সৌ মি ক ন ন্দী ম জু ম দা র
সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে, নন্দন কক্ষে, স্বনামখ্যাত শিল্পী যোগেন চৌধুরীর একক প্রদর্শনী হয়ে গেল ১১ থেকে ২৮ ফেব্র“য়ারি, ২০১৩ অবধি। বিপুলসংখ্যক ও নানান ধরনের শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ এই প্রদর্শনী একাধিক কারণে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, বলে রাখা ভালো যে যোগেন চৌধুরী দিল্লি থেকে শান্তিনিকেতনে চলে এসেছিলেন ১৯৮৭ সালে, কলাভবনে চিত্রকলা বিভাগের অধ্যাপকরূপে। এখানে পাকাপাকিভাবে বসবাস তখন থেকেই। অথচ শান্তিনিকেতনের বুকে শিল্পীর একক প্রদর্শনী এই প্রথম। শান্তিনিকেতন বাসিন্দাদের কাছে তাই এটা বিরল ঘটনা। দ্বিতীয়ত, পূর্বাপর রূপে পরিকল্পিত এই প্রদর্শনীর প্রতিটি কাজই শিল্পীর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নির্বাচন করেছেন স্বয়ং শিল্পী। তৃতীয়ত, এই প্রদর্শনী আয়োজিত হলো যেখানে, অর্থাৎ কলাভবনে, সেখানে যোগেন চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় – অধ্যাপক। হয়তো কখনো কখনো তাঁর বিশ্বজোড়া শিল্পী-খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে সেই পরিচয়ের মূল্য, কিন্তু এই ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের এক প্রদর্শনীর প্রধান অভিপ্রেত দর্শক হলো শিক্ষার্থীবৃন্দ। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছে এই প্রদর্শনী যেন আরেক শিক্ষার্থীর গড়ে ওঠার উদার পাঠ। নির্বাচন অবশ্যই আছে, তা সংগত কারণেই আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ যেন খ্যাতির চূড়া থেকে নেমে এসে নিজের সুদীর্ঘ পথকে যতœ করে দেখার ও দেখানোর আয়োজন। তাঁর সুবিখ্যাত শৈলীর প্রকোপ থেকে মুক্ত হয়ে, এই প্রদর্শনীতে কখনো পর্যায়ক্রমে, কখনো বা কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী, যোগেন চৌধুরী নিজেই রচনা করলেন – বলা যায় কিউরেট করলেন – এক অভিনব আত্মজীবনী। নির্মাণ ও বিনির্মাণের কৌশলে শিল্পী উঠিয়ে আনলেন অনেক সূত্র, মেলে ধরলেন নানান মাধ্যম, প্রকরণ ও শৈলী সংবলিত বিচিত্র এক বিশাল ক্যানভাস।
পূর্বাপর প্রদর্শনীর একটা বড় সুবিধে এই যে, শিল্পীকে পাওয়া যায় তাঁর যাত্রাপথে। তাকে দেখতে পাওয়া যায় সেই যাত্রাপথের বিভিন্ন বাঁকে ও চৌরাস্তায়। একনিষ্ঠ সেই শিল্পীকে তখন ধরা যায় তাঁর শিল্পীজীবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুহূর্তে, দিগ্পালটানো সংকটে, তাঁর অস্থিরতায় ও তাঁর একাগ্র অনুসন্ধানে – কেবল সফলতারই শিখরে নয়। শিল্পী-মানুষকে এইভাবে দেখতে পাওয়ার সুযোগই হলো এই প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পর্যায়ক্রমে তাঁর জীবনের নানান ধাপ – যেমন পূর্ব বাংলায় (অধুনা বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার ঢহরপাড়া গ্রামে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ ও জীবনের প্রথম আট বছর অতিবাহিত করে ১৯৪৭-এর দেশভাগের ধাক্কায় ছিন্নমূল হয়ে কলকাতার কলোনিতে আকালের দিনযাপন; আর্ট কলেজে প্রবেশ ও শিল্প-সংস্কৃতির