logo

অঞ্জলি এলা মেনন

সাক্ষাতকার গ্রহণ : ইসানা মূর্তি

১৯৪০ সালে অবিভক্ত বাংলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন অঞ্জলি এলা মেনন। পড়াশোনা করেছেন তামিলনাড়ুর নীলগিরি হিলসের লাভডেলের লরেন্স স্কুলে। সেখান থেকে বম্বের জে জে স্কুল অব আর্টে এবং দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৫০ সালে মাত্র দশ বছর বয়সেই তাঁর একক চিত্র-প্রদর্শনী হয় দিল্লি ও বম্বেতে। পরে ফরাসি স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান প্যারিসে। ভ্রমণ করেন বিশ্বের নানা দেশ। নানা ধরনের পদ্ধতি, বিশেষত বাইজানটিয়ান আর্ট তাঁকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে। মকবুল ফিদা হুসেন, মোহন সামন্ত এবং অমৃতা শেরগিলের কাজ তিনি ভীষণ পছন্দ করেন। দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। অনন্যসাধারণ এই চিত্রশিল্পী বিয়ে করেছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার বাল্যপ্রেমিক রাজা মেননকে। বর্তমানে স্বামী ও পুত্রকন্যাসহ দিল্লিতে থাকেন।
ইসানা মূর্তি : অনেক বিখ্যাত শিল্পীর মতোই আপনার শিল্প-ভাবনাতেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তন এসেছে। এই বিবর্তনের মধ্যে কোনো বিশেষ স্তরের কথা কি আলাদাভাবে লক্ষ করেছেন আপনি? আপনার গোটা শিল্পজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক কোথায় আর কীভাবে সেই বাঁক এলো?
অঞ্জলি এলা মেনন : আমার মনে হয়, চারটি এরকম বাঁক রয়েছে। আমার জীবনের বাঁকের সঙ্গে এই বাঁকগুলির একটি যোগসূত্র আছে। আমার প্রথমদিকের কাজে তরুণ বয়সের স্বাভাবিক তীব্রতা আর জোর দেখা যায়। যেন এক হার-না-মানা শক্তি, এক ছটফটে অতৃপ্ত ‘শৈলী’, যা সত্যিই অভিব্যক্তিবাদের। শুধু সেখানে কোনো সচেতন চেষ্টা ছিল না, প্রকরণের জ্ঞান ছিল না। রঙে ছবি অাঁকার অনেক পরে আমি ড্রয়িং করতে শুরু করি। এভাবেই আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত ছবি আঁকা। দুবছর পরে ১৯৬০ সালে, প্যারিসে গেলাম এবং একোল দ্য বিউ আর্টসের আতিলেয়ার ফ্রেস্কে পাঠ শুরু করলাম। ফ্রেস্কো করতে গেলে ড্রয়িং করতেই হবে। ড্রয়িংয়ের ওপর প্রতিদিন টাটকা ভেজানো চুনের আস্তর দিতে হয় তো। বেশ বড়সড় জিগস পাজলের মতো করে তো আর করা যায় না। একবারের বেশি রং লাগানোর সুযোগও নেই। রঙের প্রলেপ চাপিয়ে বা রং মুছে মেরামত করা যাবে না।
এ পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে আমি পাতলা করে রং লাগাতে শুরু করলাম, যা আগে করতাম না। এর আগের বছরই আমি নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম। সেটাই ছিল প্রথমবার। কয়েকবার হার্লেমে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই (জ্যাজের প্রতি তীব্র টানই ছিল এর কারণ)। হার্লেমের ওপর অাঁকা ছবি নিয়ে আমি একটা সিরিজ করি। ছবিগুলি পরে প্যারিসে বিক্রি হয়ে যায়। পরে এক বন্ধুর সঙ্গে ভারতে ফিরলাম এবং জীবনে সেই প্রথমবার একবারই জলরঙের কিছু কাজ করলাম। জলরং ঠিক আমার মাধ্যম হয়ে ওঠেনি কখনো। কিন্তু কয়েকশ ছোট আর গভীর কাজ করেছিলাম। তুরস্ক আর গ্রিসে ভ্রমণের দিনগুলি একধরনের আবেগপ্রবণ দিনপঞ্জির মতোই ছিল। তুরস্ক আর গ্রিস ছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য সিরিয়াতে কয়েক সপ্তাহ। তারপর মরুভূমির ওপর দিয়ে যাত্রা – বালবেক, জেরিকো, জেরুজালেম – পেত্রার বালির গুহায় রাত্রিবাস। সবশেষে মাস দুয়েকের জন্য ইরান – এক বিস্ময়কর যাত্রার দৃশ্য-অভিজ্ঞতাগুলিকে সংহত করার জন্য। এরপরে বাড়ি ফিরে আমার বাল্যপ্রেমিকের গলায় মালা দেওয়া আর কি।

ইসানা মূর্তি : যখন স্কুলে ছিলেন, গভীরভাবে কিছু কি প্রভাবিত করেছিল আপনাকে?
