আ বু সা ঈ দ তু লু
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে হাজার বছরের ঐতিহ্যের উৎসারী ধারায় বাংলা নাট্য উপস্থাপন নিঃসন্দেহে বড় ধরনের প্রাপ্তি। স্বজাত্যবোধীয় ও বিশ্বচিন্তনজাত নাট্য উপস্থাপনই বাংলাদেশের নিজস্ব ও স্বকীয়তার পরিচয়ে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ইবসেন নাট্যোৎসব উপলক্ষে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি) মঞ্চ উপস্থাপনায় এনেছে দি কমিউনিকেটর নাট্য। এ আন্তর্জাতিক উৎসবে আগত বিদেশি নাট্যগুলোর মধ্যে দি কমিউনিকেটর ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও বহুল প্রশংসিত। ইউরোপীয় ধাঁচের নাট্যগুলোর মধ্যে দি কমিউনিকেটর ছিল একই সঙ্গে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এবং বহুমাত্রিক, শৈল্পিক ও গভীর ভাবব্যঞ্জনায় অনন্যসাধারণ উপস্থাপন। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যশালায় দি কমিউনিকেটর নাট্যটির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে বিষয়, ভাবব্যঞ্জনা এবং উপস্থাপন বৈচিত্র্যের স্বরূপ উদ্ঘাটনই লেখাটির লক্ষ্য।
সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি) বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত পেশাদারি নাট্যদল। নাট্যব্যক্তিত্ব কামালউদ্দিন নীলুর নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে সিএটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কামালউফদ্দন নীলু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধীনে নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষকতার সময় বাংলাদেশের নাট্যচর্চা সাধারণত গ্রুপ থিয়েটার নেতৃত্বাধীন অপেশাদার আবেগী বশেই প্রধান ছিল। পেশাদারভিত্তিক নাট্যচর্চার জন্য ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার। শুরুর দিকে সিএটি নাট্যভিত্তিক উন্নয়নমুখী নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। ১৯৯৬ সালে রেপার্টরি-ভিত্তিক মঞ্চনাট্য প্রযোজনা শুরু করে। ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের কর্মপরিসর। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ইবসেন উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাট্যদর্শক যে সংখ্যক বিদেশি নাট্য প্রদর্শনী দেখার সুযোগ পায়, তা বাংলাদেশের নাট্যচর্চার ইতিহাসে বিরল। কামালউদ্দিন নীলুর নির্দেশনায় ১৯৯৬ সালে হেনরিক ইবসেনের ঘোস্টস অবলম্বনে রূপান্তর নাটক কৃষ্ণবিবর প্রযোজনার মধ্য দিয়ে সিএটি রেপার্টরি বা পেশাভিত্তিক যাত্রা শুরু করে। সিএটি প্রযোজিত এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো – বুনোহাঁস (১৯৯৯), ভেলুয়া সুন্দরী (১৯৯৯), রাজা (১৯৯৯), পীরচাঁন (২০০০), পুতুলের ইতিকথা (২০০১), দ্য লেসন (২০০৩), বুকটো’র কূয়া (২০০৪), ব্র্যান্ড (২০০৪), সোনাই বিবির পালা ২০০৫), দ্য মেটামরফোসিস (২০০৫), রেজারেকশন (২০০৬), অ্যাম্পিউটেশন (২০০৮), দ্য লেডি ফ্রম দ্য সি (২০০৮), সেনাপতি (২০০৯) এবং ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের মধ্য দিয়ে মঞ্চে এনেছে দি কমিউনিকেটর (২০০৯)। সিএটি নানা