এক বিশাল দিগন্ত উন্মোচন; সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রক্ষেপ; পারিবারিকভাবে বামপন্থী ভাবনা ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রত্যক্ষ স্পর্শ; ১৯৬০ সালে কলেজ-পাঠ সম্পূর্ণ করে হাওড়া জেলা স্কুলে প্রথম শিক্ষকতা; ১৯৬৫ সালে ফরাসি স্কলারশিপে প্যারিস যাত্রা; তৎকালীন ও ঐতিহ্যপূর্ণ পাশ্চাত্য শিল্পকলা ও সমাজদর্শনে দীপ্ত হয়ে একপ্রকার আত্ম-অনুসন্ধানের প্রেরণা নিয়ে ১৯৬৮ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন … ইত্যাদি – প্রায় সরাসরি আন্দোলিত করে, পুষ্ট করে, চালিত করে তাঁর শিল্পচর্চার গতিপথকে। অনেকটাই কালানুক্রমিকভাবে সাজানো এই প্রদর্শনী শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে কখনো রুক্ষ, কখনো মসৃণ, কখনো দৃপ্ত, কখনো উদ্বিগ্ন সেই উর্বর যাত্রাপথের চলচ্ছবি। বলা বাহুল্য, আলাদা আলাদা করে শিল্পকর্মগুলোও যেমন মনোনিবেশের দাবি রাখে, গোটা প্রদর্শনীটাও যেন এক বহুমাত্রিক আখ্যান – বহু ভিন্ন ভিন্ন যাপন ও অনুভবভূমি স্পর্শ করে থাকা এক ‘গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ’।
যে সমস্ত মৌলিক কারণে যোগেন চৌধুরীর চিত্রকর্ম এই উপমহাদেশের আধুনিক শিল্পকলায় বিশিষ্ট নজর দাবি করে, তার উৎস যতটা তাঁর সমাজমনস্কতায়, ততটাই নিজস্ব মনোজগতের জটিল আবর্তে এবং তারই সঙ্গে আধুনিকতার মুখোমুখি এক সৎ ও নির্ভীক কথোপকথনে। কলেজজীবন থেকেই লক্ষ করা যায় সেই নিষ্ঠা, যার অভিমুখ কেবল বাস্তব রূপারোপের কৌশল আয়ত্তে নয়, বরঞ্চ বাস্তবঘন এক নিবিড় অন্বেষণে। পরবর্তীকালে সৃষ্ট যোগেন চৌধুরীর বিখ্যাত ছবিগুলোতে যে স্থূল, মেদবহুল, জৈবিক ও কখনো-বা শিথিল রূপগঠন দেখি, সেই সমস্ত অভিব্যক্তিতে যতটা বিষাদ ও কৌতুক মিশ্রিত এক গাঢ়হস্ত চেতনার অন্তর্লীন প্রকাশ, ততটাই যেন ভারতীয় আধুনিক চিত্রভাষার এক অন্তর্মুখী খনন। শিল্পীর এই অভিমুখের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিল্পসমালোচক অরুণ সেন লেখেন, ‘শিল্পী যোগেন চৌধুরীর মনে যে কথাটা এ সময়ে খুব জোরালো হয়ে দেখা দিল, তা হচ্ছে; এদেশের মানুষ যেভাবে বসে, দাঁড়ায়, শুয়ে থাকে, তা তো অন্য দেশের মতো নয় কখনোই। ইউরোপীয়রা টানটান করে বসে, আমাদের দেশের বসার মধ্যে থাকে শিথিলতা। … এর মধ্য থেকেই গড়নের একটা স্বাতন্ত্র্য ও নির্দিষ্টতা সম্পর্কে ধারণার জন্ম হয়। আলাদা গড়ন, আলাদা চরিত্র।’ এই অনুসন্ধিৎসার ফলাফল – বক্রোক্তি, শ্লেষ, চরিত্রের বৈষম্য ও শারীরিক অসামঞ্জস্য – প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রাপ্ত ‘বাস্তবসম্মত’ রূপায়ণের ভাষার বিপরীত মেরুতে পৌঁছলেন শিল্পী। প্রতিষ্ঠানের প্রতিস্পর্ধী এই ভাষা আসলে যে আক্রমণের কৌশল নয়, বাস্তবের সংবেদে হাত রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ঘেরাটোপ অতিক্রমের ভাষা, তার শিকড় যে চারিয়ে থাকে হাত-মন-চোখ এই তিন সংযোগের নিরন্তর যোগাযোগের চর্চায়, কবজির উৎকেন্দ্রিক আস্ফালনে নয় – এই বার্তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয় এই