৃকার তুলনা চলে – সন্তানের প্রতি আশীর্বাদ ও েস্নহ আনত যার অপরাজেয় শৃঙ্গ। সাদেক খান বলেন, ‘এ ধরনের বিমূর্ত কাজ তখন নভেরা ছাড়া আর কেউ করেনি।‘৫৮ সালের অক্টোবর মাসে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর শহীদ মিনারের কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে। তবে মিনারের মূল বা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা কোনোদিনই বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর হামিদ একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দেবার জন্য আমেরিকায় যান এবং নভেরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ শুরু করেন। কিন্তু হাবার্ট রিডের উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে হয়, ‘ভাস্করের কাজ কবি বা চিত্রশিল্পীর মতো নয়, ভাস্কর্যের জন্য দরকার খোলা জায়গার, চার্চ বা মার্কেট প্লেসের কারণ সে কাজ রাজসিক ভঙ্গিতে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যাবে এবং সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে। কিন্তু এ-ধরনের সুযোগ তখন আমাদের দেশে বিশেষ ছিল না এবং সরকার বা ধনী লোকের পৃষ্ঠপোষকতার একান্ত প্রয়োজন ছিল। নভেরা তেজগাঁওয়ের এক ধনী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি কমিশন পেয়েছিলেন – এর ওপর সৈয়দ শামসুল হকের একটি মন্তব্য আছে, ‘… একটু হকচকিয়ে যেতে হতো এই ভেবে যে সে একজন বাঙালি মুসলমান তার বাড়ির বাগান সাজাবার জন্যে একটি ভাস্কর্য কিনেছেন। এবং সে-ভাস্কর্যটি নারী মূর্তি নয়, কোমলপ্রাণ ও চিত্রিত দেহ কোনো পশুমূর্তি নয় কিংবা ছাঁচে ঢালা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা কোনো সস্তা কাজও নয়, এক প্রতিভাবান তরুণ শিল্পীর বিমূর্ত ও পরীক্ষামূলক একটি কাজ।’ এ কাজটিতে নভেরা গ্রামীণ একটি বিষয় ব্যবহার করেছেন – এখানে মানুষ ও গরুর পা এবং শরীর একীভূত হয়ে গেছে – এভাবেই গরুর ও মানুষ উভয়ের ওপর উভয়ের নির্ভরশীলতা বোঝানো হয়েছে। ভাস্কর্যটির কিছু কিছু অংশ বৃত্তাকারে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। ক্লোজড ফর্মের কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন আকারে কেটে বাদ দেওয়ার কাজটি বারবারা হেপওয়ার্থ প্রথম করেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই হেনরি মোর এই রীতি গ্রহণ করেছেন এবং পরবর্তী বহু ভাস্কর্যেই এর ব্যবহার দেখা গেছে। হেপওয়ার্থ বলেছেন, কাজটি প্রথম করার পর গভীর এক আনন্দ অনুভূত হয়েছিল তাঁর। একটি ক্লোজড ফর্ম পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে জায়গা দখল করে রাখে, আলাদা হয়ে থাকে এর উপস্থিতি। গ্রিক কলামগুলো যদি দেখি – স্পেস খালি রেখে রেখেই সেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এবং সৌন্দর্যটা ওখানেই। কলামগুলো বা ফর্মগুলো ঠিক খোলা স্পেসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কলাম ও তার মধ্যেকার খোলা স্পেস বিরতিহীন ফর্ম তৈরি করেছে – দুয়ে মিলে সম্পূর্ণ। এই বিষয়টি নভেরাকে নিশ্চয়ই নাড়া দিয়েছিল। কারণ অনেক কাজেই তিনি যড়ষব তৈরি করেছেন। চট্টগ্রামের রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান অফিস এবং ঢাকার অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সামনের লনে নভেরার আরো দুটি কাজ আছে। কাজ দুটি আয়তনে তেমন বড় নয়, উচ্চতায় তিন ফুটের মতো। প্রথমটি অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজ, দ্বিতীয়টি অ্যাবস্ট্রাকটেড মাতৃমূর্তি। ’৫৯ সালে নভেরা বার্মা (মিয়ানমার) গিয়েছিলেন বৌদ্ধমন্দির দেখার জন্য – সেখান থেকে ফিরে বুদ্ধের আসন বা পিস নামকরণে কয়েকটি কাজ করেছেন এবং কয়েকটি ফর্মে কাজটি করেছেন।
