logo

দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও নাট্য বিষয়ে সংলাপ

আ ব দু স  সে লি ম

‘আমরা যারা বেঁচে আছি সেই প্রান্তিক বিশ্বের পরও, বেঁচে আছি অপরাধ ও সংঘাতে নিমজ্জিত হয়ে, যা আকস্মিক প্রজ্বলিত হয় নতুন-নতুন স্থানে এবং দ্রুততম সময়ে, যার অনুসরণ সর্বব্যাপী গণমাধ্যমের পক্ষেও সম্ভব নয়…।’ বিশ্ব নাট্যদিবস ২০১৫-এর বাণীতে বলেছেন পোলিশ নাট্যনির্দেশক ক্রিস্তফ ওয়ারলিকাস্কি এবং কাকতালীয় হলেও সত্যি, নাটক যে প্রকৃত অর্থেই অপরাধ ও সংঘাতে নিমজ্জিত বিশ্বের বিরুদ্ধে এক অমোঘ প্রতিবাদ তার প্রমাণ মেলে গত ১৩ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় ঢাকা   আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব উদ্যাপনের মাধ্যমে, যার স্লোগান ও মূল প্রতিপাদ্যই ছিল ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক’। এই উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

উৎসবে সর্বমোট ছাবিবশটি নাট্যদল ছাবিবশটি নাটক, যার মধ্যে চীন থেকে দুটি, ভারত থেকে দুটি এবং ইংল্যান্ড থেকে একটি, সর্বমোট পাঁচটি বিদেশি নাটক মঞ্চায়ন করে। নাট্য মঞ্চায়ন ছাড়াও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উৎসবে অন্তর্ভুক্ত ছিল : নাটক মঞ্চায়ন শেষে প্রতিদিন ‘মিট দ্য ডিরেক্টর’ বা নির্দেশকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ও প্রশ্ন-উত্তর এবং দিনব্যাপী ‘ডিসকোর্স অন থিয়েটার’ বা নাট্য বিষয়ে সংলাপ। সংলাপের মূল দুটি বিষয় নির্ধারিত হয়েছিল – ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক’ এবং ‘নাটক : শিল্পের প্রত্যুত্থান’। পুরো নাট্যোৎসবটি উৎসর্গিত হয় উপমহাদেশের মহান নাট্যব্যক্তিত্ব প্রয়াত শম্ভু মিত্রের স্মরণে।

উৎসব উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত; সম্মানিত অতিথি ছিলেন মাননীয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (বিশ্বব্যাপী) সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধনীর পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত মঞ্চে উপস্থাপিত হয়    চিন্তক থিয়েটার, গাইবান্ধার শিল্পীদের একটি বর্ণাঢ্য নান্দনিক প্রণয়কলা। উৎসবের সম্পূরণী হিসেবে আরো একটি বিষয় ছিল জাতীয় নাট্যশালার প্রবেশদ্বারের উন্মুক্ত স্থানে। বিশ্বের স্মরণীয় প্রয়াত নাট্যকারদের উল্লেখযোগ্য নাট্যকৃতির শিরোনামসহ আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর কিউরেটর ছিলেন বাবুল বিশ্বাস এবং উদ্বোধক ছিলেন মাননীয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

