বো র হা ন উ দ্দি ন খা ন জা হা ঙ্গী র
ভারতীয় ভাস্কর্যরীতি আইভি জামান প্রত্যাখ্যান করেছেন, একই সঙ্গে ইউরোপের ভাস্কর্যের আধুনিকতা জয় করেছেন। ক্লাসিজমকে কাউন্টার করতে গিয়ে আইভি একটা কল্পনাকুশল, অবিচ্ছেদ্য স্পেস স্ট্যাচুগুলোর চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই ছড়িয়ে দেওয়ার অর্থ পাথরের বস্নক কিংবা মার্বেলের বস্নক কিংবা কাঠের বস্নক দিয়ে স্পেসকে প্রতিরোধ করেছেন। এই প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে তিনি অ্যাবস্যুলেটকে খুঁজে পেয়েছেন। তার অর্থ তিনি বিভিন্ন ফর্ম খোদাই করেছেন, যেভাবে ফর্ম সব বিভিন্ন দূরত্ব থেকে দেখি। এই দেখা, বিভিন্ন দূরত্ব থেকে ফর্মগুলি দেখা, একটা অ্যাবস্যুলেট দূরত্ব ফর্মগুলির ওপর আরোপ করা।
আইভি তাঁর স্বামীকে (ভাস্কর হামিদুজ্জামান) অনুসরণ করেননি। স্পেস থেকে বিভিন্ন ফর্ম গড়েছেন। সমগ্র স্তব্ধতার মধ্যে আইভি গতি খুঁজেছেন, পাথর, মার্বেল, কিংবা কাঠের চিন্তা তাঁকে ভর করেছে, ভাস্কর হিসেবে তাঁর প্যাশন হচ্ছে পাথর, মার্বেল, কিংবা কাঠের মধ্যে নিজেকে রূপান্তরিত করা। তাঁর চারপাশে আছে শূন্য : শূন্যের ভয় তাঁর আছে। ভয় ও আতঙ্ক তিনি নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা করে তোলেন, এই ভয় হচ্ছে তাঁর নিজের মধ্যকার ক্রোধ : এই ক্রোধ জয় করে তিনি নিজের সঙ্গে কথা বলেন। এই কথা বলাটাই তাঁর কাজ।
শব্দ না করে নিজের সঙ্গে কথা বলা। তাঁর পেইন্টিং ও ভাস্কর্য রিয়ালিটিকে ক্যাপচার করে, রিয়ালিটিকে বিবৃত করে না। হামিদের অধিকাংশ কাজ রিয়ালিটিকে বদলে দিয়েছে, বিপরীতে আইভির অধিকাংশ কাজ রিয়ালিটিকে ক্যাপচার করেছে। আইভির কাজ বাস্তব ব্যাখ্যা করে রিয়ালিটিকে ক্যাপচার করার পর ব্যাখ্যা করে।
কখনো কখনো তাঁর কাজ গানের মতো, স্পষ্ট বোঝা যায়, কখনো বোঝা যায় না। আসেত্ম আসেত্ম, বারবার দেখতে গিয়ে, একটার পর একটা ইমেজ আমার মনে তৈরি হয় : একটা ইমেজ যার অর্থ আছে। চোখ বুজে তাকালে, রং ও রেখা আমার কাছে ধরা দেয়, সার সার ঘূর্ণনের মতো। একটা ঘূর্ণন আর একটা ঘূর্ণন তৈরি করে। এসব ঘূর্ণন অনেকটা অ্যাবস্ট্রাকট, শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব না।
আইভি স্পেস সংক্ষিপ্ত কিংবা হ্রস্ব করে রাখেন। আমাদের ও তাঁর তৈরি ফর্মের মধ্যে রেখে দেন দূরত্ব। এই দূরত্ব আমাদের পক্ষে পাড়ি দেওয়া সম্ভব। এই দূরত্ব সৃষ্ট ফর্ম : মার্বেল কিংবা পাথর কিংবা কাঠ আমাদের চোখে বিস্ফোরিত হতে থাকে, আমাদের মন ও চোখের মধ্যে আইডিয়ার মতো : আইডিয়ার কেবল শক্তি আছে স্বচ্ছতা তৈরি করার। এভাবে আইভি বহু বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য তৈরি করার সমস্যার নিরসন করেন।