প্রদর্শনী। কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের দায়িত্বশীল শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই কথাটা পরিশ্রমী ছাত্র যোগেনের মর্মে বিঁধিয়ে দিয়েছিলেন যে বিভিন্ন মাধ্যম রপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে অতি জরুরি বিষয় হলো পর্যবেক্ষণ। শিল্পীর কলেজজীবনের কাজ দেখতে দেখতে এই কথাটাই বারংবার উঠে আসে কাজের বৈচিত্র্যে ও নিবিড় অভ্যাসে। যোগেন চৌধুরীর নিজের কথায়, ‘আমি খুব মন দিয়ে শিক্ষকদের কথা ও নির্দেশ পালন করতাম। আমার তখন একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, সব ধরনের মাধ্যম, টেকনিক ও ছবি তৈরির নিয়মাবলি যথাযথভাবে শিখে নেওয়া। তখনই বুঝেছিলাম, পর্যবেক্ষণ বা অবজারভেশন কত গুরুত্বপূর্ণ। সে লাইফ-স্টাডি, স্টিল-লাইফ, স্কেচ, যাই হোক না কেন, তেলরং, জলরং, পেনসিল, প্যাস্টেল, পেন যে-কোনো মিডিয়ামই হোক না কেন, ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে হবে, শিল্প-শিক্ষার এটাই যে অন্যতম ভিত্তি, সেটা বুঝেছিলাম। তখনকার দিনে অন্তত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।’ সত্যি তো তাই – পরবর্তীকালে শিল্পীর রূপাবয়বে যে ধরনের বিচিত্র মানুষের চরিত্র ও তাদের জীবনযাপন বৈশিষ্ট্য তাদেরই শরীরে এসে দুরারোগ্য ব্যাধির মতো বাসা বাঁধে, সেও তো পর্যবেক্ষণের পরিণাম। একদিকে মানুষগুলোর উৎকট ভঙ্গিমা, অসমঞ্জস অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, স্থূলকায় দেহাবয়ব, অগোছালো বিস্রস্ত পোশাক, নির্বিকার অভিব্যক্তি, অন্যদিকে বিষণœতার কৌতুক, দিনাতিপাতের গ্লানিময়তা, ক্লান্তি ও অবসন্নতার আকুল যৌন-সংবেদ – প্রাণবন্ত জৈবিক রেখা ও বুনোটের অবিরাম স্বতঃস্ফূর্ত চলনে নির্মিত এই ধরনের অজস্র ছবির শিকড়ে আছে সেই মরমি পর্যবেক্ষণ। এই পর্যবেক্ষণ যতটা বহির্মুখী, ততটাই অন্তর্মুখী এবং একই সঙ্গে মাধ্যম-উপকরণের সঙ্গে সমবেদনায় জড়িত।
যোগেন চৌধুরীর ছবিতে কালি-কলম ও কাটাকুটির মতো সংবেদনশীল রেখায় মানবজীবনের যে চিত্রণ, কালো পটের যে নৈর্ব্যক্তিক আধিপত্য, নৈরাশ্য ও মাধুর্যের যে অভূতপূর্ব দ্বান্দ্বিক সহাবস্থান, বাস্তবের চেতনায় স্বপ্ন ও অবচেতনের যে নৈশ হানা, স্মৃতি মেদুরতার সঙ্গে প্রখর সমকালীনতার যে সমন্বয়, আধুনিক সংবেদনের সঙ্গে পুরাকালের ছবির যে ইন্দ্রিয়জাত সম্পর্ক – এই প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্যই শিল্পীর দীর্ঘ যাত্রাপথে আহৃত, অর্জিত পুরস্কার। আলোচিত প্রদর্শনীতে শিল্পীজীবনের প্রতিটি ধাপই যেন একেকটি সম্প্রসারণ। প্রতিটি পর্যায়ের মধ্যে লক্ষ করা যায় পরবর্তী পর্যায়ের, অথবা আরো অনেক বছর পরের কোনো উপলব্ধ শৈল্পিক চেতনার লক্ষণ।
