logo

চিদানন্দ দাশগুপ্ত তাঁর সময় ও সমসাময়িককাল

তারেক আহমেদ

অনেকটা নীরবেই যেন চলে গেলেন চিদানন্দ দাশগুপ্ত। অনেকদিন ধরেই স্মৃতিশক্তি ক্ষয়কারী পার্কিনসন্স রোগে ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত গত ২৩ মে জীবনাবসান ঘটে তাঁর। তাঁর এই মৃত্যুকে একটি জীবনের অবসান বা তারকার মৃত্যু – কোনোটাই বলা যাবে না। কারণ চিদানন্দ দাশগুপ্ত কোনো যুগ পরিবর্তনকারী নায়ক ছিলেন না – ছিলেন না কোনো খ্যাতিমান চলচ্চিত্র-নির্মাতা বা কুশলী। তবু তাঁর মৃত্যু ভারতকে তো বটেই – গোটা এই অঞ্চলে যাঁরা সিরিয়াস চলচ্চিত্র সংস্কৃতিচর্চায় রত তাঁদের অনেকের মনে ছাপ রেখে যাবে।

জন্ম তাঁর এমন এক সময়ে, যখন অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠেছে। শিল্প-সাহিত্যে চারদিকে কেবল রবির আলোকচ্ছটা। সংস্কৃতির মানুষরা তো বটেই,  রাজনীতিবিদরাও যেন রবীন্দ্র-পরশ পেলে ধন্য হয়ে যেতেন তখন। রবীন্দ্র-বলয়ের বাইরেও কোনো কোনো নাম শোনা যাচ্ছে। নজরুল খ্যাতির মধ্যগগনে। বাংলা সাহিত্যে কল্লোল যুগ আসি আসি করছে। শিশির ভাদুড়ী তখন নাট্যমঞ্চজুড়ে আছেন। শিল্প-সাহিত্যে সর্বত্রই যেন সৃষ্টিশীল মানুষের জোয়ার বইছে। কেবল সিনেমার অবস্থাই তথৈবচ।

মাত্র তিন দশক আগে ফরাসি লুমিয়্যের ভাইদের হাতে সৃষ্টির ক’বছরের মধ্যেই বাঙালি হীরালাল সেন চলচ্চিত্রে তাঁর চমক দেখিয়ে ভারতীয় দর্শককে মাতালেন। কিন্তু তার পরও গেল শতকের বিশ কিংবা ত্রিশের দশকে ভারতীয় সিনেমার শৈশব যেন কাটছিলই না। প্রমথেশ বড়–য়া, দেবিকা রানী, হিমাংশু রায় আর সায়গলরা খ্যাতির মধ্যগগনে থাকলেও সিনেমা যে নিজেই একটি শিল্প, অন্য কোনো শিল্পের প্রতিরূপ নির্মাণ তার কাজ নয় – সেটি কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না। বিশ শতকের গোটা বিশ, ত্রিশ আর চল্লিশ দশকজুড়েই চলে এই অবস্থা। অথচ ভারতবর্ষের রাজনীতি তখন প্রবলভাবে মোচড় খেয়েছে। দেশভাগের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনার কারণে লাখ লাখ মানবসন্তান দিশেহারা। এর ঠিক আগেই ঘটলো গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং। কিন্তু কিছু নিউজ রিল ধরনের তোলা ফুটেজ ছাড়া সে-সময়কার অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এই ঘটনাপ্রবাহের কোনো ছাপ ছিল না ভারতীয় সিনেমায়।

অথচ বিশ্ব চলচ্চিত্র তখন গ্রিফিথ, আইজেনস্টাইনদের যুগ পেরিয়ে জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট সিনেমা হয়ে পৌঁছে গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের প্রতিটি শহরের অলিগলিতে। বাইসাইকেল থিভস নামের এক ছবি, যে-ছবিতে কোনো নায়ক নেই, নেই কোনো নায়িকার গ্ল্যামার – ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির যুদ্ধবিধ্বস্ত ইতালির পথে পথে হারিয়ে যাওয়া সাইকেলের জন্য ঘুরে ফেরা সাধারণ পিতা-পুত্রের কাহিনি যেন দুনিয়ার সকল মানুষের বয়ানে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করেই দর্শকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় এই ছবি। স্টুডিও-নির্ভর প্রায় মঞ্চের কাছাকাছি জগৎ ছিল যে-সিনেমার – প্রবল এক ধাক্কায় তা ছিটকে এসে পড়ে সদর রাস্তায়। ক্যামেরা যে-জগতের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে, তা বুঝিয়ে দেয় এই ছবি আর তার নির্মাতা ভিত্তোরিও ডি সিকা।