অঞ্জলি এলা মেনন : তামিলনাড়ুর লাভডেলের লরেন্স স্কুলে পড়তাম আমি। ছেলেমেয়েদের আবাসিক স্কুল। স্কুলটিতে একটি সামরিক শৃঙ্খলা মানা হতো, স্পার্টায় যেমন ছিল। কিন্তু তার কলা বিভাগটি ছিল শান্তি ও সৌন্দর্যের এক মরূদ্যানের মতো, যার নেতৃত্ব দিতেন এক অসাধারণ শিক্ষক সুশীল মুখার্জি। পুরো স্বাধীনতা দেওয়া ছিল আমাদের। আমাদের মধ্যে যাদের কিছুটা প্রতিভা ছিল তাদের ঘরে ডেকে নিতেন। ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের ছাড়াও অন্য শিল্পীদেরও দারুণ ছবির বই দেখতে দিতেন। আমাদের সেই তরুণ বয়সের কল্পনাকে দীপিত করেছিলেন ভ্যান গঘ। উনি নিজের কান কেটে ফেলেছিলেন জেনে কেঁদেছিলাম আমরা। একদিন মুখার্জি আমাকে ওঁর প্যালেট নাইফ ব্যবহার করতে দিলেন এবং তখনই প্রথম আমি বুঝলাম যে আমি ছবি আঁকতে চাই। বাড়ির ইচ্ছেমতো ডাক্তার হতে চাই না। সেই বছরগুলি সত্যিই ছিল প্রাণময়তা ও বর্জনের, ঘন রঙের, ঘূর্ণি আর ব্রাশের জোরালো স্ট্রোকের। স্কুল ছাড়ার সময় আমি কমপক্ষে চল্লিশটা ক্যানভাস এঁকে ফেলেছি। পনেরো বছর বয়সে বেশ কিছু ছবি বিক্রিও হয়ে গেছে আমার।
ইসানা মূর্তি : লাভডেলের পরে বম্বেতে আর্ট নিয়ে পড়েন আপনি। তারপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে প্যারিসে। চিত্রকলা, সংগীত, সাহিত্য – এর মধ্যে কোনটিকে সবচেয়ে কাছের বলে মনে হয় আপনার?
অঞ্জলি এলা মেনন : ষোলো বছর বয়সে বম্বের জে জে স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হয়ে জোর ধাক্কা খেলাম একটা। সার সার গ্রিক আর রোমান ছোট ছোট মূর্তি, দিনের পর দিন যা এঁকে যেতে হতো আমাদের। এভাবে আমাদের হাত-পা বেঁধে জোর করে ব্রিটিশ শিক্ষণ পদ্ধতির সঙ্গে জুতে দেওয়ার চেষ্টা দেখে আমি বিষণ্ণ আর হতাশ হয়ে গেলাম। রং-তুলির কোনো ঘূর্ণি নেই, কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। কিন্তু স্কুলের বাইরে ঘন ও দ্রুত ধারণার প্রসার ঘটতে লাগল। বম্বেতে অনেক প্রদর্শনী হতো। এক বিশেষ ধরনের ম্যানারিজমের ভারতীয় ছবি, যাকে মহারাষ্ট্র ঘরানা বলা যায়, দেখা যেত মাঝে মাঝেই। ওগুলি ছিল অ্যাকাডেমিক ছবি আর মিনিয়েচারের মাঝামাঝি কিছু। সেই প্রথম আমি হুসেন আর মোহন সামন্তর ছবি দেখলাম, আমার ছবিতে যাঁদের প্রভাব পরবর্তী সময়ে পড়বে। সামন্তর প্রথমদিকের কাজে আমি প্রথম বিমূর্ত এক্সপ্রেশনিজম দেখতে পেলাম আর বিশাল স্পেসকে ওঁর নিয়ন্ত্রণ করার ধরন আমাকে বিস্মিত করেছিল। বিরক্তিতেই আমি আর্ট স্কুল ছাড়লাম ছমাস পরে আর গভীরভাবে প্রভাবিত হলাম ফিদা হুসেনে, যিনি ছিলেন দুর্দান্ত ক্যারিজমেটিক। কিছুদিন আমি তাঁর কালো জোরালো আউটলাইন আর সমতল বর্ণলেপনে আচ্ছন্ন ছিলাম, কিন্তু তাঁর বিষয়ের প্রভাব আমার ওপর পড়েনি। বছর আঠারো বয়স যখন, মদিগ্লিয়ানির রোমান্টিক দীর্ঘায়িত শরীরগুলি আকৃষ্ট করল আমাকে। আর অমৃতা শেরগিলের ছবির গীতলতাও একই সঙ্গে টানল। শেরগিলের ছবি ছিল নন্দনতত্ত্বের চূড়ান্ত বিন্দুকে ছুঁয়ে। ভারতীয় গ্রামীণ জীবনের ওপর আঁকা তাঁর স্থির ছবিগুলি যার প্রমাণ। বেঙ্গল স্কুলের শিল্পীদের ছবি