logo

অমৃতা শেরগিল জীবন এবং মৃত্যু

শিকোয়া  নাজনীন
লন্ডন স্কুল অব মিউজিক ক্লাসে আনতোনিত্তে গোটেস্ম্যান এরডোবাক্তে (অমৃতা শেরগিলের মা) তখন পিয়ানো বাজানো শিখতে আসেন। সংগীত ক্লাসের বন্ধু প্রিন্সেস বাম্বা একসময় ভারত ভ্রমণে যাওয়ার জন্য সঙ্গী হতে বললেন। সানন্দে রাজি হয়ে যান মেরি আনতোনিত্তে। তাঁরা দুই বন্ধু মিলে লাহোরে আসেন বেড়াতে। সেটা ১৯১০ সালের ডিসেম্বর। সকলে ভাবল, রাজকুমারী বাম্বা নিশ্চয়ই তাঁর বর পছন্দ করতে লাহোরে এসেছেন। এক সন্ধ্যায় পরিচয় হয় ওমরাও সিং শেরগিলের (অমৃতার বাবা) সঙ্গে। ধনী রুচিশীল সংস্কৃতিবান ওমরাও সিং তখন লাহোরে প্রতিষ্ঠিত বনেদি মাজিথা এস্টেটের মালিক। কয়েক পুরুষ ধরে তাঁদের জমিদারি। স্ত্রী নারনিন্দার কর মারা গেছেন অনেকদিন। ওমরাও সিংয়ের বন্ধু মহল শহরের জনপ্রিয় আর নামজাদা কবি-সাহিত্যিক। সেখানে মোহাম্মদ ইকবাল, নবাব জুলফিকার আলি খান, স্যার যোগিন্দর সিং, মির্জা জালাল উদ্দিন প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের মানুষের জমায়েত হতো। লাল চুলের হাঙ্গেরিয়ান মেরি আনতোনিত্তেকে নিয়ে ইকবাল একটি প্রেমের কবিতা লেখেন। সেটাই সূত্রপাত। কবিতাটি অনুবাদ করেন ওমরাও সিং। একই সাহিত্য আসরে পরিচয় তাঁদের। মেরি আনতোনিত্তে রাতারাতি চব্বিশ বছরের এ যুবকের প্রেমে পড়েন। আর ওমরাও সিংয়ের জীবনে মেরি আনতোনিত্তে ধূমকেতুর মতো উদয় হন। এই পরিচয় নিশ্চিতভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা মনস্থির করেন, বিয়ে করবেন। আর ১৯১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিখ ধর্মমতে তাঁদের বিয়েও হয়। তারপর কিছুদিন তাঁরা লাহোরেই থাকেন। কিন্তু অচিরেই মেরি আনতোনিত্তে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি হাঙ্গেরিতে ফিরে যাবেন। সেখানেই থাকবেন ওমরাও সিংকে নিয়ে। হাঙ্গেরি তখন বিশ শতকের আধুনিক সাহিত্যচর্চার ভূপৃষ্ঠ। এন্দ্রি আদি তখন বিখ্যাত কবি। তাঁর কবিতা আধুনিক সাহিত্যজগতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে উদয় হয়েছিল। তরুণদের কাছে এন্দ্রি আদির কবিতা ছিল আধুনিকতার মাইলফলক (জানা যায়, অমৃতা আদির কবিতাকে বাইবেলের মতো জ্ঞান করতেন)। মেরি আনতোনিত্তের পরিবার ছিল সাংস্কৃতিকভাবে উদার (অমৃতা শেরগিলের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এই পরিবেশের বিশেষ প্রভাব আমরা লক্ষ করি)। মেরি আনতোনিত্তে নিজেও চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন। মিউজিক আর গান নিয়ে পড়েন ইতালিতে আর লন্ডনে। ইউরোপিয়ান সংস্কৃতিবান, শৈল্পিক ও বুদ্ধিদীপ্ত পারিবারিক ঐতিহ্যে বেড়ে ওঠা মেরি আনতোনিত্তের ভাই ইরভিন মিউনিখে শিল্পকলার ওপর পড়াশোনা করেন। সিমোন হোলস্কির কাছে ছবি আঁকার পাঠ নেন। আর ইরভিন কালিদাস শকুন্তলা পড়েছিলেন যখন তিনি স্কুলের ছাত্র। দর্শনের প্রতি আগ্রহ ছিল অপরিসীম। পারিবারিকভাবে শিল্পের প্রতি আকৃষ্টতা অমৃতার জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে বলা যায়। কারণ আমরা দেখেছি, এই ইরভিনের পরামর্শে অমৃতা ফরাসি দেশে চিত্রকলা পড়তে যান।
মেরি আনতোনিত্তে অমৃতা শেরগিলের জন্মের সময়কে বর্ণনা করেন – সেদিন ছিল ঘন শীতে আবৃত সারা ইউরোপ। ১৯১৩-এর ডিসেম্বর। বরফে ঢাকা পড়েছিল চারদিক। দানিয়ুবের তীরে এক শহরের হাসপাতালে মা আনতোনিত্তে অমৃতাকে জন্ম দেন। তিনি বর্ণনা করেন – ‘ঘন কালো চুলের একটি ফুটফুটে শিশুকে নার্স যখন নিয়ে আসছিল তখন বাইরে তুষারে আবৃত আলোর সকাল। দানিয়ুবের জলে বসন্তের মতো হাওয়া বইছিল।’ তার এক বছর পর জন্ম নেয় অমৃতার বোন ইন্দিরা। ১৯১৪ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। হাঙ্গেরিতে শেরগিল পরিবার বাস করেছিল ১৯২১ সাল পর্যন্ত।
এই সময়ে কিছুদিন তাঁরা মা মেরি আনতোনিত্তের শহরতলির বাড়ি দুনাহারাৎসাতে বাস করেছিলেন। যেখানে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য অমৃতাকে আকৃষ্ট করে থাকবে, কারণ এই নিসর্গ দৃশ্যের ছবি এঁকেছিলেন অমৃতা। মামাবাড়িতে অমৃতা দীর্ঘ সময় বাস করার কারণে এই সময় অমৃতা শেরগিলের তাঁর মায়ের আত্মীয়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিশেষত মামাতো ভাই ভিক্টর ইগানের সঙ্গে তার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব পরে বিয়েতে পরিণতি লাভ করে।
হাঙ্গেরিতে তাঁদের জীবন সংকটে পতিত হয় মূলত যুদ্ধের সময়। ১৯২০ পর্যন্ত তাঁরা বুদাপেস্ট, কখনো মার্গরেট আইল্যান্ডের গ্র্যান্ড রোডে দানিয়ুবের তীর ঘেঁষে যার অবস্থান সেখানে ছিলেন। ১৯২১ সালে অমৃতার বয়স যখন আট, শেরগিল পরিবার তখন ভারতে ফিরে আসে। আসার পথে ফরাসি দেশে যায়। এরই মধ্যে হাঙ্গেরিতে অমৃতা কিছুদিন স্কুলে পড়েছিলেন। সেখানে ছোটদের রূপকথার গল্প ইলাস্ট্রেশন করতেন অমৃতা। ছবি আঁকার প্রতি তাঁর আলাদা আগ্রহ দেখতে পেয়েছিলেন অমৃতার মা। মা তাঁকে ফরাসি দেশে বেড়াতে নিয়ে যান। পরে মেরি আনতোনিত্তের ডায়েরিতে আমরা নোট পাই যে, অমৃতা তখন ভিঞ্চির মোনালিসা এবং অন্যান্য ছবি দেখেছিলেন (এর আট বছর পরে অমৃতা ঠিক ষোলো বছর বয়সে ফরাসি দেশে শিল্পকলা নিয়ে পড়তে এসেছিলেন)।
