logo

আর্টিস্ট রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎকার

সু শো ভ ন  অ ধি কা রী

মহাসমারোহে ১৯৩০ সালের ২ মে তারিখে, প্যারিসের গ্যালারি পিগালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু হলো। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, দ্রুততার মধ্যে এই আয়োজন করা বড় সহজ ছিল না। রথীন্দ্রনাথ এবং তাঁদের বন্ধু ফরাসি-শিল্পী আঁদ্রে কার্পলেসের পক্ষেও এই একজিবিশনের ব্যবস্থা এমন স্বল্পসময়ের মধ্যে করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো প্যারিসে পৌঁছে প্রায় ম্যাজিকের মতো সমস্ত আয়োজন করে ফেললেন। আর সে যেমন তেমনভাবে নয়, সমস্ত কিছু অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ আভিজাত্যের সঙ্গে। বিদুষী ওকাম্পোর সঙ্গে প্যারিসের শিল্পী-সাহিত্যিক মহলের ছিল প্রগাঢ় সম্পর্ক, তার ফলেই এসব সম্ভব হতে পারল। শুধু তাই নয়, তিনি না থাকলে কবির ছবি প্যারিসের বিদগ্ধজনের চোখেও সেভাবে পড়ত কি না সন্দেহ! আবার গ্যালারি পিগাল্ ছিল তিরিশের দশকের একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন আর্ট গ্যালারি – যা সম্ভবত একটি থিয়েটারের সঙ্গে সংযুক্ত। রবীন্দ্রনাথের আগে এই গ্যালারিতে তখন কিংবদন্তি চিত্রী সেজান, সারডিন প্রমুখ আর্টিস্টের একজিবিশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নিগ্রো-আর্টের তিনটি প্রদর্শনী সেখানে এর আগে হয়েছিল। অর্থাৎ শিল্পীদের নাম ও প্রদর্শিত সামগ্রীর বিবরণ থেকে গ্যালারিটির মান সম্পর্কে একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। এখন অবশ্য এই গ্যালারি আর নেই, মালিকানার হাতবদলের ফলে দীর্ঘদিন এটি লুপ্ত হয়েছে। যদিও আমাদের মনে এখনো ‘গ্যালারি পিগাল্’ বলতেই ভেসে ওঠে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ছবি প্রদর্শনের প্রসঙ্গ। ভেসে ওঠে একজিবিশন হলে দুধসাদা সিল্কের জোববায় শোভিত রবীন্দ্রনাথকে ওকাম্পোর পাশের চেয়ারে উপবিষ্ট অবস্থায়। কিন্তু সে-কথা এখন থাক। পুরনো কথায় ফিরে আসি। একজিবিশনের ব্যাপারে ওকাম্পোর আয়োজনে কোথাও কোনো ত্রুটি ছিল না। চিত্র-প্রদর্শনীর ক্যাটালগ ছাপা হয়েছিল যত্ন করে, সেখানে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন অ্যানা দ্য নোয়াই। একজিবিশনের আগে ছবি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন প্যারিসের আধুনিক যুগের অন্যতম তরুণ শিল্পী অাঁদ্রে লোত্, যাঁকে কেউ কেউ আধুনিক কিউবিজমের অন্যতম প্রবক্তা বলে মানেন। এবং পরবর্তীকালে এই ফরাসি শিল্পী অাঁদ্রে লোত্ ছিলেন ভারতের প্রথিতযশা শিল্পী রামকুমার বা পরিতোষ সেনের শিক্ষক। রামকুমার বা পরিতোষ সেন যখন চিত্রচর্চার জন্য বৃত্তি নিয়ে প্যারিসে গিয়েছিলেন, সেই পর্বে তাঁরা উভয়েই শিল্পী অাঁদ্রে লোতের কাছে ছবির পাঠ গ্রহণ করেছিলেন।