সময়ে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ১৯৯৭ সালে ‘জেন্ডার ইসুজ ইন ইবসেনস্ প্লেজ’, ১৯৯৯ সালে ‘ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত থিয়েটার সিম্পোজিয়াম অ্যান্ড ফেস্টিভাল’, ২০০২ সালে ‘দি রিলিভ্যান্স অব এ ডলস্ হাউস – ট্রান্সলেশন অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন’, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইবসেন কনফারেন্স অ্যান্ড থিয়েটার ফেস্টিভাল’, ‘এনকাউন্টার বিটুইন ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’ ইত্যাদি। সিএটি ২০০৯ সালে আয়োজন করে ‘আন্তর্জাতিক ইবসেন সেমিনার ও নাট্যোৎসব’। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এ আন্তর্জাতিক সেমিনার ও উৎসবে অংশ নেয় অস্ট্রেলিয়া, চীন, চেক রিপাবলিক, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইরান, মেক্সিকো, মরক্কো, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ।
সেন্ট্রার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি) কর্মচেতনা সম্পর্কে প্রচারপত্রে উল্লেখ করেন – ‘থিয়েটারের ক্ষেত্রে আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য অর্জন সম্ভব। আমাদের মতে, থিয়েটার চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য থিয়েটার গবেষণা অত্যাবশ্যক। এ কারণে আধুনিক ও প্রচলিত নাট্যধারা, নাট্যকৌশল ও পদ্ধতির সংমিশ্রণে নিরীক্ষাধর্মী নাট্যচর্চা করা এবং থিয়েটারের ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতি ত্যাগ করে উঁচুমানের শিল্পসম্মত থিয়েটার সৃষ্টি করা সিএটির লক্ষ্য। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের যুগে দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং নাটকের প্রতি সাধারণ দর্শককে আগ্রহী করে তোলার জন্য নতুনত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে থিয়েটার আজ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ কারণে আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিন্তাচেতনা এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে নাটক নির্বাচন করা শ্রেয় বলে আমরা মনে করি। সিএটি-কে পেশাদার থিয়েটার হিসেবে একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদান এবং বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে পেশাদারিত্বের উন্নয়নের অর্থ হলো বর্তমানে যারা পেশাদার ভিত্তিতে কাজ করছে তাদের দক্ষতার উন্নয়ন, অন্যান্য দেশের থিয়েটারের ক্ষেত্রে যা ঘটছে সে অনুযায়ী যুগোপযোগী করে তাদের দক্ষতার বিকাশ সাধন করা এবং বাংলাদেশের থিয়েটারের যেসব ক্ষেত্রে পেশাদারি দক্ষতা নেই বা সীমিত আকারে রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে দক্ষতা সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করা। এ কারণে থিয়েটার ও থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণে কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করাকে সিএটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে।