শেরগিল পরিবার ভারতে ফিরে নিজেদের বসবাসের জন্য তখন সিমলাকে বেছে নেয়, যদিও লাহোর তখন অনেক বেশি উচ্চকিত এবং আকর্ষণীয় শহর। ওমরাও সিংয়ের পরিজন-বন্ধুরা সবাই তখন লাহোরে। তার তুলনায় খানিকটা রক্ষণশীল গ্রাম্য নিভৃতপল্লী তখন সিমলা। তবু মেরি আনতোনিত্তে সিমলায় বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। হতে পারে ওমরাও সিংয়ের ভাই সুন্দর সিং তখন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে তাঁকে হয়তো ব্রিটিশরা রাজনৈতিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁর ভাই ওমরাও সিংকে লাহোরে না থেকে রক্ষণশীল গ্রীষ্মকালীন শহরতলি সিমলায় থাকতে নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন। অথবা এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না যে, মেরি আনতোনিত্তে নিজে থেকে তাঁর মেয়েদের নিয়ে আত্মীয়-পরিজন থেকে খানিকটা দূরে থাকতে চেয়েছিলেন, যা তাঁর কাছে সামাজিক সম্পর্কের আবহের চেয়েও জরুরি ছিল (ওমরাও সিংয়ের পারিবারিক জমিদারি মাজিথা এস্টেট নামে খ্যাত ছিল লাহোরে। এছাড়া তাদের ব্যাপক জনসম্পর্ক ছিল রাজনৈতিক কারণে)। পারিবারিক বলয়ে মেয়েদের সর্বক্ষণ আবৃত রাখার ব্যাপারে তাঁর খানিকটা আপত্তি থাকতে পারে (ভিভান সুন্দরমের অমৃতা সংকলন বই থেকে জানা যায়, পরে মেরি আনতোনিত্তের সিমলা থাকার সিদ্ধান্তকে অনেকে সমালোচনা করেছিলেন এই বলে যে, অমৃতা রুচিশীল উচ্চকিত বহুমাত্রিক একটি জনসংস্কৃতির পরিমণ্ডল থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রাথমিক বয়সে। আর সিমলার ঔপনিবেশিক এলিটিজম অমৃতার মনোজগৎকে রক্ষণশীল করে থাকতে পারে)। তারপর বহুদিন বাদে অমৃতা যখন ফরাসি শিল্পকলার পাঠ শেষ করে ভারতে ফিরলেন তখন তিনি নিজেকে অনেক প্রতিভাবান দেখতে পেতেন, নিশ্চিতভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারতেন উত্তর ভারতের সবচেয়ে প্রগতিশীল সংস্কৃতিবান সংস্পর্শে, যদি তিনি প্রথম থেকেই লাহোরে বাস করতেন। শেরগিল পরিবার তখন সিদ্ধান্ত নেয়, সিমলায় তারা পাহাড়ি উপত্যকায় বাড়ি কিনবে, যা মূলত ওমরাও সিংয়ের পারিবারিক জমিদারি থেকেও অনেক দূরে। অমৃতার মা মেরি আনতোনিত্তে চেয়েছিলেন একটি আনন্দঘন ব্যক্তিগত জীবন। সেভাবেই তিনি খানিকটা দূর রচনা করেছিলেন নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে। শেরগিল পরিবার রুচিশীল একটি বাড়ি বানিয়েছিল সিমলায়। অমৃতা এবং তাঁর দুই বছরের ছোট বোন ইন্দিরা তখনো স্কুলে যেতেন না। তাঁদের জন্যে বাড়িতেই শিক্ষক রাখা হয়। ইংরেজি আর ফরাসি শিখতেন তাঁরা বাড়িতে। নাচ আর পিয়ানোতেও ভর্তি হন তাঁরা। তৎকালীন মহারাজা ভূপিন্দর সিংয়ের আমন্ত্রণে ১৯২৩ সালের গ্রীষ্মে ফ্লোরেন্সের ভাস্কর প্যাস্কুইনেলি এসেছিলেন এই শহরে। তিনি তখন মার্বেল পাথরের আবক্ষ মূর্তি বানাতেন। মেরি আনতোনিত্তে তাঁকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তাঁদের পারিবারিক বন্ধুতে পরিণত হন। একপর্যায়ে মেরি আনতোনিত্তে তাঁকে কমিশন দিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যা অমৃতা ও ইন্দিরার আবক্ষ মূর্তি তৈরি করতে।
অমৃতার বয়স তখন দশ। চিত্র-প্রতিযোগিতায় নাম লেখান মা আনতোনিত্তে। অমৃতা সেখানে প্রথম পুরস্কার পান। পঞ্চাশ টাকা। মাত্র দশ বছরের অমৃতার অনন্য প্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁর মা সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠাবেন। চিত্রকলার জন্যে ফ্লোরেন্স তখন দারুণ মোহনীয়। রেনেসাঁসের শিল্প-আন্দোলনের রেশ চারপাশে। ফ্লোরেন্স তখন শিল্পকলায় সারাবিশ্বেই আকর্ষণীয়। যদিও বেশিরভাগ ভারতীয় তখন ব্রিটিশ শিক্ষাকেই সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভাবতেন। কিন্তু ওমরাও সিং বনেদি সাংস্কৃতিক আবহে বাস করতেন। অন্য ভারতীয়দের থেকে তাঁর রুচি আর জানাশোনা কিছু ভিন্ন ছিল। তাঁরা তাই সিদ্ধান্ত নেন অমৃতাকে নিয়ে ফ্লোরেন্স যাবেন।
বিষাদময় সেই অভিজ্ঞতার কথা পরে অমৃতা শেরগিল লিখেছিলেন তাঁর ডায়েরিতে। ফ্লোরেন্সে গিয়ে দুই বোন স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু অমৃতার সেই স্কুলের পরিবেশটি ভালো লাগেনি। অমৃতা লেখেন – তিনি ‘এই নামিদামি অভিজাত কিন্তু কদাকার’ স্কুলটিকে শেষে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলেন। অমৃতা কিছুতেই আর স্কুলের পরিবেশকে পছন্দ করতে পারেননি। শেষে অমৃতা তাঁর মাকে বাধ্য করেছিলেন আবার ভারতে ফিরে আসতে। তাঁরা ফিরে আসেন আবার সিমলায়।