প্যারিসে প্রদর্শনীর সাফল্য যে শিল্পী রবীন্দ্রনাথকে প্রত্যয়ী করে তুলেছিল – এ কথা একেবারে নিশ্চিত করেই বলা যায়। একজিবিশনের পরে চিঠিতে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ইন্দিরা দেবীকে লিখেছিলেন – ‘ফ্রান্সের মত কড়া হাকিমের দরবারেও শিরোপা মিলেছে – কিছুমাত্র কার্পণ্য করেনি।’ অর্থাৎ শিল্পকলার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের মতো কড়া হাকিমের দেশকে নিয়ে তাঁর মনেও একটা সংশয় ছিল। আর সেইটা পেরিয়ে আসা কবির কাছে ছিল একটা বড় পরীক্ষার শামিল – যে পরীক্ষায় তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রজীবনের এই পর্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্যারিসের পর ছবির সম্ভার নিয়ে তিনি চলেছেন বার্মিংহাম, লন্ডন, বার্লিন, ড্রেসডেন, ম্যুনিখ, ডেনমার্ক ও জেনিভায়। সেসব জায়গায় চলেছে তাঁর ছবির প্রদর্শনী। এরপর জেনিভায় বেশ কয়েকদিন কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ মস্কোতে এসে পৌঁছেছেন সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ। এখানে তাঁর সঙ্গে আছেন নাতি সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রয়েছেন তাঁর দুজন সচিব – উইলিয়ম আরিয়ম ও কবি অমিয় চক্রবর্তী, চিকিৎসক হ্যারি টিম্বার্স এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের কন্যা মার্গারিটা আইনস্টাইন। পরদিন অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রুশ ফেডারেটিভ প্রজাতন্ত্রের সোভিয়েত লেখকমন্ডলীর যুক্ত-সঙ্ঘের ক্লাবে রবীন্দ্রনাথের আলাপ হয় মস্কোর বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, সংগীত ও নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে। পরের দিনেই তাঁর অাঁকা ছবি ও স্কেচ একত্রিত করে ফাইন-আর্টস বিভাগের মিউজিয়মের ডিরেক্টর ম.প. ক্রিস্তি ও ফাইন আর্টের অধ্যাপক আ সিদোরভ আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে প্রদর্শন করেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই মুহূর্তে মস্কোতে তাঁর একটি চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজনের ব্যাপারে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে যায়। প্রদর্শনী উদ্বোধনের দিন ধার্য হয় ১৭ সেপ্টেম্বর, স্থান নতুন পশ্চিমি শিল্পকলার মিউজিয়ম, সময় বেলা তিনটেয়।

উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে, ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে মস্কোর শিল্পী ও কলা সমালোচকদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিত্রকলা বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করেন। ওদেশের শিল্পী ও আর্ট-ক্রিটিকদের সঙ্গে সেই কথাবার্তা রাশিয়ান ভাষায় একটি রিপোর্টের আকারে ধরা আছে। প্রশ্নোত্তরের আকারে ধৃত সেই রিপোর্ট অনুসারে বাংলায় অনূদিত স্বল্প-প্রচারিত এই অংশটি এখানে তুলে দেওয়া হলো। একটি সাক্ষাৎকারের ভঙ্গিতে দোভাষীর মাধ্যমে এটি গ্রহণ করা হয়েছিল। চিত্রী রবীন্দ্রনাথের ছবি-ভাবনা ও নিজের অাঁকা ছবির বিষয়ে এমন কিছু কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা কবিকণ্ঠেই এখানে ধরা পড়েছে – যা আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

এখানে আর একটা ছোট্ট কথা সেরে নিতে চাই। মস্কোতে থাকাকালীন তাঁর চিত্র-প্রদর্শনী উদ্বোধনের আগে ও পরে বেশ কতকগুলো ছবি এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই চিত্রমালার মধ্যে প্রায় দশ-বারোটি ছবি বিশ্বভারতীয় রবীন্দ্রভবন সংগ্রহে রক্ষিত আছে। সেদিকে একটু ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই ছবিগুলোর রং-রেখার বৈশিষ্ট্য ও আকারের জ্যামিতি, ফিগার বা অ্যানিম্যাল-মোটিফ যেন একটু স্বতন্ত্র। এবং এখানে তাঁর কালার-প্যালেটও এই পর্বের অন্যান্য ছবির থেকে বেশ আলাদা। মস্কোয় অাঁকা প্রায় সব ছবিতে তিনি এক ধরনের দ্যুতিময় বেগনি রং – ইংরেজিতে যাকে বলতে পারি, মভ্ বা ম্যাজেন্টা রঙের একটা আশ্চর্য টোন ব্যবহার করেছেন, যা অন্যত্র তাঁর ছবিতে সেভাবে ধরা পড়ে না।

