logo

নভেরা : কাছের হয়েও দূরের

র ফি কু ন  ন বী

দেশে আধুনিক ভাস্কর্যের প্রবক্তা, পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রেরক, নিভৃতচারী শিল্পী নভেরা আহমেদ চিরবিদায় নিলেন। সেইসঙ্গে ইতি ঘটল শিল্পকলার পীঠস্থান প্যারিসে তাঁর দীর্ঘ প্রবাসজীবনেরও। সমাপ্তি ঘটল দেশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্থাপনের ভাবনারও। শোনা গিয়েছিল, দেশে ফেরার টান অনুভব করছিলেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে অচিরেই অন্তত একবারের জন্যে হলেও আসবেন, এমনটাও শোনা যাচ্ছিল। এই আসাটা জীবনের শেষ পর্বে খুবই আরাধ্য ছিল শিল্পকলাজগতের সবার। ভেবেছিলাম, দেশের সাম্প্রতিক চমৎকার কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর শিল্পকলা চর্চার জগৎটিকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন, দেখা হয়ে যাবে ভাস্কর্য চর্চার সুপরিবেশের দিকটিও। পাশাপাশি তিনি যে কতটা প্রিয়, আদরণীয় এবং নিজ ক্ষেত্রের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনটিতে অধিষ্ঠিত তাও তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না।

সুদীর্ঘকাল বিদেশে প্রবাসজীবন যাপন করলেও বা দেশে অনুপস্থিত থাকলেও তিনিই ভাস্কর হিসেবে সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর বলিষ্ঠ কাজ, আধুনিক জীবনাচার, অদম্য মনোবল এবং যুগোপযোগী শিল্পভাবনাকে নিয়ে দেশে কলাবোদ্ধারা অঢেল লিখেছেন, আলোচনার পাত্রী ছিলেন বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ী মহলে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে প্রচুর, পাঠ্যবইতে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি রয়েছে যেমন, তেমনি কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনশীল লেখনীতেও প্রধান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন জীবদ্দশাতেই। মোটকথা, সবকিছু মিলিয়ে দেশে তাঁর নামটি কিংবদন্তি বা লিজেন্ড।

কিন্তু জীবনের এতসব প্রাপ্তিকে তিনি নিজে গ্রাহ্য করেছিলেন, এমনটার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা যায়নি। শোনা যায়নি আপ্লুতির কোনো প্রকাশের ঘটনাও। জীবনের সিংহভাগই নিভৃতচারীর ভূমিকা নিয়ে আড়ালে থাকার অভ্যাসটিকে সঙ্গী করে কাটিয়েছেন সারা জীবন।

বহুকাল আগেই তিনি প্যারিসে ঘর বেঁধেছিলেন। ইচ্ছে ছিল কখনো প্যারিসে গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করব। বেশ কয়েক বছর আগে শহরটিতে যাওয়াও হয়েছিল। প্ল্যান করেছিলাম এমন কাউকে যদি খুঁজে পাই, যে তাঁর বাড়ি চেনে এবং পরিচয় আছে, তো গিয়ে হাজির হব। কিন্তু তেমন কাউকে না পাওয়ায় আর তা হয়ে ওঠেনি। একা যাওয়ার সাহস পাইনি। সাহস না পাওয়ার একটি কারণ তাঁর সম্বন্ধে কিছু কথাবার্তা অগ্রিম শুনে ফেলা।

শুনেছিলাম, তিনি অপরিচিত কারো সঙ্গে দেখা করতে চান না। আর ব্যক্তিটি যদি হয় বাংলাদেশের কেউ, তবে তো কথাই নেই। প্রথমেই নিষেধজারির ব্যাপার ঘটবে। তিনি নাকি দেশের সবার ওপরে অত্যন্ত রেগে আছেন। নানা কারণে অভিমান রয়েছে।

আবার অনেকের মুখেই শুনেছি – বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে নিভৃতে, নিরিবিলিতে থাকতে পছন্দ করেন। অনাহূত কারো উপস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ ঘটেনি। পরে জেনেছিলাম, প্যারিসবাসী শিল্পী শাহাবুদ্দিন এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁদেরকে যোগাযোগই করে উঠতে পারিনি। অতএব শিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎ অধরাই রয়ে গেল। সেইসঙ্গে পরিচিত না হওয়ার আক্ষেপও।