আন্তর্জাতিক ইবসেন উৎসব ও সেমিনার উপলক্ষে দি কমিউনিকেটর নাট্যটি উপস্থাপিত হয়। দি কমিউনিকেটর একটি ডিকনস্ট্রাকটিভ পারফরম্যান্স বা অবিনির্মিত উপস্থাপনা। সমকালীন পাশ্চাত্যতত্ত্বনির্ভর, প্রসেনিয়াম ধারায় উপস্থাপন এবং উত্তর-আধুনিক নাট্য প্রযোজনার বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সাধারণত উত্তর-আধুনিক নাট্যের দার্শনিক ভিত্তির সঙ্গে দি কমিউনিকেটরের উপস্থাপনের তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যায় – ট্রাভেলারের আত্ম-উপলব্ধিজাত অনুভূতি সাধারণ দর্শক তার নিজের মতো করেই গ্রহণ-বর্জন বা সংশ্লেষণ করতে পারেন। দর্শকের উপলব্ধি বা ভূমিকা বিবেচনাও এখানে প্রাধান্য পায়। কোনো একক কাহিনির গন্ডিবদ্ধ নয় দি কমিউনিকেটর। বিচ্ছিন্ন নানা বিষয় ও উপলব্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগই প্রধান। উপস্থাপনায় স্থান, কাল, বিষয়, অনুভূতি, মানসিকতা অনুসারে সৃষ্ট হয় বিশ্ববাস্তবতার অভিজ্ঞতায় প্রতিদিনের উপস্থাপনা। কমিউনিকেটর ভিজুয়াল অ্যাফেক্ট, আলো, সংগীত ইত্যাদি নানা মনোযোগকরণ কৌশলে দর্শককে সমকালীন বাস্তবতার উপলব্ধিতে সহযোগ সৃষ্টি করে। দর্শককে মোহাচ্ছন্ন না রেখে কমিউনিকেটর ছোট ছোট স্কেচের মধ্য দিয়ে সমকালীন বিশ্ব ও বিষয় বাস্তবতায় সত্য উপলব্ধির নির্দেশ করে। কমিউনিকেটরের আত্মদ্বন্দ্বজাত চিন্তনীয় পারিপার্শিবক সত্যের প্রকাশ অনবদ্য হয়ে ধরা দিয়েছে উপস্থাপনায়। এ-ধরনের উত্তর-আধুনিক উপস্থাপনায় ‘থিয়েটার’ শাব্দিকতার চেয়ে ‘পারফরম্যান্স’ বা উপস্থাপনই গুরুত্বপূর্ণ টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ভাষার ক্ষেত্রে, অন্তব্যঞ্জনার ক্ষেত্রে, কোনো ভূসীমা না রেখে সর্বজনীন নৈর্ব্যক্তিক ভাষা ও ভাববিন্যাসের প্রকাশ থাকে। দি কমিউনিকেটর নাট্যে উঁচু-নিচুসহ গন্ডিবদ্ধ ক্ষুদ্র নানা ভেদাভেদ, বিষয় উপেক্ষিত। চিন্তন কোনো স্থান-কাল-পারিপার্শ্বিকতায় আবদ্ধ না হয়ে মহাবৈশ্বিক ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটেছে। সমস্ত পরিবেশনাটিই একটি দর্শন চালিত রেখেছে। লিখিত পান্ডুলিপির উপস্থাপনায় ক্লান্তিকর ছাপ নেই বরং প্রাণান্তর, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বহুমাত্রিক উপস্থাপন দি কমিউনিকেটর। সাধারণত উত্তর-আধুনিক নাট্য বাস্তবতায় গভীরতম উপলব্ধ সত্য উপস্থাপিত করে এবং দর্শককে ব্যক্তিক নির্বিশেষ তার অভিজ্ঞতাজাত উপলব্ধিতে সহায়তা করে। এ-ধরনের নাট্যচিন্তায় সাধারণত দর্শককে উপস্থাপন বিষয় দ্বারা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করে কিন্তু উত্তর দেয় না। দর্শকই তার নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা মতো উত্তর তৈরি করে। পাশ্চাত্যের উত্তর-আধুনিক উপস্থাপনের প্রায় সমস্ত বৈশিষ্ট্যই দি কমিউনিকেটর পরিবেশনাটির মধ্যে বিধৃত হয়।
দি কমিউনিকেটরকে নির্দেশক কামালউদ্দিন নীলু থিয়েটার না বলে পারফরম্যান্স বলাতেই বেশি আগ্রহী। থিয়েটার নামক ক্ষুদ্র গন্ডিভুক্ত না করে বৃহত্তর অর্থে পারফরম্যান্স তথা পরিবেশনাকেই বলতে চেয়েছেন। স্যুভেনিরে নির্দেশক বলেন, ‘দি কমিউনিকেটর থিয়েটার নয়। বরঞ্চ আমি এটাকে বলি পারফরম্যান্স। দি কমিউনিকেটর আমার একটু করে নিরীক্ষামূলক চিন্তা, যার মধ্য দিয়ে আমি সামাজিক আচার, বডি মুভমেন্ট, নৃত্য, সুর, সংলাপ, আবৃত্তি, পাপেট্রি, জাদু, সার্কাস, ভিজুয়াল