logo

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চলচ্চিত্রে জাতীয় পরিচয়

মূল রচনা : কাফি কারিম
অনুবাদ : আ হ মে দ  খা লে দ

[চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা সেন্সেস অব সিনেমার ৫৯ সংখ্যায় এ-নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এর শিরোনামে নিবন্ধকার অভিনব এক শব্দ – Trinbagonianness- ব্যবহার করেছেন, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি দেশ ত্রিনিদাদ (Trinidad) ও টোবাগোর (Tobago) নাম জুড়ে তৈরি। এ শব্দের আপাত বাংলা রূপ হিসেবে ‘ত্রিনবাগোনীয়তা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। নিবন্ধের লেখক – কাফি কারিম, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত আমেরিকান ইউনিভার্সিটির চলচ্চিত্র ও মিডিয়া বিভাগের এমএফএ ক্যান্ডিডেট। -অনুবাদক]
সূচনা
নবীন যে-দেশগুলো নিয়ে বর্তমান ক্যারিবীয় কমিউনিটি (ক্যারিকম)১ গঠিত, বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের আগ পর্যন্ত এদেশগুলোর স্বাধীন কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই, মাত্র এক দশকেরও কম সময়ে, এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলো বিশ্বচলচ্চিত্র-অঙ্গনে নিজস্ব ভূমিকা রাখতে শুরু করে। ওই সময়ে, এ-অঞ্চলে নির্মিত ছবিগুলোর মধ্যে, ১৯৭২ সালে জ্যামাইকায় তৈরি দ্য হার্ডার দে কাম ছবিটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আজ পর্যন্ত ক্যারিবীয় দেশগুলোয় যত ছবি তৈরি হয়েছে, পেরি হেনজেল-নির্মিত দ্য হার্ডার দে কাম সেগুলোর যে-কোনোটির চাইতে বেশি পরিমাণে আন্তর্জাতিক সম্মান ও প্রশংসা পেয়েছে। অনেকেরই এ থেকে মনে হতে পারে, এদেশগুলোয় সেরকম অর্থে আর কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে না। কিন্তু গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে, জোড়া-দ্বীপরাষ্ট্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মতো অনেক ক্যারিবীয় দেশে, জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু ছবি তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বচলচ্চিত্রের প্রভাবশালী মহলের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে।
অনেকটা সে-কারণেই, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চলচ্চিত্রকে বিশেষ চারিত্র্যমণ্ডিত জাতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে দেখা হয়নি কখনই। অথচ বিকাশমান উত্তর-ঔপনিবেশিক চলচ্চিত্রজগতে, এই জোড়া-দেশের চলচ্চিত্রই হয়তো সবচেয়ে বেশি বিকশিত। আসলে, অনেকের কাছেই, এদেশটিতে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর নির্বাচন আর সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া কঠিন এক কাজ বলে মনে হতে পারে। নানা কারণ এর জন্য দায়ী। একটি কারণ : উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বের রাজনৈতিক অবস্থান এমনই যে, পণ্ডিতসমাজে, সেইসঙ্গে জনপ্রিয় ডিসকোর্সে, এদেশগুলোকে চলচ্চিত্র-উৎপাদক হিসেবে না-দেখে, দেখা হয় চলচ্চিত্রের গ্রহীতা হিসেবে।২ আরো একটি কারণ : এদেশের চলচ্চিত্র-নির্মাতাদের বেশির ভাগই ‘ত্রিনবাগোনীয় ডায়াসপোরা’র অন্তর্ভুক্ত।৩ এছাড়া বড় আরো এক কারণ : সম্প্রচার করতে পারে এমন টিভি-চ্যানেলের অভাব এবং ফিল্ম-আর্কাইভের অনুপস্থিতি। এসব সত্ত্বেও পঁয়ত্রিশ বছর ধরে, বিশ্বচলচ্চিত্র-অঙ্গনে ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রের নিজস্ব এক ভূমিকা আছে। এই ছবিগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য – এদের জাতীয় চরিত্র। আর জাতীয় এই চরিত্রটি নির্মিত হয়েছে দেশটির বিশিষ্ট ঔপনিবেশিক ইতিহাস থেকে : পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা জাতের মানুষ এখানে এসেআস্তানা গেড়েছে। আর দেশটির রাজনৈতিক ভিত্তির মূলে আছে শিক্ষা, যার মধ্য দিয়ে স্বাধিকার-অর্জন এবং অর্থনৈতিক-উন্নয়ন সম্ভব; সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক-কাঠামোর সোপান বেয়ে পরিবারগুলোও উঠে আসতে পারে। সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বহুত্ব এবং শিক্ষা – জাতীয় চরিত্রের এই দুই স্তম্ভের সূত্র ধরেই ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রের জাতীয় চরিত্রটির পাঠ নিতে হবে।
চলচ্চিত্রের শৈলী বিবেচনায় আনলে, দেখা যাবে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চলচ্চিত্র-নির্মাতারা বেশ কিছু পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নৈসর্গিকতার দিকেই তাদের ঝোঁক বেশি। আমি ‘নৈসর্গিক’৪ বলছি, ‘নিসর্গবাদী’৫ বলছি না; কারণ এসব ছবির নান্দনিক দিকগুলো, অনেক সময়ই, সূক্ষ্ম ও ‘বাস্তববাদী’৬। অনেক সময়ই, ইতালীয় নব্য-বাস্তববাদী৭ ঘরানার ছবিগুলোর সঙ্গে এদের মিল পাওয়া যায়; আবার অনেক সময়, উজ্জ্বলতায় ও রঙের ব্যবহারে ছবিগুলো স্বপ্নময়, ভিন্ন এক জগতের আবেশ তৈরি করে। তারপরও বেশিরভাগ সময়ই, নৈসর্গিক জগৎ বা বাস্তব জগতের ফুল-ফল-প্রকৃতির আবহ অবলম্বন করেই এসব ছবি তৈরি।
পরিচয়ের নানা দিক
