ফা হ মি দু ল হ ক
রাশেদুল ইসলামের চতুর্থ শিশু-প্রাধান্যের চলচ্চিত্র আমার বন্ধু রাশেদ। পরিচালকের আরেকটি আগ্রহের এলাকা হলো মুক্তিযুদ্ধ। এই চলচ্চিত্রটিতে দুইয়ের সমন্বয় ঘটেছে। সমন্বয় ঘটেছিল আরেকবার, স্বল্পদৈর্ঘ্যরে শরৎ ৭১ চলচ্চিত্রে। বলা দরকার, অন্য দুই চলচ্চিত্র দীপু নাম্বার টু ও দূরত্বকে বিবেচনায় রেখে, শিশু-কিশোরদের উপযোগী নির্মিত মোরশেদুল ইসলামের চারটি চলচ্চিত্রের মধ্যে এটিই সবচেয়ে সুনির্মিত। চাকা ছাড়া মোরশেদুল ইসলামের অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যেও আমার বন্ধু রাশেদের অবস্থান থাকবে ওপরের দিকেই। ব্যবসায়িক বিবেচনায় এটি অবশ্য দীপু নাম্বার টুর ধারেকাছে যেতে পারেনি। তবে স্টার সিনেপ্লেক্সে বেশ কয়েক সপ্তাহ চলার পর চলচ্চিত্রটি এখন চলচ্চিত্র সংসদের সহায়তায়, বিকল্প পরিবেশনায় দেশের নানান প্রান্তে প্রদর্শিত হচ্ছে; তারেক মাসুদের রানওয়ে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে বিকল্প পরিবেশনা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে শুরু হয়েছে। ফলে হিসাবের খাতা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আশির দশকে বিকল্প পন্থায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো পরিবেশিত হতো, যেখানে নির্মাতারা সংসদকর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সারাদেশে ওই সব চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতেন। কিন্তু সময় পালটেছে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। কিন্তু তা কেবল রাজধানীতে, ঢাকার বাইরে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সম্ভাবনা এখনো রয়েছে।
স্বাধীন ধারায় নির্মিত চলচ্চিত্রের টেক্সটে ঢোকার আগে, টেক্সটের বাইরের এই আলোচনা ঘুরেফিরে আসেই। টেক্সটের পঠনের সময় টেক্সটের বাইরের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিলে টেক্সটকে বুঝতে সহজ হয়। ফলে আগামীর সম্ভাবনা আর চাকার চমৎকারিত্বের পর মোরশেদুল ইসলামকে ঘিরে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল চলচ্চিত্রাঙ্গনে, তার সুবিচার চলচ্চিত্রকার আমাদের প্রতি করেননি, পরের চলচ্চিত্রগুলোতে। আমার বন্ধু রাশেদ চলচ্চিত্রে সেই প্রত্যাশার বেশ খানিকটা পূরণ হয়, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমনোযোগ আমাদের হতাশও করে।
আমার বন্ধু রাশেদ এমন একটি চলচ্চিত্র, যাতে কিশোরদের বীরবেশে দেখা যায়। কিছু দুঃসাহসিক অভিযানের নিদর্শনও মেলে এখানে। আর একটি গল্পকথার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাস্তবতার শিক্ষণ হয়ে যায় নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর দর্শকদের জন্য। শিশুতোষ চলচ্চিত্র হয়ে উঠবার অনেক উপাদানই এই চলচ্চিত্রে রয়েছে। মোরশেদুল ইসলাম সাধারণত ক্লাসিক্যাল ন্যারেটিভ ধারায় গল্প বলে থাকেন। তাঁর চলচ্চিত্রে সচরাচর চলচ্চিত্রের আঙ্গিক নিয়ে নিরীক্ষা করতে দেখা যায় না। এই চলচ্চিত্রের ন্যারেটিভকে কিছুটা দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আজকের মধ্যবয়সী ন্যারেটর ইবু যখন তার কিশোর ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধকালে তার ও বন্ধু রাশেদের দুঃসাহসিক সব অভিযানের গল্প বলে, খানিক পর পর তাদের কথোপকথনে রত দেখা যায়, তখন আপাত সরলরৈখিক ন্যারেটিভ ভেঙে যায়। দর্শক গল্পে ডুবে না গিয়ে
বর্তমানে ফিরে আসে, খানিক বিরক্তির পরও, তাকে মুক্তিযুদ্ধ-পরিস্থিতি বা বাস্তবতাকে নিয়ে বাধ্য হয়ে ভাবতে হয়।