পরাধীন ভারতবর্ষে বসবাস করেও কফি হাউসের আড্ডায় আসর মাত করা চিদানন্দ দাশগুপ্ত আর তাঁর বন্ধুদের বাইসাইকেল থিভস ছবির কথা ইতোমধ্যেই জানা হয়ে গিয়েছিল। তার প্রমাণ আমরা পাই পরবর্তীকালে – যখন সেই তরুণ সিনেমাপ্রেমীদের একজন সত্যজিৎ রায় – এই ছবি ও নিওরিয়ালিস্ট ধারার ছবিকে তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরবর্তীকালে বর্ণনা করেন।

সেই উত্তাল সময়ে জন্ম নিয়েও প্রত্যক্ষ কোনো শিবিরেই ঠাঁই নেননি চিদানন্দ দাশগুপ্ত। সংস্কৃতিচর্চাকেই করেছিলেন জীবনের পাথেয়। তাই মাত্র ২৬ বছর বয়সেই তাঁকে আমরা দেখি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সামনের কাতারে। চল্লিশের দশকের গোড়ায় বোম্বেতে প্রথম একটি চলচ্চিত্র সংসদ গড়ে উঠলেও ভারতের স্বাধীনতার বছরে চিদানন্দ দাশগুপ্ত ও সত্যজিৎ রায়সহ আরো দুয়েকজনের উদ্যোগে সৃষ্ট ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির  মাধ্যমেই মূলত ভারতে সিরিয়াস চলচ্চিত্রচর্চার কাজটি শুরু হয়।

ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি শুরুর সেই ইতিহাস আজ হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। নাগরিক মধ্যবিত্তকে ভালো ছবি দেখাবার তাগিদ থেকেই মাত্র ২৫ জন সদস্য জোগাড় করে এই চিদানন্দ দাশগুপ্তের বাড়ির একটি কক্ষে যাত্রা শুরু করে এই চলচ্চিত্র সংসদ। এর পাঠাগার গড়ে তোলার কাজটি নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। প্রথম দুবছর এই ২৫ জনকে নিয়েই চলে ছবি দেখাবার কাজ। যাঁদের অনেকেই আবার ছিলেন রীতিমতো বিনে পয়সার সদস্য। অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার মতোই এ সময় সত্যজিৎ, চিদানন্দসহ অন্যরা ভাবলেন – বিদেশ থেকেও আনতে হবে ছবি। পাশাপাশি চললো সিনেমা নিয়ে লেখাপড়া, আলোচনা ইত্যাদি। দুবছরের মধ্যে অবশ্য সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু বাদ সাধলেন বাড়িওয়ালা, তার বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এই অজুহাতে এসব বাউণ্ডুলের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ জারি হলো। এমনি হাজার রকমের ঝক্কিঝামেলা নিয়েও  ক্রমাগত এগিয়ে গেছে ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির কাজ।

সময়টা ছিল প্রবল জোয়ারের। বিরুদ্ধ-স্রোতেই নাকি সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, এমনটি অনেকেই বলে থাকেন। বস্তুত বিশ শতকের গোটা বিশ, ত্রিশ আর চল্লিশের দশকজুড়ে সারা ভারতে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন – তার ফলে দেশভাগ, স্বাধীনতা – এসব ঘটনাপ্রবাহ একদিকে যেমন সারা উপমহাদেশকেই উত্তাল করে তুলেছিল, যার বলি হয় লাখ লাখ প্রাণ; অন্যদিকে দেশভাগ,

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ইত্যাদি শুধু বাংলার নয় – ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সৃজনশীল মানুষদের হৃদয়েও গভীর ছাপ ফেলে। তাই এ সময়টায়

শিল্প-সাহিত্যের নানা দিকে আমরা লক্ষ করি প্রবল জোয়ার। শান্তিনিকেতনীয় প্রভাববলয়ের বাইরে এ সময় গড়ে উঠে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ)। বাম রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগসূত্র থাকা এই সংগঠনে পরবর্তীকালের নাট্য, নৃত্য, সংগীত ইত্যাদি ক্ষেত্রের খ্যাতিমানেরা তো বটেই, এমনকি সত্যজিৎ রায়ের পাশাপাশি ভারতীয় সিনেমায় যে দুটো নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় – সেই ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেনেরও যাত্রা শুরু কিন্তু এই গণনাট্য সংঘে।