প্লাস্টার এবং মার্বেল এবং পাথর এবং ব্রোঞ্জ এবং কাঠ বিভাজিত করা যায়, এই বিভাজনের ভিত্তি হচ্ছে আইডিয়া কিংবা বোধ কিংবা অনুভূতি। এই আইডিয়া কিংবা অনুভূতিকে আইভি শুদ্ধ এক প্রকাশের অভিজ্ঞতা করে তোলেন। এই অভিজ্ঞতা তুলনাহীন। সেজন্য আইভির প্রকাশের সঙ্গে অন্য ভাস্করের অভিজ্ঞতা তুলনা করা যায় না।
আইভির উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্রি-আয়তনিক অবজেক্ট তৈরি করা, উদ্দেশ্য হচ্ছে অবজেক্টগুলোর সলিডিটি ও ডেনসিটির ওপর জোর না দেওয়া, বরং স্পেস ও ম্যাসের সীমান্তবর্তী অদৃশ্য জ্যামিতির টেনসনের ওপর জোর দেওয়া। এভাবে আইভি ভল্যুম ও ডেনসিটির ইলিউশন তৈরি করেন, আমরা দেখি একটা আইডিয়াকে তিনি কীভাবে সৃষ্টি করেন।
আইভি তাঁর নিজের ধরনে স্পেস ও ম্যাসের ভাস্কর্যভিত্তিক সম্পর্ক বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে থাকেন। আইভি ধরতে পেরেছেন কোনো একটি অবজেক্টের ম্যাস এবং তার চারপাশকার নেগেটিভ স্পেস হচ্ছে ইলিউশন। এই দুরূহ আইডিয়াকে তিনি বিভিন্ন স্ট্যাচুর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এসব কাজে তিনি স্পেসকে ম্যাসের ভিতর ঢেলে দিয়েছেন, আবার স্পেসের চারপাশে ম্যাসকে ঘেরাও করেছেন, এভাবে ম্যাস ও বাইরেকার স্পেসের সীমারেখা ঘুচিয়ে দিয়েছেন।
আইভির চেষ্টা, কোনো একটা পর্যায়ে, আমরা দর্শকরা, যেন স্পেসের সঙ্গে ম্যাস মিলিয়ে দিই। তাঁর হাতে স্কাল্পচার, গ্রাভিটির আর্ট ফর্ম, সীমারেখা হারিয়েছে, এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। চারপাশের বাতাসের মধ্যে একটা সাদা ফর্ম, একটা সাদা মার্বেল, একটা সাদা পাথর, আকাশের দিকে উড়ে চলেছে। এই উড়ে চলাটাকে তিনি ধরতে চেয়েছেন। আইভি এভাবে ইনটার্নাল ফর্ম এবং এক্সটার্নাল ফর্মের পার্থক্য কিংবা দূরত্ব দূর করেছেন।
আইভি, এভাবে, আর্ট ফর্মের গ্রাভিটি উলটো করেছেন, প্যাডেস্টাল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর প্রণীত আর্ট ফর্ম দেখবার জন্য না, বরং অন্যদের অস্তিত্বের জন্য বিদ্যমান। এই বিদ্যমানতার এনকাউন্টার আইভি ঘুরে ঘুরে করেছেন। তাঁর কাজে কোনো ফ্যাট নেই, সবটাই মসৃণ। তাঁর ফ্যাটহীন ফর্ম আমাদের চোখে উদ্ভাসিত, এই উদ্ভাসন আমাদের দিকে এগিয়ে আসে, তিনি নিরন্তর জয় করেছেন স্পেস, তিনি, শেষ পর্যন্ত, আমাদের। n