logo

ক্রাচের কর্নেল নাটক যখন প্রশ্নচিহ্নও বটে

অংশুমান ভৌমিক

নাটক আরম্ভের অনেক আগে থেকেই নাটক আরম্ভ হয়ে গেছিল বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে। সেটা ছিল ২৯ নভেম্বরের সন্ধে। গঙ্গার দিক থেকে বইতে থাকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীতের আমেজ। এ মরসুমে প্রথমবারের জন্য। এদিকে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ। বাতাসে রবীন্দ্রসংগীতের সুর। দু-চারজন করে দর্শকরা আসছেন। সার দিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। বহরমপুরের করিৎকর্মা নাটকের দল রঙ্গাশ্রমের সাত দিনের নাট্য উৎসবের ষষ্ঠ রজনীতে ঢাকার ডাকসাইটে নাটকের দল বটতলার ক্রাচের কর্নেল দেখতে আসা শ’পাঁচেক দর্শক অডিটরিয়ামের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সিটে বসতে বসতে খেয়াল করলেন পরদা খোলা। মঞ্চ ফাঁকা। খালি আপ স্টেজে দুটো উইংস ঘেঁষে দুটো ঘরাঞ্চি। আবছা একটা আলো এসে পড়েছে সেন্টারস্টেজে। সেখানে একজনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জটলা করছেন দশ-বারোজন।

টিম মিটিং? না হয়ে যায় না। মাঝে যিনি আছেন এই তো সবার সামনে সাউন্ড বোর্ডের পাশ দিয়ে অ্যাক্টর্স লেফট দিয়ে উইংস ঠেলে স্টেজে উঠলেন। ইনি নিশ্চয়ই এ নাটকের নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার।

দেখতে দেখতে ভরে গেল রবীন্দ্র সদন। সচরাচর সাড়ে ৬টায় শো শুরু হয়। সেদিনও হওয়ার কথা। হলো ১৫ মিনিট দেরি করে। দর্শক বসে রইলেন। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে কোনো সাড়াশব্দ নেই। শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর হিসেবে একটা পিয়ানো বেজে চলেছে। তার সঙ্গে নিচু স্বরে গাইছেন একজন। দর্শকদের মধ্যে যাঁরা জানেন তাঁরা শোনামাত্র চিনেছেন সেই সুর। সেই গান। এই গান একদিন এক নতুন দিনের ভৈরবী হয়ে ভূতের মতো তাড়িয়ে ফিরেছিল একটা ভূতে-পাওয়া প্রজন্মকে। গানের কথাগুলো উঠে এসেছিল অযুত নিযুত স্বপ্নালু যুবার ঠোঁটে। গানটার নাম ‘ইম্যাজিন’। গান না বলে জীবনদর্শন বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না।

১৯৭১ সালের সেই গান পিয়ানোর চাবিতে ভর করে ঘুরপাক খেতে থাকল রবীন্দ্র সদনজুড়ে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে। তারপর ওই গানের ওপর গলা তুলে এক বলিষ্ঠ নারীকণ্ঠ জানান দিলো, ‘এই নাটক এমন একজন মানুষকে নিয়ে তৈরি করা যিনি একজন স্বাপ্নিক মানুষ ছিলেন, ঘোর-লাগা একজন মানুষ ছিলেন। বলতে পারেন একজন বিপ্লবী, যাঁর বিপ্লবপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তাঁর গল্প ক্রাচের কর্নেল।’

ভারত-বাংলাদেশের সীমামেত্মর একপার এই কর্নেলকে চেনে। অন্যপার চেনে না। একপার এই সেদিনও কর্নেল আবু তাহেরের প্রাণদ–র যথার্থতা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে। অন্যপার ঘামায়নি। ওই ১৯৭১ সাল থেকে একপারের রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে অন্যপারের রাজনৈতিক বাস্তবতার ফারাক বাড়তে বাড়তে আজ এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে একপারের রাজনৈতিক নাটক অন্যপারে কীভাবে সাড়া ফেলবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠাও কি ধরা পড়ল না ওই নারীকণ্ঠে? পড়ল বই কি! পড়ারই তো কথা।