প্রদর্শনীতে ছবিগুলো অনেকটাই ক্রমপর্যায় অনুসারে সাজানো থাকলেও কালানুক্রমের আধিপত্য কম, বরং কখনো কখনো একই ধরনের বা একই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছবি কাছাকাছি থাকার ফলে শিল্পীর প্রবণতার বহুমুখী রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দর্শকের পক্ষেও সুবিধা হয়, আগে-পরের ছবি ঘুরেফিরে দেখার। কলেজজীবনের শেষের দিকে করা শিয়ালদা স্টেশনে দরিদ্র উদ্বাস্তুদের ছবি এবং তার ঠিক পরবর্তীকালে বিভিন্ন মাধ্যমে আর শৈলীতে আঁকা নজরকাড়া প্রতিকৃতিগুলোর মধ্যে টের পাওয়া যায় প্রাতিষ্ঠানিক ড্রয়িংয়ের সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করার প্রচেষ্টা। যোগেন চৌধুরীর কথায়, ‘আমার অ্যাকাডেমিক চর্চার মধ্যেই ছিল তার থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা। নিজের পোর্ট্রেট করতে গিয়ে দেখেছি যে পেন পেনসিল তুলির ব্যবহারই বদলে যাচ্ছে অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে। চাপা উৎকণ্ঠা, টেনশন, টানটান দৃষ্টি, এসবই ঘটছে ড্রয়িং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে, আবার অন্যদিক থেকে ভাবলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরোক্ষ ছাপ গিয়ে পড়ছে সেই মুখগুলোতে।’ তাঁর বিখ্যাত কাটাকুটির বুনোট বা ক্রস-হ্যাচিং যে হঠাৎ করে সৃষ্ট কোনো টেকনিক নয়, তাও প্রমাণিত হয় পূর্ববর্তী অনেক ছবির মধ্যে।
শিল্পী বলেন, ‘খুব স্পষ্ট ধারাবাহিকতা সবসময় না থাকলেও গোপনে অনেক কন্টিনিউটি থাকে; কারণ ওগুলো তোমার ভেতরকার সত্য, চাপা থাকে না। ঠিক সেরকম, এই ক্রস-হ্যাচিংও কিন্তু আমার অনেক আগের কাজেই পাওয়া যায়। টোনাল প্রয়োগের পরিবর্তে কাটাকুটি করতে করতে, সুই-সুতো দিয়ে চামড়া সেলাই করার মতো আঁচড় কাটতে কাটতে ছবির শরীর তৈরি করা – তাতে কিন্তু অনেক গভীরে ঢোকা যায়।’ হয়তো আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গেও সমর্থন পায় এই শরীর নির্মাণ। প্যারিস পর্ব সাঙ্গ করে দেশে ফিরে আসার পর, দেশজ আধুনিকতার ভাষা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঠিক এই ধরনের শরীরী বুনোট, এই ধরনের ক্লেদাক্ত ত্বক নির্মাণই হয়ে উঠল যোগেন চৌধুরীর ছবির বাচনভঙ্গি।
এই প্রদর্শনীতে দর্শকদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুভূতি হলো এক আর্কাইভাল অভিজ্ঞতা – মহাফেজখানার মতো কৌতূহল উদ্দীপক এই অভিজ্ঞতা। শিল্পীর সংগ্রহ থেকে মণি-মাণিক্যের মতো বেরিয়ে এসেছে অনেক দুর্লভ বস্তু; অনেক না-দেখা বা কম-দেখা বা অপ্রদর্শিত ছবি। ওই অপরিচিত কাজগুলোর মধ্য দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারেন স্বল্পপরিচিত যোগেন চৌধুরী। সলজ্জে উন্মোচিত হন খ্যাতির আলোকের বাইরে পড়ে থাকা, ঈষৎ অবহেলিত কিন্তু অতি মূল্যবান বস্তু। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তৃতীয় বর্ষে আঁকা শিল্পীর জীবনের প্রথম তেলরং, কিশোর বয়সের হাতে আঁকা-লেখা দেয়াল পত্রিকা, বেঙ্গল স্কুল ঘরানায় আঁকা কলেজজীবনের এক দুর্লভ ছবি, প্যারিসে থাকাকালীন আঁকা সম্পূর্ণ বিমূর্ত তৈলচিত্র, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও পাশ্চাত্য রক সংগীতের প্রবাদপ্রতিম নায়ক জিমি হেনড্রিকসের বিরল প্রতিকৃতি, ইতিহাসের সাক্ষী এমন অজস্র ফটোগ্রাফ – এই প্রদর্শনীর অন্যতম প্রাপ্তি।