ফিরে এসে অমৃতা নিজের মতো ছবি আঁকা শুরু করেন। হল বিভেন পেটম্যানের কাছে কিছুদিন ছবি আঁকা শেখেন। অনেক পরে লাহোরে অনেক নামিদামি শিল্পী গর্ব করেছিলেন এই বলে যে, তাঁরা অমৃতার প্রথম শিক্ষক ছিলেন। অমৃতা এই সময়ে তাঁর ছবি আঁকার বিষয় নির্বাচন করছিলেন জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট ফিল্ম থেকে, কখনো আমেরিকান রোমান্টিক নভেল থেকে, আবার কখনো টলস্টয়, দস্তয়েভস্কির চরিত্র থেকে। শেরগিল পরিবার মিউজিকের দারুণ ভক্ত ছিল। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। মেরি আনতোনিত্তের ভাই ইরভিন বাক্তে আসেন সিমলায়। তিনি হাঙ্গেরিতে ভারতের দর্শন নিয়ে গবেষণা করছিলেন তখন। গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে তিনি বিশেষ আগ্রহী। ভারতবর্ষের সভ্যতা আর সাংস্কৃতিক ইতিহাস তাঁর জানা। তিনি তখন শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান। ইরভিন বাক্তে কিছুদিনের মধ্যে অমৃতার শৈল্পিক প্রতিভা আবিষ্কার করেন। তিনি অমৃতার আঁকা ছবি দেখেন। আর এক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত ও সহজাত বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য নানাবিধ পরামর্শ দেন। আবেগপ্রবণতা কাটিয়ে খানিকটা নির্মোহ জীবনদৃষ্টি ছবি আঁকার জন্যে ভালো এই তত্ত্বে তাঁকে প্রাণিত করার চেষ্টা করেন। তাঁর নির্দেশনায় অমৃতা ক্রমেই শক্তিশালী এবং কিছু কৌণিক রেখা আঁকা চর্চা করেন। নিজের কিছু পোর্ট্রটে আঁকার ক্ষেত্রে দ্রুত তিনি এই কৌণিক এবং বক্ররেখার সুফল পান।
এই সময়ে ইরভিন বাক্তে অমৃতার মাকে প্রভাবিত করেন অমৃতাকে ইউরোপে শিল্পকলা পড়ানোর জন্যে। অমৃতার বয়স তখন ষোলো। তখন অমৃতার পরিবার আবার উদ্যোগ নেয় ইউরোপে যাওয়ার। বাক্সপেটরা নিয়ে ১৯২৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে তাঁরা আবার সিমলা ছাড়েন। প্রথমে তাঁরা দিল্লিতে ফতেহপুর সিক্রি দেখার জন্যে সেখানে কয়েকদিন থাকেন। তারপর সেখান থেকে তাঁদের জাহাজ ভেনিসের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। মেরি আনতোনিত্তের আগ্রহে তাঁরা কিছুদিন ইতালিতে ঘুরে বেড়ান। বিশেষত ভেনিসে রেনেসাঁসের সময়ের শিল্পকর্ম তাঁরা তখন খুঁটিয়ে দেখেন। মেরি আনতোনিত্তের প্রিয় শহর ছিল ভেনিস। তারা এই সময়ে কোমো হ্রদ, বেল্লাজিও, লেক লগানো এবং রোম ঘুরে বেড়ান। তারপর তাঁরা এক শীতরাতে প্যারিসের উদ্দেশে ট্রেন ধরেন।
জানা যায়, প্যারিসে এসে প্রথমে তাঁরা ফিলবার্ট প্যাসিতে ঘর ভাড়া নেন। এই সময়ে অমৃতা আর বোন ইন্দিরা আলফ্রেড করটটের সংগীত স্কুলে ভর্তি হন। অমৃতা এখানে প্রথমে কিছুদিন জোসেফ নিমেসের (নামি শিল্পী এবং ইরভিন বাক্তের বন্ধু) কাছে ছবি আঁকা শেখেন। তারপর অধ্যাপক পিয়ের ভ্যাইল্যান্টের কাছে ছবি আঁকা শেখেন। জানা যায়, ক্রমেই অমৃতার প্রিয় হয়ে ওঠেন এই শিল্পী। স্কুল ছাড়ার প্রাক্কালে অমৃতা তাঁর পোর্ট্রেট করেন। তারপর অমৃতা লুসিন সিঁমোনের অধীনে ফরাসি দেশের বিখ্যাত চিত্রবিদ্যালয় একোল দ্য বোজারে ভর্তি হন অক্টোবরে। সেখানে তিনি লুসিন সিঁমোনের খণ্ডকালীন শিক্ষার্থী ছিলেন।
অমৃতার জীবনের গন্তব্য নির্ধারিত হয়েছিল প্যারিসের এই একোল দ্য বোজার শিল্পবিদ্যালয় থেকে।
উত্তর ভারতের একটি পাহাড়ি উপত্যকার মেয়ে অমৃতা শেরগিল শিল্পশিক্ষা নিতে এসেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চকিত শহরে, যে-শহর ছিল তখন সারা পৃথিবীর সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। শিল্পকলার রাজধানী। এটি নিশ্চিতভাবে শিল্পের ইতিহাসে একটি দুর্লভ ঘটনা। অমৃতার শিল্পীজীবনকে ত্বরান্বিত করেছিল তাঁর পারিবারিক সিদ্ধান্তটি। অমৃতার জীবনব্যাপী দেখি এর প্রভাব। ছবি আঁকার প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা, উৎকণ্ঠা, আবেগ। সারাজীবন তিনি ভারতের অমৃতসর, লাহোর, আগ্রা, দিল্লি, সিমলা আর ইউরোপের নানা অঞ্চল বুদাপেস্ট, জেবেগনি, হাঙ্গেরি, প্যারিস, রোম ঘুরে বেড়িয়েছেন।  প্রথম জীবনে ফরাসি দেশেই তিনি শিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতবর্ষকে নতুন করে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এর শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আশ্চর্য টান অনুভব করে ফিরে এসেছিলেন সেখানে। একসময় প্রাচ্য আর প্রতীচ্য মিলে অমৃতা হয়ে উঠেছিলেন মিথ। তাঁকে প্রাণিত করেছিল পশ্চিমা শিল্প-আন্দোলনের নির্যাস। ফরাসিদেশের শিল্পসমৃদ্ধ ঘটনা তাঁর চিন্তাজগৎকে আলোড়িত করেছিল। আরেক দিকে প্রাচ্যের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য তাঁকে মোহিত করেছিল। নিজের ভেতরে অনুভব করেছিলেন তিনি ভারতবর্ষের শেকড়, তার প্রাচীন চিত্ররীতির বনেদি জৌলুস। একদিকে কাংড়া বাশোলি কিষানগড় তেহড়ি গাড়োয়াল চিত্ররীতির ছাঁট, আবার অন্যদিকে নিজের মধ্যে বহন করেছিলেন তিনি মায়ের ঐতিহ্যে পাওয়া ইউরোপের ইম্প্রেশনিস্ট রঙের আভিজাত্য আর ফর্ম। এই দুই সংস্কৃতির দ্বিবিধ নির্যাসে তিনি বেড়ে উঠেছেন। তাই অনায়াসে তাঁর রক্তে প্রবাহিত হয়েছিল এই দুই সংস্কৃতির আশ্চর্য ঐকতান। আর সেখানেই অহর্নিশি খোঁজা এবং উৎসারণ পরে তাঁর ভবিষ্যতের শিল্পীজীবনকে সুনির্দিষ্ট করেছিল।