তবু যে অবিরাম দু ঘণ্টা পাঁচ মিনিট রুদ্ধশ্বাসে ক্রাচের কর্নেল দেখল বহরমপুর রবীন্দ্র সদন, শেষটায় অশ্রম্নসজল হয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলো, তার আট আনা কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নেবেন বটতলার এই প্রযোজনার সঙ্গে আগাপাশতলা জুড়ে থাকা সকলে। বাকি আট আনা কৃতিত্ব ভাগ হবে ক্রাচের কর্নেল এই নামের উপন্যাসের লেখক শাহাদুজ্জামান আর এই রচনার অন্ধিসন্ধিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অখ- বাঙালি জাতির বিপ্লববাসনার মধ্যে। এই বিপ্লববাসনার চুম্বক ধরা আছে কয়েকটা গানে। একটা অবশ্যই ‘ইম্যাজিন’। আরেকটা ‘ইন্টারন্যাশনাল’। দুটোর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঘোর-লাগা একটা চাবিকাঠি ছিল। তালা খোলেনি ঠিকই। কোন ভানুমতীর খেল দুই বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু ওই চাবিকাঠির মাহাত্ম্য তাতে করে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এমন নয়। এ দুটো গান, এ দুটো সুরকে ভর করে ডানা মেলল বটতলার ক্রাচের কর্নেল। উড়েই চলল।

একদিক থেকে দেখতে গেলে ক্রাচের কর্নেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক তথা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের বিতর্কিত চরিত্র কর্নেল আবু তাহেরের জীবনীনাট্য। অন্যদিক থেকে কর্নেল তাহের এক উপলক্ষ মাত্র। আসলে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ এই কালসীমায় পূর্ব পাকিসত্মানে ও কালক্রমে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অসীম আকাঙক্ষার করুণ স্বপ্নভঙ্গের ধারাবিবরণীর নাম ক্রাচের কর্নেল।

তাই বলে বটতলার এই নাটক শাহাদুজ্জামানের বহুলপঠিত বইয়ের কোনো সহজপাচ্য চেহারা আমাদের সামনে আনেনি। সত্যি বলতে কী সৌম্য সরকার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা-র করা নাট্যরূপ শাহাদুজ্জামানের বয়ানকে ধৌত তুলসীপত্র জ্ঞান করেনি। কোনো পাল্টা বয়ান তৈরি না করেও শাহাদুজ্জামানের যুক্তি তর্ক গল্পকে বারে বারে যাচাই করে নিয়েছে এই নাটক।

বই ক্রাচের কর্নেল-এর গোড়ার কথা ছিল – ‘এক কর্নেলের কথা শোনা যাক।’ নাটক ক্রাচের কর্নেলের গোড়ায় ভারী বুটের মিলিটারি প্যারেডের সঙ্গে ‘বন্ধুগণ, আপনাদেরকে এক কর্নেলের গল্প বলব আজ’ উচ্চারণ হওয়া মাত্র ছুটে আসে বিরুদ্ধ স্বর, ‘একজন কর্নেলের গল্প কেন শুনতে হবে আমাদের? গল্পের কি আকাল পড়েছে নাকি?’ ওই কুচকাওয়াজের তালে তাল মিলিয়ে সমকালীন বাংলাদেশকে নাড়া দেওয়া হরেক রকম গল্পের ফিরিসিত্ম শুনি আমরা। এর মধ্যে যেমন অভিজিৎ রায় আছেন, মোদি-মমতা আছেন, রোহিঙ্গারা আছেন, তেমন আছে রামপাল পরমাণু প্রকল্প, যুদ্ধাপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহিতার ‘গল্প’। ফিরিসিত্ম শোনার পর সাফ হয়ে যায় ক্রাচের কর্নেলের নিশানা। জানা যায় যে আজকের গল্প শুধু ওই কর্নেলের নয়, জাদুর ঘোর-লাগা আরো অনেকগুলো মানুষের, বদলে ফেলার নেশায় পাওয়া কিছু উন্মাদের, নাগরদোলায় চেপে বসা এক জনপদের, পদ্মার ঘূর্ণিতে ঘুরতে থাকা কিছু পলিমাটির, ঘোর-লাগা এক সময়ের।