আর্ট, মাল্টিমিডিয়া এবং ইনস্টলেশনের শৈল্পিক প্রকাশকে আবিষ্কার করেছি, যা থিয়েটারের সমস্ত প্রথাবদ্ধ রীতিকে ভেঙে ফেলেছে। আমার কাছে দি কমিউনিকেটর মানব অস্তিত্ব এবং মুক্তির স্বপ্নকে ঘিরে একজন বিশ্ব অভিযাত্রীর মনস্তাত্ত্বিক ভ্রমণ। বিচ্ছিন্নভাবে কমিউনিকেটর স্মরণ করছে ইবসেনের নাটক, চিঠি এবং বক্তৃতার খন্ডিত সব সংলাপ এবং আজকের সংকটপূর্ণ পৃথিবীতে সেই স্মৃতি তাড়িত করছে তাকে। এই পারফরম্যান্স শুধু অসংখ্য শিল্পকাঠামোর মিশ্রণ এবং থিয়েটারের চিরাচরিত প্রথাবদ্ধতাকে ভাঙার পরীক্ষাই নয়; এটা অভিনেতা এবং দর্শকের মধ্যে প্রচলিত দূরত্বকে মুছে দিয়ে জন্ম দেবে একটি খেলার। এটা ডায়ালেক্টিক্যাল থিয়েটার নয়, এপিক থিয়েটার কিংবা বর্ণনামূলক নাটকও নয়। আমরা এটাকে বলতে পারি মানব মস্তিষ্কের প্রকৃত দশা। এ কারণে এখানে কোনো অঙ্ক, দৃশ্য, ইউনিট, উপাখ্যান নেই, এমনকি গ্রাফ কিংবা সময়কালের ধরাবাঁধা নিয়মও নেই। আমরা এখানে সুনির্দিষ্ট স্থান, চরিত্র কিংবা প্রকৃত সময় সম্পর্কে কোনো ধারণাই পাব না। তাই আমি এটাকে বলছি পারফরম্যান্স উইদাউট বর্ডার।’
দি কমিউনিকেটর পরিবেশনাটি একজন ট্রাভেলারের বিশ্বভ্রমণীয় জীবনবাস্তবতার পরিদর্শন ও দর্শকীয় যোগাযোগে কমিউনিকেটর। সে পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাভেলারই দর্শকের জায়গা থেকে কমিউনিকেটর ও কমিউনিকেটরই আত্ম-উপলব্ধিতে ট্রাভেলার। পরিবেশনাটি উপস্থাপনে ভাবব্যঞ্জনার স্থান, কাল ও পাত্রভেদে মঞ্চে বিভিন্ন সেটের নৈর্ব্যক্তিক রূপ ব্যবহার করা হয়েছে। পেছনে সায়াক্লোমটি ডিজিটাল পর্দা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি সৃষ্টিতে বিভিন্ন সময় স্থির ও ভিডিও মাধ্যমে চিত্র-প্রতীক প্রদর্শিত হয়েছে। এ ডিজিটাল পর্দাটি ছোট ছোট স্টিক দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। কখনো কখনো অভিনয়শিল্পীও সে ব্যাক স্ক্রিনের ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছে। মঞ্চের একপাশে ইবসেনের প্রতিকৃতি পরিবেশনাটির অর্ধসময় পর্যন্ত ব্যাপৃত ছিল। তারপর ইবসেনের প্রতিকৃতিটি মাঝেমধ্যে ট্রাভেলারের সঙ্গে অবস্থানও করেছে। আপাত প্রতিকৃতিটি মনে হলেও নাট্যের প্রয়োজনে কখনো কখনো জীবন্ত হয়ে হয়েছে। ডিজিটাল সাউন্ড এবং পেছনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটালি বিভিন্ন দৃশ্য ও ইমেজ উপস্থাপন হয়েছে। একই সঙ্গে মঞ্চমধ্যে ঘটনা পরম্পরায় নাট্য উপস্থাপন হয়েছে। এক কথায়, ভিডিও-অডিও, সংগীত-নৃত্য-বক্তব্য-অভিনয়-সেট-প্রপস ইত্যাদি নানা বহুমাত্রিকতায় উপস্থাপিত হয়েছে দি কমিউনিকেটর।
উপস্থাপনটিকে তত্ত্বগতভাবে অবিনির্মিত (ডিকনস্ট্রাকটিভ) উপস্থাপনা বলাই অধিক যুক্তিসংগত। এটি কাহিনিগত দিক থেকে একটি কেন্দ্রচ্যুত গ্রহের জীবনবাস্তবতার উপলব্ধি। যা পোস্টমডার্ন ফিলোসফিতে পোস্টস্ট্রাকচারাল তত্ত্বের মধ্যে গণ্য করা হয়। এক ট্রাভেলারের মহাবৈশ্বিক পরিভ্রমণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ই প্রাধান্য পেয়েছে। দি কমিউনিকেটরে ট্রাভেলার একজন শিল্পী। মহাবৈশ্বিক পরিভ্রমণীয় অভিজ্ঞতা ও আবেগ দর্শকদের উদ্দেশে অকৃপণভাবে বিনিময় করেছে। কখনো কখনো ইবসেনের সঙ্গেও