সা গ র চৌ ধু রী
প্রাচ্য বা প্রাচ্যজগৎ (The East, The Orient) – ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও আজকের তুরস্ক, গ্রিস, নিকট ও মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা যার অন্তর্গত – ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনার কয়েকশো বছর আগে থেকেই পাশ্চাত্যের চিত্রশিল্পীদের কল্পনাকে মোহিত করে রেখেছিল। ‘রেনেসাঁ’ (Rennaisance), অর্থাৎ ইয়োরোপে শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে নবজাগরণের যুগে ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পীর অাঁকা বেশকিছু ছবিতে মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকারে সজ্জিত নারী-পুরুষদের দেখা যায়। এই শিল্পীদের মধ্যে যাঁদের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন ইতালীয় শিল্পী গিয়োভান্নি বেলিনি (Giovanni Bellini, ১৪৩০-১৫১৬), তাঁর উত্তরসূরি পাওলো ভেরোনিজ (Paolo Veronese, ১৫২৮-৮৮) এবং প্রখ্যাত ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট (Rembrandt Harmenszoon van Rijn, ১৬০৬-৬৯)। এঁদের এবং সমসাময়িক অন্যদের অাঁকা ছবিতে মুসলমান শাসকদের হারেমের যেসব দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে তাদের বিলাসবহুল ও সুস্পষ্ট যৌন ইঙ্গিতবাহী চরিত্রের উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছিল তৎকালীন ফরাসি ‘রোকোকো’ নন্দনতাত্ত্বিক শিল্পভাবনার (French Rococo Aesthetic) ওপরে। ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত ফরাসি শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্র এই ভাবনার দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এই সময় পর্যন্ত অবশ্য প্রাচ্যের সঙ্গে ইয়োরোপের অধিবাসীদের যোগাযোগ ছিল নামমাত্র, যেটুকু ছিল তার মাধ্যম ছিল প্রধানত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অনিয়মিত সামরিক অভিযান। ১৭৯৮ সালে ‘জেনারেল’ নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নেতৃত্বে (তখনো নেপোলিয়ন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মাত্র, তিনি নিজেকে ‘সম্রাট’ ঘোষণা করেন ১৮০৪ সালে) ফরাসি বাহিনী মিশরে অভিযান চালায় এবং ফ্রান্স ওই দেশটি ১৮০১ সাল পর্যন্ত নিজের দখলে রাখে। মিশরে ফরাসিদের উপস্থিতি বহু পাশ্চাত্য পর্যটককে নিকট ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে, যাদের অনেকেই নিজেদের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছে কিংবা লিখিত বিবরণে প্রকাশ করে গেছে। এই সমস্ত চিত্র ও লিখিত বিবরণ একত্রিত করে ফরাসি সরকার Description de l’Egypte নামে চবিবশ খন্ডের এক সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করে, প্রথম খন্ডটি প্রকাশিত হয় ১৮০৯ সালে এবং সর্বশেষটি ১৮২২ সালে। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে মিশরের ভূপ্রকৃতি ও বিভিন্ন স্থান বা এলাকার বর্ণনা, স্থাপত্যশিল্প, স্মৃতিসৌধ, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবন, জনসংখ্যার বিবরণ এবং আরো নানা বিষয়। এই অঞ্চলের জীবন ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে ওই সময়ে, এবং তারও পরে রচিত আরো বহু গ্রন্থের মধ্যে এই Description de l’Egypte সম্ভবত সবচেয়ে প্রামাণ্য দলিল। সে-যুগের ফরাসি স্থাপত্যশিল্পের এবং আলংকারিক শিল্পের নিদর্শনে মিশরীয় ‘মোটিফ’ বা উপাদানের প্রাধান্য থেকে এটা স্পষ্ট যে সমগ্র ফরাসি সাম্রাজ্যের ওপরই এই গ্রন্থের গভীর প্রভাব পড়েছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অাঁকা কিছু Orientalist বা প্রাচ্যজাগতিক চিত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের সপক্ষে প্রচার ও তার সমর্থন। এইসব শিল্পকর্মে East বা প্রাচ্যকে দেখানো হয়েছে সভ্যতার সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত পশ্চাৎপদ, আইনকানুনবিহীন, বর্বর অঞ্চল হিসেবে, যাকে আলোকিত ও সুসভ্য করে তুলতে পারে একমাত্র ফরাসি শাসন। ইয়োরোপের ‘নিও-ক্লাসিক্যাল’ ঘরানার প্রভাবশালী চিত্রশিল্পী জাক লুই ডেভিডের (Jacques Louis David, ১৭৪৮-১৮২৫) একজন ছাত্র এবং নেপোলিয়নের দ্বারা নিযুক্ত ইতিহাস-চিত্রশিল্পী অাঁতোয়ান-জাঁ গ্রস (Antoine-Jean Gros, ১৭৭১-১৮৩৫) কোনোদিনই নিকট প্রাচ্যের কোথাও ভ্রমণ করেননি। তাঁর অাঁকা ছবিতে ওইসব অঞ্চলে ফরাসি শাসনের যে গরিমা প্রতিফলিত তা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই কল্পনাপ্রসূত। প্যারিসের ‘লুভ্যর’ প্রদর্শশালায় (Muse’e du Louvre) সংরক্ষিত গ্রসের একটি ছবির নাম Napoleon in the Plague House at Jaffa (জাফায় প্লেগাক্রান্ত ভবনে নেপোলিয়ন)। ১৮০৪ সালে অাঁকা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রাচ্যের স্থাপত্যশিল্পের আদলে নির্মিত একটি ভবন এবং তথাকথিত পূর্বদেশীয় পোশাক-পরিচ্ছদ পরিহিত কয়েকজন লোক। মুখ্যত প্রচারধর্মী এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেন জেনারেল (তখনো পর্যন্ত) নেপোলিয়ন, যিনি ফরাসি সেনাদের দ্বারা ইজরায়েলের জাফা শহর অবরোধের সময় ওই ভবনে আটক প্লেগ রোগে আক্রান্ত বন্দিদের দেখতে গেছেন। সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতার ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাজা বা সম্রাটের স্পর্শের মাধ্যমে রোগক্লিষ্ট মানুষদের যন্ত্রণা লাঘবের ঐশ্বরিক শক্তিকে মিশিয়ে গ্রসের অাঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে নেপোলিয়ন একজন রুগ্ণ বন্দিকে স্পর্শ করছেন এবং ওই বন্দির মুখ-চোখ অবিশ্বাস্য আনন্দে উদ্ভাসিত। ইউজিন দেলাক্রোয়ার (Euge’ne Delacroix, ১৭৯৮-১৮৬৩) মতো ‘রোমান্টিক’ আন্দোলনের প্রবক্তারাও তাঁদের অাঁকা ছবিতে প্রাচ্যদেশীয় লোকজনকে এমনভাবে উপস্থাপিত করেছেন যে সহিংসতা ও হিংস্রতা যেন তাদের সকলেরই মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। ‘লুভ্যর’ প্রদর্শশালায় সংরক্ষিত দেলাক্রোয়ার দুটি ছবির – ১৮২৪ সালে অাঁকা Massacre at Chios (‘চিয়স’ বা ‘কিয়স’-এর হত্যালীলা) এবং ১৮২৮ সালে অাঁকা Death of Sardanapalus (সারডানাপালুসের মৃত্যু) – বিষয়বস্ত্ত হলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ধ্বংসলীলা, মানুষের অপরিসীম দুঃখকষ্ট, অপ্রতিরোধ্য সহিংসতা এবং চরম মানসিক যন্ত্রণা। প্রাচ্যদেশীয় বহু বিষয়েই পাশ্চাত্য চিত্রশিল্পীরা যেভাবে সামরিক বাহিনীর পাশবিকতাকে অত্যন্ত প্রকটভাবে দেখিয়েছেন তার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে গোটা শতাব্দী ধরে অব্যাহত সংঘর্ষ, নির্বিচার হত্যাকান্ড – গ্রিসের স্বাধীনতাসংগ্রাম (১৮২১-৩০), ১৮৩০-এর দশকে ফরাসিদের দ্বারা আলজেরিয়া অধিকার এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৩-৫৬)।