আর দুয়েক মিনিটের মধ্যেই ক্রাচের কর্নেল আমাদের টেনে আনে বটতলার মহড়া ঘরে। দৃশ্যবিভ্রমের ঘোর ভেঙে দিয়ে বটতলার কলাকুশলীরা জানিয়ে দেন কয়েক দিন পর ক্রাচের কর্নেলের প্রিমিয়ার শো। পরদিনই টেকনিক্যাল রিহার্সাল। অথচ এখনো নানা কিসিমের গোলেমালে টালমাটাল হয়ে আছে দল। কেন্দ্রীয় চরিত্রে যাঁর অভিনয় করার কথা তিনি হঠাৎ এসএমএস করে দলকে জানিয়েছেন যে যেহেতু তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি যে তাহের আসলে নায়ক না খলনায়ক তাই তাহেরের মতো একটা ‘বিতর্কিত’ চরিত্রে অভিনয় করতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না। এই এসএমএস দলের মধ্যে অল্পবিস্তর বিভ্রামিত্ম আনলেও প্রক্সি অ্যাক্টরকে দিয়ে সাবস্টিটিউট করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় দল। মহড়া চালু থাকে। চার-সাড়ে চার দশক আগেকার বাস্তবতার সঙ্গে ঘটমান বর্তমানের ভাঙা সাঁকো জুড়ে যায়। সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যে কোনো নৈর্ব্যক্তিক দূরত্ব তৈরি না হলেও ব্রেখশটিয়ান ঘরানার এই তাস আখেরে কাজে দেয়।

এক সময় কাজী রোকসানা রুমা বলে ওঠেন, ‘এই যে জনাব সামিনা লুৎফা নিত্রা, তাহেররা পশ্চিম পাকিসত্মান থেকে কীভাবে পালাল সেটা করব না আমরা?’ ব্যক্তি রুমা-নিত্রার সঙ্গে নট রুমা-নিত্রার তফাত মুছে যেতে থাকে। নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার আমাদের সামনে না এসেও সত্যিকারের আবু তাহের আর নাটকের আবু তাহেরের মধ্যে ফারাক গড়তে থাকেন। এসে পড়ে জীবনভিত্তিক নাট্যনির্মাণের নানা প্রায়োগিক সমস্যার কথা। ঢাকায় বেড়ে ওঠা অভিনেতা কীভাবে গোয়ালঘর সাফ করবে, দক্ষক্ষণাঞ্চলে বেড়ে ওঠা অভিনেতা কীভাবে প্রমিত বাংলায় কথা বলবে? ঢাকাকেন্দ্রিক নাট্যচর্চা কীভাবে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের নাড়ি ধরবে, কীভাবে নগরনাট্যের নবীন নট গ্রামীণ চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন তারও খেই ধরাতে থাকে এ নাটক।

আসেত্ম আসেত্ম এইসব ঝুটঝামেলা ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে ক্রাচের কর্নেলের রাজনৈতিক বক্তব্য। তা নিয়ে কুশীলবদের মনে উশখুশ করতে থাকে বারুদ। নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে অভিনেয় চরিত্রের রাজনৈতিক বিশেস্নষণের মিল-বেমিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যায়নের মধ্যে ফের নাক গলায় মহড়া। একজন বলে ওঠেন, ‘জিয়া মানুষটা কিন্তু অত সহজ লোক ছিলেন না। বহুল ঘোরেল!’ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ শোনা যায়, ‘একজন শহিদ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আমরা এভাবে কথা বলতে পারি না।’ এভাবে শুষ্কং কাষ্ঠং জীবনীনাট্যের ঘেরাটোপকে তুলে দিয়ে বেহেস বাতচিতের আবহাওয়া তৈরি করে নাটক। এই সময়ের দর্শককে ভাবিয়ে তোলে। বঙ্গভবন আর ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেকার দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার দর্শকের কপালে ভাঁজ ফেলে। আবার সেই সময়ের পুনর্নির্মাণে অনেকান্ত সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয় না। ক্রাচের কর্নেলের প্রস্ত্ততিপর্বে বটতলার কলাকুশলীদের ভেতরে যে তুমুল বৌদ্ধিক কসরত চলেছে তারও দলিল হয়ে ওঠে এই নাটক।

