logo

আগামীবার আমরা অন্তত গোটাদশেক বিদেশি ভালো নাটক নিয়ে আসার চেষ্টা করবো

রামেন্দু মজুমদার

প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের উদ্বোধক ছিলেন রামেন্দু মজুমদার। শুধু উদ্বোধনের দায়িত্ব পালন নয়, তিনি ছিলেন এই বিশাল কর্মযজ্ঞের স্বাপ্নিক পুরুষ এবং প্রধান কর্মবীর। রামেন্দু মজুমদার বাংলাদেশের থিয়েটারকে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের থিয়েটার ও সংস্কৃতি আজ বহির্বিশ্বে মর্যাদার আসন লাভ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বিশ্ব কেন্দ্রের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তিনি বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের গৌরবান্বিত করেছেন। আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের এ উৎসবের নেপথ্যের মূল ব্যক্তিও তিনি। শিল্প ও শিল্পীর পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন অলোক বসু।

শিল্প ও শিল্পী : প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের অনুপ্রেরণা আপনি কোথায়, কীভাবে পেলেন?
রামেন্দু মজুমদার : আমরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটি আন্তর্জাতিক মানের নাট্যোৎসবের কথা। ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমীতে যে প্রতি দুই বছর পর এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী হয় তেমনি দুবছর পর পর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজনের কথা অনেকদিন ধরেই আমরা শিল্পকলা একাডেমীকে বলে আসছিলাম। এবার আমরা একটা সুযোগ পেলাম। সরকার সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে একশো কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়। আমরা আইটিআইয়ের পক্ষ থেকে এরকম একটি উৎসব করতে চাই বলে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখলাম। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় আমরা এ উৎসবটি করতে পারছি। তবে টাকার ছাড় দেরিতে পাওয়ায় আমরা আমাদের পূর্ব চিন্তা অনুযায়ী উৎসবটি করতে পারছি না। মাত্র আড়াই মাস আগে টাকার ছাড়পত্র পাওয়ায় আমরা বেশি সময় হাতে পাইনি যে, অনেক যাচাই-বাছাই করে বিদেশ থেকে ভালো ভালো নাটকের দল নিয়ে আসবো। ফলে সংক্ষিপ্ত সময়ে নিজেদের জানাশোনা থেকে নাটকের দল বাছাই করতে হয়েছে। তবে আগামী দুবছর পরে যখন আমরা এ ধরনের আর একটি উৎসব করবো, তখন এক বছর আগে থেকেই যাচাই-বাছাই এবং যোগাযোগের কাজ শুরু করে দেব। আমরা চেষ্টা করবো সারাবিশ্ব থেকে অন্তত দশটি ভালো নাটকের দল ঢাকায় নিয়ে আসার। তবে এরকম বড়মাপের একটি নাটকের উৎসবের জন্য অর্থের নিশ্চয়তা থাকা জরুরি। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতেও আমরা সরকারের আনুকূল্য পাবো এবং সেটা আগেভাগেই পাবো যাতে সুন্দরভাবে ভালো ভালো দলের নাটক দেখার সুযোগ পায় ঢাকার দর্শকরা।
শিল্প ও শিল্পী : আর্থিক আনুকূল্য ও নিশ্চয়তা তো দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। তখন আপনারা কী করবেন?
রামেন্দু মজুমদার : আমাদের আশা হচ্ছে দু-তিনবার যদি এই উৎসবটা চালু রাখা যায়, তাহলে পরবর্তী সময়েও এটা চালু থাকবে। যেমন এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীটি যেমন বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবও তেমনি বাংলাদেশের সংস্কৃতির জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