এক্স-আইলস : এসেজ অন ক্যারিবিয়ান সিনেমা-শীর্ষক সংকলন-গ্রন্থে, গ্রন্থটির সম্পাদক মবিয়ে চাম নির্দিষ্ট করে তিন ধরনের ক্যারিবীয় চলচ্চিত্রের কথা বলেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, এই শ্রেণিকরণ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চলচ্চিত্রের বেলায়ও সমান প্রযোজ্য। চামের আলোচনা অনুসারে, এ-লেখায় আমরা তিন ধরনের ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রের কথা বলব :
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর নাগরিক এমন নির্মাতার চলচ্চিত্র;
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ‘ডায়াসপোরা’র অন্তর্ভুক্ত নির্মাতার চলচ্চিত্র;
বিদেশি নির্মাতার চলচ্চিত্র, যা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় নির্মিত হয়েছে।
আশা লাভলেসের জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা (২০০৪) এবং ইয়াও রামেসারের সিস্টাগড (২০০৬) ছবি দুটি উল্লিখিত শ্রেণিকরণের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়বে হোরেস ওভের প্রেসার (১৯৭৫) ছবিটি। এখন পর্যন্ত হোরেস ওভে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং সেখানেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। প্রেসার ছবিটি বিতরণের দায়িত্ব ছিল ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের। আর ইসমাইল মার্চেন্টের মিস্টিক ম্যাস্যুর (২০০১) পড়বে তিন নম্বর শ্রেণিতে, যা ভারতীয় একজন চলচ্চিত্র-নির্মাতাকে ত্রিনবাগোনীয় পরিকাঠামোর মধ্যে এনে ফেলেছে।
তৃতীয় এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক শর্ত জুড়ে দিয়েছেন চাম। তিনি বলছেন, বিদেশি নির্মাতাদের তৈরি চলচ্চিত্রগুলোকে অবশ্যই ‘অপর দুই শ্রেণির চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ’ হতে হবে।৮ অন্য কথায়, বিদেশি নির্মাতার ছবি দেশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কি যোগ করছে, নাকি ‘আগন্তুকের’ দৃষ্টিকোণকেই বহাল রাখছে? বিদেশি নির্মাতাদের অনেকে দ্বীপটির নৈসর্গিক আবহকেই কেবল ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এরকম ছবিগুলো কখনই ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে না। উদাহরণ হিসেবে, রবার্ট প্যারিশের ফায়ার ডাউন বিলো (১৯৫৬) ছবিটির কথা বলা যায়। এখানে অভিবাসী দুই আমেরিকান – ফেলিক্স (রবার্ট মিচাম) এবং তার সহযোগী টোনি (জ্যাক লেমন) ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোর মধ্য দিয়ে নৌকায় ভেসে চলে। একসময় আইরিনা (রিটা হেওয়ার্থ) নামে একজন মহিলা তাদের দুজনকে ভাড়া করে। আইরিনার পাসপোর্ট নেই; কর্তৃপক্ষের চোখ এড়াতে সে পাশের আরেকটি দ্বীপে যাবার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এরই মধ্যে সূচনা হয় এক ত্রিভুজ-প্রেমের, যার ফলে পুরুষ চরিত্র দুটির বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। পুরো ছবিটিতে কেবলমাত্র নৈসর্গিক আবহ হিসেবেই ত্রিনিদাদকে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি ছবির ঘটনাস্থলও ত্রিনিদাদ নয়, কতকগুলো দৃশ্যে কেবল দ্বীপটির নিসর্গকে ব্যবহার করা হয়েছে (যার কিছু বিশ্বাসযোগ্য, আর কিছু রীতিমতো উদ্ভট); ফলে ছবিটিতে ত্রিনিদাদের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতার একটা খণ্ডচিত্র পাওয়া যায়। যেমন – বলা যায়, কার্নিভালের দৃশ্যে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে যে ইস্পাত-পাত্রটিকে দেখানো হয়েছে, সেটার কথা। সংগীতের ইতিহাসবিদমাত্রই এর গুরুত্ব বুঝবেন, কারণ বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ইস্পাতের পাত্রের উদ্ভাবন ঘটেছিল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতেই। আর পরবর্তীকালে (এই ছবির মতো গতানুগতিক অন্যসব হলিউড ছবির দৃশ্যায়নের ফলে) এটি ক্যারিবীয় পর্যটনশিল্পের এক প্রতীকে পরিণত হয়। ছবির দৃশ্যগুলোয় অবশ্য সমুদ্রসৈকত আর ফুল-লতাপাতা-গাছপালার সদ্ব্যবহার করা হয়েছে। আবার দ্বীপটির বিশিষ্ট কাঠের বাড়িগুলো আর ঢেউটিনের বেড়ার কিছু-কিছু অংশ ছবির কম্পোজিশনে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও এ-ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ-ছবিতে দ্বীপটিকে চমক সৃষ্টিকারী এক আবহ হিসেবেই কেবল ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি রিটা হেওয়ার্থ এ-ছবিতে আবেদনময় এক নাচ পরিবেশন করেন, যার সঙ্গে ত্রিনিদাদীয় নাচের কোমর ও নিতম্বের ললিত নৃত্যভঙ্গির সাদৃশ্য আছে। এসব সত্ত্বেও এ-ছবিটিকে জাতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেণিতে কখনই ফেলা যাবে না, কারণ এর দৃষ্টিকোণ সবদিক থেকেই একজন আগন্তুকের, যে বাইরে থেকে দ্বীপটিকে পর্যবেক্ষণ করছে।

উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজে নৃতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক বহুত্ব