নাটক চলতে চলতে হুট করে মহড়ার টুকরোটাকরা ঢুকিয়ে দিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে মূল নাটকের দিকে সন্ধানী দৃষ্টি হানবার এই কায়দা অনেক দিন চালু হয়েছে। দেশে ও বিদেশে। বছর পাঁচেক আগে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকীকে মাথায় রেখে ভানু ভারতী একটা অদ্ভুত নাটক লিখেছিলেন। তামাশা না হুয়া। ব্যাপারটা এইরকম ছিল যে দিলিস্নর একটা নাটকের দল সরকারের কাছ থেকে প্রোডাকশন গ্রান্ট পেয়ে রবীন্দ্রনাট্যমঞ্চায়নের শামিল হয়েছে। হইহই করে মুক্তধারা নাটকের মহড়া চলছে। খোদ নির্দেশক মশাই ধনঞ্জয় বৈরাগী সেজেছেন। বস্নকিং, কম্পোজিশন সব সারা। কস্টিউম এসে গেছে। তিন দিন বাদেই শো। কিন্তু নাটকের কুশীলবদের মনে এ নাটক নিয়ে নানা সংশয়। এতদিন ধরে মহড়া চলছে অথচ কেন যে এ নাটক বাছা হলো সেটাই মাথায় ঢুকছে না অনেকের। কেউ রিহার্সাল থামিয়ে দিয়ে বলে উঠছেন, ‘আই অ্যাম নট কনভিন্সড!’ কেউ মুক্তধারাকে ‘কনফিউজিং অ্যান্ড রোমান্টিক’ বলে ধুয়ে দিচ্ছেন। অতঃপর রইল পড়ে নাটক। নট, নাটককার, নির্দেশকের মাতববরির চালু ধাঁচাকে উলটে দিয়ে নির্দেশককে ঘিরে জোরদার আলোচনা শুরু হলো। রবীন্দ্রনাথ কোন চোখে যন্ত্রসভ্যতাকে দেখতেন, তাকে ‘রোমান্টিক’ বা ‘মিস্টিক’ বলে দেগে দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে কি না, মহাত্মা গান্ধির পলস্নী উন্নয়নের দর্শনে কোনো গলদ ছিল কি না, ফারাক্কায় গঙ্গার ওপর বাঁধ দিয়ে ভারত কীভাবে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে, কীভাবে ভারতের ওপর বয়ে চলা সিন্ধুর উপনদীর ওপর বাঁধ তুলে পাকিসত্মানকে বৈরীভাবাপন্ন করে তুলছে ভারত, চিন যদি ব্রহ্মপুত্রের ওপর বাঁধ তুলে দেয় তাহলে অসমের কী দশা হবে, সবার অগোচরে পুঁজিবাদ কীভাবে গ্রাস করছে আমাদের, মোবাইল ফোন-ল্যাপটপের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কীভাবে আমাদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে – এসব নিয়ে তুমুল তর্ক হলো। হয়েই চলল। মুক্তধারা আর করা হলো না। ওই আধাখ্যাঁচড়া মহড়া আর ওই মগজের হালকা ধোলাই – এটাই নাটক হয়ে গেল।

ক্রাচের কর্নেলের গড়নে ওই ব্যাপারটা ষোলো আনা আছে। এটা বটতলার দলীয় কাঠামোয় একধরনের মুক্তমনা খোলা হাওয়ার আভাস দিয়েছে।