মূলত ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির কার্যক্রমের ফলেই পঞ্চাশের দশকে ভারতে সত্যজিৎ, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতার আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীকালে ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়া চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাই চিদানন্দ দাশগুপ্তরা অনেকটা পাথেয়র ভূমিকা নেন। লক্ষ করার বিষয়, সত্যজিৎসহ বন্ধুদের কেউ কেউ পরবর্তীকালে খ্যাতির জোয়ারে ভেসে গেলেও চিদানন্দ দাশগুপ্ত আড়াল করেই রেখেছেন নিজেকে। খ্যাতির বিড়ম্বনার চাইতে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির নিমগ্ন চর্চাই যেন ছিল তাঁর লক্ষ্য।

ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও তাঁর পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে শিক্ষকতায়। কলকাতার সিটি কলেজ আর বাংলার প্রান্তবর্তী দূরের শহর হাজারীবাগে মাস্টারি করেছেন। একটা সময় তাঁর ঠাঁই হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিকসে, যেখানে ভারতখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যেও কাজ করেন তিনি। কর্মজীবনে একটা সময় বিজ্ঞাপনি জগতের হাতছানিও টেনেছিল তাঁকে – ঘনিষ্ঠ সুহৃদ সত্যজিৎ রায়ের বেলায়ও যেমনটা দেখি আমরা।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছিল সিনেমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা। তাই আমরা দেখি, ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় যেমন তিনি সামনের কাতারে ছিলেন, তেমনি পঞ্চাশের দশকের শেষে এসে চলচ্চিত্র সংসদগুলোর অ্যাপেক্স সংগঠন গড়বার ক্ষেত্রেও এগিয়ে এলেন। তাঁর ও সত্যজিৎ রায়ের অনুপ্রেরণা আর উদ্যোগেই ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ ইন ইন্ডিয়া’র পথচলা শুরু হয়। বিজয়া মূলেসহ আরো কয়েকজন খ্যাতিমান মানুষও এ-কাজে যুক্ত হন তাঁদের সঙ্গে। ফলে সিনেমার সিরিয়াস চর্চার জন্য গঠিত চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনও সর্বভারতীয় রূপলাভ করে।

অন্যদের মতো খ্যাতি না পেলেও তাঁর হাতে নির্মিত হয়েছে কয়েকটি ছবি। এর মধ্যে পোর্ট্রটে অব এ সিটির কথা না বললেই নয়। শহর কলকাতার জীবনই হয়ে উঠেছে তাঁর প্রামাণ্য এই ছবির বিষয়বস্তু। একাধিক পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিও নির্মাণ করেছেন পরবর্তীকালে। প্রথমটি বিলেত ফেরত – নির্মিত হয় ১৯৭২ সালে। আর সত্তর পেরোনো বয়সে ১৯৯৬ সালে করলেন আমোদিনী। কমেডি ধাঁচের ছবিটিকে স্যাটায়ার হিসেবেও গণ্য করে থাকেন কেউ কেউ।

নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও চিদানন্দ দাশগুপ্তের মূল খ্যাতি তাঁর লেখালেখির জন্য। বন্ধু সত্যজিৎ রায়, হরিসাধন দাশগুপ্ত বা বংশী চন্দ্র গুপ্তরা যখন সিনেমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন চিদানন্দই চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখালেখিটা অব্যাহত রেখেছেন। সিনেমা বিষয়ে বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনা ছাড়াও ভারতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের নন্দনতত্ত্বসহ আরো নানা দিক নিয়ে সেই পঞ্চাশের দশকে কজনই বা লিখে গেছেন নিয়মিত। যাঁরা লিখতেন সেই কয়েকজনের মাঝে তাঁর কথা অবশ্যি মনে করতে হবে। সিনেমাবিষয়ক লেখালেখিকে স্থায়ীরূপ দিতেই তাঁর ও সত্যজিৎ রায়ের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় : Indian Film Quarterly। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি শুরুর মাত্র এক দশকের মাঝেই চালু হওয়া এই সাময়িকীতে ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে উঁচুমানের লেখা ছাপা হতো, যা এই অঞ্চলে চলচ্চিত্র সাহিত্যের একটি ধারা নির্মাণেও বেশ সহায়ক ভূমিকা নেয়।