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দ্বীপগুলোর অবস্থান ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ দিকের একেবারে শেষ মাথায়, ভেনিজুয়েলা থেকে মাত্র সাত মাইল দূরে। দ্বীপগুলোর স্থানীয় জনসাধারণ মূলত দুটি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত : ক্যারিব এবং আরাওয়াক (স্থানীয় ক্যারিবীয় জনগোষ্ঠী)। ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে স্প্যানিশরা এই দ্বীপগুলোয় আসে। এরপর শোষণমূলক শ্রমব্যবস্থা এবং ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা রোগের সংক্রমণে, ধীরে ধীরে, সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যেই, স্থানীয় জনগোষ্ঠীটি প্রায় লুপ্ত হয়ে যায়। ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে নতুন একটি আইন৯ প্রণয়ন করে ত্রিনিদাদকে ইউরোপীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়; অভিবাসী ইউরোপীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ফরাসি, পর্তুগিজ ও আইরিশ। অন্যদিকে ওলন্দাজ, ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে হাতবদল হয়ে টোবাগো, শেষ পর্যন্ত, ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে, ইংরেজদের হাতে এসে পড়ে। ত্রিনিদাদে, বহু বছর ধরে, স্প্যানিশ-শাসনই বহাল ছিল, যদিও ফরাসি অভিবাসীর সংখ্যা সেখানে অনেক বেড়ে যায়; শেষ পর্যন্ত ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে, ইংরেজরা দ্বীপটি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। ইংরেজরা আখ চাষ করার জন্য দ্বীপটিতে আফ্রিকা থেকে অসংখ্য ক্রীতদাস নিয়ে আসে। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে, আফ্রিকান ক্রীতদাসদের স্বাধীনতা-অর্জনের পর, ইংরেজরা বেত চাষ করার জন্য ভারত থেকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক আমদানি শুরু করে (মূলত ত্রিনিদাদে)। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে, দ্বীপগুলোকে একক ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করা হয়। এই অতীত-ইতিহাসের কারণেই, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ড. এরিক উইলিয়ামস দেশটিকে অভিহিত করেছেন ‘ইউরোপীয় ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো আফ্রো-এশীয়’ এক রাষ্ট্র হিসেবে।১০ বিশ শতকে চীন, সিরিয়া ও লেবানন থেকেও নতুন-নতুন অভিবাসী এ দ্বীপগুলোয় এসেছে। আবার একুশ শতকেও (তেল-উত্তোলনের নবজোয়ারের সঙ্গে-সঙ্গে) ভেনিজুয়েলা, চীন, লেবানন ও নাইজেরিয়া থেকে অভিবাসীরা নতুন করে ত্রিনিদাদে এসেছে – দুটি দ্বীপের মধ্যে ত্রিনিদাদই শিল্পোন্নয়নে এগিয়ে এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে, দেশটির লাখ লাখ জনগণের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ৩৭.৫ শতাংশ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত, ২০.৫ শতাংশ মিশ্র জনগোষ্ঠী, ১.২ শতাংশ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর, আর বাকি ০.৮ শতাংশ অনির্দিষ্ট। জনসাধারণের বড় অংশ রোমান ক্যাথলিক ও হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী; সংখ্যালঘুদের বড় একটি অংশ মুসলমান ও খ্রিষ্ট ধর্মের অন্যান্য শাখার অন্তর্ভুক্ত। দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি, কিন্তু জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ ক্যারিবীয় হিন্দুস্তানিতে (হিন্দি ভাষার আঞ্চলিক রূপ) আর খুব কমসংখ্যক স্প্যানিশ, ফরাসি ও চীনা ভাষায় কথা বলে।
তাহলে জাতীয় পরিচয় হিসেবে, এসবের মানে কী দাঁড়ায়?   স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে, রাজনৈতিক বাগ্মিতা আর সরকারি নীতি দুইয়ে মিলে তৈরি করেছে – এক ‘রঙধনু রাষ্ট্রের’১১ সাংস্কৃতিক ভাবচিত্র যাতে, যেমনটা এদেশের জাতীয় সংগীতেই আছে, ‘সব জাতি, সব ধর্মের সমান অধিকার’। এই রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সরকারি ছুটির মধ্যে আছে : খ্রিষ্টানদের ক্রিসমাস, হিন্দুদের দীপাবলি উৎসব, মুসলমানদের ঈদ, ভারতীয়দের আগমন-দিবস, চীনাদের আগমন-দিবস, ‘শাউটার’ ব্যাপটিস্ট-দিবস১২, আফ্রিকানদের মুক্তি-দিবস ইত্যাদি। রাষ্ট্রটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ড. এরিক উইলিয়ামস ছিলেন ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইতিবাসবিদ ও বুদ্ধিজীবী। জাতিবৈষম্যকে তিনি দেখতেন ঔপনিবেশিক এমন এক উত্তরাধিকার হিসেবে, নতুন রাষ্ট্রে যার কোনো স্থান নেই। আর এ-রাষ্ট্রের জনগণের বড় অংশই তাঁর এই অভিমতের সঙ্গে একমত। এই ঐক্যের প্রকাশটি সবচেয়ে বড় আকারে ফুটে ওঠে দেশটির ‘কার্নিভাল’ উৎসবে : প্রতিবছর, দুই দিন ধরে, রাস্তাজুড়ে বিশাল আকারের শোভাযাত্রা আর আনন্দোৎসব চলে, যেখানে সকল জাতি-ধর্মের মানুষ নির্দ্বিধায় এসে একত্রিত হয়।
তারপরও ঐতিহাসিকভাবে, ভারতীয় ও আফ্রিকান বড় দুই জনগোষ্ঠীর মাঝে, বিশেষ করে শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে, চাপা রেষারেষির ভাব রয়েই গেছে। এই দুই দলের মধ্যে আপাত এক