একসময়ে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে অমৃতা ফিরে এসেছিলেন, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তার আগে অমৃতার বাবা-মা হাঙ্গেরি থেকে সিমলা আসেন ১৯২১ সালে। পরে পাকাপাকিভাবে অমৃতা লাহোরে চলে আসেন ১৯৩৪ সালে। লাহোর তখন প্রাচ্যের প্যারিস। আন্তর্জাতিক শহর। প্রগতিশীল সংস্কৃতির পাদপীঠ। জাহাঙ্গীরের শাসনামলে মোগল রাজধানী ছিল লাহোর। উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে লাহোর এক আশ্চর্য স্বাক্ষর রাখে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যা গুরুত্বপূর্ণ। অমৃতা এই শহরে স্থায়ীভাবে বাস করতে চলে আসেন হাঙ্গেরি ছেড়ে। অসংখ্য বন্ধু আর শুভাকাক্সক্ষী-পরিবেষ্টিত অমৃতা ১৯৩৭-এ প্রদর্শনীর সাফল্যের পর উদ্বুদ্ধ হন নতুন করে। এই শহরের সবচেয়ে বনেদি আভিজাত এলাকার মল রোড, ঠিক তার কাছে গঙ্গারাম ম্যানসনে অমৃতা একটা আকর্ষণীয় ঘর ভাড়া নেন। ছাদে তাঁর স্টুডিও, নিচে ভিক্টর ইগানের ক্লিনিক। নিজের ছবি আঁকার স্টুডিও নিয়ে অমৃতা উচ্ছ্বসিত ছিলেন। আড়ম্বরহীন, আসবাবহীন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে অমৃতা বন্ধুদের কাছে বারংবার তাঁর আনন্দ প্রকাশ করতেন। বন্ধুদের কাছে, মায়ের কাছে চিঠিতে লেখেন তিনি তাঁর স্টুডিও বিষয়ে। লাহোর ছিল তখন সাংস্কৃতিক চর্চার মূল কেন্দ্র। আর এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল আকর্ষণীয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০-এর দশকে বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন আবদুর রহমান চুঘতাই, যিনি গালিব আর ইকবালের কবিতা নিয়ে অনেক ইলাস্ট্রেশন করছিলেন তখন। এসব নিয়ে অমৃতা বেশ সোচ্চার মত প্রকাশ করতেন। লেখক আর শিল্পীদের আরাধ্য শহর লাহোর। বিখ্যাত শিল্পী তখন ভবেশ সান্যাল (১৯০২-২০০৩)। অমৃতার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। সান্যালের স্টুডিও তখন লাহোরের চারুকলা। অমৃতার সঙ্গে তাঁর ক্যালকাটা স্কুল আর বেঙ্গল স্কুলের আদর্শ ও শৈলী নিয়ে তুমুল বাগ্বিতণ্ডার কথা আমরা জানতে পারি সান্যালের লেখা থেকে (অমৃতার মৃত্যুর পর ভিক্টর ইগান তাঁকে অমৃতার ব্রাশ, প্যালেট, রং ইত্যাদি দিয়ে দেন)।
কার্লখান্ডালাভালা অমৃতার ছবির সমালোচনা লেখেন। বলেন, হাঙ্গেরির পেস্ট, ভেরোসের প্রকৃতি পাওয়া যায় অমৃতার ছবিতে। এর বিপরীতে আরেকটি শৈলী তাঁকে প্রাণিত করেছিল। যেটা ছিল নাটকীয়, সারফেস ফ্ল্যাট রেখে নম্য গড়নের। এটা অমৃতা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারেননি বলে মনে করেন অনেকে। সমস্ত দৃশ্যকল্পকে প্রত্যক্ষ করার এক আশ্চর্য প্রখরতা ছিল ওর চরিত্রে। মাকে চিঠি লিখেছিলেন, ‘আমার ছবিতে তুমি শুধু চাষির জীবন দেখবে। ভিনসেন্টের সঙ্গে আমার পার্থক্য নেই বেশি।’ যার সাক্ষ্য হিসেবে তিনি পটেটো পিলার ছবিটি আঁকেন। হাঙ্গেরির সাধারণ খাদ্য আলু। এই আলুচাষিকে অমৃতা ভারতের হিমাচল প্রদেশেও দেখেছেন। তাঁর ছবিতে চাষি ছিল অতিরিক্ত শ্রমভারে ন্যুব্জ, বিষণœ। তাঁর ‘হলদি গ্রাইন্ডার’ ছবিতে বাহ্য জগৎকে প্রতীকরূপে গ্রহণ করার ইঙ্গিত পাই আমরা। ফিগারের কম্পোজিশন সিমেট্রিক। উজ্জ্বল কমলা রংকে মেটে রং দিয়ে ম্রিয়মাণ করে তুলতেন। রঙের মূল উৎসে পশ্চাৎপটে অন্ধকারে মিশিয়ে দেওয়ায় দারুণ দক্ষ তিনি। পেছনে তিনটি অন্ধকারের উল্লম্ব পুনরাবৃত্তি সামনের সাদা রংকে ছাড় দেয়। গেরিমাটি রঙে বিষাদ মলিন একটি পরিবেশ, যেখানে দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, কমলা আভায় নিস্পৃহতা। অমৃতার বাবা-মা ছিলেন বনেদি মেজাজের। প্রগতিশীল, সংস্কৃতিবান। ওমরাও সিং শেরগিল পাঞ্জাবের শিখ সংস্কৃতিবান ধর্মাবলম্বী। লাহোরে তাঁদের আদি নিবাস, বিরাট জমিদারি। দর্শনতত্ত্বে, আধুনিক সাহিত্যে, শিল্পকলায়, অনিঃশেষ আগ্রহ এই পরিবারের। এই পরিবারের অসংখ্য ছবি আছে বর্তমান ভারতের আর্কাইভে। মা আনতোনিত্তে ছিলেন পিয়ানোবাদক। এই পরিবারের সর্বদা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কবি, সাহিত্যিক আর শিল্পীরা। অমৃতার শৈশবে এই পরিবেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অমৃতা লাহোরে ফিরেছিলেন ১৯৩৪ সালে। শিল্পী হিসেবে তিনি এখানে তাঁর গন্তব্য ঠিক করেছিলেন। ভারতবর্ষের শিল্পচর্চায় বেঙ্গল স্কুলের রুদ্ধতা নিয়ে অমৃতা লিখেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান আর্ট টুডে’ নামে এক প্রবন্ধে। মৌলিক প্রশ্ন রেখেছিলেন, বলেছিলেন পাশ্চাত্য আধুনিকতার অনেক কিছু ছিল গ্রহণ করার মতো। কারণ সেটা ছিল অনেকখানি প্রাচ্য থেকে আহরিত, যা আমাদের হয়ে উঠতে পারত তা না নিয়ে, আমরা বাহ্যিক জিনিসপত্র নিলাম কেন?
কিসকুনহালাস একসময় ওর প্রিয় শহর ছিল। এখানেও অমৃতা হাঙ্গেরিয়ান শিল্পী সংগঠন ‘সাসলিকেটে’র ইসবান জনির ছবি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। অমৃতা হাতি আঁকতেন। হাতি তাঁর কাছে ভারতবর্ষের প্রতীক। এই হাতি যা অতিকায়, বলশালী। এর বলিষ্ঠতা অমৃতার কাছে ভারতবর্ষের মতো। অনেক সমালোচকের মতে অমৃতা ছবিতে অতিক্রম করেছেন প্রাদেশিক সীমানা যেমন কিসকুনহালাস অথবা লাহোরকে। একইভাবে ইরফান জনি সেলমেকবানিয়া (হাঙ্গেরির প্রধান একটি শহর) থেকে মরক্কোকে। এই দুই শিল্পীর ছবিতেই হাঙ্গেরির প্রভাব আছে অপরিহার্যভাবে। তাঁদের দুজনেরই শৈশব দানিয়ুবের তীরে। ছবি এঁকেছিলেন তাঁরা প্রাচ্যের বিষয়বস্তু নিয়ে। ভারতবর্ষে অজন্তার পর অনেক চিত্রশৈলী জন্ম হয়েছিল। কাংড়া, পাহাড়ি, রাজপুত, বাশোলি। এসবই আকর্ষণ করেছিল অমৃতা শেরগিলকে। ১৯৩৪ সালে যখন ভারতে আসেন অমৃতা তখন একোল দ্য বোজার থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন। ভারতবর্ষের শহরতলিতে তাঁর পূর্বপুরুষের স্মৃতি, তাঁর নিজের ছেলেবেলা বেড়ে ওঠা। ইউরোপে দেখে এসেছেন আধুনিক শৈলীর বিকাশ। কিউবিজম, এক্সপ্রেশনিজম, সুররিয়ালিজমেরও শেষ আলো আছড়ে পড়ছে। গগ্যাঁতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন কিছুদিন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪১ – এই ছয় বছর অমৃতা ছবি এঁকেছিলেন ভারতে। নিজের পোর্ট্রটে করেছিলেন। পোর্ট্রেেট লাল পশ্চাৎপট এবং উচ্ছলতার স্বতন্ত্র স্বাক্ষর রেখেছিলেন। লাহোরের অমৃতসরে গিয়েছিলেন যেখানে তাঁর নিজেরই পৈতৃক বাড়ি ছিল। সেখানে দেখেছেন পাহাড়ি ছবি। ভারতের লোকাচার, প্রাত্যহিক জীবিকা, আটপৌরে জীবনের যৌথ অন্বেষণগুলো তখনই প্রিয় হয়ে ওঠে। ‘হিল উইম্যান’ আঁকেন। রঙের বৈপরীত্য, কাউন্টার পয়েন্টের প্রয়োগে আলোর ঘনত্ব, ভলিউম সবকিছু ছাপিয়ে প্রতীক আভাস আধুনিক চিত্রভাষার মতোই ব্যবহার করছিলেন অমৃতা। ভারতবর্ষের ধ্রুপদী চিত্রকলার ঐতিহ্যের ছাঁট থেকে তিনি আধুনিকতা অন্বেষণ করেছেন। অনেকে মনে করেন – ইউরোপের বাস্তব থেকে অমৃতা কিছুই নেননি। রঙের দিক দিয়ে তিনি ভারতীয়। শৈলজ মুখার্জী বলেছেন – ‘অমৃতা খানিকটা মাঁতিসে প্রাণিত ছিলেন। অমৃতার ছবিতে গীতিকাব্যের রং পাওয়া যায়। সাদা, ক্যাডলিয়াম, হলুদ, উজ্জ্বল লাল, এমারেল্ড সবুজ, ভ্যানেসিয়ান লাল, আলট্রামেরিন, আইভরি ব্ল্যাক। অদ্ভুত এক সাদার আধিক্য ‘স্টোরি টেলার’ অথবা ‘এলিফ্যান্ট প্রমেনাদ’ ছবিতে দেখা যায়। এই রঙের ব্যবহার অমৃতাকে ভারতের পাহাড়ি কাংড়া আর বাশোলির প্রতি ঐতিহ্যলগ্ন থাকার ইঙ্গিত দেয়। ফোরশর্টেনিং, পরিপ্রেক্ষিত নেই তাঁর ছবিতে। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে অস্পষ্ট সংমিশ্রণ প্রাচ্যতার পরিচয়। শান্ত পরিবেশে তীব্র আবেগের ভূমি রচনা করেন তিনি শুধু রং দিয়ে। ভারতীয় চিত্রকলায় এক রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কেউ এভাবে রং ব্যবহার করেননি। এই রং চিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে অমৃতার ছবিতে অমরতা পায়। রঙের অবারিত জমক ছিল অমৃতার ছবির প্রাণ। মেটে লাল, বাদামি, সবুজ আর অদ্ভুত সাদাকে নানাভাবে ব্যবহার করতেন তিনি। চামড়ার রং বাদামি। খরখরে ত্বক। শিল্প-সমালোচক কার্লখান্ডালাভালা লিখেছিলেন – ‘অমৃতা শেরগিল অতীতের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছিলেন ভারতবর্ষের ছবিকে।’ প্রভাব ছিল সেজানের। অজন্তার একটা ফ্রেস্কো অমৃতাকে যতখানি প্রভাবিত করেছিল ইউরোপীয় রেনেসাঁস রাফায়েলের ম্যাডোনা বা ভিঞ্চিতেও তিনি ততখানি প্রভাবিত ছিলেন না। অমৃতা বলতেন – ‘হোলবাইন বা ভিঞ্চির রেখা অজন্তার মতো নয়। অজন্তার রেখায় প্রাণ আছে। এই দেহরেখা পৃথিবীতে নেই।’ যাকে কনট্যুর বলা যায়, ক্যানভাসে, পাথরে যা হিরে-জহরতের মতো জ্বলে থেকে হারিয়ে যায়। দেহের আকার রেখা নয় শুধু।  