যদিও মঞ্চায়িত ছাবিবশটি নাটকের একটি তালিকা নাট্যদল ও নির্দেশকদের নামসহ উদ্ধৃত করা সম্ভব, প্রতিটি নাটকের প্রায়োগিক ও নান্দনিক গুণাবলি বিষয়ে মন্তব্য যুক্তিসংগত হবে বলে বোধ হয় না। তাই এ ব্যাপারে নৈর্বাচনিক তত্ত্ব প্রয়োগই অধিকতর কার্যকর হবে বলে আমার মনে হয়। মঞ্চায়িত নাটকগুলো হলো : ভঙ্গবঙ্গ, আরণ্যক নাট্যদল; অন্ধকারে মিথেন, আগন্তুক নাট্যদল; কবি, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ; বাঁদী-বান্দার রূপকথা, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার (ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্রের সৌজন্যে); দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া, বটতলা; দক্ষিণা সুন্দরী, থিয়েট্রিক্স; নাম গোত্রহীন : মান্টোর মেয়েরা, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়; ম্যাকবেথ, পদাতিক নাট্য সংসদ; সাইকেলঅলা, নাট্যম রেপার্টরি; ম্যাকাব্রে, সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার; ট্র্যাজিডি পলাশবাড়ি, প্রাচ্যনাট; প্রমিথিউস, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়; গ্যাম্বলার ওয়াং, ইয়ং ফু প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার, চীন; সে রাতে পূর্ণিমা ছিল, আরশীনগর; পোড়ামাটি, পদাতিক; দুই যে ছিল এক চাকর, নাট্যকেন্দ্র; না-মানুষি জমিন, থিয়েটার আর্ট ইউনিট; উল্টোরথ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; দ্য থ্রি গ্রেড সুপার প্রমোশন, গুয়াং ঝু গাওজিয়া অপরা ট্রুপ, চীন; চিয়ারী, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কুষ্টিয়া; স্পার্টাকাস, স্বপ্নদল; দ্রৌপদী, কলাক্ষেত্র মণিপুরি, ভারত; গল্প নিয়ে গল্প ও ঊষা উৎসব, ঢাকা থিয়েটার; সারস ডানার পরান পাখী, দ্যাশ বাংলা থিয়েটার; কুহকজাল, থিয়েটার এবং যমুনা, থিয়েটার ফোকাস, লন্ডন।

উল্লেখ করা বাহুল্য হবে না, ২০১১-তে অনুষ্ঠিত প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের চেয়ে এবারের নাট্যোৎসবের নির্বাচিত নাটকগুলো গুণ ও নান্দনিক বিচারে অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট ছিল। যদিও যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে উৎসবের সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়েছে এবং যদিও রাজনৈতিক পরিবেশ বৈরী ছিল, দর্শকের অপ্রতুল উপস্থিতি ছাড়া উৎসবটি সর্ববিচারে সফলতর হয়েছে। প্রসঙ্গত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনীর আলোচনা যথাযথ ও সমীচীন হবে।

প্রথমেই আগন্তুকের পরিবেশনা অন্ধকারে মিথেন প্রসঙ্গ। নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে উৎসবের প্রথম সন্ধ্যায়, রচনা ও পরিচালনা পান্থ শাহরিয়ার। নাটকটি যদিও মৌলিক এবং বাংলা ভাষায় রচিত, তবু চরিত্রের নামকরণ ও তাদের জীবনযাত্রা, পরিপ্রেক্ষিত, ঘটনাক্রম দেশজ মনে হয় না। যে বিশেষ কারণে নাটকটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো যথাক্রমে অভিনয়, প্লট, সংলাপ, কোরিওগ্রাফি ও সংগীত। মানতেই হবে পান্থ শাহরিয়ার যেমন নাট্য রচনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন তেমনি সমপরিমাণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন নির্দেশনা ও প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে। অন্যদিকে ত্রপার শক্তিশালী বিপ্রতীপ পরিপূরক নারী চরিত্রের অভিনয় নাটকটিকে একটি নান্দনিক শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

উজ্জ্বল আলোর বর্ণিল পরিবেশে রূপকথার অভিনয় দর্শককে বিমোহিত করেছে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের উপস্থাপনা সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের বাঁদী-বান্দার রূপকথা। মূলত এটি আরব্য উপন্যাসের আলিবাবা চল্লিশ চোরের নৃত্যালেখ্য। বিশাল পরিসরে, সুদক্ষ আলোকসম্পাত, উজ্জ্বল কস্টিউম, সুনিপুণ কোরিওগ্রাফি ও সংগীতের মধুরিমা সম্মোহন জাতীয় নাট্যশালার পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সকল শৈল্পিক বিচারেই বিনোদন দিতে সক্ষম হয়েছেন এই নৃত্যালেখ্যর কলাকুশলীরা।

মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সকালে প্রয়াত উর্দু ছোটগল্প লেখক ও অনুবাদক সাদাত হাসান মান্টো (মান্টো ভিক্টর হুগো, অসকার ওয়াইল্ড, চেকভ ও গোর্কি অনুবাদ করেছেন) তাঁর তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে সামাজিক বাস্তবতাকে তাঁর সাহিত্যকৃতিতে স্পষ্ট করেছেন তা বোধহয় এই উপমহাদেশে খুবই বিরল। ঠিক এ কারণেই তিনি উপমহাদেশের সব ভাষাভাষী পাঠক ও শিল্প-সাহিত্যামোদীর কাছে এত সহজে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তাঁরই লেখা ছোটগল্প থেকে তিনটি নিপতিত, বঞ্চিত, পুরুষ কর্তৃক ব্যবহৃত ও প্রতারিত নারী চরিত্র নিয়ে ঊষা গাঙ্গুলী একটি কোলাজ নাট্য-চালচিত্র প্রস্ত্তত করেছেন নাম গোত্রহীন : মান্টোর মেয়েরা শিরোনামে। নাটকটির সমকালীনতা অনস্বীকার্য এবং নাটকে প্রশংসনীয়ভাবে মেধাসম্পন্ন একাধিক অভিনেত্রীর সন্নিপাত ঘটেছে, যেমন সারা যাকের, অপি করিম এবং শ্রিয়া সর্বজয়া কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্নভাবে মনে হয়েছে নাটকের পরম্পরায়, অর্থাৎ এক উপাখ্যান থেকে অপর উপাখ্যানে নিস্তরঙ্গ উত্তরণ হয়নি। এর একটি কারণ সম্ভবত মূল তিনটি ঘটনার প্লট ছোটগল্প থেকে নেওয়া।

ম্যাকাব্রে নাটকটি ইতোমধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের নাট্যজগতে, বিশেষ করে নির্দেশক অতিমাত্রায় কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার কারণে। তবে একথা তো সত্য, শেকসপিয়রের যুগে বিদ্যুৎ ছিল না বলে নাটক দিনের আলোয় মঞ্চায়িত হতো আর এখন যে-কোনো নাটকেই শুধু বৈদ্যুতিক আলো নয়, কম্পিউটার মাধ্যমে শব্দ ও ছায়াচিত্র সংযোজন অহরহই হচ্ছে। সে হিসেবে ম্যাকাব্রে কোনো অপরাধ করেনি – বরং নাটকটি এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে অগ্রদূত হয়েই থাকবে। তবে Macabre শব্দটি মূল ফরাসি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অন্তর্গত হয়েছে। উৎপত্তি ঊনবিংশ শতাব্দীতে এক বিশেষ নাট্যকৃতির ফলশ্রুতিতে, যার নামকরণ করা হয়েছিল Macabre বা ‘dance of death.’ ধ্বনিগতভাবে ‘ম্যাকাব্রে’ সঠিক নয় – হওয়া উচিত মাকাব্রেরা বা ইংরেজিতে Makaebre। তবে নাটকের বিষয়বস্ত্ত নামানুসারে সঠিক হয়েছে।

চীনদেশের কৃত্যশিল্পে রং, আলো, কস্টিউম, সংগীত ও সর্বোপরি কসরতনৈপুণ্য প্রশংসনীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। ইয়াং ফু প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার এবং গুয়াংঝু গাওজিয়া অপরা পরিবেশিত যথাক্রমে গ্যাম্বলার ওয়াং প্রিপেয়ার্স দ্য নিউ ইয়ার ও রোমান্স ইন বিটিং দ্য বার্ডস এবং থ্রি গ্রেড সুপার প্রমোশনে ওই গুণাগুণের কোনোই অপ্রতুলতা ছিল না।

থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উল্টোরথ নামে যে নাটকটি পরিবেশন করেছে তা সার্বিকভাবেই নিরীক্ষাধর্মী। নাটকে সমসাময়িকতা থেকে শুরু করে হ্যারল্ড পিনটারের অ্যাবসার্ড নাটক বার্থডে পার্টির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন নির্দেশক তিতাস জিয়া। বিষয়টি সময়ের বিচারে উত্তীর্ণ হবে কি না তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাঁকে।

অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই মণিপুর, ভারতের অন্যতম নাট্যব্যক্তিত্ব হেইসনাম কানহাইলাল। মহাশ্বেতা দেবীর ছোটগল্প-আশ্রিত নাটক দ্রৌপদী তাঁর এক অনন্য মঞ্চ সৃষ্টি। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট সন্ত্রাসের মর্মান্তিক রূপ উদ্ঘাটন করেছেন মহাশ্বেতা, যার অনন্য মঞ্চ রূপান্তর ঘটিয়েছেন কানহাইলাল।