১৯৬০ সালের আগস্টে এশিয়া ফাউন্ডেশন ও পাকিস্তান ইউনাইটেড নেশনসের যৌথ সহযোগিতায় বর্তমান ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে নভেরার একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো। সাত তারিখ সন্ধে ছটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জেনারেল আযম খান। লাহোরের আর্ট কাউন্সিলের সেক্রেটারি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, হাইকমিশনার এ কে ব্রোহী, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক আবদুস সালাম এবং সৈয়দ মহম্মদ আলীর লেখা ব্রোশারে সংকলিত হয়েছিল। সাত ও আট তারিখের প্রতিটি খবরের কাগজে প্রথম পাতায় ছবিসহ প্রদর্শনীর খবর প্রকাশিত হলো। খবরটি করাচি থেকে প্রকাশিত কাগজ উধহি-এর প্রথম পাতায়ও ছিল। জেনারেল আযম খান শিল্পীকে উত্তরোত্তর কাজ করে যাবার জন্য উৎসাহিত করে দশ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন।
তখন পর্যন্ত ঢাকা আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগ খোলা হয়নি। ’৫৭ সালে ভাস্কর্যের ওপর পাঠ ও প্রশিক্ষণ শেষে আমেরিকা থেকে ফিরে এলেন আবদুর রাজ্জাক। তখন থেকেই তিনি আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৬৩ সালে ভাস্কর্য বিভাগের জন্য আলাদা ভবন নির্মিত হয় এবং ১৯৬৪ সাল থেকে ক্লাস শুরু হয়। আর্ট কলেজে চাকরির সুযোগ থাকলে হয়তো নভেরা ঢাকায় স্থিত হতে পারতেন। ঢাকা তখন প্রাদেশিক রাজধানী মাত্র, স্থাপত্যের সংখ্যা কম ছিল আর তেজগাঁওয়ের ধনী ব্যবসায়ীর মতো ধনীর সংখ্যাও খুব কম ছিল। নভেরা কোনো কমিশন পাচ্ছিলেন না বলেই ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ তাঁকে লাহোরে যাবার আমন্ত্রণ জানালেন – কিছু কাজের ব্যবস্থা তিনি করতে পারবেন এমন প্রতিশ্র“তিও দিয়েছিলেন।
১৯৬১ সালে ‘All Pakistan Painting and Sculpture Exhibition’-এর আয়োজন হয়। বছর দশকের একটি ছেলে ঘরের কাজে নভেরাকে সাহায্য করত, এই এক্সিবিশনের জন্য নভেরা তারই একটি আবক্ষমূর্তি তৈরি করে দিলেন। ক্যারেল ফোগেলের ছাত্রী কাজটির নাম দিলেন Child Philosopher – এর জন্য প্রথম পুরস্কার পেলেন নভেরা। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মমতাজ হোসেন দৌলতানা মূর্তিটি কিনেছিলেন। নভেরার আরেকটি কাজ P.I.A (Pakistan International Airlines) কিনেছিল। লাহোরে থাকতেই নভেরার মনে হলো ভরত নাট্যম শেখা প্রয়োজন। স্থির হলো মুম্বাই যাবেন। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ তাঁকে উর্দু লেখক ইসমাত চুগতাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। নভেরা তাঁর বাড়িতেই আতিথ্য গ্রহণ করেন। নাচ সবসময়ই তাঁর প্রিয় শিল্প ছিল। ক্যাম্বাওয়েলের ডিপ্লোমার জন্য তাঁর ডিসার্টেশন পেপার wQj Dance in Indian Sculpture. ডক্টর ফোগেল লিখেছেন, ‘She is well-read and produced an impressive thesis on eastern dances.’ এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, ভাস্কর্যে ব্যবহারের জন্যই নভেরা নাচ শিখতে শুরু করেছিলেন। এ বিষয়ে বারবারা হেপওয়ার্থের সঙ্গে নভেরার সাদৃশ্য আছে। শৈশব থেকে ছন্দবোধ, বিশেষ করে মানবদেহের ছন্দবোধ খুব তীক্ষ্ণ ছিল বারবারার। তাঁর বোন এলিজাবেথ তাঁর বাড়িতে থেকেই ব্যালে শিখছিলেন – এতে বারবারার ব্যালে জগতের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছিল – প্রায়ই তিনি ছাত্রছাত্রীদের নাচের অনুশীলন দেখতে যেতেন। এভাবেই তিনি বিভিন্ন ভঙ্গিতে অঙ্গ সঞ্চালনের বহু স্টাডি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সঞ্চালনের মধ্যে যে-ছন্দ ফুটে ওঠে তার প্রতি সচেতনতা একজন ভাস্করের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নভেরা নাচের অনুশীলন শুরু করে অতিরিক্ত চাপ দিলেন শরীরের ওপর – তিন বছরের কোর্স নয় মাসে শেষ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁর হাঁটু এমনভাবে ফুলে গিয়েছিল যে লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতেন না। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল নভেরার ইউটেরাসে টিউমার হয়েছে। বন্ধুদের সহযোগিতায় তিনি লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে ইটালিয়ান হাসপাতালে তাঁর হিসটেকটোমি হয়। এখান থেকে সুস্থ হয়ে নভেরা প্যারিসে চলে যান। এর বছর চারেক পরে তিনি ব্যাংককে এসেছিলেন।
ব্যাংকক পোস্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে সৈয়দ মহম্মদ আলী ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ব্যাংককে ছিলেন। তিনি ’৬৮ সালের শেষদিকে নভেরার ভাস্কর্যের একটি একক প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিলেন। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ এবং চ.ও.অ যৌথভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করল – স্থান হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ অডিটরিয়ামে। প্যারিসে নভেরা ব্রোঞ্জ ও অন্যান্য মেটালের বহু কাজ করেছিলেন – সেসব নিয়েই তিনি ব্যাংককে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফটোগ্রাফার বন্ধু গ্রেগর দ্য ব্র“নস বা সংক্ষেপে গ্রিশা – তিনি জন্মগতভাবে রুশ কিন্তু আজন্মই তাঁর ফ্রান্সে থাকা। ভালো ফটোগ্রাফার ছিলেন গ্রিশা এবং এস এম আলী লক্ষ করেছিলেন তাঁদের বন্ধুত্ব। তাঁরা প্যারিসে ফিরে যাবার পর আলী গ্রিশাকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, ‘নভেরাকে তুমি বিয়ে করো’।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, নভেরার প্যারিসে করা যে-কাজগুলো ব্যাংককে প্রদর্শিত হয়েছিল তার কোনো নিদর্শন পাইনি, এমনকি ব্রোশারও নয়।
পাশ্চাত্যের শিল্পীরা যখনই অনুকরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব চিন্তায়, নিজস্ব স্টাইলে শিল্প সৃষ্টি আরম্ভ করলেন তখন থেকেই তাঁরা তাঁদের অবস্থান ও আনুষঙ্গিক সবকিছুর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁরা পরিবর্তমান পরিপ্রেক্ষিতের কথা বলছেন, অসুবিধার কথাও বলছেন। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁরা আপন আপন শিল্প-ভাবনার আলোচনা করেছেন এবং এতে শিল্পী ও শিল্প-সমালোচক দুপক্ষই সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং শিল্পকর্মের বিষয়টি অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
একজন ভাস্কর হিসেবে ইউরোপের শিক্ষা ও চিন্তা নিয়ে দেশে ফিরে নভেরা কী এবং কতটা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তা আমরা জানি না। শিল্পীবন্ধুদের সঙ্গে নভেরা তাঁর শিল্প-ভাবনা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এমন আভাস পাইনি।