ড্রয়িংও নয়। শুধু গাঢ় ফিকে করলেই যেখানে নানাবিধ তল-অতল পাওয়া যায়। বাস্তবের নয় কিছুই। মোগল অনুচিত্রের ফুল, নকশা ইত্যাদির স্টাইলাইজেশন তাঁকে প্রভাবিত করে থাকবে। রাজপুত ঘরানার প্রতি খানিক আকৃষ্ট হন তিনি। গাঢ় ও হালকা রঙের তারতম্যে আভাসিত প্রকৃতি আঁকেন তিনি। তাঁর ছবিতে নারী-পুরুষের অভিব্যক্তি চোখে শুধু নয়, দেহরেখাতেও প্রগাঢ় হয়ে ফোটে। কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন – ভারতের আদি বুনিয়াদ বুঝতো না অমৃতা। অজন্তা ঘুরে অমৃতার ছবি পরিণত হয়েছিল। আর সমালোচক কার্লখান্ডালাভালা বলেছেন – বেঙ্গল স্কুলকে আঘাত করেছিল অমৃতার ছবি। ভারতবর্ষের দরিদ্র মানুষ আঁকতে গিয়ে অমৃতা আনন্দকেও প্রকাশ করতে সফল ছিলেন। তাঁরা মনে করতেন, অ্যাকাডেমিক রিয়ালিজমের বিপরীতে ছিল তাঁর ছবি। এক হাতে বিরুদ্ধভাব, বৈরিতা, অন্য হাতে একটি স্বতন্ত্র নতুন ধারা। চোখ থেকে কতগুলো জিনিস যত দূরে সরে যায় ততই তাদের আনুপাতিক সম্বন্ধগুলো বদলে যেতে থাকে। ওজন আছে, সতেজ শিরদাঁড়া আছে এমন মুখ আঁকতে গেলে ছন্দ গঠনে জোর দিতে হয়, সেদিকে অমৃতা অনন্য অবদান রেখেছেন। সেজান সেখানে আদর্শ। ক্যানভাসের সমতল পরিসর, অনুচ্চকিত মুখ, কালো বা মেটে রং দিয়ে অন্য রংকে নিষ্প্রভ করা, রঙের জোরালো বৈষম্য তৈরি করা। এগুলোই ছিল তখন নতুন চিত্রভাষা। জওয়াহেরলাল নেহরুর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। বোরাকপুর জেলে দেখা করতে যান অমৃতা। ইন্দিরাকে লেখা জওয়াহেরলাল নেহরুর চিঠি বই আকারে প্রকাশ হলে সেটি অমৃতাকে পাঠান নেহরু। সেই বই নিয়ে অমৃতার মন্তব্য জানা যায় ভিভান সুন্দরমের অমৃতার জীবনী সংকলন থেকে। শিল্প-সমালোচক কার্লখান্ডালাভালাকে লেখা শেষ চিঠিতে অমৃতা বলছিলেন, ‘আমি সারাদিন উট আঁকি, হাতি আঁকি, কালো মহিষ আঁকি – খানিকটা বিমূর্তভাবে আঁকি। যেন ওপর থেকে দেখা। সেজান থেকে শিখেছি কী করে দেখতে হয় বস্তুকে। ছাদের ওপরে আমার স্টুডিও। এর নাম দিয়েছি ‘টেরাসে’, সেখানে বসে আমি দূরদৃশ্য আঁকছি।  রাজস্থান আর বাশোলি চিত্রমালা থেকে রং নিয়েছি, যা দিয়ে আধুনিক নিসর্গদৃশ্য আঁকতে বসেছি।’
অমৃতা আলোছায়া বাদ দিয়ে ছবি এঁকেছেন। মানের ছবিতে যে-ছায়া একটি মাত্র রেখাতে গিয়ে মিলেছিল আর ভিনসেন্টে গিয়ে যা একেবারে নিঃশেষিত হলো। অমৃতাও বাদ দিয়েছিলেন সেই ছায়া। শুধু একটি মাত্র কালো রেখাতে সব ছায়াতপ, সব আলোর সংবেদ ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এরকম এক প্রাকৃতিক রেখার সন্ধান মেলে বৌদ্ধ ধর্মের শ্রমণদের ছবিতে। বাশোলি মেয়ের চোখের অনুচিত্রে যে-রেখা সতেজ। অজন্তার ছবিতে কম্পোজিশন ভিড়ে ভারাক্রান্ত থাকত। কিন্তু অমৃতাতে এই ভিড় হলো অভিনব। অনেকে মনে করেন, পূর্ব-পশ্চিমের টানাপড়েন অমৃতার ছবিতে বাধা হয়নি। অবনীন্দ্রনাথের স্বকীয় প্রতিভা, নন্দলালের স্বাদেশিকতা, যামিনী রায়ের লৌকিকতা, গগনেন্দ্রনাথের প্রতীচ্য আধুনিকতার যে-প্রয়াস তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল অমৃতা শেরগিলের অন্বেষণ। আধুনিকতার যে-দিগন্ত তিনি প্রসারিত করতে পেরেছিলেন। অনেক সমালোচক মনে করেন সেই প্রবাহের মধ্যেই ভারতবর্ষের আধুনিক শিল্পের সূত্রপাত। অন্তত বিশ শতকের অনেক শিল্পীর কাজের ভেতরে সেই অভিব্যক্তির নির্যাস দেখি। তাঁর ‘পাহাড়ি মেয়ে’ কিংবা ‘ব্রাইডস টয়লেট’ ছবিতে অথবা ‘হলুদ পেষা’তে প্রকৃতির এক মিনিয়েচার ফর্ম পাওয়া গেল। বাশোলি ছবির নাটকীয়তা। দৃশ্যের রূপান্তরিত সত্তাকে আঁকলেন এই শিল্পী। দূর অজন্তাতেও, ভারতীয় মন্দিরের টালি চিত্র আর প্রতিমা থেকে কালো রঙের এক মোহনীয় দ্যুতি দেখা গেল সেখানে। এই কালো রঙের ছাঁট অমৃতা গাঢ় বাদামি রঙের সঙ্গে মিশিয়েছিলেন, যা দিয়ে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সমন্বয়ে তৈরি হলো আশ্চর্য দৃষ্টান্ত। চিরাচরিত ভারতীয় মিনিয়েচার উপাদানকে ভাঙলেন অমৃতা নতুন ছন্দে। উজ্জ্বল রঙের জমিনে তৈরি হলো আলো সৃষ্টির নতুন কৌশল। বেঙ্গল স্কুলের ছাত্ররা যখন অজন্তাচিত্রের অতি সুন্দর নকল করে ইজেল পেইন্টিং নিয়ে উচ্ছ্বসিত থাকত, অমৃতা তখন খুঁজতেন বাস্তব পৃথিবীর চিত্র। মানুষের মুখ।