এবারে আর্টিস্ট রবীন্দ্রনাথের সেই সাক্ষাৎকারের দিকে একটু চোখ ফেরানো যাক।

রবীন্দ্রনাথ : আমার প্রতি আপনাদের সংবর্ধনা আর প্রশংসাবাক্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। জাতিতে জাতিতে সংযোগের শ্রেষ্ঠ উপায় হলো হৃদয় ও মনের যোগ – আমার দেশের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তাতে আপনাদের দেশেরও অধিকার, আপনাদের শ্রেষ্ঠ যা তাতে অধিকার সারা মানবজাতির। তাই দান-প্রতিদানের প্রকৃত ক্ষেত্র সংস্কৃতি। আমার সৃষ্টির এই নতুনতম প্রকাশের ফল আপনাদের আমি সানন্দেই দেখাব।

এ এসেছে একেবারেই হঠাৎ, কোনো শিক্ষা বা প্রস্ত্ততি ছাড়াই। তাই মনে করি, এর মনস্তাত্ত্বিক মূল্য আছে। অবশ্য ইওরোপের অন্যান্য দেশে, যাঁরা শিল্প ও শিল্পকীর্তি সম্বন্ধে খুবই সমালোচক তাঁরা আমায় আশ্বাস দিয়েছেন যে আমার ছবিতে নাকি শুধুমনস্তাত্ত্বিক আকর্ষণই নয় শিল্পের উচ্চতর আকর্ষণও আছে, তাঁরা আমায় শিল্পী বলে স্বীকার করেছেন, তার জন্য আমি খুবই গর্ববোধ করি।

আপনারা আমার প্রচেষ্টা সম্বন্ধে কী ভাবেন তা জানতে চাই, কারণ আপনাদের শিল্পসংক্রান্ত মতের আমি খুবই মূল্য দিই। আপনাদের কাছেও আমার ছবি দেখাতে চেয়েছি, কারণ ছবির ভিতর দিয়েই আমি আপনাদের মনের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হব। কথা দিয়ে তা হবে না, কারণ ভাষার বাধা রয়েছে। আমার ছবিরা আপনাদের সঙ্গে আলাপ করবে দোভাষীর সাহায্য ছাড়াই।

সমালোচক : এই ছবিটির আইডিয়াটা কী?

রবীন্দ্রনাথ : কোনো আইডিয়াই নেই। এ একটি ছবি। আইডিয়া থাকে কথায়, জীবনে নয়।

সমালোচক : আপনার কাজে উল্লেখযোগ্য যৌবনের উদ্দীপনা। আর সেই জন্যই এরা এত কৌতূহলোদ্দীপক। যৌবনের উদ্দীপনা তার অভিব্যক্তির প্রকৃত মাধ্যম খুঁজে পেতে কোনো বাধা অনুভব করে না আর আপনার ছবি তাদের নিজস্ব আঙ্গিক গড়ে তুলেছে। ছবিগুলো এতই চিত্তাকর্ষক যে আপনি পেশাদার শিল্পী হলেও তার আকর্ষণ কমত না। আপনি আগে কখনো ছবি এঁকেছেন?

