logo

গ্র ন্থ প রি চি তি

ডিয়ার মাস্টার

অহিভূষণ মালিক
নিউ এজ পাবলিশার্স
কলকাতা ২০১১
মূল্য : ১০০ টাকা

শ্ব শিল্পকলার ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ : ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি এবং
১৮৯১-এর ৪ এপ্রিল। কিছু কমবেশি সাত বছর দুই মাসের ব্যবধানে এক মাস্টার পেইন্টারের দুটি জন্মদিন। তাঁর জৈব জন্মতারিখ অবশ্য ৭ জুন ১৮৪৮। নাম ইউজিন অঁরি পল গগ্যাঁ। ঠিকানা পারি শহরের ৫৬ নম্বর নোতর-দাম-দা-লোরেৎ। বাবা ক্লোভি গগ্যাঁ, মা আলিন মারি। গগ্যাঁ যেদিন ভূমিষ্ঠ হন, সেদিন পারির পথে পথে চলছিল প্রচন্ড লড়াই, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জনগণের সঙ্গে সরকারি ফৌজের। গগ্যাঁর সেই জন্ম তাঁর ইচ্ছাধীন ছিল না।
শিল্পী গগ্যাঁর ইচ্ছাধীন জন্মের মূলে কাজ করেছে তাঁর অদম্য জেদ, অপরিমেয় কারুবাসনা, অপরাজেয় কষ্ট-সহিষ্ণুতা এবং দুটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। প্রথম সিদ্ধান্ত, জানুয়ারি ১৮৮৬ : স্ত্রীর পঞ্চম গর্ভের প্রসবপর্ব নির্বিঘ্নে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একদিন গগ্যাঁ অফিস থেকে বাড়ি ফিরে জানালেন, শেয়ারবাজারের কাজে তিনি ইস্তফা দিয়ে এসেছেন। এবার তাঁর কাজ হবে শুধু ছবি অাঁকা। আনন্দের সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন। শুনে স্ত্রী মেৎ প্রথমে অবাক, তারপর উদ্বিগ্ন। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত কোনো সুস্থ মানুষ নিতে পারে? শেয়ারবাজারে গগ্যাঁর বিশাল প্রতিপত্তি, সেই সূত্রে বৈভব, সাড়ম্বর জীবনযাপন। সেই জীবন ছেড়ে ছবি অাঁকিয়ের অনিশ্চয়তাপূর্ণ, সংকটসম্ভব ভবিষ্যৎ! মেৎ বিশ্বাস করতে চাননি। ভেবেছেন, গগ্যাঁর খামখেয়াল। তাছাড়া ছবি অাঁকার পারদর্শিতা যে তাঁর স্বামীর নেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তিনি। ছবি অাঁকা কেন, গগ্যাঁর কোনো প্রতিভাই নেই, যে-লোকটার সঙ্গে এতকাল ঘর করছেন, তাঁকে তিনি খুব ভালো চেনেন। গগ্যাঁ বোঝেন শেয়ারবাজার এবং নিবৃত্তিহীন যৌনসংসর্গ। মেৎ ঘাবড়ে গেলেন। কীভাবে চলবে? পাঁচটি সন্তানের দায়িত্ব। গগ্যাঁর সান্নিধ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। ফের সন্তান এলে বিপদ বাড়বে। গগ্যাঁ কিন্তু নিশ্চিন্ত। তাঁর বিশ্বাস, তিনি উঁচুদরের ছবি অাঁকতে পারবেন, সেই ছবি বিক্রি হবে, ছেলেমেয়ে-স্ত্রী সুখে থাকবে। মেৎকে বোঝান, ঘাবড়াবার কিছু নেই; পারির বুসে তিনি যেমন শেয়ারের ওঠানামার নির্ভুল গণনা করতে পারতেন, ছবির ব্যাপারে একই রকম দক্ষতায় কাজ করবেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত পল গগ্যাঁকে অশেষ কষ্টে ফেলেছে, তাঁর পারিবারিক জীবনকে বিধ্বস্ত করেছে, অনেকের কাছে বিরক্তির পাত্র করে তুলেছে তাঁকে, উপার্জনহীন দিশাহীন পরনির্ভর দিনযাপন কোথায় সম্মান পায়; তবু অনেক কিছু খুইয়ে হয়ে উঠেছেন শিল্পী, যদিও তাঁর ছবি বিক্রি হয় না, প্রাতিষ্ঠানিক বিপণনগুলি তাঁর ছবিকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয় না, প্রতিষ্ঠানের বাইরে যে শিল্পীরা আছেন তাঁরাও তাঁকে স্বীকার করতে চান না, কিন্তু নিজস্ব শিল্পদর্শনে গগ্যাঁ প্রমাণ করতে থাকেন তিনি অন্যরকম শিল্পী।
