অ্যান্টনি তাপিজ
মনিরুল ইসলাম
তাপিজের মৃত্যু একটি বিরাট ক্ষতি। নিঃসন্দেহে তিনি যুদ্ধোত্তর সময়ের অন্যতম প্রধান একজন আধুনিক চিত্রশিল্পী। তিনি এসেছিলেন একটি বুর্জোয়া পরিবার থেকে এবং খুব ছোটবেলা থেকেই ছিলেন গ্রন্থানুরাগী। ষোলো-সতেরো বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। তাঁর পরিবার তাঁকে তখন স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়। এটি তাঁকে পড়ালেখার অখণ্ড অবসর করে দেয়। সেখানেই তাঁর মেধা ও মননের ভিত্তি গড়ে ওঠে; যার ছাপ পরবর্তীকালে তাঁর কাজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
তাঁর চিত্রকলার দক্ষতা কিছুটা দেরিতেই বিকশিত হয়েছিল। তিনি একজন স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী। তিনি ছাত্র ছিলেন আইনের। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনা তাঁর জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কারাবন্দি জীবন তাঁর ভেতরে যেমন পরিবর্তন এনেছে, তেমনি সক্রিয় রাজনীতি পরিবর্তন এনেছে তাঁর শিল্পে। সে-সময়ের প্রতিবাদী শিল্প ও স্ট্রিট আর্ট দ্বারা খুবই প্রভাবিত ছিলেন তিনি। তাঁর কাজ জুড়ে রয়েছে লাল ও হলুদ রঙের প্রাধান্য। এ সময়ই তিনি স্ক্র্যাচিং ও অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের দিকে Sur Dada Dua Al Set ম্যাগাজিনকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিল্পীদের গ্র“পটির সঙ্গে তাঁর তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। দ্বিতীয় বি শ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সৃজনশীলতার নবোন্মেষ দেখা দেয়। এ সময় কবি ব্রোসা ও চিত্রশিল্পী জেনোভাসের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক তাঁর ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। ফ্রান্স সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৫০ সালে তিনি প্যারিস যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় পিকাসো (Picasso), মিরো (Miro) ও লির (Klee)। তার চেয়েও তাঁর জন্য যেটি গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে সেটি হচ্ছে, কিউরেটর মাইকেল টেপির সঙ্গে পরিচয়। তিনিই তাপিজের কাজ পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ওই সময়েই তিনি মেতে ওঠেন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। বাতিল কাগজ, কাদা, মার্বেলের গুঁড়ো নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৭০ সালের দিকে কাতালান রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। জেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিও তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
আধুনিক চিত্রকলায় আমি তাপিজের কাজের মতো এত সুচারু কম্পোজিশন কমই দেখেছি। আমার ওপর তাঁর একটা বড় প্রভাব রয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তাঁর কম্পোজিশনের সুগভীর বোধ থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। ম্যাটেরিয়ালের ব্যবহারে তাঁর যথার্থতা আমাকে অভিভূত করেছে। তিনি মিরো ও লির কাছ থেকে কী নিয়েছেন তা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। চিত্রশিল্পীদের কোনো না কোনো পয়েন্টে এ দুজনের দ্বারস্থ হতেই হয়। তাঁরা যে-পথ তৈরি করে গেছেন সমসাময়িক প্রত্যেক শিল্পীকে তা অনুসরণ করতেই হয়। এতে লজ্জার বা ছোট হওয়ার কিছু নেই। পিকাসো স্পঞ্জের মতো শুষে নিতে পারতেন। একবার ব্রাক (Braqcue) তিন মাস পরিশ্রম করে একটা কাজ দাঁড় করালেন। পিকাসোকে দেখানোর পর তিনি তা খুবই পছন্দ করলেন। তারপর বাসায় গিয়ে এক রাতেই পিকাসো সাতটা ছবি এঁকে ফেললেন, ব্রাকের সেই ছবির ছন্দ মাথায় রেখে। এবং এর সবই ব্রাকের চেয়ে ভালো হয়েছিল। এরকম শুষে নিতে পারতেন আরেকজন – তিনি আরশিল গোর্কি (Arshile Gorky)।