রবীন্দ্রনাথ : কখনো না।

সমালোচক : আপনি প্রথম শ্রেণির শিল্পী। প্রতিটি নতুন ছবি মনে গভীরতর ছাপ ফেলে, দর্শকরা সবাই এ দেখে রোমাঞ্চিত। এই ছবিগুলো কখন এঁকেছিলেন তা জানতে খুবই উৎসুক।

রবীন্দ্রনাথ : এরা আগেকার। কয়েকটি পরে অাঁকা, কয়েকটি আগে। এরা প্রধানত রেখাপ্রধান, রং এসেছে পরে।

সমালোচক : কয়েকটির সঙ্গে ভ্রুবেলের ছবির খুবই মিল আছে, যার ছবি আপনি হয়তো কখনো দেখেননি?

রবীন্দ্রনাথ : কখনো দেখেছি বলে তো মনে হয় না।

সমালোচক : আপনাকে দেখাতে পারলে খুবই খুশি হব।

অন্য সমালোচক : ভারি আনন্দ হতো যদি আপনার ছবি আমরা পেতাম। তাহলে আমাদের শিল্পীর, রুশ শিল্পীর অাঁকা বলে তা প্রদর্শিত করা যেত।

সমালোচক : আপনার ছবির কোনো নাম আছে কি?

রবীন্দ্রনাথ : কোনো নামই নেই। কোনো নামের কথা ভাবতেই পারি নে। এদের কীভাবে বর্ণনা করব জানি নে।

সমালোচক : এটি কি আপনারই পোর্ট্রেট?

রবীন্দ্রনাথ : হ্যাঁ, আমারই পোর্ট্রেট। এত ছবি, আপনাদের ধৈর্যের ওপর জুলুম করছি না তো?

সমালোচক : বাকি ছবি দেখতে পেলে খুবই আনন্দিত হব।

রবীন্দ্রনাথ : তাদের দূর থেকে দেখা যাবে না।

সমালোচক : এটি কি দান্তের পোর্ট্রেট?

রবীন্দ্রনাথ : না, দান্তের পোর্ট্রেট নয়। এটা এঁকেছি জাপান থেকে আসার পথে স্টিমারে। গত বছর আমার কলম তার নিজের ইচ্ছেয় চলেছিল, তার ফলে এই যে ছবিটি দেখছেন, এটি দেখা দেয়। রংটা পেয়েছি… ফল থেকে।

সমালোচক : এটা কি কোনো বিশেষ রং?

রবীন্দ্রনাথ : না, সাধারণ ঝরনা কলমের কালি।

সমালোচক : আর এই রং?

রবীন্দ্রনাথ : এটি কালো আর লাল কালিতে অাঁকা। এগুলো আগেকার ছবি – এই যেগুলো কালো আর সাদায় আঁকা।

সমালোচক : লাল রঙে কিছু এঁকেছেন কি? না সবই কালিতে?

রবীন্দ্রনাথ : হ্যাঁ, তাই।

সমালোচক (আগের দিন অাঁকা একটি ছবির বিষয়ে) : এটা কি মস্কোর ইমপ্রেশন?

রবীন্দ্রনাথ : এটা কালই এঁকেছি। জানি না এর সঙ্গে মস্কোর কোনো সম্পর্ক আছে কি না – কে জানে, হয়তো থাকতে পারে!

দোভাষী : আমাদের আপনি এত আনন্দ দিলেন – আমরা তার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। অধ্যাপক ক্রিস্তি (ত্রেতিয়াকভ আর্ট গ্যালারির ডিরেক্টর) বলছেন – আপনাকে তিনি বহুকাল থেকেই মহাকবি বলে জানেন, এখানে এসেছিলেন এক শৌখিন শিল্পোৎসাহীর কিছু কাজ দেখতে পাবেন এই ভেবে। কিন্তু যা দেখলেন তাতে তিনি বিস্ময়াভিভূত। এই যে ছবিগুলো দেখার সৌভাগ্য তাঁর হলো তাদের বলিষ্ঠতায় তিনি আকৃষ্ট। আপনার ছবি যে সমগ্র শিল্পজগতের এক বিরাট ঘটনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তাঁর বিশ্বাস, আমরা সাংস্কৃতিক ও আর্থনীতিক জীবনের সব নতুন বিকাশকেই বিরাট মূল্য দিই বলে আমাদের শিল্পীরা আপনার কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুবই উপকৃত হবেন।