শাহাদুজ্জামানের ডকুমেন্টারি ফিকশনের মতো এই নাটকেরও চলন ঘটনানির্ভর। এপিসোডিক স্ট্রাকচার। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মহিউদ্দীন আহমেদ আর বিবি আশরাফুন্নেসার দশ ছেলেমেয়ের চতুর্থ নান্টুর ক্রমে কর্নেল তাহের হয়ে ওঠার মধ্যেই ১৯৫২-র উত্তরপর্বে পূর্ব পাকিসত্মানের রাজনীতির মূল সূত্রগুলো লুকানো ছিল। সেগুলোকে ঝেড়েবেছে কাজে লাগিয়েছেন সৌম্য-নিত্রা। মহড়ার অছিলায় উপন্যাস থেকে বেরিয়েও গেছেন বহুদূর। পাক আর্মির একজন সহানুভূতিশীল জেনারেলের কথা এসেছিল শাহাদুজ্জামানের লেখায়। নাটকে মহড়া থামিয়ে একজন বলে উঠেছেন, ‘এই ঘটনাটা কদ্দুর বিশ্বাসযোগ্য?’ কথার জল গড়িয়েছে। একজন মত দিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা, পাক আর্মি, ভারতীয় বাহিনী, মুজিব বাহিনী কারো ভূমিকাকেই হোমোজেনাস ভাবে দেখাটা ইতিহাসচর্চায় একটা পদ্ধতিগত ভুল।’ বলতে থাকেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা বিরাট ঘটনার সময় বিকল্প নানা ছোট ছোট ধারার ব্যাপার তো হয়েছে যেটার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অফিসিয়াল ভার্শনের কনফ্লিক্ট হতে পারে।’ এই মেধাবী উচ্চারণের সুতোর টানে মান্যতা পেতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা অনেক অস্বীকৃত অচর্চিত বাতিস্তম্ভ। নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার অনেক সমিধ।

কর্নেল তাহেরকে নিয়ে নাটকে কতক অবশ্যম্ভাবী হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ওরফে জাসদ-এর গড়ে ওঠা থেকে শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠার বিশদ বিবরণ আছে। আছে জাসদের তৎকালীন তরুণ নেতা তথা বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর প্রসঙ্গও। ইনু ছাড়াও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতির বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে ক্রাচের কর্নেলে। কোনো কোনো চরিত্রায়ণে মোহাম্মদ আলী হায়দারের পক্ষপাত অস্পষ্ট থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের বড় বয়ানের নিচে কতক চাপা পড়ে যাওয়া সিরাজ শিকদারের ছোট বয়ান হাত খুলেই লিখেছিলেন শাহাদুজ্জামান। লিখেছিলেন তাঁর পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির কথা। বটতলার নাটকে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর বিবৃতির পর নেপথ্যে বাজতে থাকা ‘ইন্টারন্যাশনাল’-এর খেই ধরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটা দ্যোতক মন্তব্য – ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্রসফায়ারে নিহত হন সিরাজ শিকদার।’ প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি থেকে সরে এই তির্যক অথচ নির্ভীক অবস্থান বটতলার ক্রাচের কর্নেলকে স্বতন্ত্র করেছে।

বইয়ের মতো অতশত না হলেও অসংখ্য দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে বটতলার এই নাটকে। আলো নেভাতে হয়নি। এক দৃশ্যের পিঠে মসৃণভাবে চড়ে বসেছে আরেক দৃশ্য। নাটকের চলন মাঝে মাঝে গুরুভার হলে লঘু চালের আমদানি অনিবার্য হয়ে পড়েছে। অক্সফোর্ডে তাহের আর বিবি লুৎফার মধুযামিনীর দৃশ্যায়ন যদি মধুর রসের ভিয়েন চড়ায়, তবে পঙ্কজ মজুমদারের করা খন্দকার মোশতাকের চরিত্রায়ণ নিখাদ হাস্যরসের উদ্রেক করে। জিয়াউর রহমানকে যে চোখে দেখেছিলেন ঔপন্যাসিক তাকেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন নির্দেশক। তা বলে কর্নেল তাহেরের দিকে অহেতুক ঝোল টেনে জেনারেল জিয়াকে খাটো করার বাসনা পোষণ করেননি। জিয়ার চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন গোলাম মাহবুব মাসুম। শেখ মুজিবুর রহমানও এসেছেন চরিত্র হয়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর অবস্থানকে দেখা হয়েছে মুগ্ধতার চশমা খুলে। এসেছে ১৫ আগস্টের প্রসঙ্গ। কোথাও বীরগাথা নির্মাণের আয়োজন রাখেননি মোহাম্মদ আলী হায়দার। জীবনীনাট্য মানেই যে নায়কের মধ্যে মহানায়কত্ব আরোপ নয়, বরঞ্চ পরিপার্শ্বের সঙ্গে মিলিয়ে তাঁর ঐতিহাসিক স্থানাঙ্ক নির্ণয় করাও যে জীবনীনাট্যের লক্ষ্য হতে পারে, ব্যক্তিনায়কের চাইতে তাঁর হয়ে ওঠার পটভূমি যে মহত্তর হয়ে উঠতে পারে সেই কথাটাই বলতে চেয়েছে বটতলার ক্রাচের কর্নেল।