ছবির শুরুতে বয়স্ক ইবু তার ছেলেকে শৈশবের আবাসস্থল দেখাতে নিয়ে যায়। ছোট্ট শহরটিতে ইবু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাস করত। ট্রেনে ভ্রমণকালেই ইবু তার ছেলেকে বন্ধু রাশেদের গল্প বলা শুরু করে – সে কীভাবে ক্লাস সেভেনে একদিন হঠাৎ উপস্থিত হলো, ভর্তি হলো এবং ক্রমশ সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল। কাহিনির শুরুতে রাশেদের চরিত্র হিসেবে অনুপ্রবেশের ঘটনাটি আমাদের দীপু নাম্বার টু ছবিকে মনে করিয়ে দেয়। লক্ষ করার বিষয়, দুই চলচ্চিত্রেরই কাহিনিকার মুহম্মদ জাফর ইকবাল। রাশেদ ও দীপু দুজনেরই নাম নিয়ে সমস্যা হয়, ফলে তাদের নতুন নাম দেওয়া হয়। উভয়েরই বাবা ছিল, মা ছিল না। উভয় ক্ষেত্রেই একজন করে কদাকার-দর্শন ডেঁপো ছাত্র তাদের বিরোধিতা করে। ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত শত্রু আর শত্রু থাকে না, প্রধান চরিত্রের বন্ধু হয়ে ওঠে। রাশেদের শত্রু কাদের শেষ পর্যন্ত রাশেদের মতোই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে।
চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র রাশেদ হলেও ইবুকেই আমরা বেশিরভাগ সময় চলচ্চিত্রে দেখি। রাশেদের মা নেই, বাবা আছে। রাশেদের বাবা অবশ্য, তার বর্ণনামতে, ‘পাগল কিসিমে’র ও ‘অলস’, পড়ালেখা নিয়ে একদমই চাপাচাপি করে না। বরং বাবা তার সঙ্গে রাজনীতির গল্প করে। ইবুর রয়েছে আদর্শ বাবা-মা, ইবুর জন্য যতœশীল। আর আছেন অরু আপা। অরু আপা পাড়াতুতো বোন, যিনি ইবুকে অনেক আদর করেন। অরু আপা ইবুকে নিয়ে অনেক ঠাট্টা-মস্করা করেন – ‘আমাকে বিয়ে করবি’ জিজ্ঞাসা করে লজ্জায় ফেলে দেন। ইবু অবশ্য ঠিকই জানে যে অরু আপাকে বিয়ে করবে শফিক ভাই। শফিক ভাই ইবুর গুরুসম, মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের পূর্বে ইবু ও তার বন্ধুরা রাশেদের কাছ থেকেই রাজনীতির খবরাখবর পাওয়া শুরু করে। নির্বাচনে জয়লাভের পরও পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করছে না, বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের ভাষণ দিয়েছেন ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল শহরে আসে, ইবুদের স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। অন্যদিকে নদীর ওপারে মুক্তিযোদ্ধারা আসন নিয়েছে। রাশেদের পরামর্শ মতো ওরা স্কুলের একটা ম্যাপ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেয়, যাতে ঠিকঠাকমতো মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করতে পারে। এছাড়া চূড়ান্ত আক্রমণের আগে চার বন্ধু মিলে তাদের শরীরে গোপনে প্রচুর বুলেট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এমনকি ইবু আর রাশেদ স্কুল আক্রমণের সময় শফিক ভাইকে স্টেনগানের বুলেট সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। তবে শফিক ভাই আহত হয়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। রাজাকাররা শফিককে প্রকাশ্যে হত্যা করার আয়োজন করে। রাশেদ সেখানে গিয়ে রটিয়ে দেয় যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ডেথ স্কোয়াড জনতার সঙ্গে মিশে আছে, আত্মঘাতী হামলা করবে তারা। ফলে শফিককে প্রকাশ্যে হত্যা করার ভাবনা বাতিল হয়, তাকে রাজাকারদের নজরদারির মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সুস্থ হলেই শফিককে সেনাক্যাম্পে নেওয়া হবে এবং নির্যাতন করে হত্যা করা হবে – এই আশঙ্কায় রাশেদ শফিক ভাইকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা করে। চার বন্ধু মিলে রাজাকারদের প্রহরার মধ্যেই গোলাগুলির মাধ্যমে শফিককে উদ্ধার করে। এরপর ইবুর বাবা-মা শহর ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। আর রাশেদ একপর্যায়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। রাজাকাররা তাকে নদীতীরে হত্যা করে। কাহিনি শেষ হয় রাশেদের সঙ্গে বড় ইবুর কল্পিত সংলাপের মধ্য দিয়ে। জানা যায়, ইবু বন্ধুর স্মরণে তার ছেলের নাম রেখেছে রাশেদ।