রাজনৈতিক-বিভেদও লক্ষ করা যায়। ইন্দো-ত্রিনবাগোনীয়দের বড় একটি অংশ ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল কংগ্রেস’ (ইউএনসি) নামক রাজনৈতিক দলটির অনুগামী; আর আফ্রো-ত্রিনবাগোনীয়দের বড় অংশ সমর্থন দেয় ‘পিপলস ন্যাশনাল মুভমেন্ট’ (পিএনএম) নামের রাজনৈতিক দলটিকে। তবে বিদ্যমান চাপা-বিরোধটুকু কখনই বড় আকারের জাতিগত সহিংসতায় রূপ নেয়নি। আর এই রাষ্ট্রের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য জাতিগত ঐক্যই, মোটের ওপর, প্রধান বাস্তবতা।
ইসমাইল মার্চেন্টের মিস্টিক ম্যাস্যুর ছবিটি নির্মিত হয়েছে ত্রিনিদাদের নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক ভি এস নাইপলের উপন্যাস অবলম্বনে। এ-ছবি নির্মাণ করেন একজন ভারতীয় চিত্রপরিচালক, আর চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব পান সেন্ট কিটসের ক্যারিল ফিলিপস। ছবিটির অভিনয়েও মিশেল ঘটে ভারতীয় ও ত্রিনিদাদীয় অভিনয়শিল্পীদের। মূল চরিত্রগুলোর বেশিরভাগের জন্য নির্বাচন করা হয় ভারতীয়দের। কেন্দ্রীয় গণেশ চরিত্রটিতে অভিনয় করেন আসিফ মান্দিভি। পার্শ্বচরিত্রগুলোয় অভিনয় করেন ত্রিনিদাদের মঞ্চ ও চলিচ্চিত্রের অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী : গ্রেস মহারাজ (মিসেস কুপার), দিনেশ মহারাজ (ট্যাক্সিচালক) আর মাইকেল শেরিস (হলুদ স্যুটের ভদ্রলোক)। ছবিটির পুরো প্রযোজনায় আন্তর্জাতিক এক আবহ ও চারিত্র্য বিদ্যমান, যা ত্রিনবাগোনীয় জাতীয় পরিচয়েরই প্রতিফলন। নানা জাতীয়তার মেলবন্ধনই যেন ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রের, সেইসঙ্গে দেশটির সামগ্রিক জাতীয় মানসের পরিচায়ক।
ছবিটির ঘটনাকাল ১৯৪৫। এর প্রথম দিকের এক দৃশ্যে দেখানো হয় – কুইনস রয়াল কলেজের ঔপনিবেশিক স্থাপত্য, যা দেশটির অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ড. এরিক উইলিয়ামসও এই কলেজেরই ছাত্র ছিলেন। এ-কলেজেরই কয়েকটি কক্ষে ছবিটির ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ চিত্রায়িত হয়। গণেশ নামের শিক্ষকটি এই কলেজের হেডমাস্টারের সঙ্গে দেখা করেন, যিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এখানে কালো চামড়ার মানুষটিই ক্ষমতায় আসীন : গণেশের সঙ্গে কথাবার্তার এক পর্যায়ে, তিনি গণেশকে অদক্ষ এক শিক্ষক বলে অভিহিত করেন, সেইসঙ্গে গণেশকে গালি দেন ‘গ্রাম্য মুটে’১৩ বলে, যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজনের জন্য যথেষ্টই অপমানকর। দৃশ্যটিতে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় ভারতীয় এবং কালো চামড়ার মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান জাতিগত বিরোধ বেশ স্পষ্টই ফুটে উঠেছে।
ত্রিনিদাদের গ্রামীণ পটভূমিতে চিত্রায়িত ছবিটিতে স্বাধীনতার আগেকার সময়ে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর জীবন কেমন ছিল, সেই চিত্র উঠে এসেছে। গণেশের বিয়ের দৃশ্যে, যেখানে ওই গ্রামেরই লীলা নামের মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ে হচ্ছে, হিন্দুদের ‘নাচো সে’১৪ গান পরিবেশন করা হয়। বিয়ের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি শুরু হয় লীলা ও গণেশের বিয়ের পোশাক আর মেকআপের কিছু ক্লোজআপ শট দিয়ে। পরবর্তীকালে, ছড়ানো শটে দেখানো হয় বিয়ের অন্য আরো অনেকের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-আশাক, নাচ আর গান। এ দৃশ্যে ধরা পড়ে ত্রিনবাগোনীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য এক দিক : সনাতন ঐতিহ্যের প্রতি হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুগত্য এবং সে-ঐতিহ্যের প্রতিপালন।
অধিকাংশ উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজে, উন্নত বিশ্বের কাছে নিজস্ব পরিচয়কে তুলে ধরার একরকম আকুতি থাকে। অনেকটা
সে-কারণেই, বিদেশি সবকিছুকে ভালো বলে মনে করার এক প্রবণতা কাজ করে এখানকার মানুষের মধ্যে। ইংরেজদের একসময়কার উপনিবেশ ছিল ত্রিনিদাদ ও টোবাগো; স্বাধীনতালাভের পরবর্তী বছরগুলোয় তাই এদেশের অনেক মানুষের জন্য ইংল্যান্ডই ছিল ‘আধুনিকতা’ ও ‘সভ্যতা’র স্বপ্নভূমি। ইদানীংকালে, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে যে-সাংস্কৃতিক-সাম্রাজ্যবাদী জোয়ার পৃথিবীর দেশগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে, তার উৎসমুখ হিসেবে গ্রেট ব্রিটেনের পূর্বতন আসনটি দখল করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মিস্টিক ম্যাস্যুর ছবির গণেশ চরিত্রটি খুব পড়–য়া : একজন লেখক হয়ে উঠতে চায় সে। তার স্বপ্ন – একদিন সে সত্যিকারের একটি ব্রিটিশ লাইব্রেরি স্বচক্ষে দেখবে, যার দেয়ালগুলি মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বইয়ে বোঝাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গণেশ ত্রিনিদাদের হিন্দু ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝেই বিখ্যাত ও ধনী হয়ে ওঠে; অতীন্দ্রিয় মালিশকারী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বার পরপরই দ্বীপটির নানা প্রান্ত থেকে এসব মানুষ তার কাছে উপদেশ নিতে ছুটে আসে। শেষ পর্যন্ত গণেশ রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু মানুষ ও বইয়ের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সে অসুখী হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডে প্রথমবারের জন্য ভ্রমণে গিয়েই সে বুঝতে পারে, তার সত্যিকার ঠিকানা তার স্বদেশ, তার বইয়ের জগৎ আর তার জনগণ।