আমার একেবারেই ভালো লাগেনি। বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে তাঁদের মিষ্টি-বিষণ্ণ ছবিগুলি বিস্বাদ আর একঘেয়ে মনে হয় আজো। এই সময় আমি দুহাতে ছবি অাঁকছিলাম, যদিও নিজস্ব আঙ্গিক খোঁজার ব্যাপারে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। আমার প্রথম প্রদর্শনীতে ছিল তিপ্পান্নটি ছবি বিভিন্ন রকম আঙ্গিকে অাঁকা। আমার তখন ছিল সেই নিষ্পাপ বয়স যখন অন্যদের প্রভাব অসংকোচে স্বীকার করা যায়। প্যারিসের ‘একোল দ্য বিউ আর্টে’ যখন প্রথম গেলাম তখন নতুন সব ধারণা ও দর্শনের বিপুল বিন্যাস একেবারে বিভ্রান্ত করে দিলো আমাকে। একজন বয়স্ক ফরাসি মহিলা ছিলেন আমার পরামর্শদাতা। প্রথম সপ্তাহেই আমাকে সাজিয়ে-গুজিয়ে ভার্সাই দেখাতে নিয়ে গেলেন। কী খারাপ যে লেগেছিল! জঘন্য সেই জায়গাটির বিশাল বাহুল্য, ফরাসি সংস্কৃতি ও অহমিকার নির্লজ্জ প্রদর্শন বিরক্ত করেছিল আমাকে। জীবনে সেই প্রথম আমি রক্ষণমূলক অবস্থান নিয়েছিলাম। যাচিয়ে দেখে বুঝে নিচ্ছিলাম সবকিছু, যাতে আমার নিজস্ব শিকড় খুঁজে নিতে পারি। মেক্সিকোয় একজন তরুণ শিল্পী, নাম ফ্রান্সেসকো টলেডো, এখন তো রীতিমতো বিখ্যাত সে, তার সঙ্গে একই স্টুডিওতে কাজ করতাম আমি। ভাষাগত ব্যবধান তো ছিলই তার সঙ্গে, তবু আমাদের দুজনের সমস্যাই ছিল একই রকমের। ওর সংবেদনশীল বর্ণময় ছবিগুলি ছিল মেক্সিকান উপকথা থেকে উঠে আসা নানারকম জীবজন্তু, রঙের স্রোতে ভেসে থাকা অদ্ভুত সব চিত্রকল্পে ঠাসা। ‘একোল দ্য বিউ আর্টে’র সময় থেকেই আমার শৈলীতে ফ্রেস্কোর প্রভাব ছিল। কিন্তু প্যারিসে স্থপতি আর সিনেমাপাগল যে দলটির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল, তারা ছিল আমাদের শিল্প-শিক্ষক আর ছাত্রদের থেকে ঢের বেশি মেধা-উদ্দীপক। অ্যালেন পেস্কিন, স্থাপত্যের ছাত্র, ছিল অসাধারণ ফটোগ্রাফার। আমরা দুজনেই ‘সিনেমাটিকে’র সদস্য হলাম। একবার তো এক মাসে নববইটা সিনেমা দেখেছি। সেই সময় বার্গম্যান আর আস্তোনিওনি অতীত বা সাম্প্রতিক যে-কোনো চিত্রকরের থেকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিলেন আমাকে। এইসব জিনিস, এছাড়া মার্সেল প্রুস্ত, আদ্রেঁ ব্রেতঁর লেখা আমার প্যারিসের প্রথম বছরে মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠে। এ সবকিছুই আমাকে অনিবার্যভাবে টেনে নিয়ে যায় পরাবাস্তবতার দর্শনের দিকে। আমি একাত্মতা অনুভব করতে থাকি তাঁর সঙ্গে। পঞ্চদশ শতাব্দীর ওলন্দাজ শিল্পী ইয়েযোনিমাস বশ্ আমাকে ইতিহাসের হাত ধরে পিছিয়ে নিয়ে যান, আর এতদিন ধরে যা খুঁজছিলাম আমি পেয়ে যাই সেটা। ‘পরাবাস্তবতা’ শব্দটি আবিষ্কারের বেশ কয়েক শতাব্দী আগে এই একজন শিল্পী, প্রথম ‘পরাবাস্তববাদী’ যিনি। এখানেই পাওয়া গেল সেই পথ, যেখানে চেতনা নানা স্তর অতিক্রম করে অতীত বর্তমানকে এলোমেলো করে অবচেতনার বিভিন্ন রূপকল্প স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একটি সাধারণ ক্যানভাসে তুলে ধরতে পারে।
ইসানা মূর্তি : প্যারিস ছাড়া ইওরোপের আর কোথাও কি স্মরণীয় কিছু খুঁজে পেয়েছেন আপনি?