আমার বন্ধু রাশেদ শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা বা তথ্য প্রদানের চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে শেষ পর্যন্ত – ইংরেজিতে এ ধরনের মিডিয়া-টেক্সটকে বলা হয় ইনফোটেইনমেন্ট। ছবিটির কাহিনি ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যায় পর্যন্ত এক বছর সময়কালে ব্যাপ্ত থেকেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করা, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা-পীড়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ, জামায়াতে ইসলামী নামক দলের বাঙালি সদস্যদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও শান্তিবাহিনী গঠন, বাড়তি নির্যাতনের কারণে হিন্দুদের ভারতগমন, রাজাকার বাহিনী কর্তৃক হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল ইত্যাদি তথ্য কাহিনির বরাতে উঠে এসেছে। এসব তথ্য প্রদানের সচেতন প্রয়াস চলচ্চিত্রে লক্ষণীয়। তবে ঐতিহাসিক তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে মূল উপন্যাস থেকে পরিচালক কিছুটা সরে এসেছেন। উপন্যাসে দেখা গেছে, রাশেদরা চিন্তিত ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা পাবার জন্য দরকষাকষি করছেন; যদি তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয় তবে স্বাধীনতা আসবে না, পাকিস্তানই টিকে যাবে। তারা বরং স্বাধীনতার জন্য মওলানা ভাসানীর যে এক দফা, তাতে আস্থাশীল ছিল। রাশেদদের এই ভাবনা ধরে নিতে হবে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঔপন্যাসিকের ভাবনা। কিন্তু পরিচালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ রাখতে চাননি। ফলে ভাসানীর প্রসঙ্গ একেবারেই উল্লেখ না করে মুক্তিযুদ্ধের যে বয়ান এই চলচ্চিত্রে হাজির করা হয়েছে, তা প্রাধান্যশীল একরৈখিক বয়ান, যা এমনকি ক্ষমতাসীন সরকারের সেন্সর বোর্ড বা অপরাপর ক্ষমতাকেন্দ্রকে তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হয়েছে।
চলচ্চিত্রে বুদ্ধিমান ও নেতৃত্বসুলভ গুণের অধিকারী চরিত্রটি হলো রাশেদ। প্রধান চরিত্রও সে। কিন্তু প্রাণবন্ত উচ্ছল চরিত্রটি হলো অরু আপা। হুমায়রা হিমু তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে চরিত্রটিকে সবচেয়ে উজ্জ্বল চরিত্রে পরিণত করেছেন। সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তগুলো তৈরি হয়েছে তাঁর উপস্থিতিতেই। ইবুরা গোপনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, এটা জানার পর অরু আপা গভীর আবেগ নিয়ে বলে, যে বয়সে তোদের ঘুড়ি ওড়ানোর কথা, সেই তোরা মুক্তিযুদ্ধ করছিস! এটাই এই কাহিনির মোক্ষ বিবৃতি যে, জাতির জীবনে কোনো একসময় আসে যখন সব অসম্ভব পরাভূত হয়। মানবেতিহাসের সেইসব মর্মন্তুদ পরিস্থিতি বয়স-পেশা-বিত্ত নির্বিশেষে সব মানুষকেই একেকজন নায়কে পরিণত করে। অন্যদিকে ছবির শেষে যখন ইবুর পরিবার নৌকাযোগে মুক্তাঞ্চলে পৌঁছে গেছে বলে মাঝি ঘোষণা দেয়, অরু তার বোরকা খুলে ফেলে। স্বাভাবিক পোশাকে সে মুক্তির স্বাদ নিতে চায় হাওয়ায়। অরুর সঙ্গে সঙ্গে দর্শকও মুক্তির স্বাদ পায়, দমবন্ধ পরিস্থিতি ও সংঘর্ষ-প্রতিরোধ থেকে। পেছনে কেবল পড়ে থাকে রাশেদ, যে বীর-বুদ্ধিমান নায়ক, যার মতো অনেকের আত্মত্যাগে এসেছে জাতির স্বাধীনতা।
রাশেদের চরিত্রে চৌধুরী জাওয়াতা আফনান এবং ইবুর চরিত্রে রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী মোটামুটি মানিয়ে গেলেও অন্যান্য কিশোর চরিত্রের অভিনেতার অভিনয়ে জড়তা লক্ষ করা গেছে। বড় ইবুর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, ইবুর বাবার চরিত্রে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়ের চরিত্রে ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শফিকের চরিত্রে আরমান পারভেজ মুরাদ বিশেষ কোনো শক্তিমত্তার ছাপ রাখতে পারেননি। যুদ্ধ-দৃশ্যগুলো একেবারে সাদামাটা মনে হয়েছে। অন্যান্য দৃশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা গেলেও, স্কুলে ক্যাম্প-করা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মূলযুদ্ধে শফিক, রাশেদ ও ইবু ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে কেবল তিনজন অংশ নিয়েছে, এটা মানা মুশকিল।
চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ভুল চোখে পড়বে। ক্লাস শেষে রাশেদ ও কাদেরের মধ্যে একবার ধাক্কাধাক্কি হয়। রাশেদ কাদেরকে ধাক্কা দিলে পড়ে যায়। কাদের যখন ভূপাতিত হয়, তখন কোনো বেঞ্চকে পড়ে যেতে দেখা যায় না। কিন্তু কাটের পর যখন কাদের উঠে দাঁড়ায় তখন দেখা যায় একটা বেঞ্চ কাত হয়ে পড়ে আছে। যুদ্ধজাহাজে করে পাকিস্তানি সৈন্যরা শহরে আসার পরে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসে খান বাহাদুর ও তার দুই চেলা। চেলা দুইজনকে পাকিস্তানি সৈন্য যখন গুলি করে হত্যা করে, তখন সৈন্যের বন্দুকের অ্যাঙ্গেল ভিন্ন দিকে থাকে, তারপরও চেলা গুলিবিদ্ধ হয়। ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে মেকআপে। বড় ইবুর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদের পরচুলা এবং রাজাকার আজরফ আলীর চরিত্রে গাজী রাকায়েতের দাড়ি চোখে পড়ার মতো অবিশ্বস্ত লাগে।
টাইটেল কার্ড ও এন্ড টাইটেলের নেপথ্য সংগীত মনে ধরার মতো হলেও বাকি সময় জুড়ে ইমন সাহার সংগীত তেমন কিছু যোগ করে না। সাধারণত সংগীত চলচ্চিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু সংগীতের অসাযুজ্য চলচ্চিত্রের প্রাণকে ওষ্ঠাগতও করতে পারে। কাদেরের সঙ্গে রাশেদের ঘুষোঘুষির সময় নাটকীয় সংগীত ব্যবহার করা হয়েছে কেবল। কিন্তু ওই দৃশ্যটি ধারণ করতে না চিত্রগ্রাহক এল অপু রোজারিও যথার্থ নাটকীয়তা তৈরি করতে পেরেছেন, না শব্দগ্রাহক রতন পাল ঘুষোঘুষির শব্দ প্রয়োগ করলেন। ফলে কী পরিমাণ সংঘাত হলে রাশেদের ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরেছে তা বোঝার সুযোগ রাখা হয়নি।
চলচ্চিত্রটির কাহিনির ব্যাপ্তি এক বছরের হলেও ষড়ঋতুর দেশটির বিভিন্ন ঋতু বোঝা যায় না। যেন মুক্তিযুদ্ধকালে একটা ঋতুই ছিল। তবে যে ছোট শহরের প্রেক্ষাপটে কাহিনি বিন্যস্ত, চলচ্চিত্রে সেই শহরটিকে বিশ্বস্তই মনে হয়। আহত হওয়ার পরে শফিককে যে হাসপাতালে রাখা হয়েছিল, সেই হাসপাতালটিকেও বাস্তবিক মনে হয়। রাশেদদের নানান পরিকল্পনা করার যে-ঘাঁটি, বুলেট লুকিয়ে রাখার স্থান ইত্যাদিকেও বিবেচনায় রেখে বলা যায়, লোকেশন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক যতœবান ছিলেন। বড় ইবুর সঙ্গে রাশেদের সংলাপের শেষ দৃশ্যটি চলচ্চিত্রে ভিন্ন দ্যোতনা এনেছে। সময়ের ব্যবধান ভেঙে দিয়ে পরিচালক এই কল্পদৃশ্যটি নির্মাণ করে প্রমাণ করেছেন, আঙ্গিক নিয়ে নিরীক্ষা করার ক্ষমতা তার আছে, হয়তো আগ্রহ তেমন নেই। কারণ তাঁর প্রতিটি চলচ্চিত্রই প্রথাগত ক্লাসিক্যাল ন্যারেটিভ ধারায় নির্মিত।
- ঠিকানা
- সপ্তম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আশ্বিন ১৪২৫ । October 2018
- পুরানো সংখ্যা
- সপ্তম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । পৌষ ১৪২৪ । December 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২৩ । November 2016
- পঞ্চম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2016
- পঞ্চম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪২২ । November 2015
- চতুর্থ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আষাঢ় ১৪২২ । June 2015
- তৃতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । কার্তিক১৪২১ । November 2014
- তৃতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । আষাড় ১৪২১ । July 2014
- তৃতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪২০ । February 2014
- তৃতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২০ । Novembeer 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । শ্রাবণ ১৪২০ । July 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২০ । April 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । পৌষ ১৪১৯ । January 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । আশ্বিন ১৪১৯ । September 2012
- প্রথম বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ । May 2012
- প্রথম বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪১৮ । February 2012
- প্রথম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪১৮ । November 2011
- প্রথম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা। ভাদ্র ১৪১৮ । August 2011