কথোপকথন। বিশ্ববাস্তবতার এক মহাপরিভ্রমণীয় অভিজ্ঞতা বর্ণনা নাটকীয় বাস্তবতায় উপস্থাপিত হয়েছে। পরিবেশনাটি দেখতে দেখতে মনে হয়েছে এ ট্রাভেলার চরিত্রটিই নির্দেশক কামালউদ্দিন নীলুর আত্মপ্রতিরূপ। উপস্থাপনা ব্যতিরেকে এ ইউনিভার্সেল ট্রাভেলার চরিত্রটি সেলিম আল দীনের নিমজ্জন নাট্যের ‘আগন্তুকে’র সঙ্গে কখনো কখনো সাদৃশ্যজাত মনে হয়েছে। তবে নিমজ্জন নাট্যে যেমন অতীত থেকে বর্তমান হয়ে রয়েছে সম্মুখযাত্রা, কিন্তু এ ইউনিভার্সেল ট্রাভেলার ‘কমিউনিকেটর’ সমকালীন বিশ্বপরিভ্রমণীয় অভিজ্ঞতায় বিশ্বায়নের মুখে সমকালীন বিশ্ববাস্তবতা মানবিক ক্ষরণজাত এবং অত্যন্ত শৈল্পিক ব্যাখ্যানে বহুমাত্রিক ধারায় উপস্থাপিত।
পরিবেশনাটি শুরু হয় পেছনের স্ক্রিনে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা-প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের ভিডিও চিত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে। সঙ্গে ‘ইউনিভার্সেল ট্রাভেলার’ গানটি বাজতে থাকে। পেছনের ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, প্রত্নবস্ত্ত, প্রাচীন নিদর্শন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পাখির উড়ে যাওয়াসহ নানা নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনাধৃত ভিডিওচিত্রে বিশ্বপরিভ্রমণ। ব্যাক স্ক্রিন থেকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে ব্যাগ হাতে নৃত্য ভঙ্গিমায় শিল্পীরা দর্শক সম্মুখে উপস্থিত হয়। ইউনিভার্সেল ট্রাভেলার গানটি বাজতে থাকে। ওয়েস্টার্ন চরিত্রগুলো নৃত্য ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এক ধরনের পরিভ্রমণীয় আবেগ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। রাত্রিকালীন ভ্রমণ চিত্রে উঁচু বিল্ডিংগুলো মঞ্চের মধ্যে সরে যেতে থাকে। এ রাত্রিকালীন বহুতল ভবনগুলোর সরে যাওয়া পরিভ্রমণীয় মানবিক আবেগ সৃষ্টি করে। তারপর এক শিল্পী ট্রাভেলার চারদিকের পত্রিকা দিয়ে মোড়ানো ট্রাভেল গাড়ি নিয়ে মঞ্চমধ্যে প্রবেশ করে। পরিবেশনাটির সমস্তই এ ট্রাভেলার গাড়ি নিয়ে ভ্রমণীয় অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধ পরিস্থিতি-বাস্তবতা উপস্থাপন করে। গাড়িটির দেয়ালে লাগানো পত্রিকাগুলো এ শিল্পীর নানা সংবাদের পত্রিকা। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর অভিব্যক্তি নিয়ে শুরু করে দর্শকের সঙ্গে কথোপকথন। পেছনের স্ক্রিনে বিভিন্ন দৃশ্যে ভেসে আসতে থাকে পৃথিবীতে ঘটমান বিভিন্ন বীভৎসতা, হত্যা-গণহত্যা, বিধ্বংসী চিত্র। বিভিন্ন সময় ও সভ্যতায় গণহত্যা-গুপ্তহত্যা-ধ্বংসযজ্ঞ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ট্রাভেলার পৃথিবীতে বিদ্যমান বিধ্বংস ভয়াবহতায় আত্মক্ষরণজাত। এমন সময় দর্শকের মধ্য থেকে অশুভ শক্তি বা রক্তখেকো প্রতীকী চরিত্র মঞ্চে উঠে আসে। বিস্তীর্ণ সাদা কাপড়ে সব মৃত নিয়ে যায়। অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে অশুভ শক্তির কর্মাচারের নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ পায়। পৃথিবীর ভালো সবকিছুই এক অশুভর করাল গ্রাসে নিপতিত। ছোট ছোট স্কেচকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এ নাট্যে একেকটি দার্শনিক পটভূমি।