৪ এপ্রিল ১৮৯১ : দক্ষিণ সাগর অভিমুখী জাহাজে চেপে তাহিতির বন্দর পাপিডির দিকে রওনা হলেন গগ্যাঁ। কেন তাহিতি? গগ্যাঁর জবাব, আমার যা ছবি দেখছ তা কেবলমাত্র বীজ, এ বীজ তাহিতির বুনো মাটিতে বপন করলে ফুলে ফুলে ভর্তি হয়ে বিরাট গাছ হয়ে গজিয়ে উঠবে। ফ্রান্সের গগ্যাঁ, জেনে রেখো, মারা গেছেন। তাঁর কথা আর কোনো দিন শুনতে পাবে না। অন্যরা যশস্বী হয় হোক, আমি চাই শান্তি।’ এই ‘শান্তি’ মানে শিল্পের পরমার্থকে নিজের মতো করে ছুঁতে পারা। যশোপ্রতিষ্ঠা ইতোমধ্যে কিছুটা হয়েছে, বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, কিন্তু শিল্পী গগ্যাঁর ঘর এইখানে নয়, সভ্য জগৎ থেকে দক্ষিণ সাগরের তাহিতি দ্বীপে। তাহিতি যাওয়ার আগে সিম্বলিস্টদের সহযোগিতায় হোটেল দ্রুয়োতে গগ্যাঁ তাঁর একক প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন। জনপ্রিয় চিত্র-আলোচক অকতাভ মিরবো লিখলেন, ‘পল গগ্যাঁ তাহিতি চলেছেন। একজন শিল্পী সভ্য জগতের সঙ্গে সম্পর্ক তুলে দিতে চাইছেন, চাইছেন বিস্তৃত হতে, চাইছেন নিস্তব্ধতার মধ্যে অবস্থান করে নিজেকে জানতে, আত্মার বাণী শুনতে, যে বাণী চাপা পড়ে যায় কলহ-কোলাহলে, একথা ভাবতে বাস্তবিকই কষ্ট লাগে, অদ্ভুতও মনে হচ্ছে।’ মিরবোর প্রবন্ধের অংশবিশেষ ছাপা হলো লা ফিগারো সংবাদপত্রে। পারির সব বড় পত্রিকার আলোচনায় একই সুর বাজল। প্রদর্শিত তিরিশটি ছবিই বিক্রি হয়ে গেল। এসব খবর পৌঁছায় মেতের কাছে। তাঁর স্বামীটা তাহলে ততটা অপদার্থ নয়। ছবির প্রশংসা হচ্ছে, বড় কথা, বিক্রি হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর কোপেনহাগেনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আছেন মেৎ। গগ্যাঁকে সন্তানদের মুখ দেখার সুযোগও দেননি। যে বাবা দায়িত্ব পালন করতে পারে না, তার আবার স্নেহ-বাৎসল্য কী! তাহিতি যাওয়ার আগে গগ্যাঁর ইচ্ছে হলো, ছেলেমেয়েদের একবার দেখে যাই। হতে পারে, এটাই শেষ দেখা। কিন্তু এমন ছেঁড়াখোঁড়া পোশাকে, খেতে না-পাওয়া চেহারায়, দীনহীনের কোন সম্মানে তাদের সামনে দাঁড়াবেন? তাছাড়া মেৎও চান না পল আসুক কোপেনহাগেনে। সন্তানের মুখ দেখতে না-পাওয়ার কষ্টটা তার প্রাপ্য। কিন্তু খবরের কাগজে গগ্যাঁর ছবির প্রশংসা ও বিক্রির খবর পড়ে গগ্যাঁকে কোপেনহাগেনে আমন্ত্রণ জানান মেৎ। কয়েকটা দিন সহধর্মিণীর মতো আচরণ করেন। কিন্তু গগ্যাঁর কাছে এসবের আর তেমন মূল্য নেই। তাহিতি ডাকছে, তাহিতির আদিম সমাজ ডাকছে, ডাকছে সমুদ্র-গাছপালা আর রোদের রং। হোটেল দ্রুয়োতে একক প্রদর্শনীর ছবি বেচে পাওয়া নয় হাজার আটশো ষাট ফ্রাঁর সবটাই নিয়ে গগ্যাঁ জাহাজে উঠে বসেন। মেৎ রেগে কাঁই, এমন স্বার্থপর, অমানুষ জুটেছিল তাঁর কপালে!