ত্রিনবাগোনীয় অন্যান্য চলচ্চিত্রেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়ের সম্পর্কের বিষয়টি এসেছে। জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা ছবিটি এ বিষয় নিয়েই তৈরি। আশা লাভলেস তাঁর বাবা আর্ল লাভলেসের লেখা একটি ছোটগল্প থেকে এ ছবিটি নির্মাণ করেন। ছবিটিতে এমন এক লোকের গল্প বলা হয়েছে যে বিশ্বাস করে, সে একজন ‘ইয়াঙ্কি’ আর তার সত্যিকার বাসভূমি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে সবকিছুই অনেক বেশি ভালো। জুয়া খেলার মাধ্যমে সে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে, যা দিয়ে সে প্লেনের টিকিট আর জাল পাসপোর্ট কেনে; পুয়ের্তোরিকো দিয়ে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার এক পরিকল্পনা করে সে। নিজের পোশাক আর জুতো যেন যাত্রা-উপযোগী হয়, সে-ব্যাপারে জোয়েবেল খুব সচেতন। আর সে ইয়াঙ্কিদের মতো কথা বলতে পারে, হাঁটতে পারে আর সে ইয়াঙ্কিসংগীতও জানে। লাভলেস জোয়েবেলের নিরিবিলি গ্রামের দৃশ্যগুলো তুলেছেন ‘সফট’ লেন্স দিয়ে : উজ্জ্বল সবুজের আবহ, নানা রঙের ফুল আর গ্রামের বাড়িগুলো এক স্বপ্নিল আবেশ তৈরি করে, যেন জোয়েবেলের গ্রামটি নিজেই এক স্বপ্নপুরী। আর এভাবেই, জোয়েবেলের আমেরিকা যাবার স্বপ্নের সারশূন্যতা ফুটে উঠেছে লাভলেসের ছবিতে।
ইয়াও রামেসার ত্রয়ী ‘ফ্যান্টাসি-ড্রামা’র প্রথম ছবি সিস্টাগড। এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মারির (ইভলিন সেজার মানরো) বাবা ছিলেন মার্কিনিদের পক্ষে ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়া সাদা চামড়ার এক সৈনিক। মারির জন্মের পরপরই তার বাবা তাকে প্রত্যাখ্যান করে; মারির ত্বকের রং বেশি কালো বলে তার সন্দেহ হয়, এ সন্তান তার নিজের নয়। আর পিতৃত্বের এই অস্বীকৃতি মারির জীবনকে শুরুতেই কালিমালিপ্ত করে দেয়। উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার আকাক্সক্ষা  ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সাংস্কৃতিক মানসেরই বৈশিষ্ট্য;  মারি চরিত্রটির মাধ্যমে রামেসারের দেশটির সংস্কৃতির এই বিশেষ দিকটির ওপর আলোকপাত করতে চেয়েছেন। সিস্টাগড ছবিতে, একই সঙ্গে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সাংস্কৃতিক বহুত্বের দিকটিও ফুটে উঠেছে। মারির বাবা সাদা চামড়ার, মারির মা প্রায়-কালো, আর মারির নানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত – জাতিগত এমন সংমিশ্রণ ত্রিনিদাদীয় সমাজের অচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। ছবিটিতে ‘ওরিশা’ (আফ্রিকান একরকম ধর্মবিশ্বাস) এবং খ্রিষ্ট ধর্মের বিপ্রতীপ দুই ঐতিহ্যের দিকেও নজর টানা হয়েছে; ধর্মবিশ্বাসের প্রথাগুলি প্রকটভাবে ফুটে ওঠে, যখন মারির ‘ভূত’ তাড়ানোর১৫ জন্য তার পরিবার উঠেপড়ে লাগে।
প্রেসার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রথম দিককার ছবিগুলোর একটি। ছবিটি যৌথভাবে লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন হোরেস ওভে এবং ত্রিনিদাদের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক স্যামুয়েল সেলভন। ছবির প্রেক্ষাপট লন্ডন শহর। ছবিটিতে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সূত্র ধরে দেশটির জাতীয় পরিচয় অনুসন্ধান করা হয়েছে। ছবির পাত্রপাত্রীরা সবাই ত্রিনবাগোনীয় কালো চামড়ার মানুষ, যারা ব্রিটেনে এসে বসবাস করছে। এ-ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম অ্যান্থনি; তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেবল সে-ই ব্রিটেনে জন্মেছে। ছবির শুরুতেই ‘রেগে’ সংগীতের টাইটেল-সিকোয়েন্সের সঙ্গে সঙ্গে বাদামি রঙের ড্রয়িংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় : কীভাবে পরিবারটি ক্যারিবীয় দেশ ছেড়ে দূরের শীতের দেশে এসে উপস্থিত হলো। আর ছবির একেবারে প্রথমেই ফ্রাইং প্যানে বেকন ও ডিম ভাজার দৃশ্য। পরবর্তী দৃশ্যগুলোয়, বেকন ও ডিম অত্রিনিদাদীয় সমস্ত কিছুর প্রতীক হয়ে উঠতে থাকে। কালো চামড়ার একজন মহিলা ডিম ভাজতে থাকেন আর গুনগুনিয়ে গাইতে থাকেন ‘অ্যামেজিং গ্রেস’; অন্যদিকে, রেডিওতে জ্যামাইকার এক গায়িকার নাম ঘোষণা করা হয়। মহিলা উচ্চৈঃস্বরে অ্যান্থনির নাম ধরে ডাকতে থাকে : তার ডাকার স্বরে স্পষ্টতই ফুটে ওঠে ত্রিনিদাদের বাকভঙ্গিমা। আর অ্যান্থনির জবাব আসে সমান উচ্চগ্রামে, কিন্তু ব্রিটিশ কথনভঙ্গিমায়। অ্যান্থনি ঘরে ঢুকে, টেবিলে বসার আগেই, রেডিওর নব ঘুরিয়ে ব্রিটিশ পপগানের স্টেশন ধরে। একইভাবে, অন্য এক দৃশ্যে, এক দোকানি যখন তার দোকানের সামনে অ্যাভোকাডো সাজিয়ে রাখছে, আটাশ-ঊনত্রিশ বছরের এক যুবক তাকে জিজ্ঞেস করছে, ‘পা, এই জাবোকাগুলি কি পাকা?’ জাবোকা হচ্ছে অ্যাভোকাডোরই ত্রিনিদাদীয় এক নাম। দোকানি উত্তরে বলে, ত্রিনিদাদে কত জাবোকা পাওয়া যায়, অথচ লন্ডনে এই ফলের সরবরাহ কত কম। দোকানির মতে, লন্ডনে জাবোকা ‘সোনার মতোই’ দু®প্রাপ্য। এ ছবিতে, আর কিছু পরেই, আমরা জানতে পারি – ওই দোকানি আসলে অ্যান্থনিরই বড়ভাই, কলিন। কলিন রান্নাঘরের খাবার টেবিলে অ্যান্থনি আর তার মায়ের সঙ্গে এসে যোগ দেয়। কলিনের প্লেটে মা যে-খাবার বেড়ে দেয়, তার সঙ্গে অ্যান্থনির প্লেটের খাবারের কোনোই মিল নেই। কলিন ছুরি দিয়ে জাবোকা কাটে, আর সামনে-রাখা মাছ-টমেটোর তরকারিতে ছোট্ট লবণদানি থেকে লবণ ছিটায়। তরকারির একটু স্বাদ নেবার জন্য সে অ্যান্থনিকে অনুরোধ করে। অ্যান্থনি জবাবে খিঁচিয়ে ওঠে : ‘ঠিক সময়ে ঠিক খাবার খাওয়া উচিত!’ কলিন এতে রেগে ওঠে আর জানতে চায়, সঠিক খাবার সম্পর্কে অ্যান্থনি কতটুকু জানে। আরো একটা চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য অ্যান্থনি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, কলিনের প্লেটে মাছের তরকারির ক্লোজআপ শট দেখতে পাই আমরা। শুরুর এই দৃশ্যগুলোতেই ছবির পুরো মেজাজ পরিষ্কার ফুটে ওঠে। এ-ছবির চরিত্রগুলো এরপর থেকে ব্রিটিশ আর ত্রিনিদাদীয়, এই দুই পরিচয়ের টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলে। আর ছবিজুড়ে, মাছের তরকারি প্রতীক হয়ে ওঠে ত্রিনিদাদের, আর ডিম-বেকন প্রতীক হয়ে ওঠে গ্রেট ব্রিটেনের।

শিক্ষা : মর্যাদার মাপকাঠি
১৯৬২ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। জন্ম হয় ত্রিনিদাদ ও টোবাগো গণপ্রজাতন্ত্রের। ড. এরিক উলিয়ামসের নেতৃত্বে পিপলস ন্যাশনাল মুভমেন্ট (পিএনএম) স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার গঠন করে। ড. উইলিয়ামস দেশটির জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃত : দেশটির জাতীয় পরিচয় নির্মাণে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেসব মূল্যবোধ দেশের নাগরিকদের মন-মানসে গ্রথিত থাকা দরকার, সবসময়ই তিনি সে-ব্যাপারে উচ্চকিত ছিলেন। ১৯৬০ সালে, দেশটি যখন স্বাধিকার অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছিল, সে-সময়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ড. উইলিয়ামস স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের জাতীয় লক্ষ্যগুলিকে পরিষ্কারভাবে মেলে ধরেন : শক্তিশালী সরকার, অভ্যন্তরীণ স্বাধিকার, জাতীয় অর্থনীতি নির্মাণ এবং জনগণের জন্য শিক্ষা১৬ উন্নত একটি দেশের মূল ভিত্তি হতে হবে শিক্ষা, এমনটাই বিশ্বাস ছিল পিএনএমের। শিক্ষাকে ড. উইলিয়ামস কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন, তাঁর বক্তৃতাগুলোতেই তা পরিষ্কার ফুটে ওঠে। ১৯৬২ সালের ৩০ আগস্ট, স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক আগের ক্ষণটিতে, তরুণদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন :
‘তোমাদের ভালোবাসা-ভরা কচি হাতেই এদেশের ভবিষ্যতের সবটুকু তুলে দেওয়া হলো। তোমাদের সরল প্রাণের ঠিক মাঝখানে এদেশের গৌরব প্রতিষ্ঠিত। তোমাদের শিক্ষার সোপান বেয়েই এদেশের সব সম্ভাবনা পূর্ণতা পাবে।’১৭
ড. উইলিয়ামস বিশ্বাস করতেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সকল
জাতি-ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এক জাতিতে পরিণত করবার মূল হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলার সবরকম চেষ্টা চালায় তার সরকার। শুধু আইন প্রণয়নের মাঝেই সে-চেষ্টা সীমিত ছিল না; সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে স্কুলগুলোয়১৮, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির সবরকম চেষ্টা করা হয়। এরই ফলে বর্তমানে ত্রিনিদাদে শিক্ষার হার ৯৮ শতাংশ।
রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণেই ত্রিনিদাদের সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রে ‘ভালো ছেলে’র একরকম ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ‘ভালো ছেলে’১৯ বা ‘ভালো মেয়ে’২০ হচ্ছে শিক্ষিত একজন, যে ভালোভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ব্রিটিশরীতির আদলে; এ-ব্যবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য মাধ্যমিক পরীক্ষাগুলি (ও-লেভেল এবং
এ-লেভেলের সমতুল্য) পাশ করতে হয়। ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রে ‘ভালো ছেলে’ বা ‘ভালো মেয়ে’র একটা সম্মানের জায়গা আছে – বিশেষ এক মর্যাদার আসন আছে। কারণ ত্রিনিদাদে সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা নির্ধারণ করবার বড় মাপকাঠি হলো শিক্ষা। এখানকার সাহিত্যে আর ‘ক্যালিপসো’ সংগীতে, এ-মর্যাদার কথা বারবার উঠে এসেছে। যেমন, ‘ক্যালিপসো’-গায়ক ডেভিড রুডারের ‘ম্যাডনেস’ গানটিতে এমন এক অবাস্তব পার্টির গল্প ফাঁদা হয়েছে, যে-গল্প রীতিমতো পাগলামির পর্যায়ে পড়ে (এটা ত্রিনিদাদের কার্নিভাল সংগীতেরই এক বৈশিষ্ট্য)। গানটিতে, ব্রাউন নামের এক চরিত্র পার্টির ডামাডোল-হইহট্টগোলের মাঝে একটা মেয়েকে দেখে ভীষণ লজ্জিত হয়ে ওঠে। কারণ, মেয়েটি ‘জিসিই পরীক্ষায় প্রায় ১০ পেয়েছে, আর ‘হোলি নেম’-এ পড়েছে’ (নামকরা এক মাধ্যমিক স্কুলে পড়েছে, আর পরীক্ষার জন্য অনেক বিষয় নিয়েছে)। মেয়েটির শিক্ষাগত পরিচয় তাকে পার্টির ডামাডোলের আর পাগলামি, এসবের অনেক ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করে।