অঞ্জলি এলা মেনন : হ্যাঁ, অনেক কিছু। শ্যামা জাইদি আমার দিল্লির বন্ধু, মাস ছয়েকের জন্য প্যারিসে এসেছিল। প্রথম দিনই ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম সেন্ট চ্যাপেল দেখানোর জন্য। এক উজ্জ্বল আলোর গর্ভে ভ্রূণের মতো স্থির হয়ে দেখছিলাম সেই অতুলনীয় কক্ষটি, যেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রঙিন কাচের জানালাগুলি আছে। যাত্রা শুরু হলো আমাদের এভাবেই। রোমান ও গথিক যা কিছু আছে তা দেখার নেশায় আমরা হিচ হাইকিং করে বেড়াতাম ফ্রান্সের প্রতিটি ক্যাথিড্রালে। রোমান চার্চের সন্ধানে সুদূর গ্রামেগঞ্জেও ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। সেইসব শক্ত, কাঠের শ্রেষ্ঠ, সেইসব আদি শক্তিময়ী প্রাণবন্ত ম্যাডোনা, যারা নিবিড়ভাবে ধারণ করে আছে পূর্ণবয়স্ক মানুষের আদলে বানানো শিশু খ্রিষ্টকে – আমার মধ্যে আজো রয়ে গেছে সেইসব দেখার প্রভাব। সেই অনুজ্জ্বল বাদামি, লাল মুখের সরল আদিম অভিব্যক্তির বিপ্রতীপে রাখা গাঢ় অলংকরণ ও মন্ডণ আমার দর্শন-চেতনার ওপর এমন অভিঘাত রেখে গেছে, যা কুড়ি বছর পরও মুছে যায়নি। ফ্লোরেন্সের উফিজি গ্যালারিতে বতিচেল্লি, জিওভান্নি সিমাবু আর অন্যান্য রেনেসাঁ শিল্পীর কাজ দেখে ঘোর লেগে যায়। গ্লেজের স্তর থেকে উঠে আসা শমিত উজ্জ্বলতা, সিয়েনার সবুজাভ আলোয় ধোয়া ল্যান্ডস্কেপ আমার শৈলীর ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। আমি চেষ্টা করেছিলাম আমার ছবিতে আনতে সেই মসৃণ উপরিতল, যেখানে কোথাও অস্বচ্ছতা বা থকথকে প্রলেপ নেই, এমনকি সাদা রং ও নিজের নিহিত আলোয় ঝলসে ওঠে।
ইসানা মূর্তি : এরপর আর কার কার প্রভাব পড়েছিল আপনার ওপর?