অসংখ্য চরিত্র এসেছে গিয়েছে। বহরমপুরের বিংশতিতম মঞ্চায়নে দেখা গেল সব মিলিয়ে নয়জন মিলে এতশত চরিত্র রূপায়ণ করছেন। বিভঙ্গের সামান্য হেরফেরে, মুখের ওপর ফেলে দেওয়া কাপড়ের সামান্য আড়ালে, হাতে তুলে নেওয়া লাঠির রকমারি ব্যবহারে আর একবার মুখোশের তির্যক ব্যবহারে বদলে বদলে গেছে চরিত্র। তথাকথিত পুরুষোচিত চরিত্রে হরদম দুই নারী নিত্রা ও রুমাকে দেখা গেছে। হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পুরুষতান্ত্রিক লিঙ্গনির্মাণের সাবেক ইমারত। প্রথম দিকে দু-তিনজন মিলে তাহের সাজছিলেন। ইভান রিয়াজের ভাগেই পড়েছিল বেশি। নাটক যত এগোল তত তাহের হিসেবে ইমরান খান মুন্না ওই ভূমিকায় জবরদস্ত হয়ে উঠলেন। পশ্চিমবঙ্গের রিয়ালিস্টিক ঘরানার প্রসেনিয়াম থিয়েটারের দর্শকদের কাছে এই ব্যাপারটা স্বাদবদলের শামিল। বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির অভিনয়ে অভ্যস্ত বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের দর্শকের কাছে এটা এতদিনে জলবৎ তরলং হয়ে গেছে।

তবে আমাদের স্তম্ভিত করেছে বটতলার কুশীলবদের শারীরিক ক্ষক্ষপ্রতা। বাচিক অভিনয়ে তাঁদের সবাই উঁচু দরের নন। বিশেষ করে পিন্টু ঘোষের অসাধারণ আবহ পরিকল্পনায় দ্রম্নতলয়ের আর্মি ড্রিলের অনুসারী ছন্দে পা ফেলে সংলাপ উচ্চারণে তাঁদের কাউকে কাউকে বেশ নড়বড়ে শুনিয়েছে। ইংরিজি জবানেও সুবিধে হয়নি সবার। কিন্তু আঙ্গিক অভিনয়ে তাঁদের সিদ্ধি বিস্ময়কর। বটতলার পঞ্চম প্রযোজনা ট্রায়াল অফ মাল্লাম ইলিয়া যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বুঝবেন ক্রাচের কর্নেলের নির্মাণে মহম্মদ বেন আবদাল্লার লেখা নাটকের সেই প্রযোজনা কুশীলবদের কতখানি কাজে এসেছে। পটভূমি আধুনিক আফ্রিকা হলেও ট্রায়াল অফ মাল্লাম ইলিয়াতে ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশে একের পর এক মিলিটারি ক্যুর আদল ছিল। শব্দ নয়, কুশীলবের শরীর হয়ে উঠেছিল যুদ্ধাস্ত্র। ক্রাচের কর্নেল-নাটকের বারো আনা জুড়ে আছে রৌদ্ররস। কুশীলবদের পরিচ্ছদেও সেনাসুলভ জলপাই রং আর জংলা ছাপ। তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমগ্র মঞ্চময় প্রচ- শারীরিক অভিনয় ক্রাচের কর্নেলের জিয়নকাঠি। সামিনা লুৎফা নিত্রার কোরিওগ্রাফিতে ভর করে এ নাটকের যুদ্ধপরিস্থিতি এত ঘনিয়ে ওঠে যে কুচকাওয়াজ কিংবা লড়াইয়ের ময়দানে কুশীলবদের হাতে রাইফেলের বদলে মোটাসোটা লাঠি উঠে এলেও আমাদের চোখে লাগে না। খালিদ মাহমুদ সেজানের আলোক পরিকল্পনায় মুহুর্মুহু বদলায় নাটকের রং। উদ্দীপনা ছড়ায় পশ্চিম পাকিসত্মানের আটক ফোর্টে বাঁশের ওপর ভর দিয়ে (আসলে কুশীলবদের সারবদ্ধ পিঠের ওপর দিয়ে) ১২০ ফুট উঁচু দেয়ালে চড়ার দৃশ্য। রোমহর্ষক হয়ে ওঠে কামালপুর পাক ক্যাম্প হানার দৃশ্যায়ন। এমনিতে দুটো ঘরাঞ্চি আর দু-তিনটে চৌকো বস্নক ছাড়া মঞ্চে কিছুই রাখেননি নির্দেশক। তাই দিয়েই দরকারমাফিক উঁচু-নিচু ঘটিয়ে নেন। কুশীলবদের ফাঁসিতে চড়ান। চেয়ারে বসান। পাক আর্মির ছোড়া গোলার আঘাতে তাহেরের পায়ে গুরুতর আঘাত পাওয়ার দৃশ্যকে দীর্ঘায়িত করতে পারতেন নির্দেশক। করেননি। নিমেষের মধ্যে সহসৈনিকদের কাঁধে তুলে তাহেরকে বের করে দিয়েছেন।