১৯৫৬ সালের মধ্যভাগ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত নভেরা দেশে ছিলেন এবং এই পাঁচ-ছবছরে তিনি যে-কাজ করেছেন তা একজন শিল্পীর প্রস্তুতি পর্বের কাজ হিসেবেই ধরা যায় – একজন শিল্পীকে শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য এ-সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু নভেরা তাঁর প্রথম জীবনের কাজ দিয়েই আমাদের কাছে পরিচিত। ইউরোপের আধুনিক ভাবধারার সঙ্গে তিনি দেশীয় বিষয় ও টেকনিকের সাহায্য মিলিয়ে কাজ করেছিলেন। ইউরোপে ব্রোঞ্জ ও অন্যান্য ধাতু দিয়ে যে কাজ হচ্ছিল আমাদের দেশে তখন তা সম্ভব ছিল না। নভেরা লোহার রডের আরমেকার বা খাঁচা তৈরি করে তার ওপর সুরকি ও সিমেন্ট ব্যবহার করেছেন আর কাঠের কাজও কিছু করেছেন। তাঁর ‘পিস’ কাজটি ছাড়া শহীদ মিনারের মতো সম্পূর্ণ বিমূর্ত কাজ আর করেননি।
ঝবধঃবফ ডড়সধহ নামে নভেরার তিনটি কাজ আছে সে কথা বলেছি – কোলে শিশু নেই কিন্তু কোলের ব্যপ্তি ও গভীরতা দিয়ে শিশুর অবস্থান এবং মায়ের েস্নহ ও দায়িত্বের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যে কয়েকটি প্রিয় বিষয়ের ওপর তিনি একাধিক কাজ করেছেন তার একটি পরিবার। মা-বাবা আর দুটি কি তিনটি শিশু, মা-বাবাকে তিন পায়ের ওপর দাঁড় করিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্ভরশীলতা বোঝানো হয়েছে, নাচের ভঙ্গিতে শিশুর শূন্যে তোলা পা সুখী পরিবার নির্দেশ করছে। কেবল মা ও শিশু নিয়ে তাঁর কয়েকটি কাজ আছে – একটিতে মা কোলে একটি, হাতে একটি শিশু নিয়ে দৃপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়ানো; একটিতে অর্ধশায়িত মায়ের বিস্তৃত কোলে আছে চঞ্চল তিনটি শিশু। এরকম একটি মা ও শিশুর কাজে লোকজ পুতুলের ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে।
গো-পালক ও গরু তাঁর আরেকটি প্রিয় এবং আশাবাদী বিষয়। এছাড়া বসা ও দাঁড়ানো দুই ভঙ্গিতেই পুরুষ ও নারীদেহের স্টাডি আছে। বার্মা থেকে বৌদ্ধমন্দির দেখে ফিরে এসে তিনি বুদ্ধের আসন করেছিলেন আর ‘শান্তি’ নামে বেশ কয়েকটি কাজ করেছিলেন। বুদ্ধের আসনে মানুষ বা মানুষের রূপক কোনো ফর্ম নেই। একটি চূড়া কেবল ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে ওপরে উঠে গেছে – মসজিদ, মন্দির বা চার্চের যেমন থাকে – স্বর্গীয় করুণার আশায়। ‘শান্তি’ নামের কাজটি তিনি বারবার করেছেন, এখানে নারীর অবয়ব এসেছে আর্তমানবতার প্রতীক হয়ে, নারীর শরীর এখানে প্রাধান্য পায়নি, শরীরটাকে অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, মাটিতেই তাঁর আসন কিন্তু সমস্ত অন্তরাত্মা এবং শরীর একটি আর্তিরূপে ওপরে তাকিয়ে আছে শান্তির আশায় অথবা কী নির্বান আকাক্সক্ষা করে? তার নিচের ঠোঁট কোণের দিকে ঈষৎ ঝুলে আছে, চিবুক এবং চোখে কষ্টের ছাপ। এ কাজগুলোর প্রায় সবই দুফুটের কাছাকাছি উচ্চতার। ব্যাংককে প্রদর্শিত মেটালের কাজগুলো আমাদের দেখার সুযোগ হলো না – এখানে যে-কাজগুলো আমরা দেখেছি তার বেশ পরের এইসব কাজে নিশ্চয়ই চিন্তার পরিপক্বতার ছাপ ছিল, হয়তো নির্মাণকৌশলে আরো দক্ষতার পরিচয় ছিল।
ভাস্কর্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রাজ্জাক ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান নভেরার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল – সেই পঞ্চাশের দশকে নভেরা যে কীভাবে এতটা আধুনিক কাজ করেছিলেন তা তাঁরা ভেবে আশ্চর্য হন; তাঁরা বলেন যে, তিনি যদি ভাস্কর্যকে এই পর্যায়ে এনে রেখে না যেতেন তবে আরো অনেক সময় লেগে যেত পরবর্তী পর্যায়গুলোতে পৌঁছাতে।
এই শিল্পী আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেলেন। ১৯৫৩ সালের ২২ জুনের একটি প্রত্যয়নপত্রে ডক্টর ক্যারেল ফোগেল লিখেছিলেন, ÔMiss Ahmed has a strong gift for sculpture and her works shwo a fine feeling for form. … I am convinced that she will achieve great perfection in her art if she continues with her work. সেই ‘great perfection’ আমাদের দেখা হলো না কারণ তিনি continue করলেন না – শিল্পকর্ম থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে নিলেন।