অঞ্জলি এলা মেনন : প্রায় তিন বছর ছিলাম ইওরোপে তার পরে। এরপর বিয়ে, বাচ্চা। মাতৃত্বের সেই ঘনীভূত আনন্দে আমি ম্যাডেনা ও শিশু এঁকে যেতে যেতে দেখলাম শরীরগুলি আসছে ডিটেল ছাড়া, সোজাসাপ্টা আউটলাইনে, কিন্তু বাইজানটাইন শিল্পের মতো দীর্ঘ হাত নিয়ে। অনেক ছবিতে ভার্জিনের কেশভারের ওপর কাঁটার মুকুট বলতে চায় যে, তার সন্তানের চেয়ে তার মায়ের যন্ত্রণা কোনো অংশে কম ছিল না।
১৯৭০-৭২ সালে আবার পুরোদস্ত্তর ছবি অাঁকায় ফিরলাম। আমার ইওরোপের অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে ডানা মেলে ধরল আমার ছবিতে। উদ্দাম প্রকৃতির মধ্যে নগ্ন শরীর অাঁকতে লাগলাম। সমালোচকরা তার মধ্যে প্রি-রাফেলাইট ছবির প্রভাব খুঁজে পেলেন। রং তার নিহিত শক্তি নিয়ে ছবিতে এলো। খুব নীল রং ব্যবহার করতাম তখন। কলকাতা আর দিল্লিতে বেশ কয়েকটা প্রদর্শনী হলো। স্বামীর প্রত্যন্ত এলাকায় বদলির চাকরির জন্য শিল্পের জগৎ থেকে প্রায় নির্বাসনে গেলাম। আরো বেশি অন্তর্মুখিনতা এলো ছবিতে, সেইসঙ্গে জোরালো খ্রিষ্টীয় অনুষঙ্গে মিশে গেল রক্তমাংসের ইন্দ্রিয়ঘনতা।
১৯৭৪-এ মুম্বাই গেলাম এবং একটা বিখ্যাত গ্যালারিতে প্রদর্শনী হলো। একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটের ব্যালকনির কোণ হলো আমার অস্থায়ী স্টুডিও। ওই প্রদর্শনী ছিল আমার শিল্পজীবনের একটি বাঁক। প্রবল ইওরোপীয় প্রভাব ছিল এখানেও। চমৎকার রিভিউ হলো, অনেক ছবি বিক্রি হলো। ১৯৭৯ সালে বাঙ্গালোরে আমাদের বাড়ি তৈরির সময় পাঁচমিশেলি এক কিউরিও শপ থেকে দুটো চমৎকার এবং কৌতূহলোদ্দীপক জানলা কিনে আনলাম। এর আগেই আমার ছবিতে জানলা তার নিজস্ব অনুষঙ্গ নিয়ে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এবার এলো সত্যিকারের জানলা, ছবির পাঠবিভাজনের একটা পদ্ধতি হিসেবে একটা ইমেজকে ভেঙে তাকে পুনর্বিন্যাস করার একটা উপায় হিসেবে। ব্যাপারটা ছিল স্যুররিয়ালিস্টদের ধরনে।
ইসানা মূর্তি : আপনার কি মনে হয় কোনো স্কুলের প্রভাব আছে আপনার ওপর?
অঞ্জলি এলা মেনন : এক আলোচক বন্ধু খানিকটা মজা করেই আমাকে বলেছিলেন নিও-রোমান্টিক শবজীবী। একজন বেশ নামকরা কলকাতার সাংবাদিক একবার লিখেছিলেন, ‘ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অঞ্জলি কী করছেন?’ উনি ত্রয়োদশ শতকের ইওরোপের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। এটা ঘটনা যে আমি ভারতে বা বাইরের কোনো দেশের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত নই। এটা বলতেও দ্বিধা নেই যে আমি নিয়মটিয়মের তোয়াক্কা না-করা একজন মানুষ, যে নিজস্ব সময়ের প্রচলিত বাগধারায় আত্মপ্রকাশ করতে পারে না। আমার ছবির বিন্যাস, রং, প্রকরণের সূক্ষ্ম তারতম্য পুরোপুরি আমার নান্দনিক বোধ থেকে আসে। আমার ছবির বিশেষ চেহারাতেই ধরা যাবে এটা।
ইসানা মূর্তি : একটা গভীর বিষাদে ডুবে থাকে আপনার ছবির জগৎ। এর মধ্যেই তবু আশা ও আলোর একটা ঝলক দেখা যায়। এই দুটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে মেশে?
অঞ্জলি এলা মেনন : আমার মনে হয় বাঙালিদের এটা একটা বৈশিষ্ট্য, যেখানে অন্তর্দৃষ্টি থেকে জেগে ওঠা গান বা ছবি বিষণ্ণ ও গভীর হয়ে ওঠে। বিশাল আকাশের নিচে ভারতীয় রাত্রির মতো বা ঘন বর্ষায় ভেসে যাওয়া বাড়িঘর ছাপিয়ে জেগে ওঠা অপার্থিব সুন্দরের মতো মহান সেই দেখা। যন্ত্রণার অস্তিত্ব থেকেই সহসা আনন্দের কলস্বর সবচেয়ে সুন্দর বেজে ওঠে। ভারতীয় মার্গসংগীত যিনি জানেন তিনি জানেন বেদনা থেকে কীভাবে উঠে আসে সুর, তারপর তা বেদনা অতিক্রম করে সৌন্দর্যের এক অতীন্দ্রিয় জগতে চলে যায়। এটা প্রফুল্লতা নয়, বরং এ এমন এক শান্ত আনন্দ যার জন্য খুব ভেতর পর্যন্ত খুঁড়তে হয়, কিছু বেদনার রেশও থেকে যায় যেখানে।
ইসানা মূর্তি : আপনার কাজে নারীসুলভ সংবেদনশীলতা, বিশেষ করে ভারতীয় নারীর বিপন্নতা কি পাওয়া যায়?