তবে পরিচয় না হলেও ষাটের দশকের শুরুতে তাঁকে একবার দেখেছিলাম। আর্ট কলেজে শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে পন্ডের পাশে বসে গল্প করছিলেন। মাথাভর্তি আলুথালু চুল। গলায় রুদ্রাক্ষ মতন কোনো কিছুর লম্বা মালা, কপালে লম্বা করে টেনে দেওয়া কালো রঙের টিপ, চোখে চওড়া রেখার কাজল। আমাদের শ্রেণিশিক্ষক কাজী আবদুল বাসেত জানিয়েছিলেন যে, উনি নভেরা আহমেদ।

সাজসজ্জার ধরনটি ছিল চোখে পড়ার মতো। এবং তা যে প্রচলিত ধরনের ছিল না, তাতে বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে তিনি আর সব মহিলার চাইতে আলাদা। বেশ সাহসী একটা ধরন। হাসিখুশি। তবে নিজে তত কথা বলছিলেন না। অন্যদের সঙ্গে বসে ছিলেন ইতালি থেকে সদ্য ফিরে আসা শিক্ষক শিল্পী আমিনুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গেই কথা হচ্ছিল বেশি। অনেক পরে জেনেছিলাম, ইতালিতে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।

নভেরা আহমেদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কোনো সুযোগ কোনোদিন ঘটেনি। তিনি যখন অত্যন্ত আলোচিত শিল্পী তাঁর ১৯৬০ সালের একক প্রদর্শনী এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারের অন্যতম শিল্পী হওয়ার কারণে, তখন আমি আর্ট কলেজে শিল্পকলায় শিক্ষা-দীক্ষা নেওয়ার জন্যে মাত্রই ভর্তি হয়ে বছরখানেক পার করেছি। অর্থাৎ নিতান্তই নবীন-নবিশ একজন ছাত্র বই তো নই। কলেজের শিক্ষকবৃন্দের অনেকের নামও জানা হয়ে ওঠেনি তখনো। কিন্তু বহুল আলোচিত হওয়ার কারণে নভেরার নামটিই জানা হয়ে গিয়েছিল।

বলা বাহুল্য, প্রথমবর্ষের ছাত্রত্ব পার করলেও বিশ্বের শিল্পকলার আধুনিক কর্মকান্ড, ভাবগতিক, গতিপ্রকৃতি, ধরন-ধারণ বা ইজমস ইত্যাদির কোনোকিছুই তেমন জানা হয়ে ওঠেনি তখনো। ব্যাপারটি ছিল নিতান্তই শূন্যের কোঠায়। সেই সময়টিতে আধুনিক ভাস্কর্যের প্রদর্শনী দেখার অভিজ্ঞতা বিস্ময়ের তো বটেই, বিশাল একটি ঘটনা।

শুধু এসবই নয়, সাদা সিমেন্টে নির্মিত কঠিন প্রক্রিয়ার কাজগুলির শিল্পী একজন মহিলা, তাও ছিল অবাক হওয়ার মতো। বলতে দ্বিধা নেই, তখন গুণাগুণ বুঝিনি। তবে সেসব যে অভিনব কোনো রসের তা জানতে পেরেছিলাম শিক্ষকদের আলাপচারিতায়। তো, সেই আমার প্রথম ভাস্কর্যের ব্যাপারে আধুনিক ধরনের কিছু কাজ দেখা।

আসলে ভাস্কর্যের চেহারাগত ও ধরনগত ব্যাপারটি জনসাধারণের অভিজ্ঞতায় শুধু পাথরে নির্মিত ধর্মীয় ঐতিহ্যিকগুলিই ছিল প্রধান। এমনিতেও কোনটা পুতুল, কোনটা পূজামন্ডপে বিগ্রহ আর কোনটাই বা ভাস্কর্য তা নিয়ে অজ্ঞতা ছিল অপরিসীম। এখনো যে সেসব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ধারণা থেকে দূরীভূত হয়েছে তেমন ভাবার হয়তো কারণ নেই। আসলে পত্রপত্রিকায় চিত্রকলার রিপ্রোডাকশন ছাপা হলেও ভাস্কর্যের ছবি তেমন ছাপা হতে দেখিনি। তবে মনে আছে, রামকিঙ্করের একটি ভাস্কর্যের ছবি একবার দেখেছিলাম। সেটাও বিমূর্তের ছিল না। তো, একথা স্বীকার করতেই হয় যে, নভেরার আধুনিক কাজের দ্যুতি সেই প্রথম ভাস্কর্যের মতো অন্তত একটি দিক এমন একটা সময়ে আলো ফেলেছিল, যখন দেশে আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শিল্পকলার ক্ষেত্রে আধুনিক চিত্রকলা চর্চার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ভাস্কর্যকে বাদ দিয়েই। ১৯৬৪ সালের আগে পর্যন্ত অতএব নভেরাই ছিলেন একাকী ভাস্কর। অর্থাৎ ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে পথিকৃতের আসনটি তাঁরই।