এরপর পল গগ্যাঁর তাহিতি পর্ব তো আন্তর্জাতিক আধুনিক শিল্পকলার এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। বছর দুয়েক তাহিতি দ্বীপে কাটিয়ে আবার পারি এলেন গগ্যাঁ। আবার উড়নচন্ডীপনা। পড়ে পাওয়া দশ হাজার ফ্রাঁ জুটেছে। তাতেই কোটিপতির চালচলন। অস্থায়ী গৃহিণী জুলিয়েৎ। তার ওপর মডেল আনা। দুজনের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক। জুলিয়েৎ একদিন কেটে পড়ল। আনাও ঠকাল। সমুদ্রের ধারে জেলের দল বিবাদের জেরে ঠেঙিয়ে গগ্যাঁর পা ভেঙে দিল। ভাঙা মন, ভাঙা পা, পুরনো ব্রঙ্কাইটিস আর নতুন উপসর্গ সিফিলিস নিয়ে আবার তাহিতি যান গগ্যাঁ। পথের এক গণিকাকে ঘরে তোলার পরিণামে সিফিলিস। ১৮৯৫-এর জুলাইয়ে তাহিতি আসেন গগ্যাঁ। আরো আট বছর বেঁচেছিলেন। ছবি এঁকেছেন, ভাস্কর্য গড়েছেন, বই লিখেছেন। কখনো সুখে, কখনো দুঃখে কেটেছে। কিন্তু সেই সুস্থ-সবল স্বাস্থ্য আর ফিরে পাননি। তাতেও কম যান না, তাহিতি দ্বীপের মেয়ে তেহুরার সঙ্গে গোপনে শারীর মিলন, কামোন্মত্ত যুবতী ও কিশোরীদের সঙ্গে উদ্দাম সহবাস, তারপর চোদ্দ বছরের মেয়ে পান্থরার সঙ্গে গৃহজীবন। এ সময় তাঁর অাঁকা বিখ্যাত দুটি ছবি ‘ল্য সাঁ অ ফ্লো রুজ’ ও ‘তে আরাই বহিন’। প্রথম ছবিতে অনাবৃত বুকে ফলের থালা হাতে দাঁড়ানো মেয়েটি পান্থরা। দ্বিতীয় ছবিটি হাসপাতালে থাকার সময়ে অাঁকা, গগ্যাঁর মতে, তাঁর সেরা কাজ। এঁকেছেন ‘উ ভেনো নু? কি সোম নু? উ সালোঁ নু?’ কোথায় ছিলাম? কোথায় এলাম? কোথায় যাব? বড় ক্যানভাসের অভাবে বস্তার কাপড় সেলাই করে জুড়ে পনেরো ফুট লম্বা ও পাঁচ ফুট চওড়া কাজ। তখন গগ্যাঁ ঘন ঘন জ্বরে পড়ছেন, প্রায়ই রক্তবমি হচ্ছে। ‘উ ভেনো নু? …’ অাঁকার পর তাঁর মনে হলো, আর বেঁচে থাকার দরকার নেই। জঙ্গলে গিয়ে আর্সেনিক খেলেন। কিন্তু মরলেন না। তখনো যে কিছু কাজ বাকি। শরীরে সামর্থ্য নেই, পকেটে অর্থ নেই, তাঁর সঙ্গে মেলামেশায় জারি হয়েছে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা। ছবি এঁকে চলেন গগ্যাঁ।
এরকম জীবনের কথা বারবার পড়া যায়, এরকম জীবন নিয়ে সিনেমা বারবার দেখা যায়, এরকম জীবন নিয়ে গল্প প্রবন্ধ লেখা যায়; কিন্তু এই জীবন একটিবারও বোধহয় যাপন করা যায় না। অভাব তাড়া করছে নিত্যদিন, অনাহার পিছু ছাড়ে না, কারো কারো কৃপায় কিছুদিন চলে, যৌনক্ষুধা কিছুতেই মেটে না, সন্তানদের সঙ্গ পাওয়ার উপায় নেই, তাদের নিয়ে স্ত্রী চলে