অঞ্জলি এলা মেনন : আমি একজন ভারতীয় নারী, আর সেই হিসেবে নারীজীবনের বিপন্নতার যেটুকু ধারণা আমার হয়েছে, তার বেশি সংবেদনশীলতা আমার নেই। আমি নিজেকে একজন গুপ্ত ভারতীয় নারী ভাবি, যে সারাজীবন প্রচুর সুযোগ, স্বাধীনতা আর সাফল্য পেয়েছে, যা মোটেই শোষিত-নিপীড়িত ভারতীয় নারীদের আদর্শ নমুনার মতো নয়। আমি এঁকেছি আমার স্বজনদের, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের, যাদের সঙ্গে আমার জীবন জড়িয়ে তাদের। কোনো গল্প থাকে না আমার ছবিতে। আমার ছবিতে খোলা শরীর আসে। যতটা শোভন তার চেয়েও বেশি করে আসে। কখনো উন্মুক্ত করে দিই বুক, যাতে তার ভেতরে কাঁপতে থাকা হৃৎস্পন্দনকে ধরতে পারি। বিশেষ করে তাদের অাঁকি যারা ফাঁদে পড়েছে, অথবা চেয়ারে একা বসে আছে, অথবা বাসনায় উদ্দীপ্ত অপেক্ষমাণ নিষ্পাপ যারা।
ইসানা মূর্তি : কিন্তু আপনার ছবিতে গলাচাপা কান্নাও বিরল নয়। গরাদের ওপাশে মানুষজন, খাঁচায় বন্দি পাখি, অনেকের সঙ্গে থেকেও যারা একা – আপনিই তো এঁকেছেন এসব।
অঞ্জলি এলা মেনন : আমার পৃথিবী প্রচুর মানুষ, ব্যস্ততা, চরকির মতো ঘুরে বেড়ানো দিনরাত ধরে। কিন্তু প্রচুর ব্যস্ততার এই কেন্দ্র থেকে দূরে আমি একা হয়ে থাকি, একটা নিজস্ব নিভৃত ঘেরাটোপে, যেখানে থেকে সৃষ্টির কেন্দ্রটিতে যেন ছুঁয়ে থাকতে পারি আমি। আর কেউ এই জায়গাটিতে আমার সঙ্গী হবে না। আমারই তৈরি নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা রাত্রির দেশ এটি। মাঝে মাঝে যেখানে প্রাণিকুল আসে, পাখিরা আসে, আর আসে সেইসব মানুষ যাদের স্পর্শ করতে চাই আমি, যা হয়ে উঠতে চাই, অথবা ছুটে বেরিয়ে যেতে চাওয়া আমারই চিৎকৃত সত্তা যেন সে। ক্যানভাসে এসব আনা বেশ কঠিন। অবচেতনার বিভিন্ন স্তরকে সত্যিই ছুঁতে চাই আমি আর তার জন্য যদি শমিত শ্বাসরুদ্ধ কোনো কান্না শোনা যায় যাক। কোনো শূন্য চেয়ার যদি প্রধান হয়ে ওঠে কোনো ছবিতে, তবে সেই চেয়ারটি মনে পড়িয়ে দেবে চেয়ার ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষটিকে।
ইসানা মূর্তি : আগে আপনার ছবির ‘চোখ’ ছিল বাদামি, বাদামি রঙের বিভিন্ন স্তরে ছবি করতেন আপনি। পরে ঘন সবুজ, নীল, লাল আপনার অাঁকা চোখে আসতে লাগল। রংকে কী চোখে দেখেন আপনি? নান্দনিক কোনো অর্থ আছে এর?