তাঁর সেই প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখনকার পাবলিক লাইব্রেরিতে, যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পাঠাগার। তখন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন। সেই সুবাদে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খান। তিনি প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন। অর্থাৎ তাঁর প্রদর্শনীটি যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝা গিয়েছিল এই ঘটনায় – লাইব্রেরির ইমারতটি আর্ট কলেজের মতোই ঢাকায় প্রথম আধুনিক স্থাপত্যরসের। এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, পঞ্চাশের দশকে সরকারি বেশকিছু দপ্তরে রুচিশীল আলোকিত মানুষ ছিলেন, যাঁরা সৃজনশীল মানুষদের গুণাবলিকে সম্মান দিতেন। তাঁদের প্রস্তাবাবলিকে গ্রাহ্যে নিতেন। সেইভাবেই ঢাকা শহরের তখনকার সুন্দর স্থান রেসকোর্স, রমনা আর শাহবাগের চমৎকার নিসর্গে আর্ট কলেজ, পাবলিক লাইব্রেরি, টিএসসি এবং অ্যাটোমিক এনার্জির সুরম্য অত্যাধুনিক দালান নির্মিত হয়েছিল। কালে আধুনিক স্থাপত্যিক নিদর্শন হিসেবে গণ্য হতে পারে শিল্পী ও স্থপতিদের এমন দূরদর্শী ভাবনাকে প্রশ্রয় দিতে দ্বিধা করেননি। অতএব শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম এবং বিখ্যাত গ্রিক স্থপতি দক্সিয়াদিসের নকশা ও প্রস্তাবগুলি গৃহীত হতে পেরেছিল সহজেই। সেই কারণেই আর্ট কলেজ, পাবলিক লাইব্রেরি ইত্যাদির মতো ইমারত যেমন নির্মিত হতে পেরেছিল, তেমনি শহীদ মিনারের জন্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রস্তাব অনুযায়ী শিল্পী হামিদুর রাহমান ও নভেরা আহমেদের যৌথতায় করা শহীদ মিনারের নকশা এবং পাবলিক লাইব্রেরির দেয়ালে তাঁদের ম্যুরালের জন্যে মাজহারুল ইসলামের
প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।

দেশে ভাস্কর্য চর্চার দিকে পাকিস্তান হওয়ার পরপর কোনো শিল্পীর না ঝোঁকার কারণ বোধহয় ছিল মাধ্যমটির প্রতি নিবেদিত কোনো শিল্পীর অনুপস্থিতি। কলকাতা থেকে যাঁরাই এ ভূখন্ডে এসেছিলেন (জয়নুল আবেদিন, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দীন আহমেদ, খাজা শফিক আহমেদ, কামরুল হাসান, হবিবুর রহমান), তাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই চিত্রকর। নভেরা সজ্ঞানে সেই স্থানটি পঞ্চাশের দশকে পূরণ করতে এগিয়ে এসেছিলেন। তবে ভাস্কর্যের মতো কঠিন দিককে মহিলা হয়েও বেছে নেওয়া কোনো দ্রোহ-বিদ্রোহের ব্যাপার ছিল না। তিনি নিয়মিত ভাস্কর্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন তখন।