যদিও বহু ইয়োরোপবাসী নিকট প্রাচ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকাশিত ভ্রমণকাহিনি এবং Description de l’Egypte-এর মতো কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুমোদিত প্রামাণ্য গ্রন্থের ওপরই নির্ভর করে থাকত, দেলাক্রোয়া, জাঁ-লিয়ঁ জেরোমে (Jean-Leon Ge’rôme, ১৮২৪-১৯০৪), থিয়োডোর চ্যাসেরিয়াউ (The’odore Chasse’riau, ১৮১৯-৫৬), অ্যালেকজান্দ্রে-গ্যাব্রিয়েল ডিক্যাম্পস (Alexandre-Gabriel Decamps, ১৮০৩-৬০), উইলিয়াম হলম্যান হান্ট (William Holman Hunt, ১৮২৭-১৯০৭) প্রমুখ চিত্রশিল্পী কিন্তু নিজেরাই ওইসব অঞ্চলে এক বা একাধিকবার ভ্রমণ করেছিলেন। আঞ্চলিক স্টাইল অনুসরণ করে ছবি অাঁকা ঊনবিংশ শতাব্দীর একটা প্রচলিত ধারা হয়ে উঠেছিল, এবং নিকট প্রাচ্যের শহর ও জনপদগুলির দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে শিল্পীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এই অঙ্কনশৈলীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করত। তুর্কি পেশাদার বা ভাড়াটে সৈনিকদের নিয়মিত কাজকর্ম কিংবা অবসরযাপনের ধরন জেরোমের বহু ছবিতে চিত্রিত হয়েছে। চার্লস বার্গের (Charles Bargue, ১৮২৫-৮৩) একটা ক্যানভাসেরও বিষয়বস্ত্ত bashi-bazouk নামে পরিচিত এই সৈনিকরা। ডিক্যাম্পস তাঁর শিল্পীজীবনের মাঝামাঝি একটা সময়ে বছরখানেক (১৮২৮-২৯) কাটিয়েছিলেন এশিয়া মাইনর, অর্থাৎ পশ্চিম এশিয়ার কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী উপদ্বীপ অঞ্চলে, এবং তাঁর ওই সময়কার অনেক ছবিতে সামরিক জীবনের যে প্রতিফলন ঘটেছে তাকে নিশ্চয়ই ঐতিহাসিক চিত্রমালা আখ্যা দেওয়া যায়। এসব ছাড়াও এই শিল্পীরা এবং তাঁদের সমসাময়িক অন্য শিল্পীরা, শান্তস্নিগ্ধ সাংসারিক জীবনের, মায়ের কোলে নবজাত শিশুর ছবিও এঁকেছেন, যেমন চ্যাসেরিয়াউয়ের Scene in the Jewish Quarter of Constantine, আর জেরোমের Prayer in the Mosque ছবিতে দেখা যায় ধর্মবিশ্বাস ও ভক্তির প্রতিফলন।
নিকট প্রাচ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে খ্রিষ্টান বিষয়বস্ত্তসম্পন্ন ধর্মীয় শিল্পকর্মের পটভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি ছিল ব্রিটিশ শিল্পীদের বিশেষ পছন্দের, যেহেতু ‘ওরিয়েন্টালিস্ট স্টাইল’ বা প্রাচ্যজাগতিক অঙ্কনশৈলীর সূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাত্মক ভঙ্গির মাধ্যমে ধর্মীয় শিল্পকর্মে দেবদেবীদের প্রতিকৃতি যথাসম্ভব নিখুঁত করে অাঁকার এবং প্রকৃতির প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রক্রিয়া তৎকালীন প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ছিল।
১৮৫০-এর দশকে তাঁর ফিলিস্তিন (প্যালেস্টাইন) প্রবাসের সময় উইলিয়াম হলম্যান হান্ট যেসব ছবি এঁকেছিলেন তাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি সুস্পষ্ট। তাঁর অাঁকা The Finding of Christ in the Temple (১৮৬০ : বার্মিংহাম মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্ট গ্যালারিতে সংরক্ষিত) নামের ছবিটির পটভূমি প্রাচ্যজাগতিক, এবং তাঁর The Scapegoat (১৮৫৫ : লেডি লিভার আর্ট গ্যালারি, পোর্ট সানলাইট, লিভারপুল) নামের ছবিটির বিষয়বস্ত্ত হলো ফিলিস্তিনীয় পটভূমিতে অাঁকা একটি খ্রিষ্টান allegory বা রূপক কাহিনি।