রবীন্দ্রনাথ : আপনাদের প্রশংসায় আমি খুবই আনন্দিত। বিশেষ ভালো লাগছে আপনাদের দেশের দক্ষ সমালোচক আর শিল্পীরা এ-কথা বলছেন জেনে। আমি আমার কাজকে প্রায় নিষ্প্রয়োজন বলেই মনে করতেম। একান্ত নবাগত বলে এখনো প্রশংসায় অভ্যস্ত হইনি। প্রশংসা শুনলে সবসময় ভারি খুশি হয়ে উঠি, কুণ্ঠিত লাগে কারণ নিজের কোনো মাপকাঠি নেই – শিল্প অভিজ্ঞতার ব্যাপক পটভূমি যাঁদের আছে তাঁদের ওপর ভরসা করে থাকি।

সত্যিই ভারি আনন্দ হলো – আমার কাজ তারিফ করছেন দেখে খুবই খুশি হচ্ছি।

দোভাষী : আপনার ছবিতে আমাদের উৎসাহ ও আগ্রহ প্রকাশে আমরা অত্যন্ত ব্যগ্র। কিন্তু আপনি নিশ্চয় এর মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তাই আপনাকে আর বিরক্ত করতে চাইব না। প্রদর্শনীর উদ্বোধনে ওঁরা সবাই যা ভাবছেন বলবেন। প্রদর্শনীর জন্য একটি বিশেষ ক্যাটালগ পেলে খুব বাধিত হতাম।

রবীন্দ্রনাথ : আমি তো ছবির কোনো নাম দিইনি। যদি নাম দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন তবে আপনাদেরই সেই ত্রুটি পূরণ করতে বলব। আমার নিজের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

দোভাষী : ছবির নামের কোনোই প্রয়োজন নেই। আমরা আপনার কাছ থেকে আপনার শিল্পের ব্যাখ্যা করে একটা ভূমিকা জাতের কিছু চাই।

রবীন্দ্রনাথ : তেমন একটা কিছু বোধ হয় করা আছে, ইংলন্ডেই করেছিলেম।

দোভাষী : আমরা বিশেষভাবে এই দেশের জন্যই একটা চাই আপনার ভ্রমণের স্মৃতি হিসেবে।

রবীন্দ্রনাথ : বেশ, তা করব।

দোভাষী : আপনার ছবি (ম.প. ক্রিস্তির পক্ষে) অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। তিনি যা আশা করেছিলেন তাই দেখতে পেয়েছেন। প্রদর্শনীর জন্য ছবিগুলো কীভাবে দেখানো হবে তার একটা পারম্পর্য করে দিতে আপনাকে অনুরোধ করছেন।

রবীন্দ্রনাথ : আমার মনে হয় আপনি নিজে নানা ধরন বেছে নির্দিষ্ট করে সেই অনুসারে যদি সাজান তাহলেই ভালো হয়। এদের কালপর্যায় আমার মনে নেই। এই কতগুলো অন্যদের চেয়ে আগেকার – এটুকু আমি জানি। কিন্তু অাঁকার তারিখ আমার ঠিক মনে নেই। তাই মনে হয় অাঁকার সময় অনুসারে নয়, আপনি নিজে বেছে নানা ধরন অনুসারে যদি সাজান তবেই যাঁরা দেখতে আসবেন তাঁদের সুবিধা হবে।

দোভাষী : এ-কথা শুনে (ম.প. ক্রিস্তি) আনন্দিত হয়েছেন। তিনিও এদের কালপর্যায় অনুযায়ী নয়, একমাত্র স্টাইল অনুযায়ীই সাজাতে চান।

রবীন্দ্রনাথ : আমার কাজ আমি করেছি। সাজাবার ভার এখন আপনাদের ওপর।

দোভাষী : এখানে যাঁরা আছেন তাঁরা বলছেন, অন্য শিল্পীরাও যদি আপনার মতো ভাবতেন তাহলে খুব ভালো হতো। যে আনন্দ পেলাম তার জন্য আরেকবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা বিদায় নেব।

Leave a Reply