নভেরা যে স্বদেশ, আত্মীয়-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন সে অনেকদিনের কথা। ব্যাংককে প্রদর্শনীর পর প্যারিসে ফিরে যান এবং ১৯৭০-এর শেষদিক থেকে বহুদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু … মহম্মদ আলীর সঙ্গেও তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। তিনি খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করতেন – তবে সঠিক তথ্য সবসময় পাননি। ১৯৭৪ সালে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে নভেরার দেখা হয় – ডক্টর হোসেন তাঁর জন্য একটি সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বিষয়টি কার্যকর হবার আগেই ১৯৭৫-এর আগস্ট এসে যায়। নভেরা এতটাই আত্মগোপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, এস এম আলী শুনেছিলেন নভেরা আর নেই – সেটা ১৯৮৯ সালের কথা। এবং সকলেরই এরকম একটা নিশ্চিত ধারণা হয়েছিল যে তিনি নেই। নভেরা অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন, কিন্তু আর্থিক স্বনির্ভরতা ছাড়া তো সেটা একেবারেই সম্ভব নয়। চাকরি? কিন্তু সেখানেও তো পরাধীনতার প্রশ্ন থাকে, তবে মালিন্য হয়তো থাকে না। সেজানের মতো ভাগ্যবান আর কজন হতে পারে? দৈনন্দিন জীবনযাপনে যে অর্থগত একটা দিক থাকে সে তো অস্বীকার করা যায় না। নভেরা ভালো বন্ধুবান্ধব পেয়েছিলেন, অনেক সহযোগিতা তাঁরা দিয়েছেন – এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে ছিলেন হামিদ, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং এস এম আলী। এস এম আলী ব্যাংকক পোস্টে কাজ করতেন বলেই সম্ভব হয়েছিল – তারপরও তিনি বলেছিলেন ও ধিং ফৎধরহবফ. আলী বলেছেন, নভেরা বন্ধুত্ব দিয়ে, আন্তরিকতা দিয়ে প্রতিদান দেবার চেষ্টা করতেন। কিন্তু মানসিক কষ্ট নিশ্চয়ই নভেরার ছিল – তা না হলে এভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা তো সহজ কথা নয়। বর্তমান ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে নভেরা দুবার প্রদর্শনী করেছিলেন – এখানেই মুখোমুখি দুটো স্টোর রুমে কিছু কাজ পাওয়া গেছে অচিন্ত্যনীয় দুর্দশায় আর কিছু পাওয়া গেছে গণগ্রন্থাগারের বেজমেন্টে – সেখানে কাজগুলো অত খারাপ অবস্থায় ছিল না, তবে পৌঁছেছিলই ভেঙেচুরে এবং সবই ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরির সামনে ‘পরিবার’ গোত্রের একটি কাজ ভাঙা অবস্থায় ছিল, অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সামনের কাজটিও মলিন অবস্থায় দেখেছি, যতেœ ছিল তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীর লনের কাজটি। শহীদ মিনারে নভেরার অবদানের বিষয়টিও চাপা পড়ে গিয়েছিল – কিন্তু দুঃখ ছিল সবার। যেভাবেই হোক, নভেরা কিন্তু একটি বিস্মৃতপ্রায় নামে পরিণত হয়েছিলেন – এটা তাঁর সমকালীন বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতরা কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। ১৯৯৩ সালের একটা সময়ে শিল্পী আমিনুল ইসলাম নভেরার ওপর লিখতে বললেন এবং নিজের জানা তথ্য দিয়ে, কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া প্রায় একই সময়ে তিনি হাসনাত আবদুল হাইকেও তাঁর জানা তথ্য সব দিয়েছিলেন – এতে একটি ভালো কাজ হলো – হাসনাত আবদুল হাই নভেরাকে নিয়ে উপন্যাস লিখলেন এবং উপন্যাসটি যথেষ্ট নন্দিত হয়েছে। সৈয়দ মহম্মদ আলী বলেছিলেন, ‘You can write a fiction on her but not a biography. Such a secretive nature and the whole family is so secretive.’ আমি তখন তাঁকে নভেরার দুই বোন শরীফা আলম ও তাজিয়া কমরের কথা বলেছিলাম – বলেছিলাম তাঁরা আমাকে তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা বা তারিখ আমাকে জানাননি বা জানাতে পারেননি। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে সংবাদের সাহিত্য পাতায় নভেরার ওপর আমার একটি প্রবন্ধ ছাপা হলো। দুবছর পর তিনি একুশে পদকের জন্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৭ সালের একুশে ফেব্র“য়ারির আগেই তাঁর নাম ঘোষিত হয় – ক্ষীণ আশা ছিল তিনি পুরস্কারটি নিতে আসবেন। পরের বছর জাদুঘরের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ ১৪০৫-এর নববর্ষের দিন নভেরা আহমেদের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় – প্রদর্শনী এক মাস চলে। সবচেয়ে বড় কথা, জাদুঘরের একটি হলের নামকরণ হয়েছে ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ হল’। ’৯৫ সালের মার্চ মাসে প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কে এম সেহাবুদ্দিন নভেরার মামাতো ভাই বি আর নিজামকে জানান যে, নভেরা বেঁচে আছেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। প্যারিসে বসবাস করেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন – আমিনুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী আনাকে বলেছিলেন নভেরার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে – শুনেছি আনা ইসলাম প্রায়ই নভেরার সঙ্গে যোগাযোগ করেন; আশা করি তাঁর কাছ থেকে অজানা কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এই কাজগুলো করে নভেরাকে অন্তত বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে বার করে আনা সম্ভব হয়েছে। নভেরা সম্পর্কে কয়েকটি ধহবপফড়ঃব আছে আমিনুল ইসলাম ও সাইদ আহমেদের বলা – সেসব এখানে সংযোজন করা যথার্থ হবে কি না সে-দ্বিধা আছে। ইংল্যান্ডে তাঁর লেখাপড়া সম্পর্কে কারো তেমন কিছু জানা ছিল না। সাইদ আহমেদ ক্যাম্বারওয়েলের নাম এবং অধ্যক্ষের নামটা বলেছিলেন কিন্তু আর কিছু নয়। আর ব্রোশারে এস এম আলীর লেখায় আছে, নভেরা এপস্টাইনের ছাত্রী ছিলেন – তিনি এরকমই শুনিছিলেন বলেই লিখেছিলেন – কিন্তু এটা যে অমূলক তথ্য তা ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্টসে গিয়ে জানতে পারলাম। প্রয়োজনীয় তথ্যের অধিকাংশই এস এম আলী দিয়েছিলেন, তিনি শেষবার যে ব্যাংককে গেলেন তার আগের রাতে ফোন করতে বলেছিলেন – ফোনে বলেছিলেন তিনি এসে কথা বলবেন এবং ব্যাংককে নভেরার কোনো কাজ এখনো আছে কি না তাও দেখে আসবেন। তিনি যে এতটা অসুস্থ ছিলেন আমি জানতাম না। ১৯৬০-এর প্রদর্শনীর ব্রোশারটা ‘Inner gaye’পেয়েছিলাম মূর্তজা বশীরের কাছ থেকে, Child philosopher-এর ছবিটাও ছিল ওখানেই। বলার সঙ্গে সঙ্গে বার করে দিলেন ট্রাঙ্ক থেকে – এতদিন সযতেœ রাখা জিনিসটা, দ্বিধা করলেন না দেবেন কি না, ভুলে যাননি কোথায় রেখেছেন – আশ্চর্য।
বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে নভেরা আহমেদ নিয়ে অসাধারন লেখা। ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ন তথ্যের জন্য।
It;s a very nice and informative write up on the artist Nover Ahmed and her works, which is very resourceful for our art history.
NIce and informative, its a hypocracy as Novera’s Name was not mentioned officially in Shaheed MInar History