যমুনা নাটকটি যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাট্যদল কর্তৃক মঞ্চায়িত। তবে বর্তমান প্রযোজনায় তৌকীরসহ আরো কয়েকজন বাংলাদেশি অভিনেতাও অভিনয় করেছেন। মূলত একজন বীরাঙ্গনার উপাখ্যান যমুনা, যার সংলাপ ইংরেজি ভাষায়। প্লট হিসেবে খুবই বাস্তববাদী হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ  লব-কুশের ইংরেজি সংলাপ উচ্চারণের দোষে দুষ্ট। এই নাটকটি দর্শকদের কিছুটা হলেও হতাশ করেছে।

অন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে প্রথমেই স্মরণে আসে ত্রপা মজুমদারের নির্দেশনায় কুহকজাল এবং আইরিন পারভিন লোপা-নির্দেশিত পোড়ামাটি। কুহকজালে বিধৃত জীবনচক্রের অনিবার্যতা এবং পোড়ামাটির পোড়াকপালি বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অদৃষ্টের ঘূর্ণিস্রোত প্রায় এক সমান্তরালে সম্পর্কযুক্ত।

আরো একজন তরুণ সম্ভাবনাময় নির্দেশকের উল্লেখ প্রয়োজন, তিনি এশা ইউসুফ। এই নাট্যোৎসবে তিনি সেলিম আল-দীনের গল্প নিয়ে গল্প এবং অমৃত উপাখ্যান নামে দুটি নাটিকা মঞ্চায়ন করেছেন। প্রথমটিতে নির্দেশকের
মঞ্চ-নিরীক্ষণ মানসিকতার সুস্পষ্ট পরিচয় মেলে, যা তারুণ্যেরই বহিঃপ্রকাশ। বলতেই হবে এই নিরীক্ষা ইতিবাচক ছিল। দ্বিতীয় নাটিকাটি সংলাপ ও ঘটনাপরম্পরার বিন্যাসের কারণে দর্শকদের নির্মল হাস্যরসের স্বাদ দিয়েছে।

উৎসবে, আগেই বলেছি প্রায় সব মঞ্চায়নই গুণগত বিচারে উৎকৃষ্ট ছিল এবং নির্বাচকরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।

সবশেষে নাট্য সংলাপ বিষয়টি উত্থাপন করতে চাই। এবারের উৎসবে সেমিনারের পরিবর্তে ডিসকোর্স বা সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল মূলত উন্মুক্ত আলোচনাকে উৎসাহিত করার জন্য। দুটি অধিবেশনে আলোচিত হয়েছে ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক’ এবং ‘নাটক : শিল্পের প্রত্যুত্থান’। প্রথম অধিবেশনের উপস্থাপক ছিলেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। দ্বিতীয় অধিবেশনের উপস্থাপক ছিলেন অধ্যাপক শফী আহমদ এবং সভাপতি বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক, অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান।

অত্যন্ত জনাকীর্ণ উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সকলেই ঐকমত্যে পৌঁছান নাটক সর্ব অর্থে সহিংসতা, ধ্বংস, আক্রমণ, প্রতারণা, রক্তক্ষরণের বিপক্ষে কথা বলে; যদিও এসব উপাদানই মঞ্চে অভিনীত হয় জীবনের অনিবার্য আলেখ্য রূপে। দ্বিতীয় অধিবেশনে আলোচনা হয় শিল্পকর্ম হিসেবে নাটকের পুনরুত্থান প্রসঙ্গে। নান্দনিকভাবে নাটক অপরাপর শিল্পমাধ্যম থেকে ভিন্নতর; কারণ সময়ের ব্যবধানে এবং নির্দেশক, অভিনেতা ও দর্শকদের নতুনতর উপলব্ধিতে একই নাটক ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যায় উপস্থাপিত হয়।

দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও নাট্য বিষয়ে সংলাপ নিঃসন্দেহে একটি সফল শিল্পকৃত্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার দাবিদার। এমন একটি নান্দনিক কর্মকান্ড প্রতি দুবছর পরপর উপস্থাপন করার যে প্রতিশ্রুতি ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কেন্দ্র দিয়েছে তা এদেশের নাট্যামোদীদের জন্য নিশ্চিতভাবে একটি সুসংবাদ। n

 

Leave a Reply