এভাবে বারংবার আমাদের ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। চোখ ফেরাতে দেননি মঞ্চ থেকে। একবারই, বুদ্ধিজীবী হত্যার খতিয়ান দেবার সময়, করুণ সুরে বেজেছে অভিনয়। আর্দ্র হয়েছে দর্শকের অক্ষক্ষপট। পরমুহূর্তেই বেশ অনাড়ম্বরভাবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছে। ডাউন রাইটে লুৎফার পাশে দেখা গেছে তাহেরকে। স্থান গৌহাটি হাসপাতাল। তাহেরের মুখে চরম আফসোস, ‘যুদ্ধটা আসলে হাতছাড়া হয়ে গেল। ঠিক স্বাভাবিক বিজয় হলো না আমাদের। একটা নতুন দেশের জন্ম হলো ঠিকই কিন্তু হলো অনেকটা ফোরসেপ ডেলিভারির মতো, অন্যের সাহায্য নিয়ে।’

ক্রাচের কর্নেলে এই আফসোস শেষমেশ এক প্রবল প্রশ্নের আকার নেয়। জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের মূলভাষ্যের সমান্তরালে বহমান সংশয়, প্রতিবাদ এমনকি অন্তর্ঘাতকে নান্দনিক মান্যতা দেয়। পালটা বয়ানের খোঁজকে উসকে দিতে থাকে।

বিগ্রহধর্মী নাট্যচর্চার একটা পরম্পরা ঔপনিবেশিক আমল থেকেই বাংলায় চালু আছে। যাত্রায় তো বটেই, প্রসেনিয়াম থিয়েটারেও তার অবাধ বিচরণ। মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলার গ্রামেগঞ্জে সিরাজউদ্দৌলা পালার প্রবাদপ্রতিম খ্যাতি ছিল। ক’বছর আগে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একের পর এক জীবনীনাট্য বাংলাদেশের মঞ্চে এসেছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শাহ আবদুল করিমকে নিয়েও মঞ্চনাটক হচ্ছে ঢাকায়। কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দ, মহেন্দ্রলাল সরকার থেকে শুরু করে অরবিন্দ ঘোষ, দেবব্রত বিশ্বাস এমনকি নাট্যজগতের প্রধান পুরুষরাও নাট্যবস্ত্ত হচ্ছেন। পপুলার কালচারের দুনিয়া আলাদা। এলিট কালচারের নাগরিক প্রাঙ্গণে কতক অবধারিতভাবে এহেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে বিগ্রহনির্মাণকে প্রভাবিত করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। বিপ্লবী রাজনীতির আপাত নাশকতাবাদী বয়ানও রাষ্ট্রের অনুমোদিত ইতিহাসের বশংবদ হয়ে থেকেছে।