ওভের প্রেসার ছবিটাতে দেখানো হয়েছে : অ্যান্থনির সরলমতি
বাবা-মা-বন্ধুবান্ধব সবাই তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে খুব আশাবাদী, কারণ অ্যান্থনি ব্রিটিশ স্কুলে আর স্কুল-শেষের পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেছে। কিন্তু শিক্ষা যে মুক্তি এনে দেয়, প্রচলিত এই ধারণাটিকে এ-ছবিতে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে : শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে অ্যান্থনি লন্ডনে চাকরি পায় না। একইভাবে, মিস্টিক ম্যাস্যুর ছবিতে, গণেশকে তাঁর ছোট্ট গ্রামের সবাই সম্মান ও শ্রদ্ধা করে, কারণ গণেশ একজন শিক্ষিত মানুষ : সে নিজে একজন শিক্ষক, তার ওপর সে একটা বই লিখছে। বইটা প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গে গ্রামে তার সম্মান আরো অনেক বেড়ে যায়। জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা ছবিতে, জোয়েবেলের প্রেমিকার মা চান, তাঁর মেয়ে যেন জোয়েবেলের মতো কল্পনাবিলাসী জুয়া খেলুড়ে ছেলের সঙ্গে না মেশে, পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠে আর ‘পরীক্ষা পাশ করে’।
এসব ছবিতে, উন্নতির জন্য শিক্ষা কত গুরুত্বপূর্ণ – এই বিষয়টির ওপর জোর দেবার পেছনে ড. এরিক উইলিয়ামসের প্রচারিত আদর্শ বড় ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার এই আদর্শ ত্রিনবাগোনীয় জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

‘নৈসর্গিক চলচ্চিত্রে’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রীয় উদ্ভাবন
অধিকাংশ ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্র-নির্মাতা নির্মাণের এক নৈসর্গিক শৈলীকেই বেছে নেন। হোরেস ওভের ক্ষেত্রে এই ‘নৈসর্গিকতা’ অনেক সময়ই ইতালীয় নব্য-বাস্তববাদকে মনে করিয়ে দেয়। ওভে এলিজাবেথ টেলর অভিনীত ক্লিওপেট্রা (জোসেফ ম্যানকিভিৎস, ১৯৬৩) ছবির ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ইতালিতে যান। সেখানে লুই বুনুয়েল ও ফেদেরিকো ফেলিনির মতো চলচ্চিত্রকারদের কাজের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। তিনি স্বীকার করেছেন, তাঁর নিজের কাজের ওপর নব্য-বাস্তববাদী চলচ্চিত্রের   বড়-রকম প্রভাব আছে। ছবিতে ‘বাস্তবকে ধরা’ই তাঁর কাজের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় : ছবির গল্পকে বাস্তব জগতে দাঁড় করাতে চান তিনি। যেমন, প্রেসার  ছবির ক্ষেত্রে, ওভে দাবি করেন, গির্জার ভেতরে আর রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলের দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় ধরার সময় উপস্থিত লোকজন খেয়ালই করেনি যে, তাদের মধ্যেই কেউ-কেউ মুখস্থ সংলাপ বলছে। এ-ছবির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃশ্যের একটি তোলা হয়েছে ফুটপাত থেকে। পাশ দিয়ে হেঁটে-যাওয়া পথচারীরা ফ্রেমের মধ্যে আসছে আর ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছে – অনেকটা বুনুয়েলের ছবির স্বপ্নিল কোনো দৃশ্যের মতন।
জাতীয় চলচ্চিত্রে, রঙের ব্যবহারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা ছবিতে, পরিচালক লাভলেস গাছপালা-ফুল-লতাপাতার নানা রঙের সপ্রতিভ ব্যবহারের মাধ্যমে একরকম আচ্ছন্ন-আবেশ তৈরি করেন। দ্বীপটি আসলেই কতটা সুন্দর, দর্শক এ-ছবিতে কখনই তা ভুলে থাকতে পারে না। মিস্টিক ম্যাস্যুর ছবির দৃশ্যপটে ত্রিনিদাদের প্রাকৃতিক আবহকে তুলে ধরা হয়েছে : ক্যামেরার ফ্রেম থেকে-থেকেই ভরে ওঠে গাছপালা, বাঁশঝাড়, পামগাছ আর আখের খেতের মনোরম সবুজে।
ইয়াও রামেসার ১৯৯৬ সালে ‘ক্যারিবীয়করণ : সাংস্কৃতিক আবশ্যকীয়তা এবং চলচ্চিত্র তৈরিতে প্রযুক্তি’ শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন। এ নিবন্ধে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সাংস্কৃতিক আবহে, তাই বিদেশি এই প্রযুক্তিতে ক্যারিবীয় চলচ্চিত্রকারদের দেশীয় ছোঁয়া আনতে হবে।২১ তাঁর বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে রামেসার যুক্তি দেখান যে, চলচ্চিত্রের প্রথম দিককার প্রযুক্তির মাধ্যমে কালো মানুষদের চামড়ার রংকে ক্যামেরায় ঠিকভাবে ধরা যেত না, এমনকি উষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় ওই প্রযুক্তি ভালোভাবে কাজই করত না। এজন্য, তিনি উপদেশ দেন, চলচ্চিত্র-নির্মাতাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, আর প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহারকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। লেখাটির শেষে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ক্যারিবীয় চরিত্র ও আবহকে ফুটিয়ে তোলার উপযোগী প্রযুক্তি ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে। নিবন্ধটিতে ত্রিনিদাদের এই চলচ্চিত্র-নির্মাতার মন-মানস ও নান্দনিক-ভাবনা চমৎকার ফুটে উঠেছে। আর রামেসারের সিস্টাগড ছবিতে এইসব ধ্যানধারণার বাস্তব প্রয়োগ দেখতে পাই আমরা। এ-ছবিতে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার নেই বললেই চলে। ছবিটির অসাধারণ এক দৃশ্য : মারির ‘ভূত’ তাড়ানো হয়েছে, সে সুস্থ হয়ে উঠছে, আর ওই সময়ে ‘ভূতে-পাওয়া’ মেয়েটির মুখ থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। এই দৃশ্যের রূপায়ণে, আশ্চর্যজনকভাবে, সিজিআই বা অন্য কোনো ‘হাইটেক’ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়নি। রামেসার মেয়েটির মুখে শুধু ধাতব একটা মুদ্রা রেখে দিয়েছিলেন, আর অপেক্ষা করে ছিলেন, কখন সেই মুদ্রার ওপর সূর্যের আলো এসে পড়বে।