প্রাচ্যজাগতিক পটভূমিতে অঙ্কিত এবং শিল্পকলারসিক
দর্শক-সমালোচকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, বেশকিছু ছবির দৃশ্যপট ধনী, অভিজাত মুসলমানদের ব্যক্তিগত হারেম। মুসলমান বাড়ির অন্তঃপুর বা জেনানা-মহলে তাঁদের প্রবেশাধিকার ছিল না বলেই ওইসব জায়গার বর্ণনা পাওয়ার জন্য পুরুষ ইয়োরোপীয় শিল্পীদের নির্ভর করতে হতো প্রধানত গুজব-গালগল্প ও নিজেদের কল্পনাশক্তির ওপরে। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁদের অাঁকা ছবিতে দেখা যায় বিলাসবহুল বর্ণাঢ্য অন্দরমহল, সুন্দরী পরিচারিকা ও দাসী-বাঁদীদের, কিংবা রত্নখচিত অলংকারে ও মহার্ঘ বসনে সুসজ্জিতা রক্ষিতাদের, যাদের অনেকেরই চেহারা সুস্পষ্টভাবে পাশ্চাত্য। কারণ শিল্পীরা কেউই চর্মচক্ষে পর্দানশিন মুসলমান নারীদের দেখেননি। যেমন জাঁ-অগাস্ত ডমিনিক ইনগ্রেস (Jean-Auguste Dominique Ingres, ১৭৮০-১৮৬৭), কোনোদিনই নিকট বা মধ্য কোনো প্রাচ্যেই ভ্রমণ করেননি, কিন্তু তাঁর অনেক ছবিতে চিত্রিত হয়েছে সুন্দরী, লাস্যময়ী হারেমবাসিনীরা। তাছাড়া পাশ্চাত্যের সর্বশ্রেণিভুক্ত বহু লোকের মনেই ছিল বেহেশতের হুর-পরিদের মতো রূপসী, অনন্তযৌবনা নারীদের সঙ্গলাভের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা, শিল্পীরাও হয়তো ব্যতিক্রম ছিলেন না।
প্রাচ্যের নারীরা ছাড়াও ওইসব অঞ্চলের স্থাপত্যের ডিজাইন বা নকশা, আসবাবপত্র, কারুকার্যখচিত তৈজসপত্র এবং বস্ত্রও পাশ্চাত্যের লোকজনের রুচিকে আকর্ষণ করত, যার দরুন একটা সময়ে ইয়োরোপে এইসব জিনিসের আদলে তৈরি ঘরবাড়ি ও অন্যান্য বস্ত্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। গ্রেট ব্রিটেনের Aesthetic বা নন্দনতাত্ত্বিক আন্দোলনের (১৮৬০ সালে যার শুরু, চলে ১৮৮০-র দশকের শেষভাগ পর্যন্ত) প্রবক্তারা বলতেন, সৌন্দর্যের কদর করতে হবে তার নিজেরই জন্য – Beauty for Beauty’s sake – এবং কোনো শিল্পকর্মের form বা ‘রূপ’ তার content বা ‘বিষয়বস্ত্তর’ চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রাচ্যদেশীয় ঘরবাড়িগুলির অভ্যন্তরীণ চরিত্র, সাজসজ্জা তাঁদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছিল। ব্রিটিশ শিল্পী ফ্রেডেরিক লেইটন (Frederic Leighton, ১৮৩০-৯৬) প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে একাধিকবার ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর লন্ডনের বাড়ির Arab Hall বা ‘আরব কক্ষের’ মেঝে ও দেয়াল আবৃত ওইসব দেশ থেকে নিয়ে আসা বহু বর্ণরঞ্জিত উজ্জ্বল মোজাইক টালি দিয়ে। এই ঘরটির সাজসজ্জা সে যুগের শিল্পীদের রুচির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রাচ্যজাগতিক ধ্যানধারণা ও চিত্রকল্পের শক্তিশালিতা বিংশ শতাব্দীতেও অক্ষুণ্ণ থেকেছে এবং অনেক বিখ্যাত শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছে। অগাস্ট রেনোয়া (Auguste Renoir), অঁরি মাতিস (Henri Matisse), পল ক্লি (Paul Klee), ভাসিলি ক্যানডিনস্কি (Vasily Kandinski), অগাস্ট ম্যাকি (August Macke), অস্কার কোকোসচকা (Oskar Kokoschka) এঁরা সকলেই ‘ওরিয়েন্টাল’ বিষয়বস্ত্ত অবলম্বনে ছবি এঁকেছেন। n