গেছেন বাপের বাড়িতে, মাঝে মাঝে টাকা চেয়ে তাঁর চিঠি আসে, আর আসে আদরের সন্তানের মৃত্যুসংবাদ, তার ওপর শিল্পকলা সংক্রান্ত কায়েমি সমাজের লাগাতার উপেক্ষা, প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি ঠাঁই পায় না, ঘনিষ্ঠদের মধ্যেও তেমন মর্যাদা পায় না। এক জীবনে এত যুদ্ধ, গগ্যাঁ জিতেছিলেন, জিততে হয়েছিল।
সেই যুদ্ধজয়ের ইতিহাস, হৃদয়ছোঁয়া ভাষায় লিখেছেন অহিভূষণ মালিক। ডিয়ার মাস্টার। এ জীবনী লেখা কঠিন, পক্ষপাতের সম্ভাবনা প্রতিপদে। এ জীবনী লেখা কঠিন, আবেগের চাপে মনে হতে পারে তথ্য ততটা জরুরি নয়। গগ্যাঁর বেপরোয়া ব্যক্তিজীবনের প্রতি একধরনের মুগ্ধতা তাঁর শিল্পসাধনাকে আড়াল করে দাঁড়াতে পারে, শিল্পের জন্যই যে তাঁর জীবনযাপন এই বড় সত্যটাকে খাটো করে দিতে পারে তাঁর সম্ভোগ আর দুর্ভোগের রোমহর্ষক বৃত্তান্ত। অহিভূষণ মালিককে সংযত থাকতে হয়েছে, তথ্যনিষ্ঠ থাকতে হয়েছে, সেইসঙ্গে শিল্পের ভাষায় লিখতে হয়েছে শিল্পের কথা, শিল্পীর আখ্যান। যেমন, তাহিতি দ্বীপে ছবি অাঁকা প্রসঙ্গে : গগ্যাঁ ছবি অাঁকতে শুরু করেছে, তেহুরা তার মডেল। সৃষ্টি হলো ‘তাহিতিয়েন’, ‘রেভেয়ারি’, ‘বহিন ন তে তেয়ারি’ ইত্যাদি। মারডিনিকের ছবির সঙ্গে এসব ছবির আসমান-জমিন ফারাক। গগ্যাঁর নিজেরও ধারণা, এত ভালো ছবি সে আগে কখনো অাঁকেনি। ব্রিতানির বরফ-ঢাকা পাথুরে ল্যান্ডস্কেপের পর তাহিতির এত রং, এত আলো দেখে প্রথম দিকে তার চোখ গিয়েছিল ঝলসে। এখন সে ধাতস্থ, বেপরোয়া রং চাপিয়ে যায় ক্যানভাসে, ক্রোম হলুদ,
সোনালি, সিঁদুরে লাল, ভেরোনিজ গ্রিন, পার্পল, কমলা, প্রুসিয়ান নীল, যা সামনে পায় তা-ই। এগারো মাসে সে এঁকে ফেলল চুয়াল্লিশটি বড় বড় ছবি।’ কিংবা স্থানীয় ভাষা ‘কানাকা’ গগ্যাঁ বেশ রপ্ত করে নিয়েছে, ‘ছবির নামকরণও হয় তাই ‘কানাকা’য়। মাথায় বেরে, মুখে পাইপ, আদুল গা, খালি পা, ক্যানভাসের তৈরি পাতলুন – এই সাজে ফরাসি সমকালীন শিল্পীদের অন্যতম পল গগ্যাঁ তাহিতির মাতাইয়া গ্রামে খাড়া রোদ্দুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি এঁকে চলে, পাশে চুপটি করে বসে থাকে তেহুরা। তেহুরার সঙ্গে বাজি ফেলে সে সাঁতরে আসে সমুদ্রের জলে আধমাইলেরও বেশি। রাত্রে পড়শিরা গান করে নিজের নিজের বাসায়। গগ্যাঁ দাওয়ায় বসে গিটার বাজায়, কখনো ফরাসি সুরে, কখনো বা কানাকান সুরে। গ্রামে কোনো উৎসব হলে, গগ্যাঁ সেখানে থাকবেই; পাড়ার মেয়েরা তাঁর সঙ্গে নাচার জন্য ব্যগ্র। বাস্তবিকই খুব শান্তির জীবন চলেছে গগ্যাঁর। এভাবেই সে ইচ্ছে করলে নির্বিবাদে সারা জীবনটা কাটিয়ে যেতে পারত; কিন্তু তার ঠিকুজির লেখন অন্যরকম।’