বিজ্ঞাপনী সংস্কৃতির করাল গ্রাস পৃথিবীর তাবৎ আত্ম-প্রকাশীয় সংস্কৃতিকে গিলে খাচ্ছে। বিভিন্ন ডাইমেনশনে লাল চুল, বক্স জড়ানো চরিত্রসহ নানা নৈর্ব্যক্তিক চরিত্রের নৃত্য-সংগীতের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্কৃতিতে মূল সংস্কৃতি আগ্রাসনের চিত্র প্রতিভাত হয়ে ওঠে। ট্রাভেলার নবযুগ সৃষ্টি প্রসঙ্গে আত্ম-উপলব্ধি টাইপ করতে থাকে। পেছনের স্ক্রিনে টাইপগুলো দেখা যায়। এ প্রাসঙ্গিকতায় বিবর্তনবাদসহ সমকালীন নানা তত্ত্ব প্রাধান্য পায়। ট্রাভেলার ইবসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পেছন থেকে পুতুল বের হয়ে আসে। পুতুল নৃত্য-পুতুল চরিত্রের মধ্য দিয়ে মানুষের স্থান-কালের অস্তিত্বহীনতা উপলব্ধ প্রকাশ পায়। প্রতিটি বিষয় ও বাস্তবতার সঙ্গে কমিউনিকেটর দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এ পরিবেশনায় বিষয়-কমিউনিকেটর-দর্শক যেন একই সূত্রে ক্রিয়াশীল।
ট্রাভেলারের এবার অবস্থান বাংলাদেশে বোঝায়। ট্রাভেলার আত্মপরিচয়ে বলে – তিনিই কমিউনিকেটর। যিনি মহাপ্রকৃতি বাস্তবতায় বিশ্বভ্রমণীয় অভিজ্ঞতায় দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ কমিউনিকেটর বর্তমান বা চারদিকের পরিবেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। পরিবেশনায় দেখা যায় – কমিউনিকেটরের ধর্মীয় বিশ্বাস অত্যন্ত প্রগাঢ়। স্বর্গচ্যুতি থেকে বর্তমান বাস্তবতার বিবরণও দেয়। জ্ঞানীকে সম্মানের প্রতি গুরুত্ব দেবতাদের ঊর্ধ্বে বলে উল্লেখ করেন। এ কমিউনিকেটর খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাস আশ্রিত। খ্রিষ্টধর্মীয় আদর্শ অত্যন্ত দক্ষতায়, সুকৌশলে দর্শকের কাছে তুলে ধরেন।
পেছনের স্ক্রিনে সমকালীন নানা অনুকরণীয় নৃত্য দেখা যায়। নানা দৃশ্যে দুর্ভিক্ষ ও হাড্ডিসারের ছবিও ভেসে ওঠে পেছনের পর্দায়। বিভিন্ন পেইন্টিং ও স্কেচের মধ্য দিয়ে শিল্পবাস্তবতার চিত্র প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যেই ইবসেনের প্রতিকৃতিটি নড়েচড়ে ওঠে এবং কথা বলতে শুরু করে। কমিউনিকেটরের সঙ্গে ইবসেনের কথোপকথন শুরু হয়। বিভিন্ন নৃত্য-সংগীতের মধ্য দিয়ে ইবসেনের চিত্রিত সমাজবাস্তবতার নানা নৈর্ব্যক্তিক চিত্র প্রকাশিত হয়। কমিউনিকেটর ও ইবসেনের বিধৃত অভিজ্ঞতায় সমাজের নানা লোভাতুর অসামঞ্জস্য চিত্র ফুটে ওঠে। নিজের ভূমিকা নিয়েও কমিউনিকেটর সন্তুষ্ট নয়। তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকা হয় তারই সুখ্যাতি করবার জন্য। জীবনবাস্তবতার অনেক কিছুই অনেকে জানে না বা বোঝেও না। কমেডি মুখোশ পরে নৃত্য করতে দেখা যায়। পেছনের স্ক্রিনে বিভিন্ন রঙে ‘ভি’ চিহ্ন দেখা যায়। কমিউনিকেটর উপলব্ধি করে নিজ দেশে কেউ যথার্থ মর্যাদা পায় না। তাই কমিউনিকেটরকে যেতে হয় বিভিন্ন দেশে। কমিউনিকেটর ও ইবসেনের মধ্যে কথোপকথনে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে নানা উপলব্ধি। খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাসে কমিউনিকেটরের মৃত্যভাবনা ফুটে ওঠে। কমিউনিকেটরের উপলব্ধিতে ফুটে ওঠে – ‘শেষ বিচারের আহবানে আত্মা গেছে চলে দেহ আছে পড়ে।’ তাই নিজের ভেতরেই ঈশ্বর খোঁজে কমিউনিকেটর। তখন পেছনের স্ক্রিনে নানা বিমূর্ত চিত্র ভেসে উঠতে থাকে। দৈহিক মৃত্যুর জন্য ক্লান্তিকর অপেক্ষাই কমিউনিকেটরের এখনকার কাজ বলে বিধৃত হয়।