যা হোক, তাপিজ যেভাবে ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতেন তা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে। তিনি ম্যাটেরিয়ালের প্রকৃতি পরিবর্তন করে ফেলতেন এবং তাঁর অবজেক্টে এক ধরনের স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আসতে পারতেন। তিনি ম্যাটেরিয়ালটি কপি করবেন না, মার্বেলের টেক্সচারও নেবেন না, বরং তিনি মার্বেলের গুঁড়ো ব্যবহার করবেন এবং এ-প্রক্রিয়ায় মার্বেলের প্রকৃতিটা পরিবর্তন করে ফেলবেন। স্থাপত্য সৃষ্টিতে তিনি কী ব্যবহার করলেন – একটা বাথটাব, আন্ডারওয়্যার কিংবা বড় একটা মোজা! এগুলো ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিলো।
তিনি সাবজেক্ট অনুসন্ধান করে বেড়াতেন। তাঁর মূল মনোযোগ ছিল এক্সপ্রেশনে। তাঁর প্রতিটা কাজের মূল কেন্দ্রে ছিল এক্সপ্রেশনের প্রশ্নটি। তিনি একজন ক্ষিপ্র চিত্রশিল্পী। একটা পেইন্টিং তৈরি করা বা টেক্সচার নির্মাণ তিনি পছন্দ করতেন না। কিন্তু একই সময়ে তাঁর কাজের সৌন্দর্য ও অকপটতার গুণটি মিনিমালিজমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। কারণ এগুলো আসলেই অপার্থিব।
তাঁর সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভারতের লোকজন আমাকে চেনে?’ আমি বললাম, ‘ভারতে তো আপনি প্রফেটের মতো।’ তিনি শুনে খুবই খুশি হলেন। ভারতে কখনো যাননি কেন জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, কি যেন একট অদৃশ্য বাধা তাঁকে ভারতে যেতে বাধা দেয়। তাপিজের সঙ্গে আমার একটা ছবি ছিল – আমার খুব খারাপ লাগছে যে, ছবিটা আমি হারিয়ে ফেলেছি।
(যামিনীকে দেওয়া মনিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।)
অ্যান্টনি তাপিজ
শহিদ কবীর
সম্প্রতি শিল্পবিশ্ব বেশ কজন খ্যাতনামা চিত্রশিল্পীকে হারিয়েছে। তাঁরা হলেন সি টম্বলি (Cy Twombly), লুসিয়ান ফ্রয়েড (Lucian Freud), অ্যান্টনি তাপিজ, মোহাম্মদ কিবরিয়া ও মকবুল ফিদা হুসেন। অ্যান্টনি তাপিজ স্প্যানিশ কাতালান চিত্রশিল্পী। জীবদ্দশায়ই দেশ ও দেশের বাইরে তাঁর সুনাম ছড়িয়েছিল। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় তাঁর শিল্পকর্ম অনেক বোদ্ধার মনোযোগ কেড়েছিল। বিশেষত জাপানে কয়েক প্রজন্মের চিত্রশিল্পীর কাছে তাঁর সমাদর ব্যাপক। ১৯৮১ সালে মাদ্রিদ কনটেম্পরারি মিউজিয়ামে তাঁর একটি রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনী দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এতে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার থেকে শুরু করে ওই সময়কার আঁকা পেইন্টিংস স্থান পেয়েছিল। আমি তাঁর শিল্পকর্মগুলো দেখে এতই বিমুগ্ধ হয়েছিলাম যে, সুযোগ করে বেশ কবার প্রদর্শনীটিতে গিয়েছিলাম।
ওই বছরের ১২ মে তাঁর কাজ দেখার আরেকটি সুযোগ আমার হয়েছিল। ওই প্রদর্শনী হয়েছিল মাদ্রিদেরই রাইজয়লা গ্যালারিতে (Raijoyla Gallery)। ওইদিনই ‘রিসেন্ট ওয়ার্কস’ নামে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে আমি তাপিজের সঙ্গে পরিচিত হলাম। করমর্দন করলাম। বাংলাদেশি একজন শিল্পীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত ফোল্ডারে আমি তাঁকে কিছু লিখে দেওয়ার অনুরোধ করলাম। তিনি সানন্দে রাজি হলেন। আমার শুভ কামনা করে তিনি ফোল্ডারে সই করে দিলেন। ফোল্ডারটি এখনো আমার বাড়িতে সযতেœ রক্ষিত আছে।
শিল্পীজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে অ্যান্টনি তাপিজের কাজগুলো ছিল বাস্তববাদী (জবধষরংঃরপ) ঘরানার। তবে কিছু কাজে স্যুররিয়ালিজমের মিশ্রণও ছিল। মাঝেমধ্যে কিছু কাজে স্থপতি অ্যান্টনি গৌদি (Antoni Goudi) এবং দাবুফের (Dubuffet) মতো শিল্পীর প্রভাবও দেখা যায়। এছাড়া তাঁর প্রাথমিক জীবনের কাজগুলো সবসময়ই পল ক্লি (Paul Klee) দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে তাপিজ কিছু ইনস্টলেশনও করেছিলেন।