একটু তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যায় যে ইতিহাসের নির্মাণ ও বিনির্মাণের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার একটা আঁটোসাঁটো সম্পর্ক কায়েম আছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যদি বিগ্রহবিলাসী হয়ে ওঠে তবে ক্ষমতার ওঠাপড়ার সঙ্গে বিগ্রহের দরও লাগাতার উঠতে-নামতে থাকে। ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ে অতিকথা, গজিয়ে ওঠে হরেক রকমের কিংবদমিত্ম। ঐতিহাসিকের শ্রেণিগত অবস্থান যত মজবুত হয়, তত মালুম হয় পক্ষপাত। ঐতিহাসিক উপন্যাসের বেলাতেও এর হেরফের হয় না। রচনার বিষয়বস্ত্ত লেখকের যাপিত জীবনের আওতায় চলে এলে এই পক্ষপাত আরো খোলতাই হয়। শাহাদুজ্জামানের লেখা ক্রাচের কর্নেল এই হিসাবের বাইরে নয়।

আবার বাংলাদেশের মতো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো যখন যুযুধান দুই রাজনৈতিক জোটের ওপর দাঁড়াতে শুরু করে, যখন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে ঘিরে একধরনের মেরুকরণ ঘনিয়ে ওঠে, যখন বড় শরিকের দাপটে ছোট শরিকের দবদবায় রাশ পড়ে, তখন বড় বয়ান ওরফে গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ আর ছোট বয়ান ওরফে স্মল ন্যারেটিভের মধ্যেকার চোরা বয়ান থেকে বিগ্রহের এমন সব পুনর্নির্মাণ হতে পাওে, যা পরস্পরবিরোধী দরবারি ইতিহাসচর্চাকে প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। অন্তর্ঘাতের দরজা হাট করে খুলে দেয়। বই হিসেবে ক্রাচের কর্নেল যদি ওই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের মজ্জাগত প্রবণতাকে কাঠগড়ায় তুলে থাকে, বটতলার নাটক ক্রাচের কর্নেল আরো বড় পরিসরে সেইসব পরিপ্রশ্নকে মান্যতা দেয়। ২০০৯ সালের একুশের বইমেলায় ক্রাচের কর্নেল বই হয়ে বেরিয়েছিল। গেল আট বছরে আরো আটবার এই বই ছাপাখানায় পাঠিয়েছে মাওলা ব্রাদার্স। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে প্রথম মঞ্চায়নের এক বছরের মধ্যে একুশবার মঞ্চস্থ হয়েছে বটতলার ক্রাচের কর্নেল। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহুত্ববাদী চরিত্রকে একধরনের মহিমা দিয়েছে।

গণতান্ত্রিক পরিসরে বিকল্প ও ব্যক্তিক্রমী চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর দায় সুশীল সমাজের আছে। বটতলার এই নবম প্রযোজনা চেয়েছে ক্ষমতাতন্ত্রের তাঁবে থাকা চিন্তার সূত্রগুলোকে উন্মুক্ত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে। উত্তর-১৯৭১ কালখ– মঞ্চনাটক যে স্রেফ বিনোদন নয়, তা যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাতিয়ার – এই আদত কথাটাও মনে করিয়ে দিয়েছে।

ঢাকা বা টাঙ্গাইলে ক্রাচের কর্নেলের মঞ্চায়নের শেষে শুনেছি প্রথামাফিক কার্টেন কল ছাড়াও নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে দর্শকদের সাফ কথা শুনতে চান, ছুড়ে দেওয়া সওয়ালের সিধা জবাব দেন। নাটমঞ্চের সম্প্রসারণ ঘটে গণপরিসরে। বহরমপুরে দেখা গেল মঞ্চের কথাবার্তার পালা ফুরোলে রবীন্দ্র সদনের দর্শকদের মধ্যে ঢুকে পড়লেন নিত্রা-রুমা। একেবারে নাড়ি ধরে বুঝতে চাইলেন বোধের কোন কোন স্তরে ঘা দিলো ক্রাচের কর্নেল । আর কোথায় কোথায় ঘা পড়ল না।

নাটকটা আরম্ভ হওয়ার আগেই আরম্ভ হয়ে গেছিল। শেষ হওয়ার পরেও তাই শেষ হয় না। ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া কর্নেল তাহেরের জবানবন্দির শেষ দিককার একটা কথা, ‘নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই’, চেতনায় ঘা মারতে থাকে। অবিরাম।

 

আলোকচিত্র : অংশুমান ভৌমিক

Leave a Reply