কমিউনিকেটরের চিন্তন পরিবর্তিত হয়ে যায় রোবটদের নৃত্যে। রোবট নৃত্যের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক সভ্যতার ইঙ্গিত বহন করে। যান্ত্রিক জীবনাচরণের মধ্যে মানবিকতা খুঁজে পায় না কমিউনিকেটর। রোবটীয় সংস্কৃতি নৃত্য-আবহের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে মানবিকতার বিপরীতে যান্ত্রিক সভ্যতার চিত্র। ইন্টারনেট প্রযুক্তি সভ্যতাও বিশ্লেষিত হয়। যান্ত্রিক সভ্যতার চিত্রে মঞ্চমধ্যে টেলিভিশনি নানা ক্রিয়াদি বিধৃত হয়। উপস্থাপনায় নানা প্রকার যান্ত্রিক কালচার, জীবনবোধ, উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট-আধিপত্যসহ নানা চিত্র নৈর্ব্যক্তিক আশ্রয়ে প্রকাশ পায়। কমিউনিকেটর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য ও যান্ত্রিকতা নিয়ে নানা উপলব্ধিজাত জ্ঞান দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগীয় কৌশলে তুলে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে সমকালীন হোয়াইট হাউসীয় সাম্রাজ্যবাদী সংলাপে আধিপত্যের চিত্র তুলে ধরেন। এ যান্ত্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ বিধ্বংসী চিত্রের সম্ভাব্য রূপ প্রতিফলিত হয়। মানব সম্পর্কের গভীরতার চিত্র প্রতিভাত হয়। এরই মধ্যে একটি নারী উপস্থিত হয় মঞ্চমধ্যে। চোখ-মুখমন্ডল দেখা যায় না। পুরোটাই লাল রঙের ছোট ছোট ফুলের সমষ্টি। পেছনের বিমূর্ত ইমেজ ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ মানব সম্পর্কের যান্ত্রিক সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে। স্ক্রিনে পৃথিবী-প্রকৃতির নানা দৃশ্যের ভিডিও দেখা যেতে থাকে। নৈসর্গিক নানা সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। কমিউনিকেটর প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ভ্রমণ করেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এ সময় ভিন্ন সংস্কৃতি চিত্রে ছাতা হাতে একদল সুন্দরী রমণী উঠে আসে মঞ্চে। নৃত্য ও আবহের মধ্য দিয়ে লাল ও কালো পোশাকে সজ্জিত নারীরা গ্রহণ করে কমিউনিকেটরকে। এখানে ট্রাভেলার হিসেবেই উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। প্রকৃতি ও নারী সৌন্দর্যের মাঝে কমিউনিকেটর দিশেহারা। হাতে তুলে দেয় ভোগ্য মদ এবং মাথায় পরিয়ে দেয় ক্রুসীয় ফুলের মাল্য। পেছনের স্ক্রিনে দেখা যেতে থাকে দরিদ্রতা ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের চিত্র। নৈর্ব্যক্তিকভাবে প্রকাশ করে – প্রাণীরা সবকিছু শুষে নিয়ে শূন্য করে দিচ্ছে সব। পুতুল ইবসেন জীবন্ত মঞ্চে উঠে আসে। কমিউনিকেটর, ইবসেন ও দর্শকের জন্য উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে কমিউনিকেটরের অধিবাস্তবিক নানা চিন্তন ফুটে ওঠে। কমিউনিকেটর অপেক্ষা করতে থাকে। নৈর্ব্যক্তিক উপস্থাপনায় রক্তখেকো প্রেতাত্মারা উঠে আসে। নম্বর দেওয়া মানুষগুলোকে তারা গ্রাস করতে থাকে। অশুভ ও শুভের মধ্যকার পার্থক্য অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন নির্দেশক। সমকালীন পারমাণবিক বিধ্বংসতার চিত্রও ভেসে ওঠে। ইউরোপিয়ান বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খলতা-আনন্দ নৃত্যের মধ্য দিয়ে সমকালীন সংস্কৃতির চিত্র ফুটে ওঠে।