তাঁর সব কাজই তিনটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে – টেনশন, প্যাশন ও সেনসেশন। এগুলো আমাকে সবসময়ই আলোড়িত করে। তাপিজ তাঁর চিত্রে অনেক সময় বডিলি প্রপার্টি ব্যবহার করতেন, যেমন – ফুটপ্রিন্ট, হ্যান্ডপ্রিন্ট ইত্যাদি। দক্ষ রাজমিস্ত্রির মতো তিনি ক্যানভাসে পুরু স্তর সৃষ্টি করতেন। এ স্তর শুকিয়ে গেলে তিনি তাতে রং ঢেলে দিতেন। তারপর ছুরি কিংবা খালি হাতেই তাতে তিনি একটি ফিগার বা অবয়ব তৈরি করতেন, হয়তোবা একটি ক্রস দিতেন বা কোনো নম্বর বসাতেন। রং পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই এসব করে ফেলতেন তিনি। এতে তাঁর আঙুল, নখ বা হাতের একটা ছাপ রয়ে যেত চিত্রকর্মজুড়ে। চিত্রের দর্শকের ওপর এটি প্রভাব ফেলত নিশ্চিতভাবে। মনে হতো, চিত্রকর্মটি মাত্র কিছুক্ষণ আগে এঁকে শেষ করা হয়েছে। দারুণ এক সেনসেশন। তাঁর কর্মপদ্ধতি নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে তাঁর এ ইউনিক পদ্ধতিটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এর অনেক পরে দেখেছি প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো ওইসব পেইন্টিংয়ের একটি প্রদর্শনী।
কিন্তু তাপিজ আসলে কীভাবে কাজ করতেন? তাঁর স্টুডিও এক অদ্ভুত জায়গা। এটি যেন কোনো এক খ্যাপাটে, ছন্নছাড়া কারুশিল্পীর আস্তানা। ছবি আঁকার উপকরণ ঘরময় ইতস্তত ছড়ানো, এলোমেলো। তাঁর সে-স্টুডিওতে রয়েছে বড় আকারের চালুনি – বালু ছাঁকার জন্য। ছবিতে যে রং তিনি ব্যবহার করেন, তা কোনো টিউব থেকে আসে না, বরং তা থাকে চল্লিশ-পঞ্চাশ কেজির বড় ড্রামে। সাধারণ একটি স্প্যানিশ কোম্পানি ‘টিটান লাকসে’র তৈরি রং, যা সাধারণত দালানকোঠার দেয়ালে লাগানো হয়। ঘরবাড়ি রং করতে যে ধরনের রোলার ও ব্রাশ ব্যবহƒত হয় তা-ই ছবি আঁকতে ব্যবহার করতেন তাপিজ। তিনি সচরাচর পাত্রেই রং মেশান এবং সরাসরি তা ক্যানভাসে ঢেলে দেন। তাঁর শিল্পকর্মে বিশেষ কিছু রং দেখা যায়। যেমন – পোড়া লাল, খড়িমাটির রং, বাদামি, চক সাদা ইত্যাদি। এগুলো বার্সেলোনার বাইরের বা আন্দালুসিয়া গ্রামের অতি সাধারণ রং। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাপিজ তাঁর ছবিতে খুব কমই সবুজ বা নীল রং ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁর ছবিতে চুল, দড়ি, কাপড়, কাঠ, বালু ইত্যাদিও ব্যবহার করতেন।
তাপিজ ছিলেন একজন বিমূর্ত চিত্রশিল্পী। তবে মাঝেমধ্যে বাস্তববাদী ঘরানারও কাজ করতেন এবং ভিন্ন কাঠামো ও ধরন উপস্থাপন করতেন। তাঁর কিছু ছবিতে মানব অঙ্গের উপস্থাপনাও দেখা গেছে। একটি ছবিতে উবু হয়ে বসা এক রমণীকে মেঝে ঝাড়– দিতে দেখা যায়, যেমনটি দেখা যায় আমাদের দেশেও।
তাপিজ ছিলেন আইনের ছাত্র। কিশোর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে পাহাড়ি এলাকায় পাঠানো হয় স্বাস্থ্যোদ্ধারে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে তখনই তাঁর ছবি আঁকার শুরু। ছবি আঁকার পেছনে তাঁর স্ত্রীর অবদানও কম নয়। তাপিজ তা স্বীকারও করেন। তাঁর অনেক কাজেই তিনি একটি টি (T) আকৃতি ব্যবহার করেছেন। যেটি দ্বারা তাঁর স্ত্রীর নাম টেরেসার আদ্যক্ষর বোঝায়। অনেকে একে অবশ্য তাপিজের নিজের নামই মনে করেন। যদিও বিষয়টি তা না।
আমার যতদূর অনুমান, বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী মিকুয়েল বারসেলো (Miquel Barcelo) ও জার্মানির আনসেম কিয়েফারের (Anselm Kiefer) ওপর তাপিজের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমি নিজেও তাঁর দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত। আমি এখনো তাঁর একটি কাজ চোখের সামনে দেখতে পাই। সেটি হচ্ছে – বিশাল এক ক্যানভাসে শুধু একটি সাদা ক্রস!