অমৃতা শেরগিল সাধারণ মানুষকে এঁকেছিলেন। খুব সাদামাটা তাদের পোশাক। কোনো পরিপ্রেক্ষিত নেই, ফোরশর্টেনিং নেই। সুকুমার ললিত নারীচিত্র নয়, বেঙ্গল স্কুলের লালিত্য নেই বরং অভাব-অনটন, দৈনন্দিন জীবনের অন্তর্নিহিত সত্য রূপ আনলেন তিনি ছবিতে। ভারতবর্ষের বেঙ্গল স্কুলের শৌখিন সাহিত্যিক ভাবালুতা থেকে। কঠিন অভিঘাতের রেখা দিয়ে ছবির জমিনকে বিভাজিত করলেন। রং আর রেখার অচ্ছেদ্য মিলনে এমন সংহত রূপ ভারতবর্ষের ইতিহাসে আর আছে শুধু রবীন্দ্রনাথে, তারপর অনেক পরে বাংলাদেশের শিল্পী জয়নুল আবেদিনে। গাড়োয়াল প্রদেশের বাণিজ্যবন্দরে পূর্ব ইউরোপের জেবেগনি শহরতলিতে, কলকারখানার প্রলয়ে উৎকণ্ঠিত মানুষের ওপর এই শতকের শুরুতে যে-ফ্যাসিজম, মহাযুদ্ধ আর ঔপনিবেশিকতার ঝড় বয়ে গেছে, তা নিয়ে অমৃতা ‘দ্য ইফেক্টস অব ওয়ার অন আর্ট’ নামে একটি আর্টিক্যাল লিখেছিলেন, যদিও সেটি ছাপা হওয়ার আগেই অমৃতার দুঃখজনক মৃত্যু হয়।
অমৃতা আর্ট টুডেতে বেঙ্গল স্কুল নিয়ে সমালোচনা করলেন। এই প্রদেশে অমৃতা দেখেছিলেন অতিরঞ্জনে ভরা মানুষের জীবনকাহিনি। এঁকেছিলেন – ‘সাউথ ইন্ডিয়ান ভিলেজারস গোয়িং টু দ্য মার্কেট’, ‘ব্রাইডস টয়লেট’। অমৃতা এদেশে কাংড়া আর বাশোলি ছবিতে দেখেছিলেন প্রেমগাথা। রাজস্থানের মানুষ তাদের দেশ ফেলে পাহাড়ে পড়ে থাকে সারাবছর। পাঞ্জাবের দক্ষিণে দেশময় গহিন জঙ্গলে আবৃত। তারা ঘর বাঁধে না কোনোদিন। পাঞ্জাবের প্রবাস তাঁদের দেশ নয়। অমৃতা দেখলেন, তাদের এই ক্ষুধা গীতিকাব্যের মতো পাহাড়ি ছবিতে বাসা বেঁধেছে। কোনো আখ্যান নেই সেখানে। শুধু এক তদ্গত স্বপ্ন। গাছ, ফুল, নদী, বৃষ্টি, পাখি কিংবা মানুষের স্বপ্ন এখানে প্রতীকী হয়ে ফোটে। তাদের জীবনাচার খানিকটা আলাদা। একমাত্র পাঞ্জাবের ছবিতে কোনো বাস্তব পৃথিবীর রং নেই। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এ ঐতিহ্য অমৃতা ‘ব্রাইডস টয়লেট’ ছবিতে ব্যবহার করলেন। অমৃতা যখন প্যারিসে, তখন মৃত্যুই ফরাসি সাহিত্যের প্রধান বিষয়। প্যারিস থেকে বসন্তের ছুটিতে হাঙ্গেরিতে বেড়াতে এসেও অমৃতা দেখেছিলেন মৃত্যু, শবযাত্রা। তেইশ হাজার মানুষ মরেছিল সেবার। সারি সারি কফিন টানা গাড়ি দেখেছিলেন তাঁর প্রিয় জেবেগনি শহরে।  সিমলায় এসে অমৃতা এঁকেছিলেন ‘পাহাড়ি দৃশ্য’ এবং ‘কলা বিক্রেতা’ ছবি।
বাশোলি, কাংড়া, জম্মু, তেহড়ি গাড়োয়াল আর পাহাড়ি চিত্রকলা থেকে প্রাণিত হয়েছিলেন অমৃতা শেরগিল। বাশোলি ছবিতে ছায়াতপহীনতা, অলংকরণ, রং, নান্দনিক আবেদন, কাংড়ার মিনিয়েচার ফর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করে। পাহাড়ি ছবির বিশিষ্টতা অমৃতা অনুধাবন করেন তখন। এ নিয়ে অমৃতা চিঠি লিখেছিলেন শিল্প-সমালোচক বন্ধু কার্লখান্ডালাভালাকে। মোগল চিত্রকলার পারস্য প্রভাব নিয়ে তার বৈশিষ্ট্যে গাছপালা, পাখি আর পাথর নিসর্গ বা মুখে, শরীরে এক ধরনের অ্যাবস্ট্রাক্ট স্টাইলাইজেশন নিয়ে অমৃতা সেখানে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অমৃতা বলছিলেন, নন্দলাল কত বুদ্ধিহীনভাবে সেসবকে ইল্যুশন হিসেবে ব্যবহার করেছেন বেঙ্গল স্কুলের প্রভাবে। কিন্তু এক টুকরো জাপানি ছবি অথবা অজন্তার তুলনায় তা কতখানি প্রাণহীন। যেখানে যামিনী রায়ের রেখাও কতখানি শ্রমসাধ্য আর মৃত হয়ে পড়ে অজন্তা থেকে অন্ধ অনুকরণের কারণে। বেশিরভাগ সমালোচক মনে করেন, আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে ব্যতিক্রমী, সর্বতোভাবে বিস্ময়কর এক নতুন আদর্শ তৈরি করেছিলেন অমৃতা শেরগিল।