অঞ্জলি এলা মেনন : বলা কঠিন। মনে হয় আমার আগের কাজ ছিল অনেক বেশি আত্মজীবনীঘেঁষা আর এই অন্তর্দৃষ্টির প্রকাশ ছিল চাপা। ছায়াময় চোখ যেন অনেক কিছু গোপনে রাখছে। পরবর্তী সময়ে আমি অনেক নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখাতে শুরু করি বিষয়কে। অনেক কিছু আরোপ আর বর্জন করতে শুরু করি। রং আর আলোর এক সর্বব্যাপী আবেদন আছে – এটা টের পাই।
আমার মনে হয় মরুভূমির বিবর্ণ নিরানন্দ উচ্ছিষ্ট থেকে রং তৈরি হয়। গভীর বিষাদের, গভীর আশাহীনতার মুহূর্ত আমার ছবির চরিত্রদের ছায়ালিপ্ত চোখ আলো ও রঙের দিকে খুলে যায়। রংই সবকিছু। তার গভীরতা ঘনত্ব, ঈষদচ্ছ বা অস্পষ্টতা একজন শিল্পীর সূক্ষ্মতম তারে ঝংকার তোলে। রং দিয়েই গান করে কেউ। রঙের ওলনদাঁড়ি আমাদের দুঃখ-সুখ মাপে। স্বপ্ন দেখি যখন, রং দেখি। কখনো অস্পষ্ট, কখনো রঙের মাত্রাতিরিক্ত চাপে চোখ ধাঁধানো। কখনো সেখানে সুরের ঐক্য, কখনো হঠাৎ ধাক্কার মতো বেসুরো। কেটে কেটে যাওয়া আস্তে আস্তে মুখ আসে, মানুষজন আসে।
ইসানা মূর্তি : আপনার শিক্ষাদীক্ষা প্যারিসে। দীর্ঘদিন পশ্চিমে আপনার বসবাস। কোনো কোনো আলোচক তাই মনে করেন আপনার শৈলী ও মানসে উঁচু গলায় কথা বলে পশ্চিমের প্রভাব। এটা কি ঠিক?
অঞ্জলি এলা মেনন : শৈশব থেকেই আমি পশ্চিমি ঘরানায় বড় হয়েছি। মায়ের মৃত্যুর পর এক আমেরিকান ঠাকুমা আমাকে মানুষ করেছিলেন। ছোটবেলাতেই, ক্যাথিড্রাল, মিউজিয়াম, কনসার্ট হলে আমার নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। আমার পরিবারের আরেকটি অংশ ছিল ব্রাহ্মসমাজভুক্ত, যারা রীতিমতো পাশ্চাত্যঘেঁষা। আসলে গোঁড়া দক্ষিণ ভারতীয় পরিবারে বিবাহের পর থেকেই আমি হিন্দু সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছিলাম। সুতরাং আমার ভারতীয়তা যতখানি স্বদেশপ্রেমজাত ততখানি ভারতীয় চেতনার গভীরে ডুব দিয়ে পেয়ে যাওয়া ধন নয়।
ইসানা মূর্তি : তাহলে শিল্পের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে যে প্রভেদের কথা এত জোর দিয়ে বলা হয়, তা কি মিথ্যে? শিল্প কি তাহলে শুধু ভালো শিল্প বা খারাপ শিল্প?
অঞ্জলি এলা মেনন : ভালো বা খারাপ না বলে আমি বরং বলব বিশেষ বা উল্লেখযোগ্য শিল্প। এটা ঠিক যে, কেউ ভালোভাবে, কেউ খারাপভাবে কাজ শেষ করেন। কিন্তু যে শিল্পী নতুন রাস্তা, নতুন চিত্রভাষা তৈরি করেন তাঁকে কোথায় রাখা হবে? প্রকৃত শিল্পের তো এটাই কাজ। গোটা জীবন দাঁত কামড়ে নিজের মতো কিছু করার চেষ্টা করেও হয়তো কিছু পান না তাঁরা। কিন্তু যাঁরা পান তাঁরা হয়তো শেষ পর্যন্ত আনাড়ির মতো কাদায় হাত-পা ছুড়ে গেলেন সারাজীবন বিরক্তিজনকভাবে। শিল্পের উৎকর্ষের তো মাপার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু যা উৎকৃষ্ট, কোনো সংজ্ঞা দিয়ে তাকে ধরা না গেলেও মুহূর্তেই চিনে নেওয়া যায়। এখন যখন আমরা নতুন শতাব্দীর মুখে, তখন প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, আভাঁ গার্দ – সব শিল্পই মিলেমিশে এক বিশ্ব-শিল্পের আদল পেয়ে যায়। এই ঘূর্ণির স্রোতে আলাদা করে কিছু শনাক্ত করা কঠিন। কিন্তু শিল্পীকে তো চেষ্টা করে যেতেই হয় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের। অতীতকে ভস্মসাৎ করে নতুন কোনো প্রতিমা নির্মাণের।
ইসানা মূর্তি : আপনারই মতো প্যারিসে শিল্পের পাঠ, প্রায় আপনারই মতো পরিবেশ থেকে এসেছিলেন আর এক সুচিহ্নিত নারীশিল্পী অমৃতা শেরগিল। কোনো বিশেষ নৈকট্য অনুভব করেন তাঁর সঙ্গে?