কমিউনিকেটর এসে উপস্থিত হয় তার বিজাতীয় অ্যারাবিয়ান পরিমন্ডলে। একজন ব্যবসায়ী-সদৃশ ট্রাভেলার আরববাস্তবতাকে উপলব্ধি করে। অ্যারাবিয়ান নৃত্য উপস্থাপিত হয়। এখানে ট্রাভেলারের সুরাপান ও নৃত্য উপস্থাপন প্রাধান্য পায়। স্ক্রিনে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ভেসে ওঠে। কমিউনিকেটর সব ঘোর থেকে বের হয়ে দর্শক মধ্যে চলে আসে। সমকালীন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গ প্রাধান্য পায়।
নৃত্য-সংগীত উপস্থাপিত হতে থাকে। বর্তমান শাহবাগ আন্দোলন আলোচনার বিষয়বস্ত্ত হয়ে ওঠে। কমিউনিকেটরের উপলব্ধিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে – ভুল পথে সবাই খুঁজছে ওয়ানওয়ে এবং হাইওয়ে। পৃথিবীতে এমন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আগামীর যুদ্ধ বা ভয়াবহতার সম্ভাব্য ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে পরিবেশনাটি সমাপ্ত হয়। ছোট ছোট নানা স্কেচের মধ্য দিয়ে নানা ঘটনা, বিষয় ও ব্যঞ্জনার প্রকাশ পায়। প্রতিটি স্কেচ বা ছোট ছোট উপলব্ধ ঘটনা নিয়ে পুরো পরিবেশনাটির একটি অখন্ড ভাব ফুটে ওঠে দর্শকের সামনে। আজকের বিশ্বায়ন ও মানবিকতাহীন যান্ত্রিক সভ্যতায় ট্রাভেলারের অভিজ্ঞতায় আগামী ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় নানা প্রশ্ন জাগে।
দি কমিউনিকেটর সম্পর্কে স্যুভেনিরে উল্লেখ – ‘দি কমিউনিকেটর একটি নিরীক্ষা, যেটি পৃথিবীব্যাপী প্রসারিত ধারণা ও সাদৃশ্যের প্রতি দর্শকের অনুভূতিতে নাড়া দেয়, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নের ফলে যে বিপদটি ঘনিয়ে আসছে তার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করারও এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনা। একটি ব্রুনো লাত্যুর ও মাইকেল সেরেসের সময়, স্থান, সমাজ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির তত্ত্বের কয়েকটি প্রধান বিষয়ের প্রতি একটি সৃষ্টিশীল জবাব।’
দি কমিউনিকেটর নাট্যটির রচনা-ইয়াসমিনকা মারকোভোস্কা, উপস্থাপন নির্দেশনা-কামালউদ্দিন নীলু। কমিউনিকেটর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. শাহদাৎ হোসেন। অন্যান্য চরিত্রে : আবুল কালাম আজাদ সেতু, চিন্ময়ী দাসগুপ্তা, রহমতুল্লাহ বাসু, শিপ্রা দাস, মর্জিনা মুনা, ফরহাদুল আমিন, তানিয়া সুলতানা, আনিকা মাহিন একা, ইরাজ মাহামুদী, রোলান্ড নাথন মন্ড, শান্তনু চৌধুরী, মামুন পারভেজ, আবুল কালাম আজাদ অপূর্ব। নেপথ্য কণ্ঠ – কামালউদ্দিন নীলু, ড. সালেক খান, টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং শব্দ : আহসান রেজা খান, সেট : সরদার আফতার উদ্দিন, কস্টিউম : রহমতুল্লাহ বাসু, আবুল কালাম আজাদ সেতু, প্রপস ও মাস্ক : আবুল কালাম আজাদ সেতু, পাপেট নির্মাণ : রুমি, শুভ, ইবসেনের মাস্ক নির্মাণ : দেবদাস মালাকার, গ্রাফিক্স ডিজাইন : সৈকত হাবিব, প্রযোজনা অধিকর্তা : রোকেয়া রফিক বেবী।