আর কিছুদিন পরেই অমৃতার প্রদর্শনী হওয়ার কথা পাঞ্জাব লিটারেরি লিগ হলে। তারই আয়োজন চলছিল। কয়েকটি ক্যানভাসে একসঙ্গে রং চাপিয়েছেন। বিরাট জনপদ, জনমনুষ্যিহীন রেলস্টেশন। পরিত্যক্ত শহর। নিজের পোর্ট্রটে। হাতি। ব্রহ্মচারী। অমৃতার সেই দিনগুলো উচ্ছ্বসিত ছিল বন্ধুবান্ধব সান্নিধ্যে। আর মাত্র অল্প কদিন পরেই তাঁর প্রদর্শনী। অমৃতার চিঠিতে আছে সেসব দিনের ভাবনার কথা। ৩০ নভেম্বর অমৃতা তাঁদের পারিবারিক বন্ধু আবদুল কাদিরের (হাইকোর্টের জজ) বাসায় বিকেলে চায়ের নিমন্ত্রণে যান। জানা যায়, পরে সেখান থেকে ফিরে অমৃতা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। ডিসেম্বরের ২ তারিখে শেষ তিনি লিটারেরি লিগ হলে গিয়েছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে প্রদর্শনী বিষয়ে নানা পরামর্শ আর শেষ জরুরি কাজগুলো সেরে নিচ্ছিলেন। বাড়তি আকর্ষণ জুড়তে কী করা যায় তাই নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিল শিখরাজবেশে তাঁকে প্রদর্শনীতে আসতে। ৩ ডিসেম্বর বিকেলে অমৃতার বাড়িতে যান তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ইকবাল সিং। সেখানে তিনি নিচে ভিক্টরের (অমৃতার বর) ক্লিনিকে কাউকে দেখতে পান না প্রথমে। পরে তিনি অমৃতার শোবার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিলে অমৃতার বিধ্বস্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পান। অমৃতা তাঁকে জানান, তাঁর ডিসেন্ট্রি হয়েছে। ভিক্টর তাঁকে চিকিৎসা করছিলেন। পরে ভিক্টরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। অমৃতার পারিবারিক বন্ধু চামানলাল শহরের বিখ্যাত ডাক্তার নিহাল চন্দ্রকে খবর দেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনি এসে অমৃতাকে পরীক্ষা করেন এবং খারাপ অবস্থার কথা জানান। তিনি বলেন, আরো দুদিন আগে চিকিৎসা দিলে অমৃতাকে ভালো করা সম্ভব ছিল। অমৃতা তখন পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন। অমৃতা শেরগিল ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরের ৫-৬ এর মধ্যরাতে মারা যান। বাবা-মাকে আগেই টেলিগ্রাম করা হয়েছিল। তাঁরা সিমলা থেকে এসে পৌঁছান ৬ তারিখ বিকেলে। রাভি নদীর ধারে ৭ তারিখে শিখ ধর্মমতে অমৃতাকে দাহ করা হয়। অমৃতার বাবা তাঁর উদ্দেশে শ্লোক পাঠ করেন।
ক্যানভাসে রং তখনো টাটকা, শেষ না হওয়া ছবিটিতে তখনো জ্বলজ্বলে ব্রাশ স্ট্রোক। চিতায় গনগনে আগুন। অমৃতাকে পোড়ানো হচ্ছে, বাবা-মা-বন্ধুরা নির্বাক। সকলে অবাক হয়ে দেখলেন একটি অগ্নিময় জ্যোতিষ্ক। যাঁর জন্ম কিংবা জীবন আর কারো মতো নয়, এমনকি মৃত্যুও নয়। পরে বন্ধুদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কফিনে অমৃতার মুখটি কাশ্মীরি শালের ভেতর আশ্চর্য বিধ্বস্ত ছিল। তখন হাঙ্গেরিতে নাৎসিরা ইহুদিদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। সেই শহর থেকে অনেক দূরে ভারতবর্ষের পাঞ্জাব প্রদেশে অমৃতা ফিরে এসেছিলেন পাকাপাকিভাবে। আর এই ফিরে আসা নিয়ে নানাবিধ আয়োজনের কথা জানা যায় তাঁর অসংখ্য চিঠি থেকে। অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ভারতে ফিরে আসার। তিনি মুঘল, বাশোলি, কাংড়া, পাহাড়ি, রাজপুত, কিষানগড়, চাম্বা চিত্র-ঐতিহ্যকে আধুনিক করণকৌশলে ব্যবহার করার কথা ভাবছিলেন। ভারতের চিত্রশিল্পের ইতিহাসে যা ছিল এক তাৎপর্যময় ঘটনা।

পাদটীকা
১.     কিসকুনহালাস – শিল্পকলার জন্য এক বিখ্যাত শহর। হাঙ্গেরির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন ইথনোগ্রাফিক স্থান হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া শহরের সাধারণ মানুষের জমায়েতস্থল হিসেবে বিশেষ পরিচিত হাঙ্গেরিতে।
২.    জেবেগনি – দানিয়ুবের তীরে মনোরম শহর। ছবির মতো সাজানো এই শহরের নিসর্গ শিল্পীদের অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। একে বলা হতো রিসোর্ট অব পেইন্টারস।
৩.    দুনাহারাসৎজটি – দানিয়ুবের পারে বুদাপেস্ট শহর থেকে মাত্র বিশ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। অমৃতার খালার বাড়ি। নিভৃত শহরতলি। বসন্তের অবকাশ কাটাতে ইউরোপের লোকজন এই শহরে যেত।  অমৃতা এই শহরে অনেক ছবি এঁকেছেন।
৪.    এন্দ্রি আদি – বিশ শতকে হাঙ্গেরির শ্রেষ্ঠ কবি। জন্ম-২২ নভেম্বর ১৮৭৭, মৃত্যু-২৭ জানুয়ারি ১৯১৯, ফরাসি প্রভাবে লিখিত তাঁর কাব্যে পূর্ব-প্রজন্মের কবিতার প্রতি কটাক্ষ লক্ষণীয়। অমৃতা বিশেষভাবে প্রাণিত ছিলেন তাঁর কবিতায়।

Leave a Reply