অঞ্জলি এলা মেনন : হ্যাঁ, করি। প্রায় স্ত্ততিই বলা যায় সেটা। হয়তো পরে সেই ঘোর থেকে সরে গেছি আমি, কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হয় যদি বেঁচে থাকতেন আরো কোন উচ্চতায় যে পৌঁছে যেতেন তিনি! অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা যেন এক নিন্দাযোগ্য অপরাধ শিল্পীদের জন্য। শুধু চিলেকোঠায় অনশনই যেন মানায় শিল্পীকে। হতে পারে কষ্ট একটা প্রেরণার ব্যাপার। কিন্তু কষ্টের তো রকমফের আছে। আর আমার বিশ্বাস তাঁর সচ্ছল পরিবেশ সত্ত্বেও শেরগিল কষ্ট পেয়েছেন, কষ্টকে জেনেছেন। চিলেকোঠার ওই জীবন আমার ছিল। আমার ছবির মধ্যে প্রশান্তির মতো রয়ে গেছে সেই জীবনের প্রভাব। আমার যাপনের পরিবেশ একটাই অমোচনীয় ক্ষতি করেছে। আমার রুচি একটা বিশেষ উচ্চতা থেকে নামতে পারেনি। সমকালীন শিল্পে ‘সৌন্দর্য’ একটি নোংরা শব্দ। আমি কিছুতেই ‘সৌন্দর্য’ থেকে নিজেকে ছিন্ন করতে পারিনি। এখনকার চালু অপৌত্তলিক দৃষ্টিকোণে অসুন্দর, অস্বচ্ছের পূজাই শুধু গ্রহণযোগ্য। সংগতি ও ভারসাম্যের কোনো ঠাঁই নেই সেখানে। ভারতবর্ষে এখন এক অতুলনীয় দৃশ্য-ইতরতা ছড়িয়ে পড়েছে জীবনের সবখানে। সুরুচির বুরুজ থেকে এই সর্বব্যাপী নোংরামিকে মেনে নেওয়া সুকঠিন আজ। এই সংকটের সঙ্গেই আমার লড়াই।
ইসানা মূর্তি : আর সেই সর্বত্রব্যাপী কাক, কেন গানের সমের মতো বারবার ফিরে আসে আপনার ছবিতে? সেই নিষ্প্রভ পাখি কি জ্ঞানী, সে কি দর্শক সবকিছুর?
অঞ্জলি এলা মেনন : কাক! কক্ষনো না। বম্বেতে ইট-কাঠের জঙ্গলে থাকতাম যখন, আমার ছবি অাঁকার সময় একমাত্র দর্শক ছিল একটি কাক। প্রতিদিন সে আরো একটু করে বন্ধু হয়ে উঠত আমার। শেষে একদিন সে পা রাখল আমার ছবিতে। আস্তে আস্তে সব ছবিতেই। শেষ পর্যন্ত কাক, যার সবকিছুই মানুষের মতো প্রায়, হয়ে উঠল আমার প্রতিরূপ, একজন দর্শক যে ভেতরে আসতে চায় আর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায়। সেই থেকেই সে আমার সঙ্গে আছে।
ইসানা মূর্তি : আপনার ছবিতে যেসব প্রতীক আসে – যেমন ঘুড়ি, ভাসমান সুতো, বিস্রস্ত কাপড়-চোপড় – কোনো মন্তব্য করবেন এসব নিয়ে?
অঞ্জলি এলা মেনন : যেসব ছোটখাটো অনুষঙ্গ আসে আমার ছবিতে, ‘প্রতীক’ বোধহয় বেশ ভারী শব্দ তাদের জন্য। ‘প্রতীক’ শব্দটি নিশ্চিতভাবে সমালোচকদের নিজস্ব। পুঞ্জীভূত সুতো, নেকলেস, ঘুড়ি, ছোটখাটো প্রাণী, স্বচ্ছ বা অনচ্ছ বস্ত্র – এসবই আমার ছবির অঙ্গসজ্জা। কোনো চেষ্টাকৃত প্রতীক আমি আনিনি, যদিও ঘুড়ির মধ্যে আশাবাদ বা ভাসমান নৌকার মধ্যে বিষণ্ণতা খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ। অনেক সময় এটা নিতান্তই মন্ডণশিল্প, মেয়েরা যেমন আকছার করে থাকেন সূচিশিল্পের সময়। আবার কখনো কখনো এটা রঙের ওপর আলো ফেলার কাজও করে।

ভাষান্তর : অমিতাভ মৈত্র

Leave a Reply