শিল্প ও শিল্পী : আপনি আইটিআই বিশ্ব কেন্দ্রের সভাপতি। এই ধরনের উৎসব আর কোন কোন দেশে কীভাবে হয় সেটা আপনারই সবচেয়ে ভালো জানা। আপনি কি আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
রামেন্দু মজুমদার : বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়। যেমন কায়রোতে কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার ফেস্টিভাল হয় প্রতিবছর। সেটা অবশ্য সরকারি উদ্যোগে ও অর্থায়নেই হয়। কিন্তু কোনো দেশে আইটিআইয়ের উদ্যোগে নিয়মিত কোনো উৎসব হয় না। বিভিন্ন দেশে আইটিআই বিভিন্ন রকমের কাজ করে। সেসব কাজ সেদেশের সরকারের অর্থায়নে ও উদ্যোগে হয়ে থাকে।
শিল্প ও শিল্পী : আইটিআইয়ের নিজস্ব উদ্যোগে ও অর্থায়নে কোথাও কি এ ধরনের কোনো উৎসব হয়?
রামেন্দু মজুমদার : না। আমরা কিন্তু এতদিন যা করেছি, অর্থাৎ আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে তা পুরোপুরি আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ও অর্থায়নে হয়েছে। আইটিআই বিশ্বব্যাপী যেখানে যে কাজ করেছে, সেখানে সে কাজে অর্থসহ নানা সহায়তা দান করেছে সেদেশের সরকার। আমাদের দেশে এবারই আমরা প্রথম সরকারি সহায়তা পেলাম।
শিল্প ও শিল্পী : এবারের আয়োজন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
রামেন্দু মজুমদার : এবারের আয়োজনের সবচেয়ে ভালো দিক এবার উৎসব উপলক্ষে প্রতিদিন একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হচ্ছে। চার রঙে চার পৃষ্ঠার এই বুলেটিনটি সবার আকর্ষণ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। যাঁরা এর পেছনে কাজ করছেন, আমি তাঁদের প্রশংসা করি। সত্যিই এটি একটি সুন্দর কাজ। আর একটি বিষয়, আমাদের তরুণ নাট্যকর্মীরা এ উৎসব উপলক্ষে অসম্ভব পরিশ্রম করছেন। তাঁদের জন্যই এ উৎসব সফলতার মুখ দেখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর আগেও আমরা দশবার সেমিনার নাট্যোৎসব করেছি ঢাকায়। এবারেরটা তার থেকে ব্যতিক্রম ছিল। এবার আমাদের অর্থের নিশ্চয়তা ছিল বলে আমরা সুন্দরভাবে কাজগুলো করতে পেরেছি।
শিল্প ও শিল্পী : আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উৎসবে গেছেন। সেসব উৎসব থেকে প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের ভিন্নতা কিসে?
রামেন্দু মজুমাদর : আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে বিভিন্ন দেশের নাটক থাকে। ফলে নাট্যকর্মীদের মাঝে চিন্তাভাবনার একটা শেয়ারিং হয়। এ উৎসবেও সেটা হবে। তবে এ উৎসবের বিশেষত্ব যদি বলি Ñ সেটা হলো এক উৎসবে ঢাকার দর্শকরা বিদেশের পাঁচটি নাটক দেখার সুযোগ পাবেন। ঢাকার নাট্যকর্মীদের বাইরের নাটক দেখার অভিজ্ঞতা বাড়বে। চিন্তাভাবনার আদান-প্রদানের সুযোগ ঘটবে। তাছাড়া উৎসবের শেষে কানহাইলালের একটা কর্মশালা থাকবে, যেখানে তাঁর থিয়েটার সৃজন সম্পর্কে, তাঁর পদ্ধতি সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকবে।
শিল্প ও শিল্পী : আগামী উৎসব সম্পর্কে কোনো পরিকল্পনা থাকলে যদি বলতেন।
রামেন্দু মুজমদার : আগেই বলেছি, দুবছর পর পর আমরা এ উৎসব করবো। অতএব, আগামী উৎসব হবে ২০১৩-তে। আমরা এবার যেমন বিদেশি নাটক বাছাইয়ে তেমন সময় পাইনি, আগামীবার অন্তত বছরখানেক আগে থেকেই নাটক বাছাই ও যোগাযোগ শুরু করা যাবে। যাতে অন্তত গোটাদশেক খুবই উন্নতমানের বিদেশি নাটক ঢাকায় নিয়ে আসা যায়।
শিল্প ও শিল্পী : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রামেন্দু মজুমদার : ধন্যবাদ।

Leave a Reply