বিতরণের সমস্যার মোকাবিলা : ভবিষ্যতের আশা
সম্প্রতি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চলচ্চিত্রশিল্পে প্রাণের নতুন জোয়ার এসেছে। এর পেছনে রয়েছে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ফিল্ম কোম্পানি (টিটিএফকো) নামের প্রতিষ্ঠানটির আবির্ভাব। এই প্রতিষ্ঠানটিই সিস্টাগড আর জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা ছবি দুটি নির্মাণে অর্থ সাহায্য দিয়েছে। টিটিএফকো একটি জাতীয় সংস্থা; চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই এ-সংস্থাটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংস্থাটির দায়িত্ব : বিদেশি ছবির নির্মাণে কারিগরি ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়া আর একই সঙ্গে স্থানীয় চলচ্চিত্র-নির্মাণকে নানাভাবে উৎসাহ জোগানো ও সাহায্য করা।
চলচ্চিত্রের বিতরণব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার নতুন-নতুন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। ২০১০ সালের মে মাসে, ক্যারিবিয়ান টেলস ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডিস্ট্রিবিউশন (সিটিডাব্লিউডি) নামে চলচ্চিত্র-বিতরণের আন্তর্জাতিক এক কোম্পানি গঠন করা হয়। ইংরেজিভাষী ক্যারিবীয় অঞ্চলে, ক্যারিবীয় বিষয়ের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র বিতরণের জন্য, এমন প্রতিষ্ঠান এ-ই প্রথম। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা – ত্রিনিদাদের চলচ্চিত্রকার ফ্রান্সেস সলোমন। ত্রিনবাগোনীয় চলচ্চিত্রের ‘ডায়াসপোরা’র অংশ তিনি : কাজ শুরু করেছিলেন প্রথমে ব্রিটেনে; আর এখন কাজ করছেন কানাডায়। তবে বর্তমানে, সিটিডব্লিউডি বিচ্ছিন্নভাবে ছবির বিতরণ না-করে সংস্থাভিত্তিক বিতরণের সঙ্গে জড়িত। ফলে ত্রিনিদাদের সাধারণ দর্শকদের জন্য এসব ছবি দেখা কিছুটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বিতরণের সনাতনী পন্থার পরিবর্তে, টেলিভিশনে সম্প্র্রচারের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে নির্মিত ছবিগুলো সাধারণ দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। টেলিভিশনের জন্য নির্মিত ছবি জোয়েবেল অ্যান্ড আমেরিকা তার ভালো উদাহরণ।

তথ্যনির্দেশ
[নিবন্ধের মূল টীকার পাশাপাশি, এখানে, বাড়তি কিছু টীকা এবং মূল টীকার সঙ্গে বাড়তি কিছু অংশ যুক্ত করা হয়েছে। মূল টীকার সঙ্গে সংযুক্ত বাড়তি অংশ এবং অতিরিক্ত টীকাগুলি তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া হলো। – অনুবাদক]

১. [CARICOM]; ক্যারিকমের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে : অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বার্বাডোস, বেলিজ ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, গায়ানা, হাইতি, জ্যামাইকা, মন্টসেরাট, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিন দ্বীপপুঞ্জ, সুরিনাম, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। এছাড়া সহযোগী সদস্য : অ্যাঙ্গোলা, বারমুডা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপমালা, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, টার্কস ও কাইকোস।
২. Susan L. McFarlene-Alvarez, ‘Imaging and the National Imagining : Theorizing Visual Sovereignty in Trinidad and Tobago Moving Image Media through Analysis of Television Advertising.’ Georgia State University, 2006. p. 5৩. [এসব নির্মাতা দেশের বাইরে, উন্নতবিশ্বের কোনো-না-কোনো দেশে, বসবাস করেন।]
৪.[the natural]
5. [naturalistic]
6. [realistic]
7. [neo-realistic]
8. Mbye B. Cham (Ed), Ex-Iles: Essays on Caribbean Cinema. Trenton, N.J : Africa Worldpress, 1992. p. 43.
9. [‘Cédula de Populacion’]
10. D. E. Williams, Forged From the Love of Liberty, (ed) D. P. K. Sutton. 1981, Trinidad : Longman Caribbean. p. 225.
11. [rainbow nation]
12. [Shouter Baptist Day]
13. [a country ‘coolie’]
14. [‘nazzo se’]
15. [‘to rid her of her demons’]
16. D. E. Williams, Forged From the Love of Liberty,
১৭. ওই, p. vii
১৮. ওই, p. 203
19. [bright boy]
20. [bright girl]
21. Yao Ramesar, ‘Caribbeing : Cultural Imperatives and the Technology of Motion Picture Production.’ Caribbean Quarterly, vol. 42 no. 4, 1.

Leave a Reply