স্মৃতির আঁকিবুকি
সনৎ কর
প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
মূল্য : ২৫০ টাকা
শিল্পী সনৎ কর কলাভবন-বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ এবং বর্তমানে ‘প্রফেসর এমিরেটাস’ – বিশ্বভারতী। তিনি ভারতের সমকালের চিত্র প্রয়াসের এক অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। ভারতীয় ছাপচিত্রের ক্ষেত্রে নানা নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবক হিসেবেও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। তাঁর যে-কোনো সৃজন, তা যে-কোনো মাধ্যমেই হোক না কেন, শিল্পিত জ্ঞানে নবীন মাত্রা সংযোজন করে। কলকাতার আনন্দ প্রকাশনালয় থেকে তাঁর একটি স্মৃতিকথা স্মৃতির অাঁকিবুকি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি এক অর্থে অসাধারণ। এই গ্রন্থটিতে শিল্পীর শৈশব, যৌবন, আত্মপ্রতিষ্ঠার বর্ণময় জীবনকে খুবই সরল অথচ স্বাদু গদ্যে বর্ণনা করা হয়েছে।
শিল্পী হয়ে ওঠার সংগ্রাম যে কত বর্ণিল, লেখক তা ছোট ছোট পরিসর নিয়ে খুবই হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বর্ণনা করেছেন। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর্বে সনৎ করকে কতভাবেই না সংগ্রাম করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠার জন্য কত সাধারণ অবস্থা থেকে তিনি সৃজনধর্মিতার গুণে এবং অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে হয়ে উঠেছেন সমকালীন চিত্রকলায় এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। সেজন্য তাঁকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে নানাভাবে সংগ্রাম করে। প্রথম জীবনে আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্য ছিল। শিল্পী হওয়ার বাসনা এবং সৃজনের অনল – আর্থিক কষ্ট তাঁকে নিরন্তর চিত্রচর্চা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
২১৪ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে শিল্পীর শৈশব-কৈশোরের সময়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আবহের কথা আছে। সেইসঙ্গে উঠে এসেছে পারিবারিক আবহের কথা। পরবর্তীকালে স্কুলজীবন এবং সেইসঙ্গে শিল্পশিক্ষার প্রসঙ্গ।
এই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিয়ে তিনি পাঠককে নিয়ে যান বৃহত্তর শিল্পের ভুবনে। চল্লিশের ও পঞ্চাশের দশকের শিল্প আবহ ও পরিবর্তমান শিল্প আন্দোলন তাঁকে কীভাবে শিল্পী করে তুলেছিল সে-কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন এই গ্রন্থে। প্রথম জীবনে একটি স্কুলে শিক্ষকতাকালে তাঁর পরিপাশর্ব ও জীবনকে তিনি খুবই আগ্রহভরে প্রত্যক্ষ করেছেন। এখানে মহৎ হৃদয় এক শিক্ষকের কথা আছে। আছে আনন্দ ও বেদনার কথা।
পরবর্তীকালে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি ভারতীয় ছাপচিত্রে নব মাত্রা সংযোজন করেন একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে। জীবনের এ পর্যায়ে থিতু হন শান্তিনিকেতনে এসে। শান্তিনিকেতনের উদার ঐশ্বর্য তাঁকে আরো সৃজনশীল করে তোলে এবং পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে উৎকর্ষে ও বিষয়ে হয়ে ওঠেন ভারতীয় সমকালীন চিত্র আন্দোলনের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
আত্মপ্রতিকৃতি : স্মৃতির মানচিত্র
সৈয়দ জাহাঙ্গীর
প্রকাশক : বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড
মূল্য : ৪৭৫ টাকা
সৈয়দ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে তাঁর সৃজন অভিযাত্রা। বৈচিত্র্যে এবং বিপুলতায় তাঁর সৃষ্টি বাংলাদেশের চিত্রকলা প্রয়াসে খুবই উজ্জ্বল হয়ে আছে। আত্মপ্রতিকৃতি : স্মৃতির মানচিত্রে শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁর সৃজন ও বন্ধুবৃত্তের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে পারিবারিক পরিমন্ডল, শৈশব স্মৃতি, জীবনে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং শিল্পীর প্রত্যয় ও দৃঢ়তার ছবি একটি মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হয়েছে এই গ্রন্থে।
তাঁর সৃজন, তাঁর ভুবন
পঞ্চাশের দশকে যেসব শিল্পীর আবির্ভাব বাংলাদেশের চিত্রকলার ধারাকে সমৃদ্ধ করেছিল, সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁদের অন্যতম। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরপরই লক্ষ করা যায় তাঁর কাজে সমকালীন মার্কিন চিত্রকলার প্রভাব – আমাদের শিল্পক্ষেত্রে তা তৃপ্তিকর বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে। তিনি বহু মাধ্যমে কাজ করেছেন, তবে তেলরঙের প্রতি যেন তাঁর পক্ষপাত। দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রকাশ করা সত্ত্বেও তাঁর ঝোঁক বিমূর্ত রীতির ছবির দিকে। রং ও আকার, জমিন ও আলোর নানারকম
ঘাত-প্রতিঘাত-অবস্থান নিয়ে জাহাঙ্গীর নির্মাণ করেন তাঁর ছবি। তাতে যদি বক্তব্য থাকে শিল্পীর, তবে তা বুঝে নিতে হয় যত্ন করে। বক্তব্যকে তিনি প্রাধান্য দেননি, প্রাধান্য দিয়েছেন সৃষ্টির আননদকে।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর পৃথিবীর বহু দেশে একক প্রদর্শনী করেছেন এবং অংশ নিয়েছেন বহু যৌথ প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী-আয়োজিত জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে পুরস্কার লাভ করেছেন, পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক। অবসরজীবনে ছবি এঁকে চলেছেন। তাঁর সৃজনে আধাবিমূর্ত কাজ যেমন আছে, তেমনি আছে বাস্তব ধারার কাজ। এই কাজের বৃহৎ অংশ জুড়ে আছে নদী, নৌকা, বীজবপন ও নিসর্গ। রং, রেখা ও অবয়ব গঠনের সূক্ষ্ম সৃজনী উৎকর্ষ করে তুলেছে তাঁকে বিশিষ্ট।