যোগেন চৌধুরীও এক নিজস্ব প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন এই প্রদর্শনীর প্রসঙ্গে। ‘নিজেকে এইভাবে মেলে দেখার সুযোগ তো সচরাচর হয় না। তাই ঘুরেফিরে বারবার এসে দেখছি এই আত্মজীবনী।’ কথোপকথনের মাঝে আরেক তরুণ শিল্পী তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘যোগেন-দা, এই এক ঘর ভর্তি আপনার সারাজীবনের ছবি; এই ধরনের ছবি যেখানে ক্লেদ, দিনগত পাপক্ষয় আর জটিল ব্যঙ্গোক্তি জীবনের চামড়া নিংড়ে বেরিয়ে আসে – কেউ সহবাস করতে পারবে এই ছবিগুলোর সঙ্গে?’ চকিতে শিল্পী জবাব দেন, ‘অন্যের কথা জানি না, কিন্তু আমি পারব। আমিই তো এঁকেছি, এ তো আমার ছবি। এই সহজ সত্যটা ভুললে চলবে কেন?’
আসলে আমরা দর্শকরা অনেক সময়ে টের পাই না যে কীভাবে কখন শিল্পীর চেতনার প্রকাশ শিল্পীরই শরীরের অংশ হয়ে যায়। আমাদের কাছে এবং ছবির হাটে যা মহার্ঘ বস্তু, যোগেন চৌধুরীর মতো শিল্পীর কাছে তা শরীরী অংশ, কালিলিপ্ত আত্মার প্রতিচ্ছবি, গীতা কাপুরের ভাষায়, ‘ghost smeared with ink’ . এই মযড়ংঃ তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় আজো। এই বৃহৎ আকারের পূর্বাপর প্রদর্শনীতে হয়তো শিল্পী খুঁজে পান সেই কালিমাখা আত্মাকে যে ফিরিয়ে দেয় অভিমুখটা ফের শিল্পীর দিকেই। মধ্যবিত্ত বাঙালির পাঁচপুরুষের ক্লেশ ও শ্লেষ অপূর্ব লতাপাতা আলপনার মতো জড়িয়ে পড়ে থাকে আমাদের চেতনায়। আলোচ্য প্রদর্শনী এই সহজ সত্যটাও পৌঁছে দেয় আধুনিক মননে।
- ঠিকানা
- সপ্তম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আশ্বিন ১৪২৫ । October 2018
- পুরানো সংখ্যা
- সপ্তম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । পৌষ ১৪২৪ । December 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2017
- ষষ্ঠ বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২৩ । November 2016
- পঞ্চম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২৩ । May 2016
- পঞ্চম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪২২ । November 2015
- চতুর্থ বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । আষাঢ় ১৪২২ । June 2015
- তৃতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । কার্তিক১৪২১ । November 2014
- তৃতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । আষাড় ১৪২১ । July 2014
- তৃতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪২০ । February 2014
- তৃতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । কার্তিক ১৪২০ । Novembeer 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । শ্রাবণ ১৪২০ । July 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । বৈশাখ ১৪২০ । April 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । পৌষ ১৪১৯ । January 2013
- দ্বিতীয় বর্ষ । প্রথম সংখ্যা । আশ্বিন ১৪১৯ । September 2012
- প্রথম বর্ষ । চতুর্থ সংখ্যা । জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ । May 2012
- প্রথম বর্ষ । তৃতীয় সংখ্যা । ফাল্গুন ১৪১৮ । February 2012
- প্রথম বর্ষ । দ্বিতীয় সংখ্যা । অগ্রহায়ন ১৪১৮ । November 2011
- প্রথম বর্ষ । প্রথম সংখ্যা। ভাদ্র ১৪১৮ । August 2011