সংস্কৃতমনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ছবি অাঁকা আর মাটি দিয়ে পুতুল বানানোর অভ্যাসটি আশকারা পেত। তাঁর মা ঘরে বসে এই চর্চা করতেন নেহাতই শখের বশে। জানা যায়, নাচ-গানেও নভেরার চর্চা ছিল। সেই প্রতিভার দিকটির স্ফুরণ ঘটে শিল্পীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে। বিশেষ করে শিল্পী হামিদুর রাহমানের সান্নিধ্য ও প্রশংসার কারণে। তিনি ভাস্কর্যের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। হামিদুর রাহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে লন্ডনে। তবে একেবারেই শৌখিন শিল্পী বা স্বশিক্ষিত শিল্পী বললে যে অর্থ বহন করে তা নভেরার ক্ষেত্রে ঘটেনি। তিনি ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বিলাতে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করেন। ভাস্কর্যে তাঁর শিক্ষক ছিলেন চেকোস্লোভাকিয়ার ক্যারেল ফোগেল।

পরবর্তী সময়ে হেনরি মুর ও বারবারা হেপওয়ার্থের কাজ এবং ভাস্কর্য সংক্রান্ত দর্শন বা চিন্তাভাবনায় আকৃষ্ট হন। তাঁদের কাজের ভাবভঙ্গি এবং নির্মাণ-কৌশলকে তাঁর ভালো লাগে। বাস্তব বস্ত্তর আকারকে সহজিয়া ও আধুনিকী করে প্রকাশের দিকে ঝোঁকেন।

১৯৬০-এর প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত কাজগুলি তাঁর সেই পর্বের। হেনরি মুরদের মতোই বিষয়ের ও মাধ্যমের কাঠিন্যকে পারফোরেট করে সলিড সারফেস ভেঙে পেছনের দৃশ্যকেও বিষয়ের অন্তর্গত করে ভাস্কর্য গড়েছেন। এরকম করার কারণটি দুরকমের। একটি বিষয়ের কাঠিন্যকে সুশ্রিতা প্রদান এবং দ্বিতীয়টি নিসর্গকে সব দিক থেকে সম্পৃক্ত করে দৃষ্টিগ্রাহ্যতা দেওয়া।

প্রদর্শনীর মূল কাজগুলি ছিল পাবলিক লাইব্রেরির চত্বরজুড়ে ছড়ানো-ছিটানো। দেয়ালে ছিল ম্যুরাল। বেশ জাঁকজমকের হয়েছিল পুরো প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাইনি। গিয়েছিলাম বেশ কয়েকদিন পর। প্রচুর লোকসমাগম হতো। তা এতটাই যে লাইব্রেরির উত্তর দিকে চা-বিস্কুটের দোকান বসে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দোকানটি শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন নামে রূপান্তরিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আর্ট কলেজের ছাত্ররাই ছিল মূল ক্রেতা।

এই ঘটনাটি উল্লেখ করলাম নভেরার ছড়ানো-ছিটানো ভাস্কর্যগুলিকে নিয়ে কিছু গোলমাল হওয়ার কারণে। চা-বিস্কুট খাওয়ার জন্যে আসা লোকজন বেশিরভাগই মাঠে বসত। একসময় লক্ষ করা গেল, অনেকেই ভাস্কর্যগুলির গায়ে হেলান দিয়ে বসে আড্ডা দেয়। আর্ট কলেজের ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছাত্ররা বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, ওই ভাস্কর্যগুলি যে মহা মূল্যবান শিল্পকর্ম তা বোধগম্যে ছিল না অনেকেরই।

এখন অবশ্য অন্য কথা। বদলে গেছে অনেক কিছুই। ভাস্কর্য বলি বা চিত্রকলা। এখন শিল্পানুরাগী বেড়েছে। শিল্পকলার কদর যেমন বেড়েছে, তেমনি এসব নিয়ে জ্ঞানও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই।

যাই হোক, নভেরা চলে গেলেন। কিন্তু তাঁর বেশকিছু শিল্পকর্ম দেশে রয়ে গেছে। সেগুলি আমাদের সম্পদ। নভেরাকে বুঝতে হলে, তাঁকে মূল্যায়ন করতে গেলে তাঁর কাজগুলি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবেই নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এবং আমার জানা মতে সেই দাবি দেশের শিল্পী, শিল্পানুরাগী বা শিল্পবোদ্ধা সবারই। তবে মন খারাপ করা আক্ষেপটি রয়েই গেল। আর তা হলো যে, শিল্পী নভেরার দেশে ফেরা আর হলো না। তিনি প্রবাসজীবনটাকে আরো দূরের না-ফেরার মহাপ্রবাসে সরিয়ে নিলেন চিরকালের মতো।

Leave a Reply