অ্যান্টনি তাপিজ : জীবন ও কর্ম
১৯২৩ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় জন্ম অ্যান্টনি তাপিজের। মাত্র সতেরো বছর বয়সে যক্ষ্মা থেকে হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। এতে তাঁকে তাঁর পরিবার পাহাড়ি এক এলাকায় স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য পাঠিয়ে দেয়। অফুরান অবসর পেয়ে শিল্প-সাহিত্য নিয়ে বিস্তর পড়ালেখা করেন তাপিজ। অবশ্য খুব ছোটবেলা থেকেই পাঠাভ্যাস ছিল তাঁর। পাহাড়ের ওই সময়টা তাঁর পরবর্তী জীবনের চিন্তা ও কর্মের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। তারপর ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ল ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনায় আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেন তিনি। চিত্রশিল্পের জন্য খ্যাতি ও পরিচিতি পেলেও এ বিষয়ে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা ছিল না। নিত্যদিনের পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি দিয়ে শিল্পকর্ম নির্মাণের জন্য বেশ পরিচিত তিনি। ১৯৪০ সালের দিকে তাঁর খ্যাতি ছড়াতে থাকে। বিশেষত তাঁর উঁচুমানের সিম্বলিক চিত্রকর্মের জন্য। সেসব কাজ ছিল মিরা ও লি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি এসে সে ধারা থেকে সরে আসেন তাপিজ। শুরু করেন তাঁর একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমূলক কাজ – ভারী একটা সারফেস, যেটি জুড়ে রয়েছে আঁকিবুঁকি, আঁচড় কাটা এবং তাতে নানান অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন। কবি ও নাট্যকার জোয়ান ব্রোসার সঙ্গে মিলে Dau al Set (The Seven-Spotted Die) নামে একটা ম্যাগাজিনও বের করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সাল থেকেই স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল তাঁর। ২০১২ সালে আটাশি বছর বয়সে বার্সেলোনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাপিজ।
অর্জন
১৯৫০ : ফ্রান্স সরকারের বৃত্তি নিয়ে এক বছর প্যারিসে অধ্যয়ন।
১৯৫১ : বার্সেলোনার অ্যাকাডেমিয়া ব্রেভ প্রাইজ জয়, স্পেন।
১৯৫৩ : সাও পাওলো বাইনাল প্রাইজ জয়, ব্রাজিল।
১৯৫৮ : কার্নেগি ইনস্টিটিউট ফান্ড প্রাইজ জয়, পিটার্সবার্গ, পিএ।
১৯৬৪ : গোগেনহাইম ফাউন্ডেশন প্রাইজ জয়, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭২ : রোবেনস প্রাইজ অব সিজেন, জার্মানি।
১৯৮৩ : কাতালান সরকারের স্বর্ণপদক, স্পেন।
১৯৯২ : রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব আর্টস, লন্ডন এবং অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস, ক্যামব্রিজের সদস্যপদ লাভ।
১৯৯৩ : লিওন ডি’অরো-এ ভূষিত, ভেনাস বিয়েনাল, ইতালি।
২০০৩ : ভেলাজকুয়েজ প্রাইজ, স্পেন।