লেখালেখির এই ধারা জীবনের পড়ন্তবেলায়ও ধরে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর লিখিত বই নয়, ছবি (১৯৯১); Talking About Films (১৯৮১), Seeing is Believing  (১৯৮৫)  বই তিনটি সিনেমা নিয়ে তাঁর মননশীল ভাবনারই প্রকাশ ঘটায়। আর জগৎখ্যাত বন্ধু সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে লিখিত তাঁর Cinema of Satyajit Ray  (১৯৮০) বইটি তো এক কথায় চলচ্চিত্রকার সত্যজিতের ছবির সমাজ ও নন্দনতাত্ত্বিক দিক নিয়ে লেখা অন্যতম সেরা বই। ষাটের দশকে মারি সিটন ও জীবনের শেষ দশকে এন্ড্রু রবিনসন নামের দুই ব্রিটিশ সমালোচকই কেবল সত্যজিতের ছবি নিয়ে এমন নানামাত্রিক আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন। সিনেমাজগতের বাইবেলখ্যাত বিলেতি পত্রিকা সাইট অ্যান্ড সাউন্ডে দীর্ঘকাল ধরে তাঁর লিখিত সিনেমাবিষয়ক লেখাগুলোও এখন এক কথায় আর্কাইভাল মর্যাদা পেয়েছে।

তবে কেবল সিনেমাই হয়ে থাকেনি তাঁর লেখার বিষয়। সাহিত্যের নানা বিষয়ে কাজ করেছেন তিনি। অনুবাদ আর ভাষান্তরের কাজেও বেশ খ্যাতি ছিল। জীবনানন্দ দাশ আর মানিক সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তাঁকে এই দুই মহান সাহিত্যিকের লেখা অনুবাদে প্রাণিত করে তোলে। জীবনানন্দের সঙ্গে তো পারিবারিক কারণে সখ্যও তৈরি হয়েছিল তাঁর।

শরীরে পার্কিনসন্স রোগ বাসা বেঁধেছিল অনেককাল। হয়তো স্মৃতিগুলোও হারিয়ে যাচ্ছিল। তাই তো লেখালেখিসহ সিনেমাবিষয়ক কোনো কিছুতেই প্রায় তাঁকে পাওয়াই সম্ভব ছিল না আর। মনে আছে, বেশ কবছর আগে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে একবার ঢাকায় তাঁকে কদিন কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। চলচ্চিত্র সমালোচনাবিষয়ক একটি কর্মশালা পরিচালনার জন্যই তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। বয়স শুধু নয়, জানাশোনা, জ্ঞান আর প্রজ্ঞায় বিস্তর ব্যবধান থাকলেও আমাদের মতো তরুণ সিনেমামনস্কদের নানামুখী প্রশ্নের জবাব বেশ উৎসাহভরেই দিয়ে যাচ্ছিলেন একে একে। কোনো কপট গাম্ভীর্যও ছিল না তাঁর আলাপচারিতায়।

ভারতজুড়ে আজ সিনেমা কেবল বিনোদন বাণিজ্যের প্রধান নিয়ামক নয় – অনেক কমিটেড আর জ্ঞানী মানুষও এই মাধ্যমের সঙ্গে নানাভাবে এখন জড়িয়ে আছেন। বাণিজ্যিক চাকচিক্যময় বলিউডি জগতের বাইরেও নানা অঞ্চলে অনেক অচেনা মানুষের হাতে তৈরি হচ্ছে ছবি, হচ্ছে সিনেমা নিয়ে আলাপ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও বেশকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সিনেমা পঠন-পাঠনের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে সিরিয়াস সিনে সংস্কৃতির এই যে বিস্তার – তার শুরুর পর্বে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদেরই একজন চিদানন্দ দাশগুপ্ত। কাছের মানুষ সত্যজিৎ রায়ের জগৎজোড়া খ্যাতি কিংবা আত্মজা অপর্ণা সেনের প্রবল গ্ল্যামারও তাঁকে দূরে ঠেলে দেয়নি সিনে জগৎ থেকে। খানিকটা অন্তরালে থেকেও নিজ ব্যক্তিত্ব আর লেখালেখির গুণেই তিনি নিজের কাজ করে গেছেন। তাই ভারতীয় চলচ্চিত্র সংস্কৃতির সিরিয়াস চর্চা যতদিন জারি থাকবে – চিদানন্দ দাশগুপ্ত নামটিও থাকবে ততদিন।

Leave a Reply