গগ্যাঁর জীবনী শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনচর্যার মধ্যে আটকে থাকেনি; সেরকম হলে সেটা হতো খন্ডিত, নেহাত নাটকীয় এবং একটু রূঢ় করে বললে, অর্থহীন। কেন গগ্যাঁর শিল্পভাবনা সমকালীনদের থেকে আলাদা, বন্ধু শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর কোথায় ঐক্য, কোথায় অনৈক্য, তাঁদের তীক্ষ্ণ তর্কযুদ্ধ, ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার ঠেক, কোন হোটেল বা সরাইখানায় কেমন আপ্যায়ন, কোন হোটেলের মালিক ছবির বিনিময়ে ঘর দেয়, খাবার দেয়, প্রতিষ্ঠানের কূপমন্ডূকতা, শিল্প-সমালোচকদের দৃষ্টির ক্ষীণতা – সবই এসেছে এই জীবনীগ্রন্থে, যা না থাকলে গগ্যাঁর হয়ে-ওঠা বোঝা কঠিন ছিল। আর আছে, দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর আর্লে ভ্যান গঘের সান্নিধ্যে গগ্যাঁর থাকার কথা। ১৮৮৮-র ২০ ফেব্রুয়ারি গগ্যাঁ আর্লে যান। তাঁরা নয় সপ্তাহ একসঙ্গে কাজ করেন। দুটি অপ্রীতিকর ঘটনার পর গগ্যাঁ চলে আসেন ২৩ ডিসেম্বর। এঁদের সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত, কিন্তু গভীর, এবং আজো পুরোপুরি অব্যাখ্যাত।
গগ্যাঁ মারা যান হিভা হোয়ায়। আতুয়ানা গ্রামের কুঁড়েঘরে, নিঃসঙ্গ অবস্থায়। খাটের পেছনে রাখা ছিল তাঁর শেষ ছবি, ‘ব্রিতানিতে তুষারপাত’। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাহিতির রাজ্যপালের কাছে শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার সম্পর্কে লিখেছিলেন, এক আদিবাসী রমণী বারোজনের বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ পেশ করে, বিচারক তাকে নিভৃতে ডেকে তেরো নম্বর আসামি হয়ে পড়েন – এমন ঘটনা মারকেশাসে হামেশাই ঘটে থাকে। রাজ্যপাল ভেবেছে গগ্যাঁ পাগল! আর মেৎ ভেবেছিল, নচ্ছাড়, স্বার্থপর। গগ্যাঁর শিল্পকর্ম যখন তাঁর হাতে হাজার হাজার ফ্রাঁ এনে দিতে থাকল, মেৎ কি চিনতে পেরেছিল স্বামীকে?
বইটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭২-এ। চল্লিশ বছর পর আবার। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বইয়ে ভালো ছাপা কিছু ছবি দেওয়া যেত না? কেন এই কার্পণ্য!
 